একটি দেশ ও সে দেশের জাতি, ভাষা, বর্ণ, গোত্র ইত্যাদি অর্থাৎ এক কথায় সে দেশের অস্তিত্ব বহন করে সে দেশের বিরল প্রতীক জাতীয় পতাকা। বাঙ্গালির জীবন ও ইতিহাসে অর্জিত সম্পদগুলোর কথা বলতে গেলে যেটির প্রতিচ্ছবি সর্বপ্রথম চোখের সামনে ভেসে উঠে সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের গৌরবের অনন্য প্রতীক- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। প্রায় ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যা আমরা অর্জন করেছিলাম ১৯৭১ সালে। তবে বর্তমান যে পতাকাটি আমরা সর্বত্র দেখি তা আগে কিন্তু ঠিক এরকম ছিলো না। আসুন, জেনে নিই কীভাবে এলো বাংলাদেশের পতাকা ও পতাকার নকশা পরিবর্তনের নেপথ্যের ইতিহাস।
বাংলাদেশের পতাকা তৈরির সিদ্ধান্তঃ
বাংলাদেশের পতাকার নকশা কিন্তু করা হয়ে গিয়েছিলো স্বাধীনতার কিছু আগেই। বাংলাদেশের প্রথম পতাকাটির নকশা ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ সংগঠনের কিছু কর্মী ও ছাত্রনেতারা করেছিলেন। যুদ্ধের নয় বছর আগে ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে তিন ছাত্রলীগ নেতা- সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ মিলে পরিকল্পনা করলেন একটা গোপন সংগঠন বানাবেন। যার নাম ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ তবে, গোপনে তারা নিজেদের দলের নাম রেখেছিলেন নিউক্লিয়াস। যা বহুদিন অজানাই ছিলো। ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে এই তিন সদস্যকে নিয়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা নিউক্লিয়াসের হাইকমান্ড গঠন করা হলো।
১৯৭০ সাল, ৭ই জুন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে শ্রমিক জোটের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানো হবে। এ আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তানের একটি আলাদা পতাকা তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করে ’নিউক্লিয়াস’। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়।
সে লক্ষ্যে ৬ জুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৬ (বর্তমান ১১৭-১১৮) নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা কাজী আরেফ আহমদ, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ন দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ এক বৈঠকের আয়োজন করেন।
বাংলাদেশের পতাকার প্রথম নকশাঃ
সেখানে সবার সম্বলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে আলোচনা শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে সোনালী পাটের প্রতীক হিসেবে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকার নকশাটি চূড়ান্ত হয়। এই বাংলাদেশের মানচিত্রটি একটি বিশেষ কারণবশত পতাকায় যোগ করা হয়।
কাজী আরেফ আহমেদ সাহেব, কামরুল আলম খান (খসরু) সহ আরো দুজনকে নিউমার্কেটের বজলুর রহমান লস্করের“অ্যাপোলো” নামক দোকানে পাঠান। গাঢ় সবুজ ও গাঢ় লাল রঙের কাপড় নিয়ে তারা বলাকা ভবনের পাক ফ্যাশনের মালিকের কাছে রাত প্রায় ১২ টার দিকে যায়। তিনি বিহারী ( অবাঙালী ) ছিলেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে সকল কর্মচারীদের বিদায় করে বিনা পারিশ্রমিকে নিজেই ঐ নকশা অনুযায়ী সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে পতাকা তৈরী করে দেন।
এরপর ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান বুয়েট) কায়েদে আজম হল (বর্তমানে তিতুমীর হল)-এর ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে মানচিত্রের বই নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকেন পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। কুমিল্লা ছাত্রলীগের সভাপতি শিবনারায়ণ দাশ এই ট্রেসিং পেপার থেকে কাপড়ে মানচিত্র এঁকে দিয়েছিলেন। তিনি হলুদ রং এবং ম্যাচের কাঠি ব্যবহার করে মানচিত্রটি পতাকার লাল বৃত্তের মাঝে আঁকলেন। মানচিত্রের ওপর দিলেন সোনালী রঙ।
মানচিত্র খচিত পতাকা বানানোর সময়
বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলনঃ
১৯৭১ সালের ২রা মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়, কলা ভবনের সামনের পশ্চিম গেটেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ছাত্রনেতা ও ‘ডাকসু’র তদানীন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আবদুর রব। এ সময় অন্যান্য ছাত্রনেতা ও কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের চিহ্ন ‘চাঁদ’ তারা ব্যবহার না করার জন্য নতুন এই প্রতীক তৈরী করা হয়েছিল।
‘সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যক্টবুক’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি বুঝাতে পতাকায় সবুজ রং ব্যবহার করা হয়েছিল। তৎকালীন পতাকাটি তাই ছিলো উজ্বল সবুজে বিরাজমান লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) এর মানচিত্র। অতঃপর মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে ২৩ শে মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এর বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ১৭ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে সরকারিভাবে গৃহীত হয়।
এখানে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়
পতাকার মাঝে মানচিত্র কেন?
কাজী আরেফ আহমেদের‘বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র’ বই থেকে জানা যায়- ৬ জুন ৭০ সালে নিউক্লিয়াস-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফ্ল্যাগ তৈরির কথা জানা যায় ও এই ফ্ল্যাগ পরবর্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তখন মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি) ও আসম আবদুর রব বলেন যে, এই পতাকার জমিন অবশ্যই বটলগ্রিন হতে হবে। শাজাহান সিরাজ বলেন যে, লাল রঙের একটা কিছু পতাকায় থাকতে হবে। বটলগ্রিন জমিনের উপর প্রভাতের লাল সূর্যের অবস্থান।
তারপর পতাকার এই নকশা ‘নিউক্লিয়াস’ হাইকমান্ডের অনুমোদন নেয়া হয়। তখন কাজী আরেফ আহমেদ প্রস্তাব করেন, এই পতাকাকে পাকিস্তানি প্রতারণা থেকে বাঁচাতে হলে লাল সূর্যের মাঝে সোনালী রঙের মানচিত্র দেয়া উচিত। কারণ, প্রায়ই বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভারতের হাত আছে বা ভারতীয়দের অনুপ্রবেশ হচ্ছে অথবা ভারতীয় এজেন্টদের কার্যকলাপ বলে প্রচারণা চালায়।
তাছাড়া এই সময় ইউনাইটেড স্টেটস অফ বেঙ্গলবা বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র নামের কাল্পনিক একটি দেশের জন্ম দেয়া হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যসহ পূর্ব পাকিস্তান ও মায়ানমারের আরাকান রাজ্যসহ এই কল্পিত ইউনাইটেড স্টেটস অফ বেঙ্গল-এর মানচিত্র তৈরি করে বাঙালির স্বায়ত্বশাসনের দাবিকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সরকারি প্রশাসন ষড়যন্ত্র বলে তা বিলি করত। এই ধরনের প্রচারণা থেকে পতাকাকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের সোনালী আঁশ ও পাকা ধানের রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র পতাকার লাল সূর্যের মাঝে রাখার প্রস্তাবে সবাই একমত হয়।
এছাড়াও সে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত স্লোগান ছিলোঃ “জয় বাংলা”। সে ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যে কোন বাংলার কথা বলা হচ্ছে? পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা নাকি দুই বাংলাই? তখন সিদ্ধান্ত হয় পতাকায় দেয়া থাকবে তৎকালীন পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) এর ভূমি প্রতিকৃতি তথা মানচিত্র। মজার ব্যাপার হলো দেশ স্বাধীন হলে যে ঐ মানচিত্রের প্রয়োজন হবে না সে সিদ্ধান্তটিও ওখানে নেয়া হয়েছিলো- যা কিনা পরবর্তীতে পটুয়া কামরুল হাসানের নকশা করা পতাকার (বর্তমান পতাকা) ক্ষেত্রে সত্যি হয়েছিলো।
পূর্বে নকশাকৃত বাংলাদেশের পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাঃ
স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। তাই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত।
পতাকায় ১০:৬ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আয়তক্ষেত্রাকার সবুজ রঙের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকবে। লাল বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট হবে।বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারীভাবে গৃহীত হয়। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
২ মার্চ ১৯৭১, উড়েছিল মানচিত্র খচিত প্রথম পতাকা
বর্তমান পতাকায় বাংলাদেশের মানচিত্র বাদ যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- পতাকার দুই দিক থেকে মানচিত্রটি সঠিকভাবে দেখা যাবে না। পতাকার দুইদিকে মানচিত্রের সঠিক উপায়ে সেলাই নিয়ে জটিলতা হবে। চিত্রশিল্পী ব্যতিত অন্যদের পক্ষে পতাকা আঁকা কঠিন হয়ে যাবে। লাল বৃত্তটি একপাশে একটু চাপানো হয়েছে, পতাকা যখন উড়বে তখন যেন এটি পতাকার মাঝখানে দেখা যায়।
মূলত শিব নারায়ন দাসই বাংলাদেশের পতাকার প্রধান ডিজাইনার। সেটাকে সামান্য পরিবর্তন করেন কামরুল হাসান। তবে যেহেতু বর্তমানে মানচিত্র খচিত পতাকা ব্যবহার করা হয় না তাই বর্তমান পতাকার ডিজাইনার হিসেবে কামরুল হাসানকে বলা হয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন পতাকার ডিজাইনার হিসেবে শিব নারায়ন দাসের নাম উল্লেখ থাকে।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ইতিহাসটা আবেগের। এই পতাকা পুরো দেশকে ধারণ করেছে তার বুকে।
এক যে ছিলো সোনার গরু। “সবকিছু অন্ধকার থেকে আলোকিত মনে হচ্ছে!” ওহ! আচ্ছা। আমি আমার মায়ের পেট থেকে বের হয়েছি। এরা কারা? যারা আমাকে ধরে আছে? আমি মায়ের পেট থেকে কিভাবে বের হলাম? উফফ! কতো প্রশ্ন আমার। সব মাকে করব। নদীর পাড়ে মিয়াবড়ির বাগান পেড়িয়ে হাসেম মিয়ার বাড়ি। তার গোয়ালঘরে ৩টা গাভী জন্ম নিয়েছে। হাসেম মিয়ার ছোট ছেলে হাসুর সাথে বাছুরটির ভাব হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। তারা একসাথে মাঠে খেলতে যায়, মিয়া বাড়ির বাগান থেকে হাসু ফল চুরি করে খায়, আর বাছুরটি খায় পাতা। হাসু বাছুরটিকে আদর করে নাম দেয় “সোনার গরু”।দেখতে দেখতে হাসু বড় হয়, বড় হয় সোনার গরুও। হঠাত একদিন হাসু খুব মন খারাপ করে তার সোনার গরুর কাছে, তার গয়াল ঘরে আসে। সোনার গরু মানুষের ভাষা বুঝতো না, কিন্তু হাসুর ভাবভঙ্গি দেখে তার মনে কথা বুঝতে পারতো।
সোনার গরু হাসুর মন খারাপ দেখে হাসুর কাছে এসে তার মাথাটা হাসুর হাতের কাছে নেয়। হাসু সোনার গরুকে জরিয়ে ধরে বলে, “আমি পড়াশোনার জন্য শহরে যাচ্ছি, আর তোর সাথে খেলা হবে না আমার। সোনার গরু বুঝতে পেরে তারও চোখে পানি আসে। হাসু সেদিন সারারাত গোয়ালঘরে সোনার গরুর সাথে ছিলো। হাসু চলে যাওয়ার পর সোনার গরু একদম একা হয়ে যায়। সে মায়ের সাথে সারাদিন থাকে এবং মায়ের সাথে গল্প করে। একদিন হাসেম মিয়ার বাড়িতে একটা ট্রাকে করে ৪-৫টি গরু এবং কিছু লোক আসে এবং হাসেম মিয়া তাদেরকে সোনার গরু তুলে দেয়। সোনার গরু হাসেম মিয়ার ভক্ত। হাসেম মিয়া যাই বলে সোনার গরু তাই করে।সেইজন্য হাসেম মিয়া তাকে মা ছাড়া ট্রাকে তুলে দিলে সে কোনো জোর-জবরদস্তি করে না। কিছুক্ষণ পরপর ট্রাকে ২-৩ বা ৪-৫টা করে গরু বা মহিষ তোলা হচ্ছিল। ট্রাকে অল্প জায়গায় এত্তো বেশি গরু তোলা হয় যে তারা শুধু দাড়াতে পারছে, তাও ঠাসাঠাসি করে। রাত হয়ে গেলেও তারা একটু বসতে পারেনি। সারাটা রাস্তা তারা ঠাসাঠাসি করে দাড়িয়ে ছিলো। সোনার গরু আশেপাশের গরুর কাছে জানতে পারে যে তাদেরকে নেক কাজের জন্য শহরে নিয়ে যাচ্ছে। সে বুঝলো তাকে কুরবাণি করার জন্য শহরে হাটে নিয়ে চরা দামে বিক্রি করা হবে। কারণ তারা জানে তাদের সাথে কি করা হবে,কিন্তু তারা নেক আমল পাবে। রাস্তায় যাওয়ার সময় সোনার গরু ছোট বড় যানবাহন দেখে যা আগে কখনো দেখেনি। ট্রাকের সবার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। যাওয়ার পথে তারা সোনার গরুকে সেগুলো বলে দেয়। যাওয়ার পথে গরুগুলোর খাবার ফুরিয়ে যায়। ট্রাকে যারা ছিলো তারা তাদেরকে ঠিকমতো খাবারটাও দিত না।
