19.3 C
New York
Friday, November 14, 2025
Home Blog

মনীষার ঝুলিতে ২৬টি গোল্ড মেডেল

0

এ যেন কোনো এক জাদুকরের কাঁধে ঝোলানো জাদুর থলে। ভেতরে হাত দিতেই অবিরাম মণিমুক্তা বেরিয়ে আসতেই থাকে। নাহ, আজ আমি কোনো রূপকথার গল্প শোনাতে আসিনি। তবে যা বলতে চাইছি সেটিও শুনতে রূপকথার মতোই শোনাবে। যদি দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থীর স্কুলব্যাগ হাতে নেন তা হলে সেখান থেকে কী বের হতে পারে? কিছু বই, খাতা, পেনসিল আর খেলার সামগ্রী। তার মধ্যে নিশ্চয়ই স্বর্ণ রৌপ্য কিছু থাকবে না। তবে আজ যার কথা বলব তার ব্যাগের মধ্যে শুধু বই-খাতা আর পেনসিল না সত্যি সত্যিই স্বর্ণ রৌপ্যে ভরা। টেবিলের ওপর থেকে ছোট্ট ব্যাগটা এনে সে যখন মেলে ধরল, তখন যেন জাদুকরের জাদুর থলের মতো সেই ব্যাগ থেকে এক এক করে ২৬টি গোল্ড মেডেল বেরিয়ে এল! এগুলো কি সে কুড়িয়ে পেয়েছে? তার কাছে কি আলাদিনের চেরাগের দৈত্য আছে যে তাকে এগুলো এনে দিয়েছে? নাহ, এর সবই সে অর্জন করেছে। ওর নাম মনীষা শংকর পাল। বাড়ি কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আইবিপি মাঠ সড়কে। মনীষা পড়ছে কক্সবাজার সরকারি সেন্ট্রাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে। তার বাবা উদয় শংকর পাল কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। মা জয়শ্রী নন্দী গৃহিণী। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট মনীষা।

দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মনীষা কীভাবে ২৬টি স্বর্ণপদকের মালিক হলো? সে এগুলো দেশে বিদেশে গিয়ে প্রতিযোগিতা করে জিতে নিয়েছে। তাও কিন্তু যে সে প্রতিযোগিতা নয় বরং কারাতে প্রতিযোগিতা! মনীষা তাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়লেও বুক ফুলিয়ে হাবীবুর রহমান রচিত বিখ্যাত সেই কবিতার লাইন বলতে পারে ‘আমি কি আর কাউকে ডরাই? ভাঙতে পারি লোহার কড়াই’। মনীষাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি তো কারাতে জান। তোমার বন্ধুরা নিশ্চয়ই তোমাকে ভয় পায়? সে তখন মুচকি হেসে বলে- বন্ধুদের তো আর আমি মারব না। তা হলে ওরা আমাকে ভয় পাবে কেন? ওরা বরং আমার সঙ্গে ঘুরতে ভালোবাসে। ওরা মনে করে আমি সঙ্গে থাকলে ওদের কোনো ভয় নেই। আর তা ছাড়া কারাতে মূলত আত্মরক্ষার জন্য। মনীষাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি কি ব্রুস লি, জ্যাকি চ্যান এদের নাম জান? সে মাথা দুলিয়ে বলবে সে এদের নাম জানে না। নাম না জানলেও তাদের সেই বিদ্যায় খুবই পারদর্শিতা অর্জন করেছে।

মনীষার বয়স এখন ১০ বছর। ১০ বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে, বেশ লাজুক স্বভাবের। ঠিকমতো গুছিয়ে কথাও বলতে পারে না। কিন্তু তার পড়ার টেবিলটা ভরে গেছে স্বর্ণপদকে। যার মধ্যে ছয়টি আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক এবং বাকি ২০টি দেশ-বিদেশের। আছে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় হওয়ার আরও ছয়টি রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক। আত্মরক্ষার কঠিন কৌশল কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এসব পদক অর্জন করেছে সে।

মাত্র চার বছর বয়সে মনীষা কারাতে শেখা শুরু করেছিল। বাবা কারাতে প্রশিক্ষক হওয়ায় প্রথম দুই বছর সে কারাতের প্রশিক্ষণ নিয়েছে বাসায়। পরের তিন বছর কক্সবাজার সদরে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলার হলরুমে আরও অনেকের সঙ্গে সে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে সে প্রশিক্ষণ নিয়েছে শহরের আবু সেন্টারের ইউনাইটেড কারাতে ক্লাব বাংলাদেশে। এখানে তার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেয় দেড় শতাধিক শিশু। এর মধ্যে মেয়ে ৮০ জন। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার প্রশিক্ষণ চলে। স্কুলের পড়া শেষ করে সে নিয়মিত কারাতে অনুশীলন করে। প্রতিনিয়ত সে নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ছয় বছরের প্রশিক্ষণে মনীষার অর্জন ঈর্ষণীয়। ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের হারিয়ে সে ছয়টি স্বর্ণপদক জিতেছে।

মনীষার বাবা উদয় শংকর পালই তার প্রশিক্ষক। বাবা প্রশিক্ষক হওয়ায় খুব ছোটবেলা থেকেই মনীষা মাঝে মাঝে বাবার সঙ্গে প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়া আসা করত। অন্য ছেলেমেয়েদের কারাতে শিখতে দেখে মনীষারও ইচ্ছা জাগে শেখার। বাবাকে বলে বাবা আমিও শিখতে চাই। মেয়ের এমন আবদারে তিনি না করেননি। কারাতে প্রশিক্ষণে মোট ২৬টি কাতা বা শেডো ফাইট বা ধাপ থাকে। মাত্র দুই বছরের মাথায় মনীষা রপ্ত করে নেয় ১৬টি কাতা। প্রশিক্ষকদের মতে যা ১৬-১৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের পক্ষেও অনেক সময় সম্ভব হয় না। পাশাপাশি ব্ল্যাক বেল্টের জন্য ১০টি ডান থাকে। মনীষা ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ডান সম্পন্ন করেছে। অদম্য ইচ্ছেশক্তি থাকলে যে অনেক কিছুই সম্ভব মনীষা নিজেই তার অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছে।


আগামী ২৬ থেকে ২৮ জুলাই ভারতের কলকাতায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ইন্টারন্যাশনাল কারাতে প্রতিযোগিতা ২০২৪। সেখানে বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নিচ্ছে ব্ল্যাক বেল্টধারী মনীষাও। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়বে সে। যার ঝুলিতে ২৬টি স্বর্ণ পদক শোভা পাচ্ছে সেই মনীষা এবারও যে সফল হবে তা আমরা আশা করতেই পারি। আর মনীষার প্রতিটি সাফল্য যে বাংলাদেশেরই সাফল্য সেটা বলাই বাহুল্য। মনীষা ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কারাতে প্রতিযোগিতা ২০২০’-এ একক কারাতে (কাতা মহিলা) বিভাগে অংশ নেয়। সেই প্রতিযোগিতায় মোট ৯ জন প্রতিযোগী ছিল। তখন মনীষার বয়স মাত্র ৬ বছর! তার বিপরীতে অন্য প্রতিযোগীদের বয়স ছিল ১৬ থেকে ১৭ বছর! এত বড় মানুষ দেখে ভয়ে যে কেউ মুষড়ে পড়তে পারে, নাম তুলে নিতে পারে। কিন্তু মনীষা একটুও ভয় পায়নি। নিজের ওপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। দূরন্ত সাহসী মনীষা নিজের আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে সেবার সেই প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ হয়েছিল। তখনই ধারণা করা হচ্ছিল ছোট্ট মনীষা একদিন অনেক নাম করবে। ওই বছরই সে চট্টগ্রামে ‘শাহজাদা চ্যালেঞ্জ কাপ ২০২০’-এ দুটি বিভাগে (জুনিয়র গার্লস কাতা ও কুমি) অংশ নেয়। উভয় বিভাগে প্রতিযোগী ছিল ১৫ জন করে। সবাইকে পেছনে ফেলে দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয় মনীষা। এরপর শুধু তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত বিচ ফ্রেন্ডশিপ কারাতে প্রতিযোগিতা ২০২৪-এ মেয়ের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয় সে।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সেই ভবিষ্যৎকে আমরা যেভাবে নির্মাণ করতে চাইব সেটি আসলে সেভাবেই হবে। শিশুরা হলো নরম কাদামাটির মতো। তাকে আমরা যে শেপ দিতে চাই সেটা সেই শেপে গড়ে ওঠে। একটি চারাগাছকে আপনি যত ভালোভাবে যত্ন নিবেন সেই গাছ থেকে তত ভালো ফল পাবেন এটা আশা করাই যায়। আমাদের শিশু কিশোর কিশোরীদের আমরা যেভাবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করব তারাও সেভাবেই গড়ে উঠবে। ওদের মধ্যে বড় হওয়ার স্বপ্ন বুনে দিতে হবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে যা করণীয় তা তাদের করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই কেবল তারা সফল হবে। মনীষা নামের ছোট্ট কিশোরী তারই বাস্তব উদাহরণ।

মনীষার স্বপ্ন কারাতেতে বিশ্ব জয়ের মাধ্যমে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে। একদিন অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা হাতে সে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে।

লেখাটি দৈনিক খবরের কাগজে প্রকাশিত।

ভারী স্কুলব্যাগ শিশুর শরীর ও মনের উপর কী প্রভাব ফেলে?

0

🎒 শিশুর ছোট কাঁধে বড় বোঝা — কতটা নিরাপদ এই অভ্যাস?

প্রতিদিন সকালে দেখা যায়, ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলের পথে যাচ্ছে—পিঠে ভারী ব্যাগ, কখনও মায়ের হাতে ধরাধরি করে, কখনও কষ্টে হাঁটছে। কেউ কেউ ব্যাগের ভারে হেলে পড়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য হয়তো আমাদের চোখে অভ্যস্ত, কিন্তু এর ভেতরে লুকিয়ে আছে শিশুর শরীর ও মনের উপর গভীর প্রভাব।


⚖️ ব্যাগের ওজন কতটা হওয়া উচিত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে,
শিশুর শরীরের মোট ওজনের ১০%–১২%-এর বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করা উচিত নয়।
অর্থাৎ, ২৫ কেজি ওজনের একটি শিশুর জন্য সর্বোচ্চ ২.৫ থেকে ৩ কেজির ব্যাগই নিরাপদ।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক শিশু এর দ্বিগুণ বা তারও বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করছে।


🩺 ভারী ব্যাগের প্রভাব শিশুর শরীরে

  1. পিঠ ও কোমরের ব্যথা:
    ভারী ব্যাগ পিঠের পেশিতে বাড়তি চাপ ফেলে, যা শিশুর মেরুদণ্ডের গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক শিশু ছোটবেলা থেকেই কোমর বা পিঠে ব্যথা অনুভব করে।
  2. ভঙ্গি (Posture) বিকৃতি:
    বেশি ওজনের ব্যাগ এক কাঁধে ঝোলালে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে কাঁধ একদিকে নেমে যায় এবং মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
  3. গলা ও ঘাড়ে টান:
    ব্যাগের ভার পেছনে বেশি পড়লে শিশুর ঘাড় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। দীর্ঘদিনে এটি ঘাড়ে স্থায়ী ব্যথা ও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
  4. শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তি:
    ভারী ব্যাগ শিশুর ফুসফুসে চাপ সৃষ্টি করে, ফলে হাঁটতে কষ্ট হয় এবং সে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
  5. স্নায়ু ও রক্ত চলাচলে সমস্যা:
    টাইট স্ট্র্যাপ বা ভারী ওজনের কারণে কাঁধের স্নায়ুতে চাপ পড়ে, হাত অবশ বা ব্যথাযুক্ত হতে পারে।

🧠 শিশুর মনের উপর প্রভাব

শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি ভারী ব্যাগ মানসিক চাপও বাড়ায়।

  • প্রতিদিনের ভার বহন তাকে ক্লান্ত করে তোলে।
  • পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যায়।
  • সকালে স্কুলে যেতে অনীহা তৈরি হয়।
  • দীর্ঘদিনে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয়।

🧩 কীভাবে সমাধান করা যায়

ব্যাগের ওজন নিয়মিত পরিমাপ করুন।
ব্যাগ যেন শিশুর ওজনের ১০% এর বেশি না হয়।

হালকা উপকরণ ব্যবহার করুন।
নোটবুকের বদলে পাতলা কপি, অপ্রয়োজনীয় বই বাদ দিন।

দুই কাঁধে ব্যাগ ঝুলাতে শেখান।
এক কাঁধে বহন করা বিপজ্জনক।

স্কুলে লকার ব্যবস্থা থাকলে তা ব্যবহার করতে উৎসাহ দিন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নীতি পরিবর্তনে সচেতন হোন।
অভিভাবকরা মিলে স্কুল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন—শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশের জন্য ব্যাগের ওজন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে।


🌼 শেষ কথা

শিশুর কাঁধের ব্যাগ শুধু বই নয়, সেখানে আছে তার স্বপ্ন, কৌতূহল আর ভবিষ্যৎ।
তাকে এমন ভার দিতে নেই যা তার হাসি, ভঙ্গি বা প্রাণশক্তি কেড়ে নেয়।
মনে রাখুন — শিক্ষার ভার নয়, জ্ঞানের আনন্দটাই হওয়া উচিত শিশুর প্রতিদিনের সঙ্গী।

আপনার শিশুটি কেন সারাক্ষণ কোলে থাকতে চায়? জেনে নিন সহজ ব্যাখ্যা

0

মা বা বাবার কোল — শিশুর কাছে এটি শুধু আরাম নয়, এটি তার পৃথিবী। অনেক অভিভাবক চিন্তায় পড়েন, যখন দেখেন তাদের শিশুটি কোল ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে চায় না। খাটে শোয়ালে কান্না শুরু হয়, কিন্তু কোলে নিলেই শান্ত। এমন আচরণে অনেকেই ভাবেন, “শিশুটি কি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে?”
আসলে বিষয়টি একেবারেই স্বাভাবিক — এবং এর পেছনে রয়েছে মানসিক ও জৈবিক উভয় কারণ।


👶 ১. মায়ের গন্ধ ও হৃদস্পন্দন শিশুর নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়

জন্মের পর প্রথম কয়েক মাসে শিশুর জগৎ খুব ছোট — সে কেবল মায়ের গন্ধ, কণ্ঠস্বর ও হৃদস্পন্দন চেনে। গর্ভের ভিতরে সে নয় মাস ধরে এই শব্দ ও গন্ধেই অভ্যস্ত ছিল। তাই জন্মের পর মায়ের কোলে থাকলেই তার মনে হয় সে এখনও সেই নিরাপদ আশ্রয়ে আছে। কোলে থাকলে সে স্বস্তি, উষ্ণতা ও নিরাপত্তা অনুভব করে।


❤️ ২. ভালোবাসা ও অক্সিটোসিন হরমোনের সম্পর্ক

যখন মা তার শিশুকে কোলে নেন, তখন শরীরে অক্সিটোসিন নামে এক ধরনের “ভালোবাসার হরমোন” নিঃসৃত হয়। এটি মা ও শিশুর মধ্যে এক গভীর বন্ধন তৈরি করে। শিশুটি যখন কাঁদে, তখন কোলে নেওয়া ও মায়ের কণ্ঠে কথা বললে এই হরমোনের প্রভাবে সে দ্রুত শান্ত হয়ে যায়।


🌙 ৩. ‘ভেলক্রো বেবি’ আচরণ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক

যে শিশু সবসময় মা বা বাবার শরীরের সঙ্গে লেগে থাকতে চায়, তাকে অনেক সময় “ভেলক্রো বেবি” বলা হয়। ‘ভেলক্রো’ মানে যেমন দুটি জিনিস শক্তভাবে লেগে থাকা — তেমনি এই শিশুরা মায়ের কোলে লেগে থাকতে ভালোবাসে। এটি কোনো খারাপ অভ্যাস নয়, বরং তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের অংশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, যখন তারা পৃথিবীটাকে একটু ভালোভাবে চিনে নেয়, তখন নিজের মতো খেলা করা বা একা থাকা শিখে যায়।


🌤️ ৪. কোলে থাকলে শিশুর ঘুম ও পরিপাক ভালো হয়

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুকে কোলে রাখলে তার হার্টবিট স্থিতিশীল থাকে, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং পরিপাকক্রিয়া উন্নত হয়। এমনকি ‘skin-to-skin contact’ বা ত্বকের স্পর্শ শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে পারে। তাই কোলে নেওয়া কেবল আবেগের বিষয় নয়, এটি শিশুর শারীরিক বিকাশেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।


🧸 ৫. কখন উদ্বিগ্ন হওয়া প্রয়োজন?

যদি শিশুটি একদমই কোলে ছাড়া না থাকে, সবসময় অস্থির থাকে, ঘুমাতে না চায় বা ওজন না বাড়ে — তবে এটি শুধু “কোলপ্রিয়তা” নয়, অন্য কোনো শারীরিক অস্বস্তির ইঙ্গিতও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।


🌼 ৬. অভিভাবকদের জন্য কয়েকটি টিপস

  • শিশুকে কোলে নেওয়া কোনো ভুল নয় — এটি তার প্রয়োজন।
  • ধীরে ধীরে শিশুকে নিজের আশেপাশের পরিবেশে অভ্যস্ত হতে দিন।
  • মায়ের গন্ধযুক্ত কাপড় বা কম্বল শিশুর পাশে রাখলে সে নিরাপদ বোধ করে।
  • বাবা-মা দুজনেই কোলে নেওয়া, গান গাওয়া বা কথা বলায় অংশ নিন — এতে শিশুটি উভয়ের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে।

🌙 শেষ কথা

আপনার শিশুটি কোলে থাকতে চায়, কারণ সে আপনাকে ভালোবাসে এবং আপনার উপস্থিতিতে নিরাপদ বোধ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, যখন তার আত্মবিশ্বাস ও পৃথিবী সম্পর্কে বোঝাপড়া বাড়বে, তখন সে নিজে থেকেই ধীরে ধীরে কোলে থাকার সময় কমিয়ে দেবে।
তাই শিশুকে কোলে নেওয়া মানে তাকে “বিগড়ে ফেলা” নয়, বরং তাকে ভালোবাসা ও নিরাপত্তার ভিত্তি দেওয়া — যা তার মানসিক বিকাশের প্রথম পাঠ।

শিশুদের চোখের রোগ যা ওরা বুঝতে পারে না

0

১. রিফ্রেকটিভ এরর

শিশুদের রিফ্রেকটিভ এরর (Refractive Error) হলো এমন একটি চোখের অবস্থা যেখানে চোখের লেন্স বা কর্নিয়ার আলোকে ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারে না। ফলে শিশু দূরের বা নিকটের বস্তু পরিষ্কার দেখতে পারে না। শিশুদের মধ্যে এটি অনেক সময় বোঝা যায় না কারণ তারা হয়তো স্বাভাবিকভাবেই তাদের চোখের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়।


প্রকারভেদ

  1. মায়োপিয়া (Myopia / Nearsightedness)
    • দূরের জিনিস অস্পষ্ট দেখা যায়।
    • স্কুলে বোর্ডের লেখা বা দূরের চিহ্ন দেখতে সমস্যা।
  2. হাইপারমেট্রোপিয়া (Hypermetropia / Farsightedness)
    • কাছে দেখার সময় অসুবিধা, দূরের জিনিস বেশ ভালো দেখা যায়।
    • ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাভাবিক হতে পারে, কারণ চোখ বড় হতে থাকে।
  3. অ্যাস্টিগম্যাটিজম (Astigmatism)
    • চোখের কর্নিয়ার বা লেন্সের আকার অনিয়মিত হওয়ায় ছবি অস্পষ্ট বা বিকৃত দেখায়।
    • উভয় দূর ও কাছের জিনিস ঝাপসা দেখা যায়।
  4. প্রিসবাইয়া (Presbyopia) – সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে, শিশুতে খুব কম দেখা যায়।

শিশুদের রিফ্রেকটিভ এররের লক্ষণ

  • টিভি বা বোর্ডের লেখা দেখতে চোখ চেপে ধরা বা চোখ ঝাপসা করা
  • মাথা ঘুরিয়ে বা ঝুঁকিয়ে দেখে লেখা
  • চোখ ঘামানো বা ঘুমের আগে চুলকানো
  • চোখ লাল হওয়া বা সহজে ক্লান্তি
  • মাথাব্যথা বা চোখ ব্যথা

কারণ

  • জেনেটিক (পরিবারে চোখের সমস্যা থাকলে ঝুঁকি বেশি)
  • চোখের লেন্স বা কর্নিয়ার আকারের সমস্যা
  • চোখের পেশি দুর্বলতা

চিকিৎসা / সমাধান

  • চশমা (Corrective glasses)
  • কন্টাক্ট লেন্স (উচ্চ বয়সের শিশুদের জন্য)
  • লেজার বা সার্জারি – শুধুমাত্র বড় বয়সের ক্ষেত্রে
  • নিয়মিত চোখ পরীক্ষা, বিশেষ করে স্কুলে পড়া বাচ্চাদের

💡 গুরুত্বপূর্ণ: শিশুদের রিফ্রেকটিভ এরর প্রাথমিকভাবে ধরতে গেলে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা খুব জরুরি, কারণ শিশু নিজে কখনো বুঝতে পারে না যে তার চোখে সমস্যা আছে।

এ রোগে আলো ঠিকমতো রেটিনায় ফোকাস হয় না। এ কারণে ঝাপসা দেখে শিশু। শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ তিনটি রিফ্রেকটিভ এরর হলো—

  • এসটিগমাটিজম বা কর্নিয়া বাঁকা বা অনিয়মিত হওয়া
  • মায়োপিয়া বা দূরের জিনিস ঝাপসা দেখা
  • হাইপারোপিয়া বা কাছের জিনিস ঝাপসা দেখা।

লক্ষণ: বারবার চোখ ছোট করে তাকানো বা মাথা কাত করা, অনেকক্ষণ ধরে পড়াশোনা করার পর বা ডিভাইস দেখার পর মাথাব্যথা হওয়া এবং চোখে চাপ অনুভব করা, বই বা মোবাইল খুব কাছে নিয়ে দেখা, টিভি বা কম্পিউটার খুব কাছে বসে দেখা।

২. অ্যামব্লিওপিয়া বা লেজি আই

অ্যামব্লিওপিয়া (Amblyopia) বা “Lazy Eye” হলো একটি চোখের সমস্যা যেখানে চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ বা প্রায় সম্পূর্ণ বিকাশ পায় না, যদিও চোখের কাঠামোগত কোনো বড় সমস্যা থাকে না। সাধারণত একটি চোখ বেশি ব্যবহার হয় আর অন্য চোখটি কম ব্যবহৃত হয়, ফলে কম ব্যবহৃত চোখের দৃষ্টি দুর্বল হয়ে যায়।


মূল বৈশিষ্ট্য

  • এক চোখে দৃষ্টি ভালো, অন্য চোখ দুর্বল।
  • চোখের কাঠামো স্বাভাবিক থাকলেও দৃষ্টি ঠিকভাবে বিকাশ পায় না।
  • শিশু বা প্রারম্ভিক বয়সে বেশি দেখা যায়।

কারণসমূহ

  1. রিফ্রেকটিভ এরর
    • যেমন: এক চোখের মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া বা অ্যাস্টিগম্যাটিজম।
    • এক চোখের দৃষ্টি অস্পষ্ট হলে শিশু অজ্ঞাতভাবে সেই চোখ কম ব্যবহার করে।
  2. স্ট্র্যাবিসমাস (Strabismus / চোখ ফাঁকানো)
    • চোখগুলো সঠিকভাবে মিলিত হয় না, এক চোখ সঠিকভাবে লক্ষ্য করে না।
    • শিশুর মস্তিষ্ক দুর্বল চোখের ছবি উপেক্ষা করতে শুরু করে।
  3. চোখে ব্লক বা বাধা
    • যেমন: চোখের আঙ্গিনার ঝাপসা (cataract), চোখে সংক্রমণ বা জলে জমা।

লক্ষণ

  • এক চোখ অন্য চোখের তুলনায় দুর্বল দৃষ্টি
  • চোখ ফাঁকানো বা চোখ মিলিয়ে না দেখা
  • ঘুম বা ক্লান্তির সময় চোখ বন্ধ বা ঝাপসা দেখানো
  • স্কুলে বা দৈনন্দিন কাজের সময় এক চোখ বেশি ব্যবহার করা

চিকিৎসা / সমাধান

  1. চশমা বা লেন্স – রিফ্রেকটিভ এরর সংশোধন।
  2. প্যাচ থেরাপি (Eye patching) – ভালো চোখ ঢেকে দুর্বল চোখকে ব্যবহার করা।
  3. চোখের ব্যায়াম / ভিশন থেরাপি – মস্তিষ্ক ও চোখের সমন্বয় বাড়ানো।
  4. সার্জারি – শুধু চোখ ফাঁকানোর ক্ষেত্রে বা ক্যাটারাক্ট থাকলে।

💡 গুরুত্বপূর্ণ:

  • অ্যামব্লিওপিয়ার চিকিৎসা শিশুর বয়সে শুরু করা সবচেয়ে কার্যকর, সাধারণত ৮–১০ বছরের মধ্যে।
  • বড় হলে চশমা বা প্যাচ থেরাপি দ্বারা পুরোপুরি ঠিক করা কঠিন।

এ রোগে যেকোনো একটি চোখ দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি। শিশু সাধারণত ভালো চোখেটির ওপর নির্ভর করায় রোগটি সহজে ধরা পড়ে না।

লক্ষণ: পড়াশোনা বা খেলাধুলায় সমস্যা, মনোযোগে অসুবিধা, প্রায়ই এক চোখ বন্ধ করে দেখা, বারবার চোখ রগড়ানো, বারবার মাথা কাত করা, চোখ ছোট করে তাকানো।

৩. বাইনোকুলার ভিশন ডিসফাংশন (বিভিডি)

বাইনোকুলার ভিশন ডিসফাংশন (Binocular Vision Dysfunction বা BVD) হলো চোখের এমন একটি সমস্যা যেখানে উভয় চোখ একসাথে মিলিয়ে কাজ করতে পারে না, ফলে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে দুই চোখের ছবি একত্রিত করতে পারে না।


মূল ধারণা

  • সাধারণ চোখের ক্ষেত্রে, দুই চোখ মিলিয়ে একক, ত্রি-মাত্রিক ছবি মস্তিষ্কে তৈরি করে।
  • BVD-তে, দুই চোখের দৃষ্টি সঠিকভাবে সংযুক্ত হয় না, ফলে চোখ এবং মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়।
  • ফলে দূর, কাছ বা উভয় অবস্থায় চোখের চাপ এবং ক্লান্তি হয়।

লক্ষণসমূহ

  1. দূর বা কাছের জিনিস ঝাপসা দেখা
  2. মাথা ব্যথা, চোখে চাপ বা ক্লান্তি
  3. দৃষ্টি মিলিয়ে না হওয়া বা দ্বৈত ছবি দেখা (Double Vision)
  4. চোখ ঘষা বা ঝাপসা হওয়া
  5. শ্রেণীকক্ষে বা পড়াশোনার সময় সমস্যা
  6. ফোকাস ধরে রাখতে কষ্ট

কারণসমূহ

  1. রিফ্রেকটিভ এরর – এক চোখের দৃষ্টি কম বা অতিরিক্ত দূরের/নিকটের সমস্যা।
  2. স্ট্র্যাবিসমাস (Strabismus) – চোখগুলো ঠিকভাবে সঙ্কলিত হয় না।
  3. অ্যামব্লিওপিয়া (Lazy Eye) – এক চোখ দুর্বল থাকলে দুই চোখের মিল নষ্ট হয়।
  4. চোখের পেশি দুর্বলতা – চোখের চারপাশের পেশি ঠিকভাবে কাজ না করলে।
  5. চোখের লেজার বা সার্জারির পর – কখনো BVD দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা / সমাধান

  1. চশমা বা লেন্স – চোখের রিফ্রেকটিভ এরর সংশোধন।
  2. ভিশন থেরাপি / চোখের ব্যায়াম – দুই চোখের সমন্বয় বাড়ানো।
  3. প্রিজম লেন্স – চোখকে ফোকাস ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  4. সার্জারি – চোখের পেশি বা স্ট্র্যাবিসমাস ঠিক করার জন্য।

💡 গুরুত্বপূর্ণ:

  • BVD শিশুর পড়াশোনা, কম্পিউটার ব্যবহার, এবং দৈনন্দিন জীবনে দৃষ্টি ও মনোযোগের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • প্রাথমিকভাবে চোখের পরীক্ষা ও ভিশন থেরাপি সবচেয়ে কার্যকর।

স্বাভাবিক অবস্থায় দুটি চোখ মিলিতভাবে একটি দৃশ্য ফোকাস করে। এ রোগে দুই চোখের সমন্বয় বা অক্ষ ঠিক থাকে না। দুটি চোখ একসঙ্গে কাজ করতে পারে না। ফলে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়, দেখার সমস্যা তৈরি হয়।

লক্ষণ: উদ্বেগ বা চাপ, মাথা ঘোরা, দুটো দেখা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, আলোতে সংবেদনশীলতা, চলাচলে অসুবিধা।

৪. কনভারজেন্স ইনসাফিসিয়েন্সি

কনভারজেন্স ইনসাফিসিয়েন্সি (Convergence Insufficiency, CI) হলো এমন একটি চোখের সমস্যা যেখানে দুই চোখ একসাথে নিকটে (near) তাকানোর সময় ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারে না। অর্থাৎ, চোখগুলো একত্রে না মিলিয়ে কাজ করে, ফলে কাছের জিনিস দেখতে ঝাপসা বা ক্লান্ত লাগে।


মূল বৈশিষ্ট্য

  • প্রধানত নিকট বা কাছের কাজের সময় সমস্যা হয়, যেমন পড়া বা কম্পিউটার ব্যবহার।
  • শিশু বা বড় কেউ চোখ মিলিয়ে রাখতে কষ্ট পায়
  • চোখের পেশি ও মস্তিষ্কের সমন্বয় ঠিকভাবে কাজ করে না।