অবশেষে এতো ঠাসাঠাসি করে দাড়ানোর পর তাদেরকে ট্রাক থেকে নামানো হয়। সোনার গরু দেখলো তার পা দিয়ে আর হাঁটতে পারছে না। চারপায়ে তাদের সবার ঝিম ধরে গেছে। তাদেরকে একটি খামারে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যরকম একটি খামার। সোনার গরু এরকম কখনোই দেখে নি। খামারে তাদেরকে অন্যরকম খাবার দেওয়া হয়। আবার সুচালো সুঁইও ঢুকানো হয়। সুঁই ঢুকানোর পর সব গুলো গরু অলস হয়ে গেছে। সাতবার সুঁই ঢুকানোর পর আবার সোনার গরুকে ট্রাকে উঠানো হয়। এবারো ঠাসাঠাসি করে ঢুকানো হয় কিন্তু এবার গরু ছাগল একসাথে ঢুকানো হয় এবার আগের তুলনায় অল্প পথ। বিশাল মাঠে অনেকগুলো গরুর সাথে সোনার গরুকে বাধা হয়। প্রচন্ড রোদে সারাদিন গরুগুলোকে দাড় করিয়ে রাখা হয়। অনেক ধরনের মানুষ আসে সোনার গরুকে দেখতে। কেউ গরুর গলায় হাত দেয়, কেউ হাগু বের হওয়ার পাশের জায়গায়।সোনার গরুরু ঐ জায়গায় হাত দেওয়া একটুও পছন্দ না। শুধু মাথায় হাত দেওয়া পছন্দ। একদিন সোনার গরু হতভম্ব হয়ে গেল তার ছট বেলার খেলার সাথী হাসুকে দেখে। হাসুর সাথে অনেকগুলো তার বয়সী ছেলে ছিলো। সোনার গরু চিৎকার করলো, “হাসু! হাসু!” হাসুর কাছে আওয়াজটা পরিচিত মনে হলেও সে সোনার গরুর চেহারাটা চিনতে পারেনি। সোনার গরু অনেক উঁচু, লম্বা আর মোটা হয়ে গিয়েছে। হাসু সাথে সাথে সোনার গরুকে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়ে। হাসু তার বাবার উপর অনেক ক্ষেপে যায়। হাসু বিক্রেতার কাছ থেকে সোনার গরুকে কিনতে চাইলে বিক্রেতা তার সাধ্যের বাইরে দাম চায়। হাসুর বাবা যে দামে বিক্রি করেছিলো বিক্রেতা তার দশ গুন দাম চায়। হাসুর বন্ধুরা হাসুকে সাহায্য করে এবং হাসুর কাছে যা ছিলো তার সর্বোসব দিয়ে সোনার গরুকে কেনে তারা। কিন্তু সোনার গরুকে কেনার পর তাকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ। আর একদিন পর ঈদ। তাই হাসু সোনার গরুকে গ্রামে রাখার কোনো বন্দোবস্তই করতে পারলো না।
আপাতত হাসু যেই বাড়িতে ব্যাচেলর হিসেবে থাকে সেখানের গ্যারেজে সোনার গরুকে রাখে। গ্যারেজে তখন আরো কিছু গরু, বাছুর, ছাগল ছিলো। তাদেরকে আগামীকাল কুরবাণি করা হবে। কিন্তু সোনার গরু জানে না যে সে আগামীকাল নেক আমল করতে পারবে কিনা। হাসু চাঁদরাতের দিন সারারাত সোনার গরুর সাথে কাটিয়ে দিলো যেমন আগে গ্রামে থাকতে কাটাতো। হাসু ভাবলো, “আমি, সোনার গরু দুইজনই আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদের দুজনকেই একদিন না একদিন মরতে হবে। আল্লাহর নির্দেশ মতো নিজের পোষা গবাদি পশু কুরবাণি দিলে কেন আমল অর্জিত হবে। আর সব থেকে বড় কথা ওটা আল্লাহর নির্দেশ। আমাকে এটা পালন করতেই হবে। আমাকে আমার ছোটবেলার খেলার সাথীকে আল্লাহর দরবারে কুরবাণী করতে হবে। আমার প্রিয় একজনকে আল্লাহয় দরবারে কুরবাণী করতে হবে।
অনুর্ধব আঠারো লেখক সন্ধ্যান, বিভাগঃ উচ্চ মাধ্যমিক।
রহস্যময় বৃক্ষ ‘নারীদের আকৃতির ফলের ফল “থাইল্যান্ডে পাওয়া যেত যা বিশ্বাস করা হয় যে প্রাচীন বৌদ্ধ ঈশ্বর দ্বারা গাছ তৈরি করা হয়েছিল।
কিন্তু অনেক মানুষ বিশ্বাস করে না। থাইল্যান্ডের অদ্ভুত গাছ একটি যুবতীর সঠিক আকারে ফল ধরেছে – এবং এটি ইন্টারনেটকে চমকে দিয়েছে। তবে অনেকে সবুজ ফলের আকার দেখে অবাক হয়ে গেলেও অন্যরা বিভ্রান্তিকর ফুটেজ দ্বারা কম বিশ্বাস করেন।
বৌদ্ধ পৌরাণিক(প্রাচীন মিথ) কাহিনী অনুসারে, নারিফন নামে পরিচিত একটি গাছে অল্প বয়সী মহিলা প্রাণী রয়েছে এবং বলা হয় যে এটি হিমাফান নামে পৌরাণিক বনে জন্মায়। গল্পে দেখা যায় যে বৌদ্ধ ঈশ্বর ইন্দ্র তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর দুই সন্তানের জন্য বনে একটি বাড়ি তৈরি করে বনে বসবাসের জন্য।কিন্তু যখন ভেসন্তারা খাবার সংগ্রহের জন্য বনে গিয়েছিলেন, তখন তিনি ভয় পেয়েছিলেন পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার। ইন্দ্র তারপরে 12 টি বিশেষ নারিফোন গাছ তৈরি করেছিলেন যা তাঁর স্ত্রীকে নিজের খাবার বেছে নেওয়ার সময় জীবিতদের বিভ্রান্ত করার জন্য তাঁর স্ত্রীর ছবিতে ফল দেয়। পুরুষরা এই ফলগুলি তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেত এবং এ ফল খাওয়ার পরে তারা চার মাস ঘুমাত, এবং তাদের সকল ক্ষমতা হারাবে।থাই লোককাহিনী(মিথ) অনুসারে, ইন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রী মারা যাওয়ার পরেও গাছগুলিতে ফল ধরেছিল।
প্রতিভাবান শিশু হওয়ার অভিশাপ। টমের মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। যখন সে ভাবত বড় হয়ে সে একজন তাত্ত্বিক জ্যোতি:পদার্থবিজ্ঞানী হবে। তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ গহ্বর। এ বিষয়ে সে অনেকগুলো থিয়োরি আবিষ্কার করেছিল। একটা থিয়োরিতে সে উল্লেখ করে ব্লাকহোল আর হোয়াইটহোলের সম্পর্কের কথা। মহাকাশের এই বস্তুগুলো বিপুল পরিমাণ শক্তি ধারণ ও নিঃসরণ করতে সক্ষম । তার ধারণা ছিল ব্লাকহোল আর হোয়াইটহোল অবশ্যই স্থান-কাল সাপেক্ষে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। “আমি বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে দেখলাম, হ্যাঁ, এটা সম্ভব! তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এগুলো নিয়ে আমি কাজ করব।” যদিও থিয়োরিগুলো প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় গাণিতিক সূত্রগুলো তার জানা ছিল না। কিন্তু শেখার সময় তো ছিল। কারণ তার বয়স তখন মাত্র পাঁচ।
এখন টমের বয়স এগারো। অবসরে গণিতের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতে তার ভালো লাগে। গত বছর বড়দিনের উপহার হিসেবে সে চেয়েছিল জিসিএসই পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি (১২৫ পাউন্ড/২৩০ মার্কিন ডলার)। অথচ যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ষোল বছল বয়সে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে! এখন টম এ-লেভেলের গাণিতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
টম তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শুরুর দিকে তার মা ক্রিসি ভেবেছিলো অংকের প্রতি টমের এই আগ্রহ খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ধীরেধীরে তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর ধারণা ভুল। তিনি যখন টমকে লন্ডনের ‘রয়েল অবজারভেটরিতে’ নিয়ে যেতেন কৃষ্ণবস্তু বা ডার্ক ম্যাটার নিয়ে আলোচনা শোনার জন্য, তিনি সেখানে টমের বয়সী আর কাউকে দেখতেন না। স্কুলের শিক্ষকরা তাঁকে জানালেন, সহপাঠীদের সাথে খেলতে যাওয়ার চেয়ে ক্লাসে বসে অঙ্ক করাতেই তার আগ্রহ বেশি।
একদিন তার বাবা-মা তাকে নিয়ে গেল মিলটন কেইনস্-এ ‘পটেনশিয়াল প্লাস’ নামক একটি সংগঠনের কাছে তার বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য। সংগঠনটি পূর্বে ‘ন্যাশনাল সোসিয়েশন ফর গিফটেড চিলড্রেন’ নামে পরিচিত ছিল। ক্রিসি বলেন, “ আমরা তাকে বলেছিলাম আজ সারাদিন তাকে ধাঁধাঁর সমাধান করতে হবে।” টমের মতে, “এটা যেন আমার স্বপ্নের জগৎ। সারাদিন পরীক্ষা আর সমস্যার সমাধান!” টম খুব আগ্রহ নিয়ে পরীক্ষা দিলো। যখন তার বাবা-মা’কে ফলাফল দেখানো হল, তাঁরা দেখলেন টমের মত প্রতিভা ব্রিটেনের ০.১ শতাংশ মানুষের আছে।
তীব্র আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছেলেমেয়েরা প্রায়ই অবহেলিত হয়। অথচ পরিবেশ ও পরিচর্যা একটি শিশুর মানসিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিবারে খাবার টেবিলে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়, সেখানে শিশুটি বিশ্ব পরিচালনার ব্যাপারে দৃঢ় অভিমত পোষণ করবেই। কোনো বাচ্চা যখন ভাবে কেক কেন কোণাকৃতিতে কাটা হয়, গণিতের প্রতি তার আগ্রহ খুব স্পষ্টই বোঝা যায়। অনুশীলনই দক্ষতার চাবিকাঠি। পিয়ানো বাজানোর প্রতিভা হয়ত অনেকেরই আছে। কিন্তু সেই বাচ্চাটি একদিন ‘কার্নেজি হল’-এ পিয়ানো বাজাতে পারবে, যে দিনে পাঁচ ঘন্টা পিয়ানো বাজায়; যে সপ্তাহে বিশ মিনিট বাজায় সে নয়।
কিন্তু টমের মত শিশুরা অন্য রকম। সে বড় হয়েছে লন্ডনের দক্ষিণ অংশে একটি স্বল্পোন্নত এলাকায়। তার স্কুলের শতকরা ৯৭ ভাগ বাচ্চা তখনও ঠিক করে কথা বলাও শেখেনি। টম যখন তার আগ্রহের বিষয়গুলো যেমন গণিত, ল্যাটিন বা জ্যোতি:পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলত, তার বাবা-মা তার বেশিরভাগ কথাই বুঝত না। তার মেধা গতানুগতিক আর সবার মত ছিল না।
নিষ্প্রভ চিন্তা, নিদ্রাহীনতা
আইকিউ টেস্টগুলোতে মূল বিষয়টি হলো অন্যের তুলনায় তুমি কতটা ভাল বা খারাপ। তাত্ত্বিকভাবে, অধিকাংশ মানুষের স্কোর হয় মাঝামাঝি। গড় হিসেবে একদল মানুষের স্কোর হয় ১০০। দুই তৃতীয়াংশ মানুষের আইকিউ ৮৫ – ১১৫ এর মধ্যে। এই সীমার বাইরে খুব কম মানুষই থাকে। প্রতি একশো জনে দুই জন মানুষের আইকিউ ৭০ এর নিচে। আর দুই জনের ১৩০ এর উপরে। হাজারে একজন মানুষের স্কোর গড় সীমা অর্থাৎ ১০০ এর চেয়ে ৪৫ কম বা বেশি হয়। কিন্তু খুব কম মানুষই আইকিউ টেস্টে অংশ নেয়। ফলে মেধাবীদের খুঁজে বের করা খুব একটা সহজ নয়, অধিকাংশ স্কুলে তো পাওয়াই যায় না।
সমাজ বুদ্ধিমানদের প্রশংসা করে। মানুষ প্রতিভাবানদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করে এবং ধারণা করা হয় এদের জীবনে উন্নতি ও সফলতা নিশ্চিত। কিন্তু প্রতিভার একটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অন্য অনেকের মত টমের শৈশবও খুব একটা আনন্দের ছিল না। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে দেয়ালে মাথা ঠুকে সে জীবনের ইতি টানতে চেয়েছিলো! সে তার মাকে বলেছিলো, “জীবন একটা বিশাল গোলকধাঁধাঁ। আমি যেন সেই গোলকধাঁধাঁয় হারিয়ে যাচ্ছি।” তার জিপির মতে, সে তীব্র বিষণ্নতায় ভুগছিলো এবং তাঁর ধারণা এর মূল কারণ টমের অসাধারণ প্রতিভা। আর এটা তার হতাশা বা একা থাকার প্রবণআরও কারণ।
টম সহজে অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে পারে না। ফলে তার বন্ধুর সংখ্যাও খুব কম। স্কুলে অনেক সময়ই তাকে ক্লাসের বাইরে বা অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়। “তার অন্যরকম আচরণের জন্য অনেকেই তাকে ক্লাসে নিতে চাইতো না”, ক্রিসি বলেন। নেতিবাচক চিন্তা থেকে মনকে দূরে রাখার জন্য টম দিনরাত অঙ্ক তার হিসাব-নিকাশের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। তাকে দীর্ঘদিন নিদ্রাহীনতায়ও ভুগতে হয়েছে। তার এই সমস্যাগুলো তার পুরো পরিবারকে প্রভাবিত করে। ক্রিসির মতে, ” আমি ভাবতে পারি না বাবা-মায়েরা কিভাবে চাইতে পারেন তাদের সন্তান অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী হোক। আমি তো এর সাথে মানিয়ে নিতে পারছি না। আমি শুধু এর থেকে নিষ্কৃতি চাই।”
টম ও তার পরিবারের এই সমস্যা আরও অনেকের। দেশের সব চেয়ে প্রতিভাবান শিশুদের উপযুক্ত পরিচর্যা দেয়ার জন্য ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন – মেনসা। এই সংগঠনের সদস্য প্রায় বিশ হাজার। আমি এই সংগঠনের মাধ্যমে কিছু ‘গিফটেড’ শিশু ও তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। আমার ইনবক্সে আসা অধিকাংশ ইমেইলে দেখলাম অভিভাবকেরা বিরক্ত। অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের এই বিশেষ দিকটির কথা অন্যদের জানাতে চান না, পাছে তাদের হিংসার শিকার হতে হয়। একটু সমবেদনার আভাস পেয়ে তাঁরা যখন তাঁদের অসুবিধার কথা বিশদভাবে বলতেন, শুনে হতাশ বোধ করতাম। তাঁরা সকলেই চিহ্নিত হয়ে পড়ার ভয় করেন। এমনকি মিথ্যা পরিচয় নেয়ার কথাও চিন্তা করেন!