লক্ষণসমূহ

  1. কাছের লেখা বা বই পড়ার সময় চোখ ঝাপসা বা ক্লান্তি
  2. মাথা ব্যথা বা চোখে চাপ
  3. লেখা পড়ার সময় চোখ ঘষা বা বন্ধ করার চেষ্টা
  4. চোখের সামনে দ্বৈত ছবি দেখা
  5. মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা, স্কুলে পড়াশোনায় ক্লান্তি

কারণসমূহ

  • চোখের পেশি দুর্বল বা অসামঞ্জস্য
  • শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কের রিফ্রেকটিভ এরর (দূর/নিকট অস্পষ্ট দৃষ্টি)
  • জন্মগত বা পরবর্তী চোখের সমন্বয় সমস্যা

চিকিৎসা / সমাধান

  1. চশমা বা লেন্স – চোখের ফোকাস ঠিক রাখা।
  2. ভিশন থেরাপি / চোখের ব্যায়াম
    • পেন্সিল পুশ-আপ, ফোকাস পরিবর্তন ব্যায়াম, অথবা বিশেষ ভিশন এক্সারসাইজ।
  3. প্রিজম লেন্স – কিছু ক্ষেত্রে চোখকে ফোকাস ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  4. নিয়মিত চোখ পরীক্ষা – পুনরায় সমন্বয় পরীক্ষা করা।

💡 গুরুত্বপূর্ণ:

  • কনভারজেন্স ইনসাফিসিয়েন্সি শিশুদের পড়াশোনা, কম্পিউটার বা নিকট কাজের সময় দৃষ্টি ও মনোযোগে সমস্যা তৈরি করতে পারে
  • প্রাথমিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা করলে দৃষ্টি ও মনোযোগ উন্নত হয়

এটিও এক প্রকার বাইনোকুলার ভিশন সমস্যা, যা চোখের পেশির সমন্বয় নষ্ট করে। এ কারণে শিশু কাছের জিনিস ঠিকমতো দেখতে পায় না।

লক্ষণ: কোনো কিছুতে মনোযোগ না থাকা, চোখে ঝাপসা দেখা, দুটো দেখা, পড়াশোনার সময় ক্লান্তি এবং মাথাব্যথা, হোমওয়ার্ক করতে না চাওয়া, চলাচলে অসুবিধা বা ভার্টিগো, লেখা ঝাপসা দেখা এবং মাথা কাত করে দেখার চেষ্টা করা।

৫. নিসট্যাগমাস

নিসট্যাগমাস (Nystagmus) হলো এমন একটি চোখের অবস্থা যেখানে চোখ আনিয়মিত, দ্রুত, অচেতনভাবে কম্পন বা দোলা খায়। এটি শিশু ও বড় দুটোই হতে পারে। সাধারণত চোখ একটি দিক থেকে অন্য দিকে অটোমেটিকভাবে যায় এবং ফিরে আসে, ফলে স্থিরভাবে ফোকাস রাখা কঠিন হয়।


মূল বৈশিষ্ট্য

  • চোখ অন্তঃকেন্দ্রিক বা অনুভূমিকভাবে দোলা খায়
  • শিশু বা বড় কেউ চোখ ধীরে বা দ্রুত নাড়া যায়
  • দৃষ্টি স্থির রাখা কঠিন, ফলে ঝাপসা বা দ্বৈত ছবি দেখা যায়।

কারণসমূহ

  1. জন্মগত (Congenital Nystagmus)
    • শিশুর জন্মের সময় থেকে উপস্থিত।
    • চোখের লেন্স বা রেটিনার সমস্যা বা জেনেটিক কারণে।
  2. অর্জিত (Acquired Nystagmus)
    • চোখ বা মস্তিষ্কের সমস্যা, যেমন: স্ট্রোক, মাথায় আঘাত, নিউরোলজিক ডিসঅর্ডার, ভেস্টিবুলার সমস্যা।
  3. দৃষ্টি সমস্যা বা লেজি আই (Amblyopia) সহ
    • চোখে স্বচ্ছ না থাকা বা রিফ্রেকটিভ এররের কারণে।

লক্ষণসমূহ

  • চোখ দ্রুত বা ধীরে দোলা খায়
  • ঝাপসা বা দ্বৈত ছবি দেখা
  • মাথা হালকা ঘোরানো বা কোন বিশেষ দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ধরে রাখার চেষ্টা
  • চোখের ক্লান্তি বা মাথা ব্যথা

চিকিৎসা / সমাধান

  1. মূল কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা
    • যদি লেজি আই, স্ট্র্যাবিসমাস বা রিফ্রেকটিভ এরর থাকে, তা ঠিক করা।
  2. চশমা বা লেন্স
    • চোখের ফোকাস ঠিক রাখতে।
  3. চিকিৎসা বা সার্জারি
    • কিছু ক্ষেত্রে চোখের পেশি সার্জারি বা নিউরোলজিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
  4. ভিশন থেরাপি
    • চোখ ও মস্তিষ্কের সমন্বয় বাড়ানো।

💡 গুরুত্বপূর্ণ:

  • শিশুর দৃষ্টি বিকাশের জন্য নিসট্যাগমাস সময়মতো শনাক্ত করা জরুরি
  • সঠিক চিকিৎসা না করলে দৃষ্টি দুর্বলতা, মাথাব্যথা ও পড়াশোনায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ রোগে শিশুর চোখ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চারদিকে নড়তে থাকে, ফলে দৃষ্টি ঝাপসা বা অস্থির হয়ে ওঠে। জন্মগত নিসট্যাগমাস জীবনের প্রথম কয়েক মাসে দেখা দেয়, আর প্রাপ্ত নিসট্যাগমাস জন্মের ছয় মাসের পরে দেখা দেয়।

লক্ষণ: চোখ দ্রুত এবং অনবরত নড়তে থাকা।

৬. প্যাডিয়াট্রিক ক্যাটার‍্যাক্টস

প্যাডিয়াট্রিক ক্যাটার্যাক্ট (Pediatric Cataracts) হলো শিশুর চোখে লেন্সের ঝাপসা বা অস্পষ্টতা, যা জন্মগত বা শৈশবকালীন হতে পারে। এটি চোখের লেন্সকে স্বচ্ছ না রেখে ধোঁয়া বা সাদা ভাব তৈরি করে, ফলে শিশুর দৃষ্টি কমে যায়।


মূল বৈশিষ্ট্য

  • লেন্স স্বচ্ছ নয়, ধোঁয়া বা সাদা আভা থাকে।
  • এক বা দুই চোখেই হতে পারে।
  • শিশুর দৃষ্টি পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।

কারণসমূহ

  1. জন্মগত (Congenital)
    • গর্ভকালীন সময়ে মা কোনো সংক্রমণ, ওষুধ বা জেনেটিক কারণ।
  2. অর্জিত (Acquired)
    • চোখে আঘাত, সংক্রমণ, মেটাবলিক রোগ (যেমন: ডায়াবেটিস), বা দীর্ঘমেয়াদী কিছু ওষুধের কারণে।

লক্ষণসমূহ

  • শিশুর চোখের সামনে সাদা বা ধোঁয়া দেখা
  • দৃষ্টি অস্পষ্ট বা চোখের চলাফেরায় সমস্যা
  • এক চোখ বেশি ব্যবহার করা বা চোখ ঘুরানো
  • শিশুর চোখে আলোতে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
  • বড় শিশুর ক্ষেত্রে স্কুলে পড়াশোনায় সমস্যা

চিকিৎসা / সমাধান

  1. সার্জারি (Cataract Surgery)
    • ঝাপসা লেন্স সরিয়ে স্বচ্ছ লেন্স প্রতিস্থাপন।
  2. চশমা বা লেন্স
    • সার্জারির পর শিশুর চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখতে।
  3. প্যাচ থেরাপি (Eye Patching)
    • ভালো চোখ ঢেকে দুর্বল চোখ ব্যবহার করানো, বিশেষ করে অ্যামব্লিওপিয়া থাকলে।
  4. ভিশন থেরাপি / নিয়মিত চোখ পরীক্ষা
    • দৃষ্টি বিকাশ ও সমন্বয় নিশ্চিত করা।

💡 গুরুত্বপূর্ণ:

  • প্যাডিয়াট্রিক ক্যাটার্যাক্ট শিশুর দৃষ্টিশক্তির জন্য জরুরি
  • শিশুর বয়স যত ছোট, সার্জারির প্রভাব তত বেশি কার্যকর
  • সময়মতো চিকিৎসা না করলে স্থায়ী দৃষ্টি হ্রাস বা অ্যামব্লিওপিয়া হতে পারে।

এ রোগে শিশুর চোখে ছানি পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ হাজার শিশু এ রোগ নিয়ে জন্মায়।

লক্ষণ: চোখের মণির রং ধূসর বা সাদা, মুখ বা জিনিস চিনতে অসুবিধা, ভিন্ন দিকে তাকানো এবং চোখ দ্রুত বা অনবরত নড়তে থাকা।

৭. স্ট্রেবিসমাস বা ট্যারা চোখ

স্ট্র্যাবিসমাস (Strabismus) বা “ট্যারা চোখ” হলো এমন একটি চোখের সমস্যা যেখানে দুই চোখ একসাথে সঠিকভাবে ফোকাস করে না। অর্থাৎ, একটি চোখ মূল লক্ষ্য বা বিষয়ের দিকে তাকায়, আর অন্য চোখ হয় সরে থাকে বা অন্য দিকে তাকায়।


মূল বৈশিষ্ট্য

  • চোখগুলো সমন্বয়হীনভাবে কাজ করে
  • দূর থেকে দেখা যায় যে এক চোখ সরাসরি লক্ষ্য করছে, অন্য চোখ টেনে বা সরে আছে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে এটি সহজে বোঝা যায় না যদি ছোট বা হালকা ঝোঁক থাকে।

প্রকারভেদ

  1. ইনট্রা-টার্ন (Esotropia) – চোখ ভিতরের দিকে (নাকের দিকে) তাকায়।
  2. আউট-টার্ন (Exotropia) – চোখ বাইরে (কানের দিকে) তাকায়।
  3. আপওয়ার্ড বা ডাউনওয়ার্ড টার্ন (Hypertropia / Hypotropia) – চোখ উপরে বা নিচে থাকে।
  4. কনজাংগেন্ট বা ইন্টারমিটেন্ট – মাঝে মাঝে চোখ সরে থাকে।

কারণসমূহ

  1. চোখের পেশির দুর্বলতা বা অসামঞ্জস্য
  2. রিফ্রেকটিভ এরর – দূর বা কাছে অস্পষ্ট দৃষ্টি
  3. জেনেটিক / পারিবারিক ইতিহাস
  4. চোখ বা মস্তিষ্কের জন্মগত সমস্যা

লক্ষণসমূহ

  • চোখ সঠিকভাবে মিলিয়ে না থাকা
  • এক চোখ ঝাপসা দেখানো
  • এক চোখ বেশি ব্যবহার করা
  • মাথা ঝুঁকানো বা ঘোরানো চোখ ফোকাস ঠিক রাখতে
  • দৃষ্টি মিলাতে সমস্যা, মাঝে মাঝে দ্বৈত ছবি দেখা

চিকিৎসা / সমাধান

  1. চশমা বা লেন্স – রিফ্রেকটিভ এরর ঠিক করা।
  2. প্যাচ থেরাপি (Eye patching) – ভালো চোখ ঢেকে দুর্বল চোখকে ব্যবহার করানো।
  3. ভিশন থেরাপি / চোখের ব্যায়াম – চোখের সমন্বয় বাড়ানো।
  4. সার্জারি – চোখের পেশি ঠিক করে চোখ সরানোর জন্য।

💡 গুরুত্বপূর্ণ:

  • শিশুদের ক্ষেত্রে জলদি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ধীরগতি বা চিকিত্সা না হলে অ্যামব্লিওপিয়া (Lazy Eye) তৈরি হতে পারে।
  • স্ট্র্যাবিসমাস শুধু চেহারার সমস্যা নয়, দৃষ্টিশক্তি ও সমন্বয়ের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে

চোখের এমন একটি অবস্থা, যেখানে দুটি চোখ সঠিকভাবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে ফোকাস করতে পারে না, ফলে একটি চোখ অন্য চোখ থেকে ভিন্ন দিকে তাকিয়ে থাকে।

লক্ষণ: চঞ্চল চোখের মণি, বারবার চোখ ছোট করে তাকানো (বিশেষ করে উজ্জ্বল আলোতে), মাথা কাত করে তাকানো।

সূত্র: অপটোমেট্রিটস নিউইয়র্ক

শিশু কিশোর কিশোরীদের নিয়ে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠান : [email protected]

গল্প,কবিতা পড়তে ও লিখতে ভিজিট করুন: প্রতিধ্বনি অনলাইন ম্যাগাজিনে।

শিশুরা কেন খেলনা ডাইনোসর এত পছন্দ করে?

0

তন্ময় গোস্বামীর ছেলের বয়স পাঁচ বছর। নিবন্ধে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ‘এ’ নামে। ‘এ’ হঠাৎ একদিন ঘোষণা করল, একটা খেলনা টি-রেক্স তার ছেলে! এই খেলনা ডাইনোসরটি কিনে দেওয়ার আগে পরিস্থিতি অবশ্য অন্য রকম ছিল। আগে ‘এ’ নিজেকে সিংহশাবক ভাবত। একটা জলজ্যান্ত সিংহশাবক পোষার আবদারও করেছিল বাবার কাছে। কিন্তু নতুন টি-রেক্স পাওয়ার পর সিংহের কথা বেমালুম ভুলে গেছে ‘এ’।

‘এ’ এখন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার ‘ছেলে’, মানে খেলনা টি-রেক্সকে ঘুম পাড়ায়। ব্যাটারিচালিত সবুজ রঙের খুদে ডাইনোসরটির হাত চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে ডাইনোসরটির চোখ দুটি জ্বলে ওঠে। তারপর গরগর করে শব্দও করে।

‘এ’র খেলনা ডাইনোসরের সংগ্রহটা বেশ বড়। এসব ছাড়া তার আছে ডাইনোসর–বিষয়ক অনেক বই, ডাইনোসরের সিনেমা আর কার্টুন–অ্যানিমেশন দেখে তন্ময় হয়ে। বাড়িতে সারাক্ষণ বাজতে থাকে ডিজনির ‘জিগানোটোসরাস’ টিভি সিরিজের গান। তন্ময়ের ভাষায়, ‘বাসায় অন্য কোনো প্রাণী এতটা জায়গা দখল করতে পারেনি; হোক সেটা জীবিত কিংবা বিলুপ্ত।’

কখন থেকে এবং কীভাবে ছেলের এই ডাইনোসরপ্রীতি শুরু হলো, তা বলা তন্ময়ের পক্ষে মুশকিল। তাঁর ধারণা, ‘মনে হয় সে জন্ম থেকেই জানে স্টেগোসরাস আর স্পিনোসরাস আলাদা ধরনের ডাইনোসর। হয়তো এটাও জানে, কেন প্যারাসরোলোফাসের মাথায় ফাঁপা ঝুঁটি ছিল। অবশ্য এখনো বড় কারও আদেশ–নির্দেশ পছন্দ না হলে সে সিংহের মতো গর্জন করে; তবু ডাইনোসরের প্রতি তার ভালোবাসা আলাদা। সে এখন ডাইনোসরের বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখে।’