কোনো কোনো দেশ এমন অসাধারণ শিশুদেরকে অন্যদের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করে থাকে। এ ধরনের শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষার সুযোগও দিয়ে থাকে। তবে প্রতিভা প্রশংসিত, পুরস্কৃত এবং চর্চিত হলেও অনেক সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয় এই প্রতিভাকে অবাঞ্ছিত করে তোলে। অনেক পরিবারের সাথে আমি কথা বলে বুঝেছি, বিশেষ ধরনের প্রতিভা যতটা না আশীর্বাদ, তার চেয়ে বেশি অভিশাপ স্বরূপ।
প্রতিভা তৈরি করা যায় না
বিশেষজ্ঞরা সেইসব শিশুদের ‘গিফটেড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, যারা তিন ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। প্রথমত, এসব শিশুরা একটি নির্দিষ্ট বিষয়, যেমন- কোনো ভাষা, গণিত বা দাবা খেলা ইত্যাদি – নির্দিষ্ট বয়সের আগেই রপ্ত করে ফেলে এবং তাতে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে। তারা খুব সহজেই এই কাজগুলো করে থাকে এবং সমবয়সীদের চেয়ে দ্রুত দক্ষ হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয়ত, তারা এই দক্ষতা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অর্জন করে, অভিভাবকদের জোরাজুরি ছাড়াই। পারিপার্শ্বিকতা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা একটি শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে। তিন বছর বয়সী একটা বাচ্চার সাথে তার বাবা-মা কতগুলো কথা বলেন, তার ওপরের নির্ভর করে ওই বাচ্চাটি নয় বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কতটা ভাল বা খারাপ করবে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্বল্প শিক্ষিত পরিবারের শিশুদের চেয়ে উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের শিশুরা প্রায় চার মিলিয়ন শব্দ বেশি শিখে থাকে। তাছাড়া উচ্চ আয়ের পরিবারের সন্তানরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অধিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে।
কিন্তু মেনসার একজন পরামর্শদাতা ও চিকিৎসক লিন কেনডল, যিনি নিজেও ছিলেন ‘গিফটেড চাইল্ড’, তাঁর মতে, একটা পাঁচ বছরের বাচ্চাকে নীটশের (জার্মান দার্শনিক) তত্ত্ব পড়িয়ে, কিংবা অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা পড়াশোনা করিয়ে কখনও ‘জিনিয়াস’ বানানো সম্ভব না। যেসব শিশুদের আইকিউ অনেক বেশি, তাদের মধ্যে অনেকেই খুব ছোট বয়সে অনন্য সাধারণ গুণ ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে। কেনডল বলেন, “এসব বাচ্চারা কথা বলতে শেখার আগেই বুঝতে শিখে যায় তার চারপাশে কি ঘটছে, মানুষজন কি বলছে ইত্যাদি। কিন্তু তারা তাতে সাড়া দিতে পারে না।” বেশিরভাগ বাচ্চা হাঁটতে শেখার পর খুব সহজে একটা চলন্ত গাড়ি বা নতুন খেলনা দেখলে তাতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু কেনডলের মতে ‘গিফটেড’ শিশুদের ক্ষেত্রে এই বয়সটা একেবারেই অন্যরকম।
অধিকাংশ মানুষ তাদের শৈশব পার করে ছোট খাটো বিষয়ে আনন্দ খুঁজে নিয়ে। জীবনের এই সময়টাতে মানুষ শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবে, কারণ কোন কাজের পরিণাম কি হতে পারে সে বিষয়ে তখন কোনো ধারণাই থাকে না। অন্যদিকে কেনডল ‘গিফটেড’ বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, “বিষয়টা এমন যে, কেউ যেন একজন আঠারো বছরের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে একটা নবজাতকের শরীরে স্থাপন করেছে।”
প্রতিভাবান শিশুদের তৃতীয় বৈশিষ্ট্যটি হলো, তাদের আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে তারা প্রায় বদ্ধসংস্কার হয়ে পড়ে। সেই বিষয়ে দক্ষ হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা কাজ করে। জেসির বয়স এখন পাঁচ। তার বাবা রিচার্ড বলেন, যখন জেসির বয়স এক বছর এবং সে মাত্র হামাগুড়ি দিতে শিখেছিলো, সে কোনো ভাবেই তার ডায়পার পরিবর্তন করতে চাইতো না। “আমরা লক্ষ্য করলাম, শুধু একটা উপায়ে তাকে শান্ত রাখা যেত। তা হলো, তাকে এমন কিছু দিয়ে ব্যস্ত রাখা যা খুলে ফেলা যায় এবং সেগুলো আবার জোড়া লাগানো যায়। আমাদের একটা হলুদ রঙের টর্চ ছিল। সে এর ব্যাটারিটা বের করে আবার সেটা লাগিয়ে দেখত টর্চটা কাজ করছে কি না। যদি সে দেখত ব্যাটারিটা ঠিকভাবে লাগানো হয়নি, তাহলে সে সেটা নিয়েই পড়ে থাকতো যতক্ষণ না ঠিকভাবে লাগাতে পারত।”
বিশ শতকের প্রথম দিকে আলফ্রেড বেনেট ও থিয়োডর সাইমন বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের জন্য আইকিউ টেস্টের প্রচলন শুরু করেন। এই পরীক্ষায় স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি, বিশ্লেষণমূলক চিন্তা ও গাণিতিক দক্ষতা মূল্যায়ন করা হতো। সেই পরীক্ষার ধরন সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তিত হলেও মূল বিষয়গুলো একই রয়ে গিয়েছে। মস্তিষ্কে কোনো বড় ধরনের আঘাত না পেলে একজন ব্যক্তির আইকিউ সারাজীবন প্রায় একই থাকে। ইন্টারনেটে বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের অনেক পরীক্ষা আছে। অনেকে তাদের স্কুলেই আইকিউ টেস্ট করতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময় এই পরীক্ষাগুলো হয় পরিকল্পিত, যেখানে বাচ্চাদের আগে থেকেই প্রস্তুত করা হয়। মেনসা সর্বাত্মক চেষ্টা করে তাদের পরীক্ষাগুলো ‘কালচার ফেয়ার’ হোক। অন্য কোথায় বলা যায়, মেনসা শিশুদের সহজাত প্রতিভা খুঁজে বের করতে চায়, প্রশিক্ষিত জ্ঞান নয়। কেনডল বলেন, “যারা প্রকৃত অর্থেই প্রতিভাবান, তারাই পারে চাকা বা আগুন আবিষ্কার করতে।” আবার তিনি এও বলেন, “আইকিউ পরিমাপ আর উচ্চতা পরিমাপ করা এক জিনিস নয়।” কোনো পরিমাপই সম্পূর্ণরূপে বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে না।
তীব্র কৌতুহল
বেশিরভাগ বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় গতানুগতিক কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় যাচাই করা হয়; যেমন – যৌক্তিক চিন্তা বা গাণিতিক দক্ষতা। এতেই বোঝা যায় প্রকৃত মেধা অন্বেষণে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা সংকীর্ণ। অনেক ধরণের গুণ, দক্ষতা বা বৈশিষ্ট্য এসব পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয় না; যেমন- জানার তীব্র আগ্রহ কিংবা বুদ্ধিদীপ্তভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা। গতানুগতিক এই পরীক্ষাগুলো ভবিষ্যতের ঔপন্যাসিক বা কবিদের চিহ্নিত করতে পারে না; কিংবা ঐসব শিশুদেরও খুঁজে বের করতে পারে না যাদের রয়েছে খেলাধূলা বা সঙ্গীতে বিশেষ দক্ষতা। আমরা এখনো কারোর সৃজনশীল, আবেগী, শিল্পীসুলভ জ্ঞান বা গুণ বিচার করার উপযুক্ত পদ্ধতি বের করতে পারিনি। আমরা শুধু গতানুগতিক ধারার ভিত্তিতেই ‘প্রতিভাবান’-দের চিহ্নিত করি।
অনেকে আবার ‘প্রতিভা’ বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। “হাই পারফরম্যান্স লার্নিং” নামে একটা সংগঠন আছে যা ব্রিটেনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করে মেধাবী শিশুদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ডেবরাহ্ আয়রের মতে, ‘মেধা’-র সংজ্ঞা সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁর দৃষ্টিতে ‘সহজাত প্রতিভা’ বলে কিছু নেই।
আয়রের মতে, তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই তাকাও না কেন, দেখবে – বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের মেধাবী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এক্ষেত্রে হয় উপেক্ষিত। “আমেরিকায় ল্যাটিনো বা নিউজিল্যান্ড মাওরিদের প্রোগ্রামিং-এর জন্য নির্বাচন করা হয় না।” তিনি আরও বলেন, একজন মেধাবী এবং একজন সফল ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হল দৃঢ় প্রত্যয়। সমান মেধার দুইজন পদার্থবিজ্ঞানী, যাঁদের একজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কিন্তু অন্যজন নয়, তাঁদের মধ্যে পার্থক্য হল সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষায়।
‘সম্ভাব্য প্রতিভা’ হল কিছুটা মেধা এবং তার সাথে উপযুক্ত পারিপার্শ্বিকতা ও ব্যক্তির আগ্রহের সম্মিলিত রূপ।আয়রের দাবি, উচ্চশিক্ষিত পরিবারের কিছু বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের প্রতিভাবান বলে জাহির করতে চান। অথচ আমি যেসব অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও এরকম নয়। বরং তাদের অধিকাংশের কাছেই বিষয়টি উদ্বেগের, কখনো বা বেদনার।
এই অভিভাবকদের অনেকেই দুই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন: প্রথমত, কিভাবে তাদের বাচ্চাদের উপযুক্ত মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা যায়; দ্বিতীয়ত, সমস্যাটা অনেকের ক্ষেত্রে ধরা পড়ে না বলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেমন, এসব বাচ্চারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন, এমনকি সংহতিনাশকও হতে পারে। যে প্রতিভা মানুষ দূর থেকে দেখে প্রত্যাশা বা প্রশংসা করে, তা অনেক সময়ই ঐ প্রতিভার অধিকারীর কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ
কখনো ওফেলিয়া গ্রেগরির সাথে দেখা হলে তুমি হয়তো ভাববে, সে নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত। তার বয়স এখন সতেরো; গাঢ় সবুজ চোখের লাবণ্যময়ী, সুন্দরী তরুণী। মা কেরি, বাবা টম এবং তিন ভাইকে নিয়ে তার সুখের পরিবার। বারো বছর বয়সে মেনসার আইকিউ টেস্টে সে ১৬৮ পয়েন্ট পায়। আঠারো বছরের নিচে অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটাই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ স্কোর; যা প্রায় স্টিফেন হকিং-এর সম পর্যায়ের, যুগান্তকারী সেই বিজ্ঞানী গত বছর মারা গিয়েছেন।
অথচ তার পরও, এই অসাধারণ প্রতিভা ওফেলিয়াকে সামান্যই সুবিধা দিয়েছে। তার কাছে ‘মেধাবী’ বলে চিহ্নিত হওয়াটা ‘ঝামেলা’ বলেই মনে হয়। এর জন্য তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়; এমনকি কয়েকবার তাকে স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেরি ওইসব বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে কি বলবেন যাঁরা প্রতিভাধর সন্তান চান? “আমি বলব, এটা একটা চমৎকার বিষয় হওয়ার কথা, কিন্তু আসলে তা নয়; তা কখনো হতেও পারে না।”