ডাইনোসর নিয়ে তন্ময় ও তাঁর ছেলের কথোপকথনের একটা নমুনা দেখুন—
তন্ময়: আচ্ছা, তুমি ডাইনোসরদের এত পছন্দ করো কেন?
এ: ডাইনোসর পছন্দ করি কারণ…যখন ওদের সম্পর্কে জানলাম, তখন আমার খুব ভালো লাগল।
তন্ময়: তোমার প্রিয় ডাইনোসর কোনটা?
এ: গর্জন করা ডাইনোসর আমার ভালো লাগে। কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় হ্যাড্রোসরাস, যদিও ওরা গর্জন করে না।
তন্ময়: আর টি-রেক্স?
এ: টি-রেক্সও আমার ভালো লাগে। কারণ, ওটা থপথপ করে হাঁটে আর বড় বড় পায়ের ছাপ ফেলে যায়।

ডাইনোসরের ব্যবসা

‘এ’র মতো বাকি শিশুদের এই ডাইনোসরপ্রীতি কিন্তু নতুন কিছু নয়। মার্কিন সাংবাদিক কেট মর্গান ঠিক একই বিষয়ে আরেক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘প্রায় সব শিশুই ডাইনোসর ভালোবাসে। শৈশবে ডাইনোসর–ভক্ত না হলেও আপনি নিশ্চয়ই এমন কাউকে চেনেন, যে ডাইনোসর পছন্দ করত।’

ফলে শিশুরা অনায়াসে কয়েক ডজন, এমনকি কয়েক শ ডাইনোসরের বৈজ্ঞানিক নামও মুখস্থ বলতে পারে। ওরা কী খেত, দেখতে কেমন ছিল, কোথায় থাকত—সব প্রশ্নের উত্তর তাদের জানা। মেসোজোয়িক ও ক্রিটেশিয়াস যুগের মধ্যে পার্থক্যও জানে এই শিশুরা। অথচ একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলে দশটার বেশি ডাইনোসরের নাম বলতে পারবেন কি না সন্দেহ।

ডাইনোসরের এই তুমুল জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে খেলনা, টি-শার্ট থেকে শুরু করে থিম পার্কের বিশাল ব্যবসা গড়ে উঠেছে। আর এই ব্যবসায় চীনের জুড়ি নেই।

১৯৭০-এর দশকে চীনের জিগং শহরে আবিষ্কৃত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাইনোসরের ফসিল। এখন জিগং বিশ্বের ৮০ শতাংশ অ্যানিমেট্রনিক বা যান্ত্রিক ডাইনোসর তৈরি ও রপ্তানি করে। চীনে পাঁচ মিটার লম্বা একটি টাইরানোসরাসের দাম প্রায় সাত হাজার ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে খেলনা ডাইনোসরের বাজার ২৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ১৬ লাখ পাউন্ডে।

ডাইনোসরের জনপ্রিয়তার রহস্য

কিন্তু প্রশ্ন হলো, সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী কীভাবে এমন জনপ্রিয় হয়ে উঠল? এর পেছনে কি কোনো মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে?

অনেক মা–বাবা ও সমাজবিজ্ঞানী মিলে এই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া ডাইনোসরের ফসিল খুঁজে পাওয়ার মতোই কঠিন। আশি বা নব্বইয়ের দশকে সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে খেলনা হিসেবে ডাইনোসর ছিল না। কিন্তু তখন ছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ।

এই মার্কিন নির্মাতার ‘জুরাসিক পার্ক’ সিনেমাটি ডাইনোসরের এই জনপ্রিয়তার পেছনে একটা বড় কারণ বলে ধরা হয়। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তোলে বিশ্বব্যাপী এবং ডাইনোসরকে সবার কাছে করে তোলে জনপ্রিয়।

মনোবিদেরা কী বলেন

এই ভালোবাসার পেছনে আরও গভীর কারণ থাকতে পারে। মনোবিদেরা মনে করেন, শিশুরা বড়দের জগতে নিজেদের অনেক ছোট আর অসহায় ভাবে। ডাইনোসরের মতো বিশাল আর শক্তিশালী কিছুকে যখন ওরা ভালোবাসে, তখন নিজেদেরও শক্তিশালী ভাবতে শুরু করে। ওদের মতো গর্জন করে নিজেদের ভেতরের শক্তির প্রকাশ করে।

মনোবিদেরা এ–ও মনে করেন, ডাইনোসরের মতো বিশাল প্রাণীর খেলনা দিয়ে খেলে বা ওদের সম্পর্কে জেনে শিশুরা নিজেদের ভয়কে জয় করতে শেখে। ঠিক যেমন বড়রা ভূতের সিনেমা দেখে ভয়কে উপভোগ করেন।

মূল বিষয়টা হলো, ডাইনোসরের বিশাল আকার শিশুদের মুগ্ধ করে। শিশুরা যেমন গাড়ি, বাস বা ট্রাকের মতো বড় জিনিস দেখলে কৌতূহলী হয়, ডাইনোসরও তাদের কাছে তেমনই এক বিশাল আকর্ষণের বিষয়।

তবে এই ডাইনোসর–সংস্কৃতির পেছনে আরও কিছু গল্প আছে। সে সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানি না বা কম জানি। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় ধনকুবেররা একসময় নিজেদের সুনাম বাড়াতে বিশাল বিশাল জাদুঘর তৈরি করেন এবং সেখানে ডাইনোসরের ফসিল সাজিয়ে রাখেন। এভাবে ডাইনোসর একটা জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত করা হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশেও প্রচুর ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো কিছু ডাইনোসরের ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে এই উপমহাদেশে। কিন্তু ঔপনিবেশিক শোষণ আর অবহেলার কারণে এই অঞ্চলে ডাইনোসর তেমন পরিচিতি পায়নি। তাই বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানের শিশুরা টি–রেক্স বা ট্রাইসেরাটপস চিনলেও নিজেদের দেশের রাজাসরাস বা জাইনোসরাসের নাম জানে না।

শিশুদের ডাইনোসরপ্রীতি কি খারাপ

এবার মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। শিশুরা কেন ডাইনোসরকে এত পছন্দ করে? আদতে এ প্রশ্নের কোনো নির্দিষ্ট সহজ উত্তর নেই। হয়তো তার দরকারও নেই। কারণ, আনন্দের কারণ বা ব্যাখ্যা জানা সব সময় প্রয়োজনীয় নয়।

আবার শিশুদের এই ডাইনোসরপ্রীতি কিন্তু বেশি দিন থাকে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের এ ধরনের তীব্র আগ্রহ সাধারণত দুই থেকে ছয় বছর পর্যন্ত থাকে। স্কুল শুরু হলে আর দশটা বিষয়ের চাপে এই ভালোবাসা বা পছন্দ হারিয়ে যায়।

তাই শিশুদের এই খেলনা ডাইনোসরপ্রীতি খারাপ কিছু নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর দশটা খেলনার মতো খেলনা ডাইনোসরের প্রতি আগ্রহেও ভাটা পড়ে, মিলিয়ে যায়।

সূত্র: মিডিয়াম

শিশু-কিশোর সন্তান কি হঠাৎ অবাধ্য হয়ে রাগ দেখাচ্ছে?

0

মায়ের সঙ্গেই বেশির ভাগ সন্তানের আহ্লাদ, আবদার আর অভিমানের সম্পর্ক। তাই কখনো কখনো মায়ের সঙ্গে রাগও বেশি দেখায় সন্তানেরা। তবে কিছু শিশুর বেলাও দেখা যায়, পরিবারের অন্যদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলেও মায়ের সঙ্গে জেদ করছে, অবাধ্য হয়ে পড়ছে। কেন এমন করে?
মায়ের ওপর ভীষণ বিরক্ত তিনা (ছদ্মনাম)। মা কিছু বলতে গেলেই ১২ বছর বয়সী মেয়েটা রেগে যায়, কথা শুনতে চায় না। অথচ বছরখানেক আগেও মা বলতে পাগল ছিল। কেন এ পরিবর্তন? তিনার মা জানান, তাঁর মেয়ের এমন আচরণের শুরু সাত কি আট মাস আগে। কয়েক মাস আগে তিনার একটা ছোট ভাই হয়েছে। ভাই হওয়ার পর তিনার জেদ আরও বেড়েছে। মা অনেক চেষ্টা করেন মেয়ের বিরক্তি কাটাতে। এ জন্য পছন্দের খাবারদাবার কিনে দেন, খেলনা কিনে দেন, আদর করেন—কিন্তু কোনো লাভ হয় না। দিন দিন মায়ের সঙ্গে মেয়ের রাগ, জেদ বাড়ছে। অবাধ্য হয়ে পড়ছে।
তিনার মাকে বললাম, মেয়েটা মূলত মানসিক চাপে আছে। এত দিন পরিবারে সে একা ছিল। ভাইয়ের জন্মের পর নিজের গুরুত্ব কম মনে করছে। মায়ের মনোযোগ আগের মতো না পাওয়ার বিষয়গুলো তার মনে অনেক চাপ সৃষ্টি করেছে। নিজেকে সে অনিরাপদ মনে করছে। ফলে দেখা দিচ্ছে প্রতিক্রিয়া। একে বলে ‘সিবলিং রাইভালরি ডিজঅর্ডার’।

মায়ের সঙ্গে এই আবেগের প্রকাশ কি অস্বাভাবিক

১. প্রথমত, গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো ‘অ্যাটাচমেন্ট’। শিশুর জন্মের পর থেকে তার প্রাথমিক পরিচর্যাকারীর (সাধারণত মা-ই হন, তবে বাবা, দাদি, নানি বা অন্য কেউ হতে পারেন) সঙ্গে মানসিক ও আবেগময় সংযুক্তি গঠিত হয়। সেই হিসেবে মা-ই হন তার নিরাপত্তার কেন্দ্রস্থল। কারণ, মায়ের মাধ্যমেই তাদের খাবার, ঘুম, যত্ন নিশ্চিত হয়। তাই তারা মায়ের গন্ধ শুঁকে, মাকে দেখে নিরাপদ অনুভব করে। মাকে না দেখলে চিৎকার–চেঁচামেচি করে।

২. শিশুরা তাদের মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে রাগ দেখাতে পারে, আবেগ প্রকাশ করতে এবং তাদের স্বাধীনতা জাহির করতে শেখে। রাগ একটা স্বাভাবিক আবেগ। কখনো মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও শিশুরা রাগ, জেদ দেখাতে পারে।

৩. বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়, বিশেষত শিশু থেকে কিশোর বয়সে পা রাখা সন্তানেরা মতামত প্রকাশ, নিজের স্বাধীনতাবোধ, নিজস্বতা, মনোযোগ আকর্ষণসহ বিভিন্ন কারণে মায়ের অবাধ্য হতে পারে। কারণ, তাদের অবচেতন মন জানে, মা-ই তাদের নিরাপদ আশ্রয়, মায়ের কাছেই আবদার-অনুযোগ করা যায়।

৪. এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, ওপরের কারণ ছাড়াও কিছু মানসিক সমস্যা, যেমন অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভ ডিজঅর্ডার, অপজিশনাল ডেফিয়েন্ট ডিজঅর্ডার, ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার কারণেও শিশু-কিশোরেরা মা, অর্থাৎ পরিবারের সদস্যের সঙ্গে রাগারাগি, বেয়াদবি কিংবা অবাধ্য আচরণ করতে পারে। এসব বিষয় ছাড়া প্যারেন্টিং সমস্যা, যেমন পারমিসিভ প্যারেন্টিং এবং অথরিটারিয়ান বা নেগলেক্টিং প্যারেন্টিং, টক্সিক পারিবারিক পরিবেশ ইত্যাদি কারণেও আচরণের পরিবর্তন বা সমস্যা হতে পারে।
একটা শিশুকে জন্ম থেকে তিল তিল করে বড় করে তোলা নিঃসন্দেহে কঠিন ব্যাপার। বড় হতে শুধু পর্যাপ্ত খাবার, ভালো স্কুল, আর মা–বাবার আদর দরকার—ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। একটা শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য ওপরের বিষয়গুলো তো থাকবেই, সঙ্গে সঠিক প্যারেন্টিং, পারিবারিক পরিবেশ, পারিবারিক নিয়ম–শৃঙ্খলার প্রয়োগ, মা-বাবার সম্পর্ক—সবকিছুই নির্ভর করে।

তাই আপনার সন্তানের আচরণের পরিবর্তন খেয়াল করলে, তাকে মারধর বা অতিশাসন করবেন না কিংবা ‘বাচ্চারা একটু অমন করেই’ বলে ছেড়ে দেবেন না; বরং তাদের সঙ্গে কথা বলুন, জানার চেষ্টা করুন, কেন তারা এমন করছে। ভুল করলে স্নেহ আর ধৈর্যসহ তাকে সাহায্য করুন। নিজেদের কোনো ভুল থাকলে শোধরানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ডা. রেজওয়ানা হাবীবা, সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট

মা-বাবা এই ৭ কাজ করলে বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যায় শিশু

0

সন্তানের ঠিকভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে মা–বাবার চিন্তা ও চেষ্টার কমতি থাকে না। এ জন্য অবলম্বন করেন বিভিন্ন উপায়। পরীক্ষার ফলাফল কিংবা পাঠ্যবইয়ের বাইরেও তাঁরা সন্তানকে যুক্ত করেন বিভিন্ন কার্যক্রমে। তাঁরা মনে করেন, এতে তাঁদের সন্তান বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যাবে। বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকলে শিশু বেড়ে ওঠে যথাযথভাবে, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, গড়ে তুলতে পারে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক। মোটকথা জীবন যাপন করতে পারে পরিপূর্ণভাবে।

বেশ কয়েক বছর ধরে অভিভাবক ও শিশুর সম্পর্কের ওপর গবেষণা চালিয়েছে হাই লাভ প্যারেন্টিং ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট। এই গবেষণায় অংশ নেয় ২০০ অভিভাবক ও শিশু। তাতে দেখা গেছে, যেসব শিশু বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে, তাদের মা–বাবারা সাতটি কাজ করেছেন। কী সেই সাত কাজ?