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছেন, মেধা বা প্রতিভা মানুষের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করে, কিংবা আদৌ করে কি না। অসাধারণ শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসমনিয়তভাবে বিকশিত হয়। অনন্য সাধারণ যোগ্যতা অনেক সময় বিকাশের অন্যান্য ধারাকে প্রভাবিত করে। পটেনশিয়াল প্লাসের সদস্য অ্যানড্রিয়া অ্যাংগুয়েরা বলেন, “এসব শিশুদের মস্তিষ্কের কিছু অংশ বিভিন্ন শব্দ, আকার-আকৃতি, সংখ্যা ইত্যাদি শেখার গতিকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, তা তত দ্রুত বিকশিত হয় না।”
একটা শিশু হয়তো গণিত বা অন্য কোন বিষয়ে বিশেষ দক্ষ, কিন্তু সে সহজে সামাজিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না। অথচ স্বাভাবিক জীবনের জন্য এই দিকটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। “প্রতিভাবান একটি শিশু সামাজিক হয়রানিরও শিকার হতে পারে “, অ্যাংগুয়েরা বলেন, “তারা বুঝতে পারে না তাদের সাথে অন্য সমবয়সীদের পার্থক্য কোথায়। তারা তাদের আবেগও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, একটি বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ হওয়ার অর্থ অন্যান্য বিষয় রপ্ত করার জন্য তার উপযুক্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।
অনুকূল বুদ্ধিমত্তা
বিশ শতকের শুরুর দিকে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী লিটা হলিংয়োর্থ উল্লেখ করেছিলেন সেই বুদ্ধিমত্তার কথা, যা সামাজিকভাবে সর্বাপেক্ষা কাম্য। তার মতে এই বুদ্ধিমত্তার লেভেল হল আইকিউ ১২৫ থেকে ১৫৫ এর মধ্যে। কারোর আইকিউ যদি এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আমেরিকান স্নায়ুবিজ্ঞানী নরম্যান্ড গেসউইন্ডের ভাষায় ‘প্যাথোলজি অব সুপিরিওরিটি’ দেখা দিতে পারে : মস্তিষ্কের একটি ক্ষুদ্র অংশের বিকাশের প্রাধান্য অন্যান্য অংশের বিকাশকে ব্যহত করতে পারে।
আমরা এখনো জানি না কেন, কিংবা আদৌ এই বিষয়টা প্রকৃতি, যত্ন বা উভয়ের ওপর নির্ভর করে কি না। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আমেরিকার মেনসার সদস্যদের মধ্যে এডিএইচডি (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) এর হার, সাধারণ মানুষদের মধ্যে থেকে শনাক্তকৃতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। অনেকের মতে, যেহেতু প্রতিভাবান শিশুরা সমবয়সীদের চেয়ে অনেকটা অন্যরকম হয় এবং সহজে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না, তাই খেলাধূলার প্রতিও তাদের আগ্রহ কম। কিছু ক্ষেত্রে তাদের আচরণগুলো হয় প্রাপ্তবয়স্কদের মত। তারা শিশুসুলভ খেলাধূলা করে সময় কাটায় না। ফলে তাদের সামাজিক বিকাশ যথেষ্ট সংকীর্ণ হয়ে থাকে। অ্যাংগুয়েরা বলেন, পাঁচ বছরের যে বাচ্চাটি তার অবসরে বীজগণিত নিয়ে ব্যস্ত থাকে, স্বাভাবিকভাবেই সে অন্য বাচ্চাদের সাথে গাড়ি নিয়ে খেলতে চাইবে না। কিন্তু এভাবে অন্যদের থেকে দূরে থাকতে থাকতে তাদের সামাজিক বিকাশের ধারা ব্যহত হয়। সে সহজে সামাজিকতা শিখতে পারে না।
যে সব মেধাবী শিশুদের কোনো আচরণগত সমস্যা নেই, কেনডল তাদের মধ্যে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছেন। এর মধ্যে একটা দিক হলো, যেহেতু তারা যেকোনো বিষয় নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করে, তাই তারা প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকে। কেনডল বলেন, “তোমার মস্তিষ্ক সব ধরণের পরিবর্তনশীলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম এবং এটা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে।” হিলারি তাঁর ছেলে লরেঞ্জোর ব্যাপারে আমাকে ইমেইলে লিখেছেন, “যত দিন যাচ্ছে, আমি ওর উদ্বেগের সাথে তাল রাখতে হিমশিম খাচ্ছি।” লরেঞ্জোর বয়স এখন বারো। দুই বছর আগে সে মেনসার সদস্য হয়। ফলে এখন সে অনেকের সাথে মিশতে পারছে, অনলাইনে এবং বাস্তব জীবনেও। আইকিউ টেস্টে লরেঞ্জোর স্কোর ছিল ১৬২। হিলারি বলেছেন, “আইনস্টাইনের মত।” আমি অবশ্য তাঁকে বলতে পারিনি যে আইনস্টাইন কোনদিনই তাঁর আইকিউ টেস্ট করান নি। লরেঞ্জো সবসময় চিন্তিত থাকে। তার মা বলেছেন, “কিছুদিন আগে আমরা হংকং-এর একটা প্লেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সে অনবরত প্রশ্ন করছিলো ওই প্লেনে কী কী দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে যা আমাদেরকে জানানো হচ্ছে না।”
এসব শিশুদের ঘুমানোর ধরনও অন্যদের চেয়ে আলাদা। তারা সহজে ঘুমাতে পারে না। একজন আমাকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত একবারে দেড় ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারত না।
হাইপার ব্রেইন
মেনসার আমেরিকান শাখায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি সদস্য আছে। এদের মস্তিষ্ককে ‘হাইপার ব্রেইন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সম্প্রতি তাদের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যেসব মানুষ অতি উচ্চ মেধা সম্পন্ন তাদের মধ্যে অতিরিক্ত উত্তেজনা বা তীব্র সংবেদনশীলতা দেখা যায়। এ বিষয়টির উল্লেখ করেন পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী কেজিমিয়ের্জ দেবরস্কি। এর উদাহরণ হতে পারে – পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কোনো একটির অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা, গভীর বা তীব্র আবেগ কিংবা প্রচণ্ড শারীরিক শক্তি। সাধারণ মানুষের চেয়ে এসব মানুষের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ বা এডিএইচডি-এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
প্রতিভা বা মেধা অনেক মানসিক সমস্যা, যেমন – কোনো খাবারে অ্যালার্জি, হাঁপানি বা অ্যাজমা, অটো-ইমিউন ডিজিস বা অনাক্রম্যতন্ত্রের সমস্যা, ইন্দ্রিয়ের সমস্যা ইত্যাদির সাথেও সম্পৃক্ত। এসব মানুষের কাছে অনেক সময় দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ঘটনাগুলোও অসহনীয় মনে হয়; যেমন – রেডিওর শব্দ, কোনো খাবারের স্বাদ, গন্ধ বা বর্ণ, কাপড়ে কোঁচকানো ভাব ইত্যাদি। হিলারির বিশ্বাস, লরেঞ্জোর মস্তিষ্কের কার্যক্রম, অনুভব করার ক্ষমতা খুবই সূক্ষ। “আমরা সাধারণত যেসব শব্দ শুনি না, সেগুলোও সে শুনতে পায়। যে রুমটাকে বেশিরভাগ মানুষ নীরব বলে মনে করে সেখানেও পড়াশোনা করতে তার অসুবিধা হয়। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী সোনজা ফাল্ক বলেন, “স্নায়বিক তত্ত্ব অনুসারে, যদি কেউ সব ধরণের উদ্দীপনা খুব দ্রুত বিশ্লেষণ করে এবং তাতে সাড়া দেয়, তাহলে সে যে কোনো বিষয়ে সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়বে।”
প্রতিভাবানদের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা হল ব্যর্থতা। কেনডল্ বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন – যখন কেউ অধিকাংশ বিষয়ে কোনো চেষ্টা ছাড়াই সফল হয়ে যায়, তার মধ্যে সহনশীলতা তৈরি হয় না। তিনি যেসব বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন, তারা অনেকেই সচরাচর লিখতে চায় না। তিনি যেখানে কাজ করেন সেখানে অনেক বাচ্চা টুইস্টার খেলে। এই খেলাটা রঙিন ডট দেয়া একটা প্লাস্টিক ম্যাটের ওপর খেলতে হয়। কেনডল্ বলেন, “ওদেরকে অনেক সময়ই ঠিকভাবে বোঝা যায় না। তাই ওদেরকে অনেক কিছুই শেখানো হয় নিছক আনন্দের জন্য।”
রেবেকার মেয়ে লিজির বয়স পাঁচ বছর। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই লিজি পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে শিখেছিল। ষোলো মাস বয়সে সে আটচল্লিশ টুকরার পাজল মিলিয়ে ফেলেছিল। দুই বছর হতে না হতেই সে ‘দ্য গ্রাফালো’ কবিতা আবৃত্তি করতে পারতো। কবিতাটি চব্বিশ পৃষ্ঠার একটি কাহিনী কবিতা। একদিন লিজিকে গোসল করানোর সময় রেবেকা তার ফেস ক্লথের কথা ভুলে গিয়েছিলো। তখন লিজি বলে ওঠে, “মা, তুমি জঘন্য!” তিন বছর বয়সে সে বলেছে, “মা, আমি দেখতে মোটেও সুন্দর না, আর এটা আমার ক্রোমোজোমের দোষ।” অন্য অনেক ‘গিফটেড’ বাচ্চার মত সেও ছোট-খাট বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। রেবেকা বলেন, “কখনো কখনো ওর জন্য আমার কষ্ট হয়। আমি শুধু চাই ও অন্য পাঁচটা বাচ্চার মত স্বাভাবিক হোক।”
গতানুগতিক সমস্যা
বিষয়টা বেশ জটিল। বাসায় মেহমান আসলে রেবেকা লিজির খেলনাগুলো সরিয়ে ফেলেন। যেন তারা বুঝতে না পারে লিজি তার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বোঝে। তার কারণ মানুষ এসব বাচ্চাদের হেরে যেতে দেখতে চায়। রেবেকা বলেন, “আমি লিজিকে আড়ালে রাখি।” রেবেকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষক; অথচ নিজের মেয়েকে কিছু শেখাতে গেলে তাকে কী শেখাবেন তা বুঝতে পারেন না।
সোনজা ফাল্ক ‘গিফটেড’ কথাটার সাথে পুরোপুরি সহমত হতে পারেন না, কারণ এই শব্দটা ইতিবাচক অর্থ প্রকাশ করে; এটা দ্বারা বোঝায় অন্যদের চেয়ে মেধাবীরা বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। অথচ মেধা বা প্রতিভা সব সময়ই সুবিধা নয়। “যার মেধা আছে সে যদি উপযুক্ত পরিচর্যা বা সহযোগিতা না পায়, তাকে অনেক ভুগতে হয়। অথচ তার সেই সমস্যাটা অনেকেই বুঝতে চায় না।” ফাল্ক আমাকে এমন একজন ক্লায়েন্টের কথা বলেছেন, যিনি গর্ভপাত করিয়েছেন এই জন্য যে, তার ভয় ছিল, তার সন্তানও যদি তার মত মেধা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাহলে তাকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
এমিলির ছেলে পিটারের বয়স নয় বছর। সে ছোটখাটো গড়নের ছিল। তাই সে সমবয়সীদের সাথে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো না। এমিলি বলেন, “যখন সে নার্সারিতে ছিল, সারা সকাল সে কাঁদতে থাকতো।” ছোটোখাটো ও দুর্বল হওয়ায় এবং অন্যদের সাথে মিশতে না পারায় স্কুলে মার খেয়ে তিন বার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিলো। অন্য অনেকের মত খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও তার অনেক সমস্যা হয়। কারণ সে খাবারের টেক্সচারের প্রতি সংবেদনশীল। কিন্তু পিটারের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দৈনন্দিন জীবনে একঘেয়েমি। স্কুলের সময়টা তার কাছে খুবই একঘেয়ে মনে হয়। তবে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই বিষয়টাকে কোনো সমস্যাই মনে করেন না। তিনি এমিলিকে বলেছেন, “জীবনে কিছুটা একঘেয়েমি থাকা ভালো।”
কিন্তু এই একঘেয়েমি অনেক সময় অত্যাচারের মত হয়ে ওঠে। ফাল্কের পরামর্শ, উচ্চ মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের দিনে অন্তত কিছুটা সময় (ব্রিটিশ কারিকুলাম অনুযায়ী) জিসিএসই বিষয় রপ্ত করার কাজে ব্যয় করা প্রয়োজন। বিষয়টা তিনি এভাবে তুলনা করেছেন, যেমন একজন দৌড়বিদকে প্রতিদিন কিছুটা সময় ধীরে হাঁটার অভ্যাস করতে হয়।
পিছিয়ে যা্ওয়া
কিভাবে একটা প্রতিভাবান শিশুর জন্য তার উপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়? সমস্যাটি বেশ জটিল, অনেক সময় প্রতিযোগিতামূলক। একদিকে তারা অনেক বিষয় সমবয়সীদের আগেই রপ্ত করে ফেলে; অন্যদিকে যেহেতু তাদের সামাজিক বিকাশ যথাযথভাবে হয় না, তারা অন্যদের মতো সমাজের গতানুগতিক ধারার সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। এমন অনেক বিষয় যা মুখে বলা হয় না, আচার-ব্যবহার বা অঙ্গ-ভঙ্গিতে বুঝে নিতে হয় বা প্রকাশ করতে হয়, তারা সেগুলো আয়ত্ত করতে পারে না। সে কারণে অন্য বাচ্চারা এমনকি অনেক সময় বড়রাও এসব বাচ্চাদের এড়িয়ে চলতে চায়। প্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে শিক্ষকদের কাছে এসব বাচ্চারা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটা ছোট্ট ছেলে বা মেয়ে যদি তোমার সাথে তোমার বয়সীর মত আচরণ করে, তাহলে তা তোমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। কারণ তারা প্রকৃতপক্ষেই বড়দের চেয়ে অনেক বেশি জানে এবং সেটা তারা না চাইতেই প্রকাশ করে ফেলে।
পটেনশিয়াল প্লাসে টমের আইকিউ টেস্টের পর ক্রিসি অনেকের কাছে পরামর্শ নিতে থাকেন, কিভাবে টমের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। একটা বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন, দক্ষিণ-লন্ডনের ঐ প্রাইমারি স্কুল টমের জন্য যথেষ্ঠ নয়। সেখানে শুধু একজন শিক্ষক, টমের কাছে যিনি ‘অসাধারণ’, তিনি গণিতের প্রতি টমের আগ্রহকে উৎসাহিত করেছেন। তাকে অতিরিক্ত সময় দিয়ে অনেক কিছু শিখতে সাহায্য করেছেন। তাছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক তাকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। একজন তো তাকে হেয় করতে বিশেষ আনন্দ পেতেন। ক্লাসে সবার সামনে বলতেন, “আজকের অঙ্কটা মনে হয় টমের কাছে কঠিন লাগছে।” অথচ তিনি এ কথা উল্লেখ করতেন না যে টম তার চেয়ে দশ বছরের বেশি বয়সীদের উপযোগী অঙ্ক করার চেষ্টা করছে।
ক্রিসি কে বলা হয়েছিলো, তার কাছে দুটি উপায় আছে। হয় তিনি টমকে বাড়িতে পড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারেন, অথবা তাকে প্রাইভেট স্কুলে পড়াতে পারেন। দুটিও কোনোটিই তিনি বেছে নিতে পারছিলেন না। কারণ বাড়িতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করলে সেটা টমের একাকীত্ববোধ বাড়িয়ে দেবে। আবার প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্যও তাঁদের ছিল না। যাহোক, টম একটা বৃত্তি পায় এবং লন্ডনের একটা নামী স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, যেখানে বাৎসরিক বেতন প্রায় বিশ হাজার ইউরো। সেখানেও অন্যদের সাথে মেশা তার জন্য বেশ কঠিন ছিল। সে অবাক হতো অন্যদের সাথে তাদের আর্থিক অবস্থার পার্থক্য দেখে। তবে সেখানে পড়াশোনার মাঝে সে আনন্দ খুঁজে পেতো। তার গণিতের শিক্ষক সম্পর্কে সে বলেছে, “আমি তাঁকে খুবই পছন্দ করি। তিনি আমাকে অনেক কঠিন কঠিন অঙ্ক করতে দেন।”
উচ্চ মেধাসম্পন্ন শিশুদেরকে কোন বয়সের মানুষের সাথে মিশতে দেয়া উচিত, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তাদেরকে যদি তাদের বয়সের চেয়ে উপরের ক্লাসে দেয়া হয়, তাহলে তাদের সামাজিক বিকাশে সমস্যা হবে। আবার তা যদি না করা হয় তাহলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যহত হবে। অস্ট্রেলিয়ার মোনার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লিরনি ক্রোনবোর্গ বলেন, ‘‘এধরনের শিশুদের সামাজিক ও মানসিক – উভয় ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন।” তিনি প্রতিভাবান কিশোর-কিশোরীদের জন্য আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের “আর্লি এন্ট্রান্স প্রোগ্রাম”-এর কথা বলেছেন। স্কুলের পড়ার পাশাপাশি তারা গ্রুপ করে নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এতে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও বাধা আসবে না, আবার তারা সমবয়সীদের সাথে থেকে সামাজিকতাও শিখতে পারবে।
অনেক বাবা-মায়েরা স্কুলের প্রতি সন্তানের অনীহা বা তাদের অসুবিধা দেখে নিজেরানিজেরা সব ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেন। উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সন্তানদের বাড়িতে পড়াশোনা করানো খুবই সাধারণ ব্যাপার, অথচ ক্রিসির মত সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
১৯৮০ সালের দিকে এক বাবা – মেয়ে, হ্যারি ও রুথ লরেন্স, ট্যানডেম সাইকেলে চড়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় ঘুরে-বেড়াতে শুরু করে। হ্যারি তাঁর কম্পিউটিং – এর ক্যারিয়ার ছেড়ে রুথকে পাঁচ বছর বয়স থেকে বাড়িতে পড়ানো শুরু করেন। বারো বছর বয়সে রুথ অক্সফোর্ডে গণিতে পড়ার সুযোগ পায়। রুথের সব ক্লাসে হ্যারি তার সাথে থাকতেন যেন সে অন্যদের সাথে গল্প করে সময় নষ্ট না করে। বর্তমানে রুথ একজন গণিতবিদ হিসেবে চাকরি করছে, তবে সে ‘অসাধারণ’ কিছু হতে পারেনি। তার প্রথম সন্তান হওয়ার পর সে বলেছিলো, সে কখনই তার সন্তানকে প্রয়োজন বা বয়সের চেয়ে অতিরিক্ত পড়াশোনার জন্য চাপ দেবে না।
হারিয়ে যা্ওয়া আইনস্টাইন
কোনো কোনো দেশে গিফটেড শিশুদের উপযোগী পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রতি বছর অসাধারণ প্রতিভাদের খুঁজে বের করার জন্য একটা কর্মসূচী পরিচালনা করা হয়। আট – নয় বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের গণিত, ইংরেজি ও যুক্তিবাদী দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। এখান থেকে শতকরা এক শতাংশ শ্রেষ্ঠ বাচ্চাকে সাধারণ ক্লাস থেকে “গিফটেড এডুকেশন প্রোগ্রাম” এ পাঠানো হয়, যা দেশের প্রায় নয়টি প্রাইমারি স্কুলে পরিচালিত হয়। সেখানে এই বাচ্চাদের বারো বছর বয়স পর্যন্ত পড়ানো হয়। এরপর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করতে পারে। এই কর্মসূচিতে বাছাইকৃত ছেলেমেয়েদের ‘পার্সোনালাইজড্’ বা স্বতন্ত্রভাবে পড়ালেখা করার সুযোগ দেয়া হয়; যার মধ্যে রয়েছে – নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গভীর ও বিস্তৃত জ্ঞান অর্জনের সুযোগ, ইন্টারনেটে বিভিন্ন কোর্সে অতিরিক্ত পড়াশোনার সুযোগ, খুব কম বয়সেই প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ইত্যাদি।
তবে এসব শিশুদের শুধু শিক্ষা অর্জনের বিষয়ে জোর দেয়ার বিষয়টি বেশ বিতর্কিত। ২০০৭ সাল থেকে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন শিশুদের সামাজিকতা শেখানোর জন্যও চেষ্টা চলছে। তবে এ ধরনের প্রচেষ্টায়ও গতানুগতিক ‘মেধা’ – র ধারণা প্রতিফলিত হয় – নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ‘আপাত দৃষ্টিতে’ সহজাত মেধা যাচাইকরণ। এর বাইরে শিক্ষাবিদরা আরও বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে অসাধারণ মেধাবী শিশুদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সেই সাথে চেষ্টা করছেন এই শিশুদের আচার – আচরণ ও নিজেদের সফল করে তোলার দিকে তাদের মনোযোগ বাড়াতে।
নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের “প্রজেক্ট ব্রাইট আইডিয়া” তে দশ হাজার সাধারণ বাচ্চাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিল, যারা প্রাইমারি বা নার্সারিতে পড়ত। তাদেরকে এমন কিছু পদ্ধতি শেখানো হয়েছিলো যা সাধারণত বুদ্ধিমানেরা কাজে লাগায়। যেমন – উচ্চ আকাঙ্ক্ষা পোষণ ও জটিল সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করা, মেটা-কগনিশন (কারোর চিন্তাধারা বোঝার ক্ষমতা) বাড়ানো ইত্যাদি। পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে, স্কুলের পরীক্ষাগুলোতে তারা অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো করেছে।
টম, ওফেলিয়া, লরেনজো কিংবা পিটার – ওদের কি হবে? হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রাজ শেঠী হিসাব করে দেখেছেন, শতকরা ৫ জন শিশু, যারা প্রাইমারি স্কুলের পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো করে, তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মত করে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থাকে। আর এই সম্ভাবনা বিত্তশীল পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে আরও বেশি। মানুষের জন্মগত মেধা বা প্রতিভা যেমনই হোক না কেন, যারা শৈশবে পর্যাপ্ত পরিচর্যা ও সুযোগ-সুবিধা পায়, জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা তাদেরই বেশি।
অনেকে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও জীবনে সফল হতে পারে না। যেসব শিশু তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য উপযুক্ত সুযোগ কিংবা উৎসাহ পায়নি, যারা তাদের একাকীত্ব বা বিচ্ছিন্নতা মোকাবেলা করার জন্য কারোর সহযোগিতা পায়নি, রাজ শেঠীর ভাষায় তারা হল ”হারিয়ে যাওয়া আইনস্টাইন”। এমন অনেকে আছে যাদের যোগ্যতা গতানুগতিক আইকিউ টেস্টের মাধ্যমে নিরূপণ করা যায় না। আবার এমন অনেকে আছে যারা পরবর্তী জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়, কারণ কর্মক্ষেত্রে তারা হয়তো সহজে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না বা মানিয়ে চলতে পারে না।
১৯২০ সালে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী লুইস টারম্যান উচ্চ মেধাসম্পন্ন ১৫০০ শিশু নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ৭০ বছর পর কয়েকজন ব্যক্তি ওই গ্রুপটাকে খুঁজে বের করেছিলেন। দেখা যায়, আর্থ সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে যতটুকু আশা করা যায়, কেউই তার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারেনি। আবার ওই গ্রুপের একজন, যার সম্বন্ধে টারম্যানের ধারণা ছিল সে খুব একটা মেধাবী নয়, পরবর্তীতে ট্রানজিস্টর আবিষ্কারে অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
একটা বেদনাদায়ক শৈশবের ভার সারাজীবন বহন করতে হয়। কিম উং ইয়ং দক্ষিণ কোরিয়ার এক অসাধারণ প্রতিভা, যাকে বলা যায় ‘চাইল্ড প্রোডিজি’। বর্তমানে তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর এবং তিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর মতে তাঁকে শৈশবে ঠকানো হয়েছিলো। ছয় মাস বয়সে তিনি কথা বলা শিখেছিলেন এবং দুই বছর বয়সে চারটি ভাষা রপ্ত করেছিলেন। আট বছর বয়সে তিনি তাঁর প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তাঁকে নাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, “আমি যন্ত্রের মতো জীবনযাপন করেছি। ঘুম থেকে ওঠা, প্রতিদিনের সমীকরণগুলো সমাধান করা, খাওয়া, ঘুমানো । এই ছিল আমার জীবন। আমার কোনো বন্ধু-বান্ধব ছিল না। নিজেকে খুব একা মনে হতো।” এমনকি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, বিশ্বের অসাধারণ ব্যক্তিদের মধ্যে যিনি অন্যতম, তিনিও ১৯৫২ সালে লিখেছিলেন, ‘‘বিষয়টা বড়ই অদ্ভুত, সারা দুনিয়া আমাকে চেনে, অথচ তারপরও আমি একা।”