১. নীরবতার গুরুত্ব বোঝেন

গবেষণায় অংশ নেওয়া মা–বাবারা সন্তানদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন। সন্তান যাতে মনের বলতে না পারা কথাগুলো তাঁদের কাছে অনায়াসে প্রকাশ করতে পারে, সেই বিশ্বাস সন্তানের মধ্যে তৈরি করেছেন। সন্তান যখন বিরক্ত হতো, তখন তাঁরা চুপচাপ তাদের পাশে বসে থাকতেন। নিঃশব্দে তাদের সান্ত্বনা দিতেন। ফলে শিশুরা নীরবতাকে গ্রহণ করেছে সহজেই। তারা আবেগগুলোকে আরও ভালোভাবে পরিচালিত ও প্রতিফলিত করতে পেরেছে।

২. আবেগগত সচেতন

সন্তানের সঙ্গে অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার সময় মা–বাবারা তাঁদের আবেগগুলোর ব্যাখ্যা দেন। যেমন তারা সরাসরি বলেন, ‘আমি হতাশ’ কিংবা ‘আমি খুশি’। এভাবে তাঁরা সন্তানদের মধ্যে আবেগগত সচেতনতা তৈরি করেন। এতে যেটা হয়, শিশুরা তাদের আবেগকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে শেখে এবং দমন করার পরিবর্তে তারা খোলাখুলিভাবে আবেগের প্রকাশ ঘটাতে পারে।

৩. ক্ষমা চাওয়া শেখান

ভুল যে জীবনের একটি অংশ এবং তা কাটিয়ে উঠে দায়িত্ব নেওয়া যে একধরনের শক্তি, সেটা তাঁরা শিখিয়েছেন সন্তানদের। কোনো ভুলের কারণে ক্ষমা চাইলে যে ক্ষতি নেই; বরং সেটা নিজের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে এবং তা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপায়, এসব মূল্যবোধ ওই মা–বাবারা তাঁদের সন্তানকে শেখান।

৪. জোরাজুরি করেন না

দয়া আর শ্রদ্ধা যে জোর করে আদায় করা যায় না, এটা আদর্শ মা–বাবারা জানেন। তাই তাঁরা কখনো তাঁদের সন্তানদের ‘প্লিজ’, ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘সরি’ বলার জন্য জোরাজুরি করেন না; বরং তাঁরা সন্তানকে শেখার জন্য সময় দেন। তাঁদের সন্তানেরা এসব বলতে ভুলে গেলে তাদের হয়ে নিজেরা বলে দেন। একটা পর্যায়ে সন্তান ঠিকই রপ্ত করে।

৫. শিশুর উদ্বেগগুলো উড়িয়ে দেন না

খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শিশুরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারে। যেমন নিজের খেলনা হারিয়ে ফেলা কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ঝামেলা হওয়া। এসব সমস্যা হেসে উড়িয়ে দেন না ইতিবাচক মা–বাবারা। তাঁরা শিশুদের আবেগের মূল্যায়ন করেন। এতে শিশুরা বুঝতে পারে যে আবেগ গুরুত্বপূর্ণ। আবেগকে গুরুত্ব দিলে আত্মমূল্যায়ন করা যায়, মানসিক সুরক্ষা মেলে আর নিজের অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়।

৬. সব সময় সমাধান দেন না

শিশুসন্তান কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে তৎক্ষণাৎ সমাধান না করে দিয়ে বরং তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেন আদর্শ মা–বাবারা। তাঁরা শিশুদের জিজ্ঞেস করেন, ‘এখন আমাদের কী করা উচিত বলে মনে করো?’ এমনটা করার কারণে শিশুর ভেতরে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার বোধ দৃঢ় হয়।

৭. একঘেয়েমিকে গ্রহণ করেন

ইতিবাচক মা–বাবারা কোনো কিছুতে সন্তানদের বোর হওয়া বা একঘেয়ে লাগার মুহূর্ত তৈরি হওয়ার সুযোগ দেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে তাঁরা দেখেন, তাঁদের সন্তানেরা একঘেয়ে মুহূর্ত পাশ কাটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নিচ্ছে। এভাবে তাঁরা সন্তানদের মধ্যে সৃজনশীলতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করেন। এতে সন্তানেরা তাদের একান্ত নিজের মুহূর্তগুলোতে আনন্দ খুঁজে পায়। যেমন মুঠোফোনের পর্দায় বুঁদ হয়ে থাকার পরিবর্তে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকারও যে আনন্দ আছে, সেটা তারা বুঝতে শেখে।

যেভাবে সন্তানের মানসিক বুদ্ধিমত্তার লালন-পালন করবেন

  • সন্তানের কাছ থেকে আপনি যে ধরনের আচরণ পেতে চান, তার সামনে আপনিও সেসবের চর্চা করুন। যেমন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন খোলাখুলিভাবে। কোনো ধরনের ভুল করে থাকলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। অন্যের সঙ্গে চলাফেরার সময় দয়া ও সহানুভূতি দেখান।
  • আপনার সন্তানের অনুভূতিগুলো যাচাই করুন। সেটা ছোট কিংবা বড় যা-ই হোক না কেন। সেসব সংশোধন বা প্রত্যাখ্যান না করে বরং তাকে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে দিন।
  • সব সময় সন্তানের সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। এর পরিবর্তে খোলামেলা প্রশ্ন করুন। দেখবেন, সমস্যা সমাধানে সে উৎসাহী হয়ে উঠছে।
  • একঘেয়েমির মুহূর্তগুলো তাদের অনুভব করতে দিন। এতে তারা সৃজনশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে বের করতে শিখবে।

তবে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমন সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তা ছাড়া নিরাপদ, মূল্যবান ও উপলব্ধি করার মতো অনুভূতির মধ্য দিয়েই তো বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটে।

সূত্র: এমএসএন

বৃষ্টিতে ভিজলেই শিশু অসুস্থ হয়?

0

রোদ–বৃষ্টি যা–ই থাকুক, শিশুদের দুরন্তপনার বিরাম নেই। প্রাণোচ্ছল শৈশব তো এমনই হয়। স্কুলে যাতায়াতের পথেও হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যেতে পারে শিশু। আর বৃষ্টিতে ভেজার পর হাঁচি–কাশি বা সর্দি–জ্বরের মতো সমস্যায় ভোগে কোনো কোনো শিশু। আদতেই কি বৃষ্টির পানি শিশুর অসুখের কারণ?

বৃষ্টির পানি বেশ ঠান্ডা। ফলে এই ঠান্ডা পানিতে ভেজা অবস্থায় লম্বা সময় থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে যে কারও। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে সুস্থ থাকতে শিশুকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেওয়াই যাবে না। বৃষ্টিতে মাঠে কিংবা নিদেনপক্ষে বাড়ির সামনের একরত্তি জায়গায় একটু দৌড়ঝাঁপ না করলে আর শৈশবের আনন্দটা থাকল কোথায়! শিশুদের বৃষ্টিতে ভেজার ব্যাপারে তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেন না চিকিৎসকেরাও, যদি না সে ঠান্ডায় অতিসংবেদনশীল হয় বা তার নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা থাকে।

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালট্যান্ট, শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. তাসনুভা খান বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজলেই যেকোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এমন ধারণা ভুল। কোনো শিশু বৃষ্টিতে ভিজলে তার সুস্থতার জন্য সাধারণ কিছু বিষয় খেয়াল রাখাই যথেষ্ট। তবে কারও যদি ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকে, তাহলে বৃষ্টিতে ভিজলে তার হাঁচি–কাশি বা সর্দি হতে পারে। আর ঠান্ডা পানিতে ভিজলে হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর পারতপক্ষে বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো।’

শিশু বৃষ্টিতে ভিজলে

শিশুকে বেশিক্ষণ ভেজা অবস্থায় থাকতে দেবেন না। বৃষ্টিতে ভেজার পর দ্রুত শিশুর মাথা ও শরীর মুছে দিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ ভেজা অবস্থায় থেকে গেলে যে কারও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ভেজা ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণও হতে পারে। খেয়াল রাখুন, আঙুলের ফাঁকে বা ত্বকের কোনো ভাঁজেও যেন পানি রয়ে না যায়। তবে বৃষ্টির পানিতে ভেজার সময় কাদামাটি লেগে শরীর ময়লা হলে প্রথমে সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার বা গোসল করার প্রয়োজন হয়। এই পরিচ্ছন্নতার কাজে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। অবশ্য এতে খুব বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। প্রয়োজন না হলে গোসল করাবেন না।

এরপর যা কিছু

শিশুকে শুকনা ও পরিষ্কার কাপড় পরিয়ে দিন। এমন কাপড় পরানো উচিত, যাতে শিশুর শরীর উষ্ণ থাকে। যেমন একটু পুরু সুতি কাপড়ের ফুলহাতা জামা ও পায়জামা পরিয়ে দিতে পারেন। প্রয়োজনে দুই স্তরে পোশাক পরাতে পারেন। আবহাওয়া বেশি ঠান্ডা থাকলে পাতলা ফ্লানেল কাপড়ের পোশাকও পরাতে পারেন। বৃষ্টিতে ভেজার পরপরই শিশুকে ঠান্ডা হাওয়ায় থাকতে দেবেন না। প্রয়োজনে ঘরের জানালা আটকে রাখুন কিছুক্ষণ। শিশুর শরীর উষ্ণ করে তুলতে তাকে কুসুম গরম পানি কিংবা পানীয় দিতে পারেন।

ঘরের কোণে, ডিজিটাল ডিভাইসের বদলে প্রকৃতির মধ্যেই যদি শিশু আনন্দ খুঁজে পায়, তা শিশুর জন্য ইতিবাচক। বৃষ্টিতে হুটোপুটি করার অকৃত্রিম আনন্দের সুযোগ দিন তাকে। অভ্যাস নেই বলে যে হুট করে ভিজলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে, এমন ধারণা ভুল। নিতান্তই যদি শিশু ঠান্ডায় অতিসংবেদনশীল হয় বা তার শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে কিংবা তার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তাহলে হয়তো তাকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রেও আপনি তাকে বৃষ্টির পর সতেজ প্রকৃতির মধ্যে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ করে দিতে পারেন।

খেয়াল রাখুন

  • লম্বা সময় বৃষ্টিতে ভেজা কারও জন্যই ভালো নয়।
  • ঝড় বা বজ্রপাতের সময় বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না।
  • বৃষ্টির সময় শিশুকে জলাশয়ের ধারেকাছেও যেতে দেবেন না।
  • স্কুলে যাওয়ার পথে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে পোশাক পরিবর্তন বা ভালোভাবে শরীর মোছার সুযোগ না–ও পাওয়া যেতে পারে। তাই যাওয়ার সময় রেইনকোট বা ছাতার মতো অনুষঙ্গ ব্যবহারে যত্নশীল হোন; সঙ্গে রাখুন ভালো শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন রুমাল বা ছোট তোয়ালে।

পরিবেশবান্ধব আদর্শ নগরী: উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছোট্ট শিক্ষার্থীদের বড় স্বপ্ন

0

পরিবেশ রক্ষা ও একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ নগরী গড়ার স্বপ্ন দেখে ছোট থেকেই। কিন্তু বাস্তব জীবনে এটি বাস্তবায়ন করা কেবল বড়দের দায়িত্ব নয়, বরং শিশুদের মাঝেও যদি এই চিন্তাভাবনা গড়ে ওঠে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি উন্নত, পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে পারবে। ঢাকার উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি একটি চমৎকার প্রজেক্ট উপস্থাপন করেছে, যার নাম “পরিবেশবান্ধব আদর্শ নগরী”। এ দলে নেতৃত্ব দিয়েছে তাজকিয়াহ ফাইরুজ আরুশী, যার সঙ্গে ছিল তার কিছু উদ্যমী বন্ধু। ছোট বয়সেই তারা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে এবং একটি টেকসই, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহরের পরিকল্পনা তৈরি করেছে।


তাদের স্বপ্নের নগরীর রূপরেখা

তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা তাদের প্রজেক্টে এমন একটি শহরের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যেখানে প্রকৃতি ও নগরায়ন হাত ধরে চলবে। তারা মূলত কয়েকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছে:

পর্যাপ্ত গাছপালা ও সবুজায়ন: পরিবেশবান্ধব শহরের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সবুজ পরিবেশ। তারা চেয়েছে, শহরের প্রতিটি বাসাবাড়ির পাশে একটি করে বাগান থাকবে এবং রাস্তার ধারে সারি সারি গাছ লাগানো হবে, যা বাতাস পরিশুদ্ধ করবে ও শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী: তাদের মতে, শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। রাস্তার ধারে, স্কুল ও পার্কের আশেপাশে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা তারা দিয়েছে, যাতে সবাই সহজেই আবর্জনা ফেলতে পারে।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্রের ব্যবহার: প্লাস্টিক দূষণ আমাদের শহরকে ধ্বংস করছে। তাই তারা প্রস্তাব করেছে কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের। এছাড়া, স্কুল ও অফিসগুলোতে পানির বোতল ও অন্যান্য পণ্য পুনর্ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা করার কথা বলেছে।

সৌরশক্তির ব্যবহার: তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা চায়, বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সৌরপ্যানেল ব্যবহার বাড়ানো হোক, যাতে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে শহর চলতে পারে। এটি বিদ্যুতের চাহিদা কমাবে এবং পরিবেশের উপর চাপ কমাবে।

পরিবেশবান্ধব যানবাহন: বায়ুদূষণ রোধে তাদের পরামর্শ হলো, বেশি বেশি সাইকেল ও বৈদ্যুতিক যান ব্যবহারের। তারা এমন একটি শহরের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে গাড়ির ধোঁয়া কমবে এবং রাস্তা হবে নিরাপদ।

পানির সংরক্ষণ ও বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনা: পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে তারা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতে পানির সংকট মোকাবিলায় কার্যকর হবে।


স্কুলে কেমন সাড়া ফেলল তাদের প্রজেক্ট?