আজকের প্রতিভাবানদের নিয়ে এটা ছিল একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা। টমের মা ক্রিসি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন। তিনি বলেন, ‘‘যদি এরকম অন্তত একটা বাচ্চা দেখাতে বলি যার পরিণাম ভালো হয়েছে, কাউকেই পাওয়া যাবে না।” তারপর টমের দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, “মনে হয় তুমিই হবে প্রথম উদাহরণ।”
সারাফ তাসনীম, মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজ
“মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা” এই ব্রত নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় “রাজউক উত্তরা মডেল” কলেজ ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে।সে পথে উত্থান ছিলো,ছিলো কিছু পতনের গল্প।সেই কলেজ জীবনটাকে একটু রঙিন করে সাজিয়ে তুলি চলুন।
কলেজে ঢোকার পথেই চোখে পড়বে একটা মস্ত গেইট।গেইটের পাশে কালো পোশাকের কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী। কলেজে এনারা মামা বলেই পরিচিত।আপাতদৃষ্টিতে পাথুরে চোখের মনে হলেও তাদের মধ্যে রসের কমতি নেই।আপনি কতটা নিংড়ে নিতে পারেন সেটাই বিবেচ্য।ভেতরে ঢোকার পরেই একটা সুদৃশ শহীদ মিনার,তার পাশেই হেল্প ডেস্ক চোখে পড়বে।সামনে দুটো বাস্কেটবল গ্রাউন্ড আর ওপাশে খেলার মাঠ।সোজাসুজি অপর পাশে ক্যান্টিন।করিডোর ধরে কলেজ বিল্ডিং এ প্রবেশ করা যেন এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করা।হেটে যেতে চোখে পড়বে গ্যালারি।সাকিব আল হাসানের রাজউক এ আসার ছবি থেকে শুরু করে অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের এ কলেজে আসার ছবি,প্রাক্তন অধ্যক্ষ থেকে বর্তমান অধ্যক্ষের ছবি,কলেজের বেস্ট অফ দি বেস্টদের ছবি,তার পাশে কলেজের কিছু সার্টিফিকেট।বলতে গেলে হেঁটে যেতে যেতে একনজরে কলেজটা নিয়ে জানবেন।
রাজউক কলেজে মোট দুটি শিফটে ক্লাস হয়।প্রভাতি আর দিবা।দুটি শাখায় রয়েছে বাংলা ইংরেজি মাধ্যম।সবমিলিয়ে এটাকে বলা হয় উইং।কলেজে মোট উইং চারটি।প্রতিটি উইং এর পোশাক আলাদা।আর সব শিক্ষার্থীর রয়েছে আইডি কার্ড ও নেমট্যাগ।এভাবেই একজন শিক্ষার্থীকে দেখেই আপনি তার সম্পর্কে কিছু সাধারণ তথ্য জানতে পারবেন।
রাজউক কলেজের ক্লাসরুমগুলো একটা বিচিত্র জায়গা। এখানে প্রায় সব ধরণের মানুষ এর দেখা পাবেন সহপাঠী হিসেবে।কেউ তুখোর গণিতবিদ, কেউবা সুরের মোহ ছড়িয়ে দেয় গানে,কারো দৃপ্ত গলার আবৃত্তি মোহের জগত তৈরী করে,কেউ বা দারুণ ছবি আঁকে,কারো কবিতা,গল্প শুনে হয়ত মনেই হবেনা সেগুলো আপনার সহপাঠী লিখতে পারে।কেউ ঢাকার বাসিন্দা তো কেউ সূদুর কুড়িগ্রাম,কক্সবাজার,পঞ্চগড় থেকে এসেছে।উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত এই পরিচয়টা অনেকটাই ঘুচে যায়।এখানে সবাই সমান।সবাই এক একজন রাজউকিয়ান।
রাজউক কলেজে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ এই ছয় বছরের বর্ণিল জীবনে দেখা পাবেন দু’শ এর অধিক শিক্ষক শ’খানেক অফিস সহকারী এবং মামাদের।কলেজের শিক্ষকদের সবাই ভালো বিশ্ববিদ্যালয় এর ভালো ডিগ্রিধারী।আর তাদের পড়ানোর ধরণ অসাধারণ।কিছু শিক্ষক রয়েছেন বন্ধুর মতো,কেউ গম্ভীর,কেউ বেরসিক ক্লাসের পাঠ শেষ করান আবার কেউ বলেন আজ একটু গান বা গল্প হলে মন্দ হয়না।
অবকাঠামোগত দিক দিয়ে রাজউক কলেজ অসাধারণ।কলেজে দুটো ভবন রয়েছে। একটি তিন তলা ভবন আরেকটি তিনটি ভবনের সমন্বয়ে করা।এটি কলেজের মূল ভবন।ভবনের মাঝখানে পাবেন একটি বর্গাকার সবুজ মাঠ। আলো আসা যাবার জন্যই করা।কলেজে রয়েছে এক সুবিশাল লাইব্রেরি। ক্লাসের আগে,ক্লাসের পরে,টিফিন আওয়ারে ইচ্ছেমতো বই পড়া যায় এখানে।তবে অনেকেই ভীড় করে এসির বাতাস খাবার জন্য। কলেজে রয়েছে একটা জিমনেশিয়াম, নামাজের ঘর,সুসজ্জিত কম্পিউটার ল্যাব যেখানে কেউ কম্পিউটার এ কাজ করতে যায়,কেউ যায় লুকিয়ে গেমস খেলতে।অনেককেই আবার কম্পিউটারের থেকে ঘুম বেশি টানে।কলেজের বিল্ডিং নবাগতদের কাছে চোরাগলির মতোই।কলেজের ক্যান্টিনের ডিজাইন টাও দারুণ। তবে হ্যাঁ ভোজনরসিক হলে মোটেও ক্যান্টিন এর খাবারের ওপরে আস্থা রাখবেন নাহ।
কলেজের সেন্ট্রাল হল বোধহয় সবচেয়ে মজার জায়গা।স্টেজ দাপানো সব তারকারা এই সেন্ট্রাল হল দাপিয়েছেন একসময়।তুখোড় বক্তব্য দেয়া ছাত্র আজকে হয়ত বড় বিতার্কিক, নাচের মুদ্রা তোলা মেয়েটা আজকে নুসরাত ফারিয়ার মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রী, সেন্ট্রাল হলের পেছনে বসে টুংটাং গিটারে সুর তোলা ইকরাম ওয়াসি আজকে কনক্লুশন ব্যান্ডের গিটারিস্ট, Trainwreck ব্যান্ড যারা বিদেশের কনসার্টে স্টেজ শেয়ার করে তাদের গিটারিস্ট ও এই ছেলেটাই।সেন্ট্রাল হলে আপনি দেখা পাবেন ভবিষ্যৎ এর কিছু সুপারস্টারদের। তবে বিশেষ সম্প্রদায়ের দেখা পেতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত ওয়াশরুমে যাতায়াত থাকতে হবে।কখনো হয়ত বিরস ক্লাস ভালো লাগছেনা এসে পড়লেন ওয়াশরুমে কিংবা আড্ডা দিতে ক্যান্টিনে, আর খুব সাহসী হলে সেন্ট্রাল হলে। অনেকে আবার লিফটে বা সিড়িতেও ঘুরে বেড়ায়।তবে সাবধান ভাইস প্রিন্সিপাল,এডজুটেন্টদের খপ্পরে পড়লে রক্ষা নেই।কলেজের সেন্ট্রাল হল বোধহয় সবচেয়ে মজার জায়গা।স্টেজ দাপানো সব তারকারা এই সেন্ট্রাল হল দাপিয়েছেন একসময়।তুখোড় বক্তব্য দেয়া ছাত্র আজকে হয়ত বড় বিতার্কিক, নাচের মুদ্রা তোলা মেয়েটা আজকে নুসরাত ফারিয়ার মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রী, সেন্ট্রাল হলের পেছনে বসে টুংটাং গিটারে সুর তোলা ইকরাম ওয়াসি আজকে কনক্লুশন ব্যান্ডের গিটারিস্ট, Trainwreck ব্যান্ড যারা বিদেশের কনসার্টে স্টেজ শেয়ার করে তাদের গিটারিস্ট ও এই ছেলেটাই।সেন্ট্রাল হলে আপনি দেখা পাবেন ভবিষ্যৎ এর কিছু সুপারস্টারদের। তবে বিশেষ সম্প্রদায়ের দেখা পেতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত ওয়াশরুমে যাতায়াত থাকতে হবে।কখনো হয়ত বিরস ক্লাস ভালো লাগছেনা এসে পড়লেন ওয়াশরুমে কিংবা আড্ডা দিতে ক্যান্টিনে, আর খুব সাহসী হলে সেন্ট্রাল হলে। অনেকে আবার লিফটে বা সিড়িতেও ঘুরে বেড়ায়।তবে সাবধান ভাইস প্রিন্সিপাল,এডজুটেন্টদের খপ্পরে পড়লে রক্ষা নেই।
রাজউক কলেজ ক্লাবিং করার জন্য বিশাল প্ল্যাটফর্ম দেবে আপনাকে।এখানকার ফটোগ্রাফি ক্লাব তো দেশজুড়ে বিখ্যাত।এর পাশাপাশি ডিবেট ক্লাব,ন্যাচার ক্লাব, আর্ট ক্লাব,মেডিটেশন ক্লাব, ফুটবল ক্লাব,ক্রিকেট ক্লাব,বাস্কেটবল ক্লাব,আইটি ক্লাব সারাবছর জুড়ে একটিভ থাকে।কলেজে প্রতিবছর ইন্ট্রা ট্যালেন্ট হান্ট আয়োজিত হয়,আয়োজিত হয় ট্যালেন্ট শো।প্রতি সপ্তাহের শনিবারে শেষ দুই পিরিয়ড থাকে ক্লাব ডে।আর ক্লাব আয়োজিত ফেস্ট তো থাকছেই।
কলেজের ডিসিপ্লিন খুবই কড়া সত্য তবে আপনার মেধা বিকাশের জন্য,নিজেকে তুলে ধরবার জন্য এই সাড়ে চার একরের প্রতিষ্ঠান আপনাকে প্রচুর সু্যোগ দেবে।বিশাল বিশ্বের সামনে আপনাকে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।আর দিনশেষে যখন র্যাগ ডে এর টিশার্ট গায়ে কলেজ থেকে চলে যাবেন তখন আনমনেই বলে উঠবেন”দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলোনা।”
‘My favourite hobby’ প্যারাগ্রাফ বা কম্পোজিশন লেখার সময় আমরা সবসময় hobby হিসাবে ‘Gardening’ বা ‘বাগান করা’ কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কয়জন নিজে থেকে ছোট্ট একটা চারাগাছ যত্ন করে টবে লাগাই? বাগান করা তো আরও দূরের ব্যাপার। এমন অনেকে আছে, যাদের বারান্দায়, ছাদে, বাড়ির সামনে উঠানে সব জাগায় ছেয়ে থাকে সবুজে। আমাদের মধ্যে যদি এমন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় তাহলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন নামক সমস্যাটা খুব সহজেই মোকাবেলা করা যাবে।
আমাদের বাগান:
আজ আমি আমাদের বাগানটাকে স্বল্প ভাষায় তুলে ধরব। আমাদের বাগানে ২০ প্রজাতির ফুল, ২০ প্রজাতির ফল ও ২৫ প্রজাতির সবজির গাছ রয়েছে। বাসার ভেতরে বারান্দা, বাড়ির সামনে উঠানে এবং ছাদের অর্ধেক অংশ জুড়ে আমার এই বাগান। বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুলের দ্বারা উঠানের সামনের অংশ উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। গাঁদা, চন্দ্রমলিকা, মে ফ্লাওয়ার, হলিহক, বেলি, মর্নিং গ্লোরি, ডালিয়া, সূর্যমূখী একেক মৌসুমে একেক রঙে সেজে ওঠে বাগানের একেক জায়গা। অক্টোবরে শিউলির কমলা-সাদা বিছানায় ভরে উঠে পুরো উঠান। আর ক্যাকটাস, রঙ্গন, মোরগ ফুল, বাগান বিলাস, মাধবীলতা, কাঠগোলাপ ইত্যাদি ছেয়ে থাকে সারা বছর। বারান্দার টবের অপরাজিতা, মাইক ফুল, নীলকণ্ঠ বাড়ির ভিতরের ব্যস্ততায় আনে রঙিনতা।
বাসার পাশে পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে চার-পাঁচটা ডাব গাছ। বাড়ির পূর্বদিকের তেঁতুলগাছের জন্য এখনো জায়গাটা তেঁতুলতলা নামে পরিচিত পুকুর পাড়ের পাশে গলাগলি করে খেঁজুর আর সুপারি গাছ দাড়িঁয়ে।আর গ্রীষ্মকাল এলেই আম আর জামের মুকুলে মৌ মৌ করে পুরো বাগান।নতুন লাগানো লিচু গাছে এবার অনেক লিচু ধরেছে। আর এবার শীতকালে বরই আর কলম বরই এর গাছ পুরো বরই এ-ছেয়ে ছিল। পাতা পর্যন্ত দেখা যেত না। খুব শখ করে এই শীতে স্ট্রবেরি লাগিয়েছিলাম এবং অনেক যত্নের ফল হিসাবে পেয়েছি অনেক স্ট্রবেরি ফল।এছাড়া ছাদে মাল্টা গাছে ফুল এসেছে আর পেয়ারাগুলোও প্রায় বড় হয়ে গেছে। ছাদের ডালিম গাছের ডালিমগুলো বেশ বড় ও লাল হয়েছে।
ছাদ থেকে নিচে তাকালে দেখা যাবে এক পুরো অংশ জুড়ে আঙ্গুরের বাগান।চোখের সামনে আঙ্গুর সবুজ রঙ থেকে বেগুনি হতে দেখা আসলেই ভাগ্যের বিষয়। আঙ্গুরের বাগানের পাশেই আতাগাছে ফুল এসেছে আর পেঁপে গাছে তো পেঁপেতে নুয়ে পড়েছে। লেবু, বাতালি লেবুর কথা না বললেই নয়। ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া লেবু গাছের লেবু দিয়েই আমাদের প্রতিদিন চলে যায়।আর বাতাবি লেবুর ভারে গাছটি একদিকে নুয়ে পড়েছে।