তাদের উপস্থাপনা শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। শিক্ষকরা তাদের চিন্তার পরিপক্বতার প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এমন উদ্যোগ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন করে তুলবে।”

তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা তাদের প্রজেক্টে নগরীর একটি মডেলও তৈরি করেছিল, যেখানে তারা তাদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এতে ছোট ছোট সবুজ পার্ক, সৌরবিদ্যুৎ চালিত লাইটপোস্ট, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন এবং পানির পুনর্ব্যবহারের প্রযুক্তির চিত্র তুলে ধরা হয়।


শিশুরাই বদলে দিতে পারে ভবিষ্যৎ

তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা দেখিয়েছে, সচেতনতা ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য শহর গড়া সম্ভব। তাদের মতো শিশুরা যদি ছোট থেকেই পরিবেশ রক্ষার প্রতি যত্নবান হয়, তাহলে একদিন সত্যিই আমরা একটি পরিবেশবান্ধব আদর্শ নগরী গড়ে তুলতে পারব।

তাদের এই অনন্য চিন্তাধারা ও কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। ছোট বয়স থেকেই যদি এমন সচেতনতা তৈরি হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিঃসন্দেহে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবে।

শিশুদের এমন উদ্যোগ আমাদের আশার আলো দেখায়। তাদের স্বপ্নের শহর বাস্তবে রূপ নেওয়ার দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়! 🌿🌎💚

প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরাও চাইলে তোমাদের স্কুলের নানা কার্যক্রম নিয়ে লিখতে পারো ছোটদেরবন্ধুতে। লেখা পাঠাও ইমেইলে [email protected] অথবা আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সেও নক দিতে পারো।

কান ফোঁড়ানোর আগে যা জানা প্রয়োজন

0

আগেকার দিনে ছোট বয়সে কান ফোঁড়ানোর কাজটা মা–খালারাই করতেন। ঘরে থাকা সুই–সুতা দিয়ে দক্ষ হাতে কাজটা সারতেন তাঁরা। কানের সেই সুতা খুলে কিছুদিন পর পরিয়ে দিতেন রুপা বা সোনার রিং। সময় বদলেছে। এখনকার মায়েরা ছোট্ট মেয়ের কান ফোঁড়াতে পারলার বা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে কান ফোঁড়ানো হয় বলে খুব একটা টের পাওয়া যায় না। তবে শখের বশে কান কেবল ফোঁড়ালেই হবে না, মেনে চলতে হবে কিছু বিশেষ নির্দেশনা। কান ফোঁড়ানোর আগে যেমন প্রস্তুতি আছে, পরেও তেমনি যত্ন নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। একটু অসাবধানতায় কানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেক।

কোন বয়সে শিশুর কান ফোঁড়ানো উচিত

আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়েরা কম বয়সেই মেয়েদের কান ফোঁড়াতে পছন্দ করেন। বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি পারলারের কর্ণধার শারমিন কচি বলেন, কান ফোঁড়ানোর নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। তবে কান ফোঁড়ানোর সময় কানের লতির ওপরের হাড় পরিপক্ব হতে হবে, না হলে বয়স হতে হতে ছিদ্র নিচে নেমে আসতে পারে, পরে ভারী দুল পরলে টান লাগবে। আর এমন বয়সে কাজটা করা উচিত, যখন শিশু বুঝতে পারে কান ফোঁড়ানো ব্যাপারটা কী। না হলে কানের দুল টানাটানি করে বা হাতের ঘষায় ঘা তৈরি করে ফেলতে পারে।

যেসব বিষয় মাথায় রাখা জরুরি

১. কান ফোঁড়ানোর আগে কানের লতি ও ব্যবহৃত সুই জীবাণুমুক্ত কি না, নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ হাতে কান ফোঁড়ানোর দায়িত্ব দিতে হবে।

২.ব্যথা হলে হালকা গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। ক্ষতস্থান যেন সব সময় পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন শারমিন কচি। ক্ষত সেরে ওঠার জন্য অন্তত সাত দিন সময় দিতে হবে। শিশুকে স্বাভাবিক খাবার ও পর্যাপ্ত তরল খাবার দিতে হবে। সঙ্গে খেতে হবে ভিটামিন সি–জাতীয় ফলমূল। ভিটামিন সি শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দ্রুত ক্ষত সারায়। কিছুদিন এড়িয়ে চলতে হবে অ্যালার্জিজাতীয় খাবার, যেমন গরুর মাংস, বেগুন ইত্যাদি।

দুল পরানোর আগে কোনো ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে দুল পরানোর পর কানে ৩. যদি লালচে বা ফোলা ভাব দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিসেপটিক বা ব্যথানাশক ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোসকা বা অতিরিক্ত ফোলা ভাব অবহেলা করা যাবে না। সংক্রমণের লক্ষণ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসক দেখাতে হবে।

৪. ঘন ঘন শিশুর কান ধরা যাবে না। অপরিচ্ছন্ন হাতে কান ধরা যাবে না। ক্ষতস্থান যথাসাধ্য পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

৫. জোর করে বা টানাটানি করে দুল পরানোর চেষ্টা করা যাবে না। শুরুতেই ভারী দুল পরানো যাবে না। সোনা বা এমন ধাতুর দুল পরাতে হবে, যাতে অ্যালার্জির ঝুঁকি কম থাকে।

৬. ছোট্ট শিশুর কানে দুল পরানো আনন্দের মুহূর্ত হলেও এর জন্য সঠিক নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছোট বয়সে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে। এই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও তার আচরণের দিকে খেয়াল রাখলে শিশুর কান ফোঁড়ানোর অভিজ্ঞতা নিরাপদ ও সুন্দর হয়ে উঠবে। আজকাল ব্যথামুক্ত উপায়েই কান ফোঁড়ানো হয়ে থাকে। বিভিন্ন পারলার ভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় কান ফোঁড়ানো যায়।

একসময় ছয় মাস বয়সেই মেয়েশিশুর কান ফুটো করে দেওয়া হতো। তখন বাড়িতেই নানি-দাদির হাতে সোনামুখি সুই দিয়ে কান ফোঁড়ানো হতো। বর্তমান সময়ে কিছুটা বড় হওয়ার পর এবং পারলারে গিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে কান ফোঁড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে।

১০ বছর বয়স হওয়ার আগে কান ফোঁড়ানো ভালো নয়। কারণ, শিশুদের কানের বৃদ্ধির কারণে সঠিক জায়গাটি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। আবার বেশি দেরি করাও উচিত নয়।

কান ফুটো করার সময়

যে শিশুর কান ফোঁড়ানো হবে, তাকে আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। নয়তো সে ভয় পাবে বা কান্নাকাটি করবে। সে জন্য একটু বড় বা সচেতন হওয়ার পরই কান ফোঁড়ানো উচিত। 

কান ফোঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই কানে গোল্ড প্লেটেড বা ইমিটেশনের কানের দুল না পরানোই ভালো। অনেকের এতে অ্যালার্জি হতে পারে।

যে যন্ত্র দিয়ে কান ফোঁড়ানো হবে, তা যেন জীবাণুমুক্ত হয়। যদি বাড়িতেই কান ফোঁড়ানোর ব্যবস্থা হয়, তবে যে সুই দিয়ে কান ফোঁড়ানো হবে তা অবশ্যই গরম পানিতে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। ব্যবহৃত নয়, নতুন সুই ব্যবহার করতে হবে। একজনের ব্যবহৃত সুই আরেকজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে বা পারলারে আধুনিক জীবাণুমুক্ত যন্ত্রের সাহায্যে কান ফুটো করাই সবচেয়ে ভালো।

যেদিন কান ফোঁড়ানো হবে, সেদিন বা তার আগের কয়েক দিন শিশুর জ্বর, সংক্রমণ বা অ্যালার্জি জাতীয় অসুস্থতা থাকলে ফোঁড়ানো পিছিয়ে দিতে হবে। শিশু সুস্থ হলে তারপর কান ফোঁড়াতে হবে।

কান ফোঁড়ানোর পর

বারবার কান স্পর্শ করা যাবে না। ভালো করে হাত ধুয়ে তারপর স্পর্শ করতে হবে। শিশুকেও এ বিষয়ে সচেতন করে দিতে হবে।

দিনে দুবার কানের সুতা বা দুল ঘুরিয়ে বা নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। কাঁচা অবস্থা থেকে হিলিং হওয়ার সময় ওই স্থানে ফাইব্রোসিস হয়ে কানের ফুটো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বারবার নাড়িয়ে দিলে তা হবে না।

সেভলন বা ডেটল জাতীয় জীবাণুনাশক পানি দিয়ে দ্রবণ করে দিনে একবার কানের ফুটোর চারপাশে ভালো করে মুছে দিন। তাহলে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

কান ফোঁড়ানোর পর লেবু, কমলা বা ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খেতে দিন বেশি করে। এতে তাড়াতাড়ি ক্ষতস্থান শুকিয়ে যাবে।

যেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে, সেসব খাবার একেবারেই দেবেন না। চুলকানি হলে শিশু নখ দিয়ে চুলকাবে এবং সংক্রমণ হবে।

কাঁচা অবস্থায় ওই স্থানে নিজে বা অন্য কেউ হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

সংক্রমণ হলে

শরীরের সবচেয়ে নরম অংশ হলো কানের লতি। এতে কোনো হাড় নেই। তাই এখানে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যদি কানের লতিতে সংক্রমণ হয়, তবে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। পুঁজ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে।

ডা. জাহেদ পারভেজ

সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

বসে খাওয়ার রত্ন

0
  • টি এইচ মাহির

১)

দরজা খুলেই বাইরে বেরুতে যাচ্ছিলো বাবলু।ঠিক তখুনি পেছন থেকে মা চেঁচিয়ে উঠলেন,”অ্যাঁই বাবলু,কই যাচ্ছিস…ঘর থেকে এক পাও বের হবি না।”

ইদানিং বাবলুদের শহরে আতংক বেড়েই চলেছে।ছেলে ধরার আতংক।প্রতিদিন কোনো না কোনো ছেলে-মেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের শহর থেকে।দিনে দুপুরে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চারা।পুলিশও কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছেনা,কে বা কারা বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে কিংবা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে ওরা। এই তো সেদিন ও বাবলুর স্কুলের এক বন্ধু হারিয়ে গেছে।স্কুলে বেশ হইচই পরে গেছে।মা-বাবারা আতংকে তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।বাবলু নিজেও বেশ কিছুদিন ধরে স্কুলে যাচ্ছে না।অবশ্য যাচ্ছে না বললে ভুল হবে।বাবলুর মা বাবা যেতে দিচ্ছে না।ঘরে শুয়ে বসে দিন কাটছে না তার।তাই বাইরে বেরুতে চায়।অবশ্য একটা কাজও আছে।সাইদের বাসায় যেতে হবে।সাইদের কাছে বাবলুর বেশ কিছু বই আছে।কিছুদিনের জন্য পড়তে দেয় ।স্কুল না যাওয়ায় আর ফেরত নেয়া হয়নি।তাই বই গুলো আনতে হবে।শুয়ে বসে অন্তত বই পড়ে দিন কাটবে বাবলুর।বইগুলো আনতেই বাইরে বেরুচ্ছিল বাবলু কিন্তু মায়ের ডাকে ফিরে এলো।

এদিকে মা ছাদে কাপড় শুকাতে যাচ্ছেন।সেই ফাঁকেই আবার বেরিয়ে পড়লো বাবলু। সাইদদের বাসাটা বেশি দূরে নয়।বাবলুদের শহরটা কিছুটা মফস্বল এলাকা।বাড়ি ঘর কম।রাস্তাগুলোও ফাঁকা থাকে।তবে ইদানিং ছেলেধরার আতংকে আরো বেশি নিস্তব্ধ।কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে বাবলুর।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই সাইদদের বাসার গলির সামনে এসে পড়লো বাবলু।এই গলিটা বেশ বড়।গলিতে ঢোকার আগে একটা বড় ময়লা ফেলার ডাস্টবিন আছে।সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা এসে ময়লা নিয়ে যায়।

এখানে এসে কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগলো বাবলুর।তার ভয়ে মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলো একটা যান্ত্রিক শব্দ।মনে হচ্ছে ডাস্টবিনে কেউ রোবট ফেলে গেছে।একটু সাহসী হয়ে এগিয়ে গেল।ঠিক তখনই চারপাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল।মনে হচ্ছে একশটা গাড়ির ধোঁয়া বাবলুকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।কেমন ঝিম ধরানো গন্ধ।বাবলু ধীরে ধীরে মাটিতে পরে যাচ্ছে।যান্ত্রিকভাবে যেন কেউ কথা বলছে।বাবলুর কিছু বুঝতে পারছে না।তার কাছে পৃথিবীটা ঝাপসা হয়ে আসছে।

২)

“স্যার এই ছেলেটা তো অংকে কাঁচা।ওকে কেন ধরে এনেছি আমরা।আমাদের দরকার বুদ্ধিমান কেউ।যারা অংকে খুব ভালো।তাহলেই তো আমরা সারাজীবন বসে খেতে পারবো।আর অন্যদের গ্যালাক্সিতে হানা দিতে হবে না।”

“তুমি কি করে জানলে ছেলেটা অংকে কাঁচা?”

“স্যার আমি ওদের স্কুলের ঘুলঘুলি দিয়ে ডুকেছিলাম।ওরা খাতা দেখেছি।নাম তার বাবলু।অংকে খুব খারাপ নাম্বার পেয়েছে ছেলেটা।”

“ওহ হো! আবার ভুল কাউকে ধরে এনেছে শিরু আর বিরু।এরা তো কোনো কাজের না।এই নিয়ে সাইত্রিশ জন স্কুলের বাচ্চাকে ধরে এনেছে।একটাও তো আমাদের দরজাটা খুলতে পারলো না।”

আবার যান্ত্রিক শব্দে জেগে উঠলো বাবলু।দুইজন বিশাল রোবট আকৃতির লোক চেঁচিয়ে কথা বলছে।জায়গাটা একটা হলঘরের মতো।তবে কেমন যেন লোহার দেয়াল দিয়ে ষড়ভুজ আকৃতির ঘর।আর রোবট দুটোর কথাগুলো যান্ত্রিক শুনাচ্ছে।দুইজনে বাবলুর দিকে এগিয়ে এলো।

“তোমরা কারা”-বাবলু জানতে চাইলো।”আমাকে ধরে এনেছ কেনো?আমার হাত দুটো খুলে দাও।”

“দিবো তবে আমাদের একটা কাজ করে দিতে হবে।তবেই তুমি এখানে থেকে ছাড়া পাবে।বাকি যে সাইত্রিশ জনকে ধরে এনেছি সবাইকে ছেড়ে দিবো।”

“কি কাজ? আর তোমরা কারা?”

“আমরা হলাম এআই রোবট।এটা আমাদের গ্রহ।তুমি এখন আমাদের গ্রহে।”

“তোমরা আমার ভাষা বুঝতে পারছো কি করে?”

“কারণ আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট।মানুষের ভাষা বুঝে তাদের সাথে সেই ভাষাতেই কথা বলি।আমরা এআই দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারি।ছোট থেকে বড় হতে পারি আবার বড় থেকে একদম মাছি আকৃতির আকার ধারণ করতে পারি। তবে একটা কাজ এখনো করতে পারি নাই।সেটা করতে পারবে পৃথিবীর মানুষ নামক প্রানীরা। তাই পৃথিবী থেকে বুদ্ধিমান বাচ্চাদের ধরে আনছি।শুনেছি মানুষের বাচ্চারা খুব বুদ্ধিমান হয়।”

“বাবলু তুমি কি কাজটা করবে?”-এবার রোবটদের বস বলল।এতোক্ষণ বাবলুর সাথে কথা বলছিল ছোট রোবটটা।

“কী কাজ?”-বাবলু শান্ত গলায় বলল।

“আমাদের গ্রহে মাটির নিচে একটা গোপন কুঠুরি আছে।আমার দাদা মৃত্যুর আগে আমাকে জানিয়েছিলেন।ঐখানে হাজার হাজার রত্ন লুকিয়ে আছে।ওইগুলো পেলে নাকি আমরা সারাজীবন বসে খেতে পারবো। তিনি বলেছিলেন এই কুঠুরি দরজাটা শুধু বুদ্ধিমান মানুষই খুলতে পারবে।আমরা এই পর্যন্ত সাইত্রিশটা বাচ্চাকে ধরে এনেছি।সবাই পড়ালেখা ভালো।স্কুলের ফার্স্ট স্টুডেন্ট।কিন্তু কেউ এই দরজাটা খুলতে পারেনি।ওদের কাউকে আর পৃথিবীতে পাঠাবো না।যদি তুমি এই দরজাটা খুলে দিতে পারবো তবে তোমার সাথে তাদেরকেও পৃথিবীতে পাঠাবো।”

“আমি পারবো।”-বাবলু বেশ সাহসের সাথেই বলল।যে করেই হোক তাকে পারতেই হবে।নাহয় বাকি সাইত্রিশ জনের মতো এই অচীন গ্রহেই পরে থাকতে হবে।

বাবলুকে রোবটরা একটা পাহাড়ের মতো জায়গায় নিয়ে গেল।পাহাড়ের নিচে একটা কুঠুরি।দেখে মনে হচ্ছে গুহা।পৃথিবীতে যেরকম থাকে।কিন্তু এখানে কিছুটা ভিন্ন অনেকটা বাংকারের মতো।