সবজি বাগানের কথা তো এখনো শুরুই করিনি। বাগানের চারকোণায় ইট দিয়ে ঘেরা র্বগের মতো চারটা অংশ রয়েছে যা পুরোটায় সবজিতে ভরা।বাগানের উত্তর-পূর্বদিকে সারিতে রয়েছে লালশাক, পালংশাক,কচু ,মৌলভি কচু,ধনেপাতা ও টমেটো। আর ইটের ঘেরা অংশের চারপাশে টবে রয়েছে মরিচ গাছ আর ক্যাপসিকাম।বাগানের উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে করলা,শসা ,লাউ,সীম,মিষ্টিকুমড়া,ডুমুর গাছ। বাগানের দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে হলুদ, রসুন, পেঁয়াজ, আলু ও পুঁইশাক। এবং দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে সজনা গাছ, বেগুন ও ঢেঁড়শ গাছ।এবং এই অংশের পাশে টবে রয়েছে এলোভেরা,তুলসী,থাইগ্রাস ও পুদিনা।
মেহেদি ও নীম গাছ সহ অসংখ্য পাতাবাহার রয়েছে বাগান,ছাদ ও বাসার ভেতরে। এই পুরো বাগানের যত্ন নিই আমরা পরিবারের প্রত্যেক সদস্য বিশেষত আমার বাবা-মা। আমার বাবা-মায়ের পরিশ্রম,যত্ন ও গাছের প্রতি ভালোলাগা থেকেই গড়ে উঠেছে আমাদের এই ছোট্ট বাগান।তাই সবার প্রথমে ধন্যবাদ আমার বাবা-মাকে।
সবার অবাক হওয়ার কথা, কিন্তু অবাক হবেন না। একাধারে আম জাম, লিচু, ডাব, তেঁতুল, বরই, নিম, ডুমুর, জামরুল গাছ আর অন্যদিকে শাকসবজির জন্য নির্ধারিত জায়গা, এগুলোর জন্য বড় জায়গার প্রয়োজন কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমাদের বাড়ির সামনে কিছু জায়গা আছে। তবে এ জায়গায় কোন এক প্রজাতির গাছ না লাগিয়ে অনেক প্রজাতির একটি-দুইটি করে গাছ লাগিয়ে নিজেদের মতো করে বাগান করা হয়েছে।
আপনাদের বাগান:
ছোট ছোট ফুলের গাছ টবে লাগানো, ছাদে বড় বড় বড় টবে ফুল, ফল বা সবজির চাষ,বাড়ির সামনে উঠানে পাতাবাহার,সবজি, ফুল-ফল লাগানো, এভাবেই আস্তে আস্তে, একটা একটা গাছ লাগানোর মাধামেই শুরু হবে পথযাত্রা। এভাবে আস্তে আস্তে একটা গাছ থেকে গড়ে উঠবে আপনার নিজের পছন্দের বাগান। সকলকে গাছ লাগাতে ও বাগান করতে উব্দুদ্ধ করছি।
সেই ছোট্ট বেলায় আমার এই যায়গার সাথে পরিচয়। বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতা সব ই পাওয়া আমার প্রাণের পরিবার এর কাছ থেকে। আমার প্রাণের পরিবার এর সদস্য আমি যখন পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু তখন থেকে।
হ্যাঁ আমি আমার প্রিয় বিদ্যালয় মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজ এর কথা বলছি। তখন যদিও এই স্কুলের নাম এটা ছিলো না। ২০০৪ সালে আমার মা সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে প্রিপারেটরী পরিবার এর সদস্য হন।
তখনকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী উচ্চ মাধ্যমিক ও বালিকা বিদ্যালয়ে তখন থেকেই আমার যাতায়াত শুরু। তখন সেখানে যেতাম “মিসের মেয়ে” হিসেবে।
তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সালে আমি পাকাপোক্তভাবে এই পরিবারের সদস্য হয়ে উঠি।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এর নীল-সাদা সেই পোশাকে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেটে বেড়ানো শিশু হয়ে একদল ছোট্ট সৈনিকের বেড়ে ওঠা শুরু হয় সেই বছর।
লাল পরী নীল পরী গানের সুরে ঘুরে বেড়ানো, হাম্পটি ডাম্পটি ছড়ায় হাসাহাসি করে গড়িয়ে পড়া, লুকোচুরি খেলার মতো আরও অনেক খেলায় মেতে ওঠা ছিলো আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গি।
এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি কোনায় কোনায় রয়েছে হরেক রকম স্মৃতি। সেই ২০০৫ সালে প্লে গ্রুপে পড়ার সময় থেকেই যার শুভ সূচনা। নানা ধরনের স্মৃতিতে স্মৃতির ডালা ভরে উঠতে থাকে আমাদের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকা ও আনন্দ:
আমার জীবনের প্রথম শিক্ষিকা হিসেবে আমি পাই আমার অত্যন্ত প্রিয় হিমানী মিস কে। প্লে গ্রুপে একেকটি ক্লাসে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করলেও মাঝে মাঝেই আমাদের সবকটি শাখা একত্র করে নানা ধরনের খেলা শেখানো হতো।
নিজে নিজে দাত ব্রাশ করা থেকে শুরু করে ডিমের খোশা দিয়ে নানান ধরনের জিনিস বানানোর শিক্ষাটাও দিয়েছে আমাদের এই স্কুল। হাসি খুশির সাথে বেড়ে উঠি।
প্লে গ্রুপের আরো কিছু শিক্ষকের নাম না বললে অপরাধ করা হবে। আমাদের প্লে গ্রুপের প্রত্যেকটি শিক্ষক এর সাথেই ছিলো আমাদের পরম আত্মিয়তা। কৌশিক স্যার, কাঞ্চি মিস, রায়হানা মিস, শামসুন নাহার মিস, হিমানী মিস এর মতো অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে পেয়েছিলাম ভাগ্যের জোরে।
আর তার সাথে ছিলেন আমাদের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর প্রিয় শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক সুফিয়া খাতুন মিস।
শুধু সেই প্লে গ্রুপ ই নয় বরং সেই ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে অজস্র স্মৃতি।
প্রতিটি বছরে নতুন ভাবে নিজেকে জানা, নিজের ক্ষুদ্র কিছু প্রতিভার সম্পর্কেও জানতে পারি এই বিদ্যালয়ে থাকাকালীন ই।
প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় ইংরেজিতে একটি ৫ বাক্যের ছড়া লিখে স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিলো, তারপর থেকেই একটু একটু করে এই লেখালেখির চর্চা শুরু করি।
তারপর ২০১১ সালে চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী থাকাকালীন একুশে ফেব্রুয়ারি বিষয়ক একটি প্রবন্ধ লিখে শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধের পুরষ্কারে পুরষ্কৃত হই।
তাছাড়াও কবিতা আবৃত্তি করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার গ্রুপ এ শ্রেষ্ঠ আবৃত্তিকার হিসেবে পুরষ্কারজয়ী হই।
বর্ধিত পরিবার:
এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা, আয়া-বুয়া, দারওয়ান- অফিসার প্রত্যেকটি মানুষই হয়ে উঠেছে আমাদের একান্ত আপন।
এই বিদ্যালয়ের একেকটি ক্লাসে প্রতি বছর গড়ে ওঠে একেকটি পরিবার ও তার নানা ধরনের কাহিনি।
প্রথম শ্রেণিতে অধ্যায়ন কালে আমার সেই প্রথম শিক্ষিকা চলে যান অন্য কোথাও চাকরি নিয়ে, সৌভাগ্যবসত এখনো আমার তার সাথে যোগাযোগ আছে।
এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উঠে গেলে আগের ক্লাস এর শিক্ষক শিক্ষিকা কখনো কোনো কাজে আমাদের ক্লাসের আশেপাশে দয়ে হেটে গেলে তার প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হতো ৫০ জনের আক্রমণ এর শিকার হতে।
আমরা রেক্টর হিসেবেও পেয়েছিলাম দারুণ কিছু মানুষকে। আরশাদ স্যার, মিজানুর রহমান স্যার, ফাতেমা রহমান মেডাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
পরে আমাদের স্কুল থেকে রেক্টর পদটি বাতিল করে সেখানে আসে ভাইস প্রিন্সিপাল পোস্ট।
ফাতেমা রহমান মেডাম বেলজিয়াম চলে গেলে তখন আমাদের আইরিন মিস কিছুদিন ভাইস প্রিন্সিপাল এর দায়িত্ব পালন করার পর আমরা পাই আমাদের প্রিয় জিন্নাতুন নেসা মেডাম কে।
অত্যন্ত হাসিখুশি একজন মানুষ যিনি যেকোনো সময় দেখা হলেই হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করতেন আমরা কেমন আছি, ক্লাস কেমন চলছে ইত্যাদি।
দারুন স্মৃতির ছোটবেলা:
পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সময়টা ছিলো আরো মজার। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শাখায় উত্তরণের পরীক্ষা “প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি” পরীক্ষায় পাস করে ষষ্ঠ শ্রেনীতে উঠি।
তখন ৬ টা বিষয় থেকে এক ঝাপে ১৪ টা বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা সবার। তার উপর সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্ন বুঝতে বুঝতেই পরীক্ষার সময় চলে আসে। যথারীতি অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ঢালাও ভাবে অসংখ্য শিক্ষার্থী ফেল করে এক বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়।
তবে সেবার ৩ টা পরীক্ষার বদলে ২ টা পরীক্ষা হয়েছিলো। ফলে ষষ্ঠ শ্রেণীর সময়টা তেমন একটা মনে রাখার মতো কোনো ঘটনাই ঘটে নি।
সপ্তম শ্রেনীতে অধ্যায়ন কালে বন্ধুত্ব হতে থাকে গাঢ়। ইংরেজি মাধ্যমের সেভেন সি ছিলো একই সাথে মেধাবী, সৃজনশীল, দুষ্টু ও শান্তের মিশ্রন।
ক্রিকেট খেলাকে ছেলেদের খেলা বলা হলেও আমরা প্রতিদিন ছুটির পর অন্তত ৩০ মিনিট করে ক্রিকেট খেলতাম। কুচকাওয়াজের প্রশিক্ষনের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা স্কুল ক্যাম্পাসে থাকার অভিজ্ঞতাও হয়েছে সেই সময়ে।
তখন থেকেই জন্ম নেয় আমার কুচকাওয়াজের নেশা যা দশম শ্রেণী পর্যন্ত চলেছে।
অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীকে আমরা বলি পড়াশোনার সময়।
জুনিওর স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা থেকে মাধ্যমিক এই সময়।
অন্য কোনো কিছুর চিন্তা করার ও তেমন একটা সময় পাওয়া যায় না।
তবে দশম শ্রেণীতে শিখেছি ড্রাম বাজানো।
আর নবম দশম শ্রেণীতে নিয়মিত নানান অনুষ্ঠানে কোরাস এ গান গাওয়া একটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছিলো।
দশম শ্রেণীতে স্কুলের প্রিফেক্ট হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের ১৬ জন শিক্ষার্থীর।
ছোট থাকতে যেই সকল আপুদের প্রিফেক্ট হিসেবে দেখতাম। তাদের প্রতি শিক্ষক দের অন্য রকম এক ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হতাম।
আনন্দের ক্যাম্পাসে বিপদের আশংকা:
আমরা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ে প্রিপারেটরীর এক কালো অধ্যায় দেখতে হয় আমাদের।
২০১৫ সালে প্রথম বারের মতো প্রিপারেটরীর শিক্ষার্থীদের দেখতে হয় অনির্দিষ্ট কালের ছুটি।
তবে সৌভাগ্য বসত সেই সমস্যার সমাধান খুব অল্প দিনেই সমাধান হয়ে যায়।
তার সাথে সাথে সেই অভিযোগ ও ভুল প্রমানিত হয়।
মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত
বিদায় বেলা:
বিদায় বেলায় আমাদের সেই ছোটবেলার সৈনিকদের সাথে আরো কিছু নতুন সৈনিকের একসাথে পরিবার ত্যাগ করতে হয়।
তবে এখনো সেই বিদ্যালয়ে গেলে ফিরে যাই সেই ছোটবেলার সময়ে। ক্যাম্পাসের প্রত্যেক অংশে কোনো না কোনো স্মৃতি ভেসে আসে।
১৮ ব্যাচের একাংশ
১৮ ব্যাচের ২০০ শিক্ষার্থীর এই গল্পের মতোই আরো হাজার হাজার প্রিপারেটরিয়ানের হাজারো গল্পের কথা শোনা যায় দেশের আনাচে কানাচে।
ফেসবুকের এই সময়ে কোথাও কোনো প্রিপারেটরিয়ানকে খুঁজে পেলেই হয়তো হয়ে যায় এক ঝলক আড্ডা।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে মিলন মেলা।
রিইউনিওনের আয়োজন হলে প্রত্যেকেই চেষ্টা করে অংশ নিতে।
অন্তত কিছু সময়ের জন্যও সময় বের করে ছোট বড় সকলের সাথে দেখা করতে ছুটে যেতে।
একই পরিবার হয়ে মেতে থাকে সবাই একসাথে।
অনেক অনেক দিন পর সেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে কেও যদি জানতে পারে একদা আমি ছিলাম এই বিদ্যালয়ের এক হাসি মুখ।
যদি কেও জিজ্ঞেস করে, “এতদিন পর?”
তখন আমাদের প্রত্যেকের উত্তর ই হয়, “কেন নয়?”
মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য:
ছুটির দিন, সপ্তাহের এই দিনটি তে রাত্রের ভোজ শেষে বাবা-মেয়ের মধ্যে গপ্লের আসর জমে। রাত্রি প্রায় ১২টা, বারান্দায় বসে পূর্ণিমার চন্দ্র আলোতে গল্প করছিলো রুপকথা ও তার পিতার। পিতা ভালোবেসে কন্যাকে কথা নামে ডাকে। এমনই সময় কথা’র আইসক্রিম খাবার ইচ্ছে হলো। ফ্রিজে আইসক্রিম নেই, এতো রাত্রে দোকান ও বন্ধ। কিন্তু মেয়ের আবদার বাবা কি না রেখে পারে। তাই পাঁচ মিনিটে নিজ হাতে আইসক্রিম তৈরি করে চমক দেয় কথা’কে। কি দারুণ ব্যাপার, ঘরে বসেই আইসক্রিম বানানো সম্ভব।
তোমার নিশ্চয়ই এখন কথা’র মতো আইসক্রিম খাবার ইচ্ছে হলো,তাই না? কিভাবে কথা ও তার বাবা আইসক্রিম তৈরি করেছে তার প্রক্রিয়া আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করছি।
উপকরণঃ
১. দুধ ২. চিনি ৩.লবণ ৪. চা চামচ ৫. বরফ ৬. ছোট জিপারযুক্ত পলিথিন ব্যাগ ৭. বড় জিপারযুক্ত পলিথিন ব্যাগ ৮. লিকুইড চকলেট অথবা ভ্যানিলা ৯.একটি পাত্র ১০. পানি
প্রক্রিয়াঃ
প্রথমে একটি পাত্রে ২৫০ মি.লি. পানি নিয়ে গুড়ো দুধের পাউডার মিশিয়ে লিকুইড দুধ তৈরি কর। গুড়ো দুধ না থাকলে সাধারণ দুধ ব্যবহার করতে পারো। ছোট জিপার যুক্ত পলি ব্যাগে ২৫০ মি.লি. দুধ নিয়ে তাতে ৩ চা চামচ চিনি মিশিয়ে নাও। এরপর তোমার পছন্দের ফ্লেভারের আইসক্রিমের জন্য তুমি লিকুইড চকোলেট অথবা ভ্যানিলা দিবে। চকলেট আইসক্রিমের জন্য ১.৫ কাপ লিকুইড চকলেট আর ভ্যানিলা আইসক্রিমের জন্য ০.৫ কাপ পরিমাণ ভ্যানিলা চামচ দিয়ে ভালো ভাবে নাড়িয়ে নিতে হবে। এবার, জিপারটি ভালো ভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
এখন ছোট জিপার পলিব্যাগে আইসক্রিমকে ঠান্ডা করতে হবে। তাই এই পলিব্যাগ টিকে বড় জিপারযুক্ত পলিব্যাগের মধ্যে রেখে চারিদিকে বরফ দিয়ে বড় পলি ব্যাগটি পূর্ণ কর। এখন বরফের উপর কিছুটা লবণ ছিটিয়ে জিপার টি বন্ধ করে দেয়া হোক। এখন মিনিট পাঁচেক পলিব্যাগ টিকে নাড়াতে হবে৷
পাঁচ মিনিট পর বড় জিপারযুক্ত পলিব্যাগের মধ্য থেকে ছোট জিপার পলিব্যাগটি বের করলেই দেখা যাবে তোমার পছন্দের আইসক্রিম। তবে ছোট পলি ব্যাগটি থেকে আইসক্রিম বের করার আগে ব্যাগটি ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ বড় ব্যাগে বরফে যে লবণ ব্যাবহার করা হয়েছে তা আইসক্রিমের ব্যাগে লেগে আছে তাই আইসক্রিম কিছুটা নোনতা হতে পারে।
তুমি ভাবছো লবণ না দিলেও হবে। তাহলে তুমি ভুল। কারণ,লবণ দেওয়ার কারণে বরফ অতিরিক্ত ঠান্ডা হবে, যার কারনে আইসক্রিম আরো ভালো হবে। এভাবে তুমি চাইলে বাসায় বসে আইসক্রিম বানিয়ে চমকে দিতে পারো সবাইকে । নিজের তৈরি আইসক্রিম খেতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে তোমার। তোমার আইসক্রিম টি কতো ভালো স্বাদযুক্ত হয়েছে তা আমাদের জানাতে ভুলবে না।
স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না -এ পি জে আবদুল কালাম।
হঠাৎ করেই স্যার ক্লাসে প্রশ্ন করে বসলেন তোমরা কি কেউ এ পি জে আবদুল কালামের নাম শুনেছ? আমি এ পি জে আবদুল কালাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না তাই বাসায় এসেই বসে পড়লাম এ পি জে আবদুল কালাম সম্পর্কে জানতে।এ পি জে আবদুল কালাম এর জীবনী পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।বিশ্বজয়ের স্বপ্ন,সেরা হবার স্বপ্ন,মানুষের কল্যানে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়ার স্বপ্ন।স্বপ্নই তো মানুষকে বড় হতে শেখায়।জীবনে সফলতার বীজ বুনতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে।স্বপ্ন ছাড়া সফলতার স্বাদকে কীভাবে আলিঙ্গন করা সম্ভব? স্বপ্ন দেখতে হবে হররোজ,দুর্জয়কে জয় করার স্বপ্ন,অজেয়কে আলিঙ্গন করবার স্বপ্ন।সেই স্বপ্নের পথে প্রাণান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেই স্বপ্নকে করতে হবে সত্যি যেমনটা করেছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম।
এ পি জে আবদুল কালামের জন্ম মাদ্রাজের দ্বীপশহর রামেশ্বরমে এক তামিল পরিবারে।তার বাবার নাম ছিল জইনুল আবেদিন এবং মায়ের নাম ছিল আশিয়াম্মা।যদিও তাদের ছিল না কোন প্রথাগত শিক্ষা তবুও ছিল হৃদয়ের সহজাত প্রজ্ঞা এবং একাগ্র উদারতা।পরিবেরর বাইরের লোকেদের খাবার যোগাতেন তারা প্রতিদিনই।
পরিবারের সাথে এ পি জে আব্দুল কালাম
এ পি জে আবদুল কালাম জন্মেছিলেন মুসলিম পরিবারে।রামেশ্বরমের মস্ক স্ট্রিটে এক পাকা বাড়িতে ছিলো তাদের বসবাস যা ছিল বেশ বড়সড় আর ইট ও চুনাপাথরে গাঁথা।একদম ছিমছাম এবং সাদামাটা জীবনধারণে অভ্যস্ত ছিলেন তারা।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তার বাবা চলে যেতেন নারকেল্কুঞ্জে আর ফিরে আসতেন ডজনখানের নারকেল কাধে ঝুলিয়ে।
এ পি জে আবদুল কালাম খাবার খেতেন তার মায়ের সাথে রান্নাঘরের মেঝেতে বসে কলাপাতা বিছিয়ে তাতে ভাত এবং সুগন্ধী সম্বর(এক ধরনের তরকারি) দিয়ে।সাথে থাকত ঝাল আচার এবং নারকেলের চাটনি।মস্ক স্ট্রীট থেকে বের হয়ে প্রায়ই দ্বীপের বালুকাময় বেলাভূমির দিকে হেটে বেড়াতেন বন্ধু জালালুদ্দিনের সাথে। যদিও জালালুদ্দিন তার থেকে বয়সে অনেক বড় ছিলো জালালুদ্দিন আবদুল কালামকে আজাদ বলে ডাকতেন।জালালুদ্দিন ছিলেন দ্বীপের একমাত্র ব্যাক্তি যিনি ইংলিশ বলতে পারতেন।জালালুদ্দিন সবসময় আজাদকে বলতেন শিক্ষা দীক্ষার কথা,বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা,সাহিত্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে সফলতার কথা।পরিচিত সংকীর্ন জগতের বাইরের নতুন পৃথিবী সম্পর্কে সবদাই গল্প শোনাতেন আজাদকে।
স্বপ্ন মানুষের জীবনে এক ঐশ্বরিক শক্তির সঞ্চার করে ।তাইতো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের অবসান ঘটবার পর পরই আবদুল কালাম তার বাবার কাছে জেলা সদরে গিয়ে সেখানে থেকে পড়াশোনা করার অনুমতি চাইল ।জবাবে তার বাবা বললেন ,”আবদুল আমি জানি বড় হবার জন্যে তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।সমুদ্রের চিলকে কী একাকী উড়ে যেতে হয় না?তোমার স্মৃতি যাকে জড়িয়ে আছে সেই জায়গার মায়া ছেড়ে তোমার সব চাইতে বড় যে আকাঙ্ক্ষা, তার জায়গায় তোমাকে যেতেই হবে”।শোয়ার্জ হাইস্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই বাড়ীতে আসার জন্যে মন টা কেদে উঠলেও নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার এবং স্বপ্নজয়ের প্রতিজ্ঞায় সকলের সাথে মিলেমিশে থাকা ,একসাথে পরিবারের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো এবং মায়ের হাতের সুস্বাদু পিঠা “পোলির” স্বাদকে ভুলে থাকাটা অনেক কষ্টকর ছিলো কালামের জন্যে তাইতো সময় পেলেই চলে যেতো তার নিজ বাসভূম রামেশ্বরম।
শোয়ার্জ হাই স্কুলের পর ১৯৫০ সালে সেন্ট জোসেফ কলেজে হাজির হয় আবদুল কালাম। দুই শিক্ষক অধ্যাপক চিন্নাদুরাই এবং অধ্যাপক কৃষ্ণমূর্তি অপারমানবিক পদর্থবিদ্যার যে দীক্ষা কালামকে দেন তাতে পদার্থবিজ্ঞানের উপর কালামের চিন্তনশক্তির ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।সেন্ট জোসেফে বি এ অনার্স ডিগ্রি লাভ করবার পর কালামের উপলব্ধি হয় যে পদার্থবিদ্যা তার বিষয় নয়।তার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছে কিন্তু আবদুল কালাম ভাবলেন দেরিতে হলেও ,একদম না করবার চেয়ে দেরিতে করাই ভালো।
সেন্ট জোসেফ কলেজ, তিরুচিরাপল্লী
মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি ছিল দক্ষিন ভারতের প্রযুক্তিবিদ্যার জন্যে শ্রেষ্ঠ ।ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও যে টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া লাগত তা যোগাড় করা ছিলো আবদুল কালামের জন্য দুরুহ ব্যাপার।তাই এক হাজার টাকা জোগাড় করতে সোনার চুড়ি আর গলার হার বন্ধক রাখতে হয় কালামের বোনকে।কালামের সামর্থ্যের উপর দৃঢ় আস্থা ছিলো তার পরিবারের সবার।
এম আই টি তে অধ্যাপক স্প্যান্ডার,কে এ ভি পান্ডালাই এবং নরসিংহ রাইয়ের উপর ভিত্তি করে নিজের প্রতিভার উজ্জ্বল্য এবং নিরলস উদ্যমের সাহায্যে আবদুল কালাম এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ তার মেধাকে আরো শানিত করতে পেরেছিলেন।নিজের দেখা স্বপ্নকে সত্যি করবার ক্ষমতা আব্দুল কালামের জীবনে অনন্য গতিশীলতার সঞ্চার করেছিলেন।
স্বপ্ন দেখার সাথে সাথে স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্পও রয়েছে আবদুল কালামের জীবনে।দেরাদুনে স্বপ্নের বিমান বাহিনীর পরীক্ষায় তার স্থান হয় নবম যেখানে পচিশ জনের মধ্যে প্রার্থী নেয়া হবে মাত্র আটজন।স্বপ্ন ভাঙার ব্যাথা থাকলেও নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে আবার ঘুরে দাড়িয়েছিলেন কালাম যোগ দিয়েছিলন সায়েন্টিফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে প্রতিরক্ষা দপ্তরে।সেখানেই তার সফলতার শুরু।একে একে নকশা করতে থাকেন সুপারসনিক টার্গেট বিমানের,হোভারক্রাফট,এয়ারক্রাফট ,রকেটসহায়ক উড়ান ব্যাবস্থা (RATO) ,সাউন্ডিং রকেট সহ আরো অনেক কিছুর।কিন্ত স্বপ্ন ভাঙার গল্পের শেষ কি এখানেই হয়? বছরের পর বছর ধরে যে প্রকল্পে আবদুল কালাম কাজ করেছেন,যেখানে কাজ করতে করতে বেশিরভাগ দিন ই চোখ তুলে দেখেছেন যে ল্যাবরেটরি খালি হয়ে গেছে অথবা কাজে ডুবে থাকার ফলে কখন যে লাঞ্চের সময় চলে গেছে টেরই পান নি, সেই ভারতের প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ যান (SLV) এর প্রথম উড়ান এর দিন ১৯৭১ এর ১০ ই আগস্ট ৩১৭মিনিটের মাথায় উড়ান বাতিল হয়ে যায় আর সেটি আছড়ে পড়ে সমুদ্রে।স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় তাড়িত হলেও পূর্নউদ্যামে কাজ শুরু করে।তিনি জানতেন বিজ্ঞান চর্চায় যেমন আছে আনন্দ তেমনি আছে দুঃখ ,কষ্ট এবং আশাভঙ্গের বেদনা।
ভবিষ্যৎ সৃষ্টির আশায় নতুন করে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ শেষ করেন এস এল ভি ৩ এর।উৎক্ষেপণের আগের দিন খবরের কাগজে নানান ব্যাঙ্গ,আগের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়া খবর আর আবার ত্রুটি দেখা দিলে এর ভয়াবহ পরিনাম, এসব খবরের উপর তেমন কর্নপাত করলেন না তিনি।তাইতো ১৯৮০ সালের ৮ই জুলাই আবার ভারতের প্রথম উৎক্ষেপণ যান ভূমি ত্যাগ করল।কিছুক্ষনের মধ্যেই এ পি জে আবদুল কালাম তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন শব্দগুলো উচ্চারন করে জানিয়ে দিলেন তারা সফল হয়েছেন।একটি সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আর ভারত হয়ে গেলো সেই স্বল্প সখ্যক জাতির অন্তর্ভুক্ত যারা উপগ্রহ উৎক্ষেপণ ক্ষমতার অধিকারী।এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া।একে একে ব্যালস্টিক মিসাইল এবং মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের জন্যে তাকে উপাধি দেয়া হয় ভারতের ক্ষেপনাস্ত্রমানব।ভারতরত্ন,পদ্মভূষণ,পদ্মবিভূষণ,ইত্যাদি পুরস্কার এর পাশাপাশি তিনি হয়েছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি।
এস এল ভি ৩ এর সফল উৎক্ষেপণের পর কালামকে নিয়ে উল্লাস
যেখানেই থাকে স্বপ্নজয়ের উল্লাস সেখানেই থাকে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা।স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবার পথটা মসৃণ নয়।এই পথে আসবে বাধা বিঘ্ন।সেই বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম করেই দুর্বার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।স্বপ্ন দেখতে হবে আকাশ জয়ের ।থেমে গেলে চলবে না।আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আবার দুরন্ত গতিতে ছুটে যেতে হবে অজয়কে জয় করবার আশায় যেমনটা ছুটে গিয়েছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম।সফলতা আর ব্যার্থতা পাশাপাশি বিদ্যমান। কঠিন সময়ে সমস্যার কাছে পরাজিত হলে চলবেনা। পরিশ্রম এবং সফলতা দিয়ে সেই কঠিন সময়কে জয় করে তবেই সফলতার দ্বারপ্রান্তে পদার্পন করা সম্ভব।