দরজায় একটা স্ক্রিন আছে।বাবলু সেখানে ট্যাপ করলো।সাথে সাথে একটা ক্যাপচা এলো।সেখানে লেখা ‘আর ইউ অ্যা রোবট?’।তারপর নিচে কিছু ছবি দেয়া।পাজল ধরণের।সেখানে লেখা নিচের কোনটি কোনোটি পাখি বাছাই করো।মোট নয়টা ছবি দেয়া।মুরগি,পায়রা,মাছি,মশা,মৌমাছি,হাঁস,প্রজাপতি,বাদুড় আর বানর।বাবলু পাখির ছবি হিসেবে তিনটা প্রানীর ছবির উপর ক্লিক করলো।মুরগি,পায়রা আর হাঁস।তারপর আই এম নট অ্যা রোবটে ক্লিক করলো।

সাথে সাথে সমাধান হলো প্রথম ধাপ।এদিকে রোবটরা সবাই হাত তালি দিলো।বাবলুর উৎসাহ দ্বিগুণ হলো।

তারপর এলো দ্বিতীয় ধাপ।দ্বিতীয় ধাপে দিতে হবে একটি চার অংকের পাসওয়ার্ড তাহলেই খুলে যাবে দরজা।আর সেই পাসওয়ার্ডের ক্ল দেয়া আছে স্ক্রিনেই।বাবলু এবার কেমন যেন ঘামতে শুরু করলো।কারণ এখানে দেয়া আছে অংক ধাঁধা।কিন্তু বাবলু তো অংকে কাঁচা।চার অংকে প্রথম তিন অংকের জন্য একটি ধাঁধা সমাধান করতে হবে তাহলেই প্রথম তিন অংক পাওয়া যাবে।

সেখানে লেখা,’একটি তিন অংকের সংখ্যা।আর দ্বিতীয় অংকটি প্রথম অংকের পাঁচগুণ এবং তৃতীয় অংকটি দ্বিতীয় অংকের চেয়ে দুই কম।’

বাবলু মনে মনে হিসাব কষলো প্রথম অংকটি যদি ১ হয় তবে দ্বিতীয় অংকটি হবে ৫;যেহেতু বলা আছে প্রথম অংকের পাঁচগুণ।আবার তৃতীয় অংকটি দ্বিতীয় অংক (৫) এর চেয়ে দুই কম,অর্থাৎ ৩।যেহেতু এখানে তিন অংক বের করতে হবে তাই প্রথম সংখ্যাটি ১ এর চেয়ে বেশি হতে পারবে না।কারণ প্রথম অংকটি যদি ১ এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে দ্বিতীয় অংকটি পাঁচগুণ হলে দুইটি অংকের সংখ্যা হয়ে যাবে,শর্তের সাথে মিলে না।তাই বাবলু পাসওয়ার্ডের প্রথম তিনটি অংক পেল ১৫৩।এবার শেষ অংকটি খোঁজার পালা।পরের ধাঁধাটি পড়তে যাবে এমন সময় রোবটদের বস বললো,

“তাড়াতাড়ি করো বাবলু।আর মাত্র দুই মিনিট সময় আছে।ওই দেখো উপরে ঘড়িতে কাউন্টডাউন হচ্ছে।সময় শেষ হয়ে গেলে আবার এক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে এই দরজার স্ক্রিন।”

বাবলুর হাত পা কাঁপতে লাগলো।বিড়বিড় করে পড়লো শেষ ধাঁধাটা।
‘১২+১=১ হলে ১০+৫= কতো হবে?’

বারো আর এক যোগে কখন আবার ১ হয়।এ কেমন ধাঁধা। বাবলু ভাবতে লাগলো।এদিকে সময় ফুরিয়ে আসছে।সে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাতে লাগলো।হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ধাঁধার সমাধান পেল বাবলু।পৃথিবীতে ঘড়িতে ১২টা আর ১টা মিলে হয় দুপুর ১টা।তাহলে ১০টা আর ৫টা যোগ করলে হবে দুপুর ৩টা।অর্থাৎ পাসওয়ার্ডের শেষ অংকটি হবে ৩।

বাবলু ধুরু ধুরু বুকে ১৫৩৩ লিখে পাসওয়ার্ড লিখলো দরজার স্ক্রিনে।তখন আর মাত্রা ত্রিশ সেকেন্ড আছে।পাসওয়ার্ড লিখতেই বাবলুর মন লাফিয়ে উঠলো খুশিতে আর সেই সাথে উল্লাস শুরু করলো রোবটরা।কারণ বাবলুর পাসওয়ার্ডটি সঠিক। কিন্তু একি! কুঠুরির দরজা খুলতেই দেখা গেল হাজার হাজার পিঁড়ি।বেতের মোড়া।এগুলো তো বাবলুর দাদীও বানাতে পারে।এই জিনিস নেওয়ার জন্যই বাবলুকে পৃথিবী থেকে নিয়ে এনেছে!

রোবটরা বললো এটাই তো বসে খাওয়ার জিনিসে।আমরা এখন থেকে পিঁড়িতে বসে খেতে পারবো।জানোই তো আমরা এআই রোবট, এসব শৈল্পিক বেতের পিড়ি বানাতে পারি না।

৪০ কোটি শিশু বাড়িতেই নির্যাতনের শিকার

0
Child abuse. Father yelling at his daughter. Shadow of man on wall

বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ কোটি শিশুকে বাড়িতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মারধর ও অপমানের মতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গতকাল সোমবার বলেছে, এই সংখ্যাটি বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৬০ শতাংশ।

ইউনিসেফ ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০০টি দেশের তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে, ওই শিশুদের ঘরে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘শারীরিক শাস্তি’ ও ‘মানসিক পীড়ন’ দুটোই করা হয়।

ইউনিসেফের কাছে মানসিক পীড়নের মধ্যে তাদের ‘বোকা’ বা ‘অলস’ বলার মতো শব্দ অন্তর্ভুক্ত। আর শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে শিশুকে ঝাঁকুনি দেওয়া, আঘাত করা, থাপ্পড় দেওয়া বা আঘাত ছাড়াই শারীরিক ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে যেকোনো কাজ অন্তর্ভুক্ত।

ইউনিসেফ বলছে, এই প্রায় ৪০ কোটি শিশুর মধ্যে প্রায় ৩৩ কোটি শিশু শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করলেও বিশ্বের পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫০ কোটি শিশু এই ধরনের অনুশীলনের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে সুরক্ষিত নয়।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, প্রতি চারজনের মধ্যে একাধিক মা বা দায়ী প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের সন্তানকে সঠিকভাবে শিক্ষিত করার জন্য শারীরিক শাস্তির প্রয়োজন আছে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যখন শিশুরা বাড়িতে শারীরিক বা মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়, অথবা যখন তারা প্রিয়জনের কাছ থেকে সামাজিক ও মানসিক যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তা তাদের আত্মমর্যাদা ও বিকাশের বোধকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।’

ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, যত্ন ও আনন্দদায়ক অভিভাবকত্ব শিশুদের নিরাপদ বোধ করতে, শিখতে, দক্ষতা তৈরি করতে এবং তাদের চারপাশ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করতে পারে।

আজ ১১ জুন মঙ্গলবার বিশ্বে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খেলাধুলা দিবস পালিত হচ্ছে। আর এ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ইউনিসেফও শিশুদের খেলাধুলার সুবিধা সম্পর্কে এই ফলাফল প্রকাশ করেছে।

৮৫টি দেশের তথ্য অনুসারে, চার বছর বয়সী প্রতি দুজন শিশুর মধ্যে একজন বাড়িতে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে খেলতে পারে না এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের কাছে কোনো খেলনা নেই। দুই থেকে চার বছর বয়সী প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বাড়িতে যথেষ্ট উদ্দীপনা বা অর্থপূর্ণ মিথস্ক্রিয়া পায় না।

ইউনিসেফ বলছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের পড়া, গল্প বলা, গান গাওয়া ও ছবি আঁকার মতো বিষয়, সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ কাজের কোনো সুযোগ নেই।

ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, ‘প্রথম আন্তর্জাতিক খেলাধুলা দিবসে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং ইতিবাচক লালন-পালন এবং আনন্দপূর্ণ যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম

0

দেশে কোনোভাবেই শিশুশ্রম বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ হচ্ছে না। সরকার বিভিন্ন সময় শিশুশ্রম বন্ধে নানা প্রকল্প নিয়েছে, গত ১২ বছরে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অথচ খোদ সরকারি জরিপ বলছে, নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও গত এক দশকে দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এরই মধ্যে সরকার নতুন করে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিচ্ছে।

সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে শিশুশ্রমমুক্ত করতে চায়। এ জন্য ২০২১ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় দুই উপায়ে শিশুশ্রম নিরসন করতে চায়। এর একটি হচ্ছে খাতভিত্তিক শিশুশ্রম নিরসন, অন্যটি হচ্ছে এলাকাভিত্তিক। কিন্তু গত তিন বছরে কোথাও এই উদ্যোগ কার্যকর করা হয়নি।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঝুঁকিমুক্ত কাজের মাধ্যমে আয়ের পথ করে দিতে ২০১৮ সালে ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ শিশুকে ৯টি বিষয়ের ওপর ছয় মাসের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চার মাসের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে এ প্রকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ফলে এসব শিশুকে ঝুঁকিমুক্ত কাজে ফেরানো যায়নি।

এর আগে ২০১২ সালে ৬৮ কোটি টাকার ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (তৃতীয় পর্যায়)’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্পে ৫০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে ফিরিয়ে আনতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

তারও আগে শিশুশ্রম নিরসনে ২০০২-০৯ সাল পর্যন্ত দুই ধাপে ৪০ হাজার শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় সরকার নতুন করে শিশুশ্রম নিরসনে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প নিচ্ছে। তবে প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের

 ঢাকা জেলার উপমহাপরিদর্শক এ কে এম সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে সরকার বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এসব প্রকল্পে কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ থাকবে। প্রকল্পগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না গেলে এতেও সুফল মিলবে না। কারণ, আগের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করায় সরকারের কোনো কর্মসূচি তেমন কাজে আসেনি।

সর্বশেষ গত মার্চে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ–২০২২–এ বলা হয়েছে, এক দশকে দেশে শিশুশ্রমিক বেড়েছে প্রায় এক লাখ। দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ শিশুশ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। আবার এদের প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।

ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে প্রান্তিক শিশুদের নিয়ে চালানো নানা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। তা ছাড়া অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রভাবের কারণে অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান শ্রমে নিয়োজিত হয়েছে। এতে শিশুশ্রমিক বেড়েছে।

২৪ এপ্রিল

 ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরার তাওয়াপট্টি এলাকায় গিয়ে একটি অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যের কারখানায় কাজ করতে দেখা যায় ১৪ বছর বয়সী রমজানকে (ছদ্মনাম)। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। বাবা রিকশাচালক, মা গৃহিণী। কারখানায় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সে কাজ করে। মাসে বেতন ৭ হাজার টাকা। তার বাবা জোর করে তাকে কাজে পাঠিয়েছেন।

রমজানের সঙ্গে একই কারখানায় আরও তিন শিশুকে কাজ করতে দেখা যায়।

তাওয়াপট্টি ও আশপাশের এলাকায় এক হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় পাঁচ শতাধিক শিশু কাজ করছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুই বছর আগে ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তার প্রথমেই রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্য তৈরির কাজ। অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যের কারখানায় কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিউমোনিয়া, কাশি, রক্তকাশি, আঙুলে দাদ (একজিমা), আঙুলে গ্যাংগ্রিনসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের তেলঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ধরে চর মীরেরবাগ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ডকইয়ার্ড। এসব ডকইয়ার্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ওয়ার্কশপ। এসব ডকইয়ার্ড ও ওয়ার্কশপে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।

তেলঘাট এলাকার ১২ শিশুশ্রমিক, চারটি ওয়ার্কশপের মালিক এবং আট শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, এলাকার শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে সরানোর বিষয়ে সরকারি কোনো উদ্যোগের কথা তাঁরা জানেন না।

তাওয়াপট্টি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আকতার জিলানি দাবি করেন, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে সরিয়ে নিতে সরকার কখনো কোনো উদ্যোগ নিয়েছে, এমন তথ্য তিনি জানেন না।

এক খাত থেকে অন্য খাতে স্থানান্তর

তেলঘাট এলাকার একটি ডকইয়ার্ডে উত্তপ্ত চিমনির মুখে মবিল ঢালছিল ১৬ বছর বয়সী শিশু আরিফ (ছদ্মনাম)। আরিফ জানায়, সে দেড় বছর ধরে ডকইয়ার্ডে কাজ করছে। এর আগে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় তিন বছর কাজ করেছিল। পারিবারের আর্থিক টানাপোড়েনে বাধ্য হয়ে সে ডকইয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।

আরিফের মতো অনেক শিশুশ্রমিক এক খাত থেকে অন্য খাতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নজরদারির কারণে ওই খাতের শিশুশ্রমিকেরা অপ্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন খাতে স্থানান্তরিত হয়।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের  ঢাকা জেলার উপমহাপরিদর্শক এ কে এম সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুশ্রমিক নিয়োগ দেয়, এমন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময় নোটিশ বা মামলা দিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। কিন্তু এতে শিশুশ্রম নিরসন হচ্ছে না। এক খাতের শিশুশ্রমিক অন্য খাতে চলে যাচ্ছে। শিশুশ্রম স্থায়ীভাবে নিরসন করতে হলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

নীতিমালা কার্যকর হয়নি, সুফল নিয়ে শঙ্কা

জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০-এ বলা হয়েছে, শিশুশ্রমের প্রথম ও প্রধান কারণ অর্থনৈতিক দুরবস্থা। দ্বিতীয়ত, কোনো দরিদ্র পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষের মৃত্যু হলে শিশুর ভরণপোষণই দায় হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো শহরে এসে চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়ে।

এসব কারণে দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ভরণপোষণ মিটিয়ে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হয় না। তাই পরিবার বাধ্য হয়ে শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করে।

এসব পরিবারের শিশুদের শ্রম থেকে প্রত্যাহার ও দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে মা–বাবাকে আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে সম্পৃক্ত করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের বিশেষ বিবেচনায় আনা, শিশুশ্রম নিরসনে আইন প্রণয়ন, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করাই এই নীতিমালার উদ্দেশ্য। তবে নীতিমালা প্রণয়নের ১৪ বছর পরও সেটি কার্যকর করা যায়নি।

অর্থাভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না

বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন ২০২২ সালে কেরানীগঞ্জে শিশুশ্রমিকদের নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল। এতে দেখা যায়, ওই এলাকায় ১৫ হাজার শিশুশ্রমিক বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। জরিপের উদ্দেশ্য ছিল, শিশুদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তবে অর্থাভাবে এসব শিশুকে শ্রম থেকে সরিয়ে আনা যায়নি।

বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জেড এম কামরুল আনাম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের পুনর্বাসন করতে জরিপে শিশুশ্রমিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু পুনর্বাসনে অর্থ লাগবে। সরকার বলেছে, নতুন প্রকল্পে পুনর্বাসনের বিষয়টি রাখা হবে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

শিক্ষকের বেতের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর চোখ

0

শিক্ষিকার বেতের আঘাতে চোখে আঘাত পেয়ে শয্যাশায়ী শিশু মোহাম্মদ আয়াতুল ইসলাম।

‘মাদ্রাসায় বেত দিয়ে ম্যাডাম আমাকে মেরেছে। বেতটা বাঁ চোখে লেগেছে। এরপর অনেক ব্যথা শুরু হয়। এখন চোখে দেখছি না। আমি পড়তে চাই, আমার চোখ লাগবে।’ মায়ের কোলে বসে এসব কথা বলছিল সদ্য মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া সাত বছরের শিশু মোহাম্মদ আয়াতুল ইসলাম। সে প্রশ্ন করছিল, ‘মা, আমি কি আর চোখে দেখব না?’ এ প্রশ্ন শুনে মায়ের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল বেদনার জল। কোনো উত্তর দিতে পারছিলেন না মা স্বপ্না আক্তার।

বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আয়াতুলদের বাড়ি। কিছুদিন আগেও বাড়ি মাথায় তুলে রাখা ছেলেটা এখন নিস্তেজ, চোখের যন্ত্রণায় কাতর। তার সে উচ্ছলতা এখন থেমে গেছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। রাতে-দিনে ঘুমাতে পারছে না। কেন এমন হলো, তা জানতে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছেলেকে উপজেলার জোটপুকুরপাড় এলাকার বাগে সিরিকোট তাহফিজুল কোরআন আইডিয়াল মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি করেন বাবা মো. সাজ্জাদ হোসেন ও মা স্বপ্না আক্তার। তাঁরা জানান, সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। শুরুতে বাসা থেকে মাদ্রাসায় ছেলেকে আনা–নেওয়া করতেন। এরপর কয়েক মাস ধরে মাদ্রাসায় থাকছে ছেলেটা। গত ২৬ মে পড়া না পারার কারণে ছেলেকে বেদম মার দেন মাদ্রাসার শিক্ষিকা। বাঁ চোখে বেতের আঘাত লাগে। কিন্তু এ ঘটনা তাঁরা জেনেছেন আরও পরে।

মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৮ মে নাশতা নিয়ে ছেলেকে দেখতে যান তাঁরা। তখন মাদ্রাসা থেকে বলা হয়, আয়াতুলের চোখে রক্ত উঠে লাল হয়ে গেছে। তাই দেখা করা যাবে না। এরপর তাঁরা চলে আসেন। পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হঠাৎ বাড়িতে এসে হাজির হয় ছেলে। তারপর ঘটনা জানাজানি হয়।

সাজ্জাদ বলেন, ভোরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন মাহমুদ বাসায় হাজির হন। ছেলের জ্বর উঠেছে, এ কথা বলে দ্রুত বের হয়ে যান। এরপর ছেলে জানায়, পড়া না পারার কারণে তাকে মারধর করা হয়। চোখে ড্রপ দেওয়া হয়। এমনকি মারধরের বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ও দেখানো হয়েছে। পরে ছেলেকে নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে অধ্যক্ষ বলেন, ছেলের চোখে রক্ত উঠেছিল। ড্রপ দেওয়া হয়েছে। মারধর করা হয়নি।

বাড়িতে আসার পর শুরু হয় আয়াতুলের চিকিৎসার তোড়জোড়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে চোখে সার্জারি হয়। পাশাপাশি দেখানো হয় একাধিক চিকিৎসক। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে সাজ্জাদ বলেন, ছেলের বাঁ চোখে দুটি সার্জারি হয়। বর্তমানে সে চোখে দেখছে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাঁ চোখে দেখতে পারবে না সে। এটি ফেলে দিতে হবে।

মো. সাজ্জাদ হোসেন স্থানীয় একটি প্রসাধনী বিক্রির দোকানে চাকরি করেন। বেতন পান সাকল্যে ৯ হাজার টাকা। তিনি জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। জমানো টাকা ভেঙে খরচ করেছেন। এখন আর হাতে কোনো টাকাপয়সা নেই। কিন্তু চিকিৎসা শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন ধুরে দুই চোখের চিকিৎসা করতে হবে। এ ছাড়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এখনো ছেলের কোনো খোঁজ নেয়নি।

এ ঘটনায় কোথাও লিখিত অভিযোগ করেছেন কি না, জানতে চাইলে মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২৪ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি ওই ছেলের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মাহমুদ। তাঁর দাবি, আয়াতুলকে কেউ মারধর করেননি। সে খেলতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। তার মা–বাবা মিথ্যা বলছেন। এ ছাড়া তাঁদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। টাকাপয়সার জন্য এসব কথা বলছেন।

শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোনের নেশা দূর করার উপায়

0

এখনকার শিশু-কিশোররা সারাক্ষণ মোবাইল ফোনে বুঁদ হয়ে থাকে। খাওয়ার সময়ও তাদের ফোন লাগে। একটা সময় শিশুরা টিভিতে কার্টুন দেখে সময় কাটাতো। সেই শিশুরাই এখন ইউটিউবে সময় কাটায়। বলা যায় তারা এখন স্মার্টফোনের নেশায় আসক্ত। জানুন কীভাবে শিশু-কিশোরদের ফোনের নেশা কাটাবেন। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের হাতে স্মার্টফোন দেখলে সে-ও স্মার্টফোন নিতে আগ্রহ পায়। তাই শিশুর সামনে স্মার্টফোনে চ্যাট করা, গান শোনা, গেম খেলা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।

আসক্তির কারণ ও প্রভাব

স্মার্টফোনের নেশা শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাচ্চাদের এই আসক্তি কমাতে অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রচুর। শুধুমাত্র মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব নয়, শরীরেও মোবাইলের খারাপ প্রভাব পড়ে। 

করোনা ও তার পরবর্তী সময়ে শিশু-কিশোরদের মোবাইলে আসক্তি মারাত্মক বেড়েছে। ঘরবন্দি শিশুদের কাছে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এখন খুবই সহজলভ্য। স্মার্টফোন বা মোবাইলের যন্ত্রে একসঙ্গে বিভিন্ন রকম বিনোদন হচ্ছে। 

গেইম, নানা ধরনের বিনোদনমূলক অত্যাধুনিক অ্যাপের হাতছানি, ইন্টারনেট প্রভৃতি এক জায়গায় উপলব্ধ, যা আগে ছিল না। 

বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা, খেলাধুলা, বই পড়া প্রভৃতির মাধ্যমে ধীর গতিতে আমাদের কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটে। কিন্তু মোবাইলে খেলা, ভিডিও দেখার সময় অতি সত্বর শিশুমনে আনন্দ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হলেও কল্পনাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। 

টিভি, মোবাইল গেম বা যে কোনও ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেনমেন্ট দেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ক্ষরণ হয় এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যার নাম ডোপামিন। 

এই ডোপামিনের ক্ষরণ আমাদের মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। তার ফলে অতি সহজেই আমরা এই ধরনের এন্টারটেনমেন্ট মিডিয়ামগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ি।

যেসব বাচ্চা মুখচোরা, সবার সঙ্গে মিশতে পারে না, বন্ধু ও সমাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পছন্দ করে আমরা বলি তাদের ‘ডিস্ফোরিয়া’ আছে। এই অবস্থা থাকলে, সে নিজেকে ভাল রাখতে ও জীবনের আনন্দ খুঁজে পেতে স্মার্টফোনকে সঙ্গী করে।

আসক্তি কাটানোর উপায়

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের স্মার্টফোনে হাতেখড়ি হয় তার অভিভাবকদের হাতেই। কিন্তু চাইলে অভিভাবকরাই পারেন সন্তানকে মোবাইলের আসক্তি থেকে বের করে অন্য জগতে তাদের ভুলিয়ে রাখতে। সাধারণত বাবা-মা যা করবেন সেটা দেখেই শিশু শিখবে। এই আসক্তির পিছনে তাঁদের ভূমিকাও কম নয়। নেশাই পারে নেশা ছাড়াতে। 

স্মার্টফোন ছাড়াও দুনিয়াতে আনন্দের আরও অনেক কিছু রয়েছে। যে জগতে স্মার্টফোনের থেকে অনেক ভালো অভিজ্ঞতার হাতছানি থাকবে, সেদিকে শিশুর ঝোঁক বাড়াতে হবে।

বাচ্চার চোখে চোখ রেখে কথা বলা, তার ভিতরের সুপ্ত প্রতিভা ও ইচ্ছাগুলোকে চিনতে বা জানতে পারলে তবেই সেদিকে শিশুর ঝোঁক বাড়ানো সম্ভব।

শিশুর কোমল মন থেকে মোবাইল আসক্তি কাটানো খুব সহজ নয়। তার প্রবল ঝোঁকের বা আগ্রহের জায়গাটা খুঁজে মোবাইলের সম বিকল্প ও আকর্ষণীয় জিনিসের প্রতি তার আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলতে পারলে তবেই শিশুর মুঠোফোনের প্রতি আসক্তি কমবে। যেমন, ছবি আঁকা, গান গাওয়া বা কোনও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি খুদের কৌতূহল থাকলে সেই আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। তবেই ফোনের স্ক্রিনের থেকে বেশি সময় এইসব কাজে তারা ব্যয় করবে।

এছাড়া শিশুকে পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার কোডিং ল‌্যাঙ্গুয়েজ শেখানো, বিভিন্ন রহস্য-রোমাঞ্চকর গল্পের প্রতি ঝোঁক তৈরি করা খুব দরকার। তবেই সে ধীরে ধীরে মোবাইল ভুলে ভাল নেশায় আসক্ত হবে। এর লাগাম থাকবে অবশ্যই অভিভাবকদের হাতে। শিশুর এগিয়ে চলার স্বচ্ছন্দ গতির উপর তাদের সুষ্ঠু বিকাশ নির্ভর করে, যার পরিকল্পিত রূপ দেওয়ার কারিগর হলেন বাবা-মা।

সন্তানকে সময় না দিয়ে তার বদলে হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেওয়া বা টিভিতে কার্টুন চালিয়ে দেওয়াটা অনুচিত। অনেক শিশু একাকিত্বের কারণে মোবাইল ফোনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের প্রথমত খেয়াল রাখা উচিত শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করেও প্রতিদিনের কার্যকারিতা সঠিকভাবে পালনে সক্ষম কি না। যদি তা নির্দ্বিধায় করে সেক্ষেত্রে ১-২ ঘণ্টা ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায়।

phone

বাড়ির আবহে পড়াশোনা-খেলাধুলার পরিবেশ থাকা অত্যন্ত জরুরি। ঘরের ছোট্ট খুদেটির সঙ্গে বাবা-মায়ের কোয়ালিটি টাইম কাটানো দরকার।

রাতে ঘুমানোর আগের একঘণ্টা ও সকালে ঘুম ভাঙার পর প্রথম এক থেকে দুই ঘণ্টা খুদেটির ফোন ব্যবহার নিষেধ রাখতে হবে। এই নিয়ম বাবা-মায়ের জন্যও প্রযোজ্য হলে ভাল। উল্লেখযোগ্য, সপ্তাহে একটি দিন বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি স্মার্টফোনবিহীন দিন রাখতে হবে, সেদিন প্রত্যেক সদস্যের ছুটির পর শিশুটির সঙ্গে সময় কাটানো দরকার।

স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়লে শিশুর আনন্দসূচক ক্রমে কমতে থাকে ও তারা অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে। ওদের মুঠোফোনের বাইরের পৃথিবীর সংস্পর্শে রাখা বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকদের মূল দায়িত্ব। স্ক্রিনজনিত বিনোদনের বদলে খেলাধুলা ও নিয়মানুবর্তিতার সঞ্চার করা ভীষণ প্রয়োজন।

৯০ ভাগ কিশোর-কিশোরী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে

0

দেশের ৯০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। বিবাহিত কিশোরীদের প্রায় অর্ধেক ও অবিবাহিত কিশোরীর এক-চতুর্থাংশের নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে। কিশোরদের ৫০ শতাংশ এবং বিবাহিত এবং অবিবাহিত কিশোরীদের ২০ শতাংশ সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে। প্রতি পাঁচটি পরিবারের একটিতে কমপক্ষে একজন কিশোর/কিশোরী (১৫-১৯ বছর বয়সী) আছে; যাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় (স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা) অংশ নিয়েছে।

জরিপে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী এবং ৬৬ শতাংশ অবিবাহিত কিশোর বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এই তথ্যের জন্য কিশোরীরা বইয়ের ওপর নির্ভর করলেও কিশোরদের তথ্যসংগ্রহের মূল মাধ্যম ইন্টারনেট। বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরীদের ৯৮ শতাংশই ঋতুকালীন সময়ে একবার ব্যবহারযোগ্য প্যাড বা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে বহুবার ব্যবহার করা যায়-এমন উপাদান ব্যবহার করে। তবে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যকর আচরণের প্রবণতা বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে নয় শতাংশ এবং অবিবাহিতদের মধ্যে ১২ শতাংশ মাত্র। প্রতি চারজনের একজন কিশোরী (বিবাহিত এবং অবিবাহিত) ঋতুকালীন সময়ে কমপক্ষে একদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ রাখে। 

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, কিশোরীদের মধ্যে তিন শতাংশের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে, স্বামীর থেকে পৃথক আছে অথবা বিধবা হয়েছে। এছাড়া কিশোরীদের ১৭ শতাংশ বর্তমানে চার বছর বা অধিক সময় ধরে বিবাহিত। ৩০ শতাংশ কিশোরীর স্বামীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য কমপক্ষে দশ বছর। জরিপে আরও দেখা যায়, সর্বোচ্চসংখ্যক কিশোরী (৪৫ শতাংশ) যাদের স্বামীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য দশ বছর বা তার অধিক। 

জরিপে প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক-তৃতীয়াংশ (৩৪ শতাংশ) বিবাহিত কিশোরী এবং প্রায় এক-পঞ্চমাংশ (১৮ শতাংশ) অবিবাহিত কিশোরী মনে করে স্ত্রী কথা না শুনলে স্বামী তাকে শারীরিকভাবে আঘাতের অধিকার রাখে। ৮৮ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী পথে এবং ১৯ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। 

প্রতিনিধিত্বশীল ৭২ হাজার ৮০০ পরিবারকে জরিপের নমুনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৬৭ হাজার ৯৩টি পরিবারে জরিপ পরিচালনা করা হয়। এরমধ্যে চার হাজার ৯২৬ জন বিবাহিত কিশোরী এবং সাত হাজার ৮০০ অবিবাহিত কিশোরী। এছাড়া পাঁচ হাজার ৫২৩ অবিবাহিত কিশোরকে জরিপের আওতায় সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। 

সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি দশজন অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজন কৃশকায় ও কম ওজনের। অন্য দশ ভাগের এক ভাগ স্থূলকায় বা বেশি ওজনের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-৭৬ শতাংশ কিশোর এবং ৮৫ শতাংশ কিশোরী খাদ্যের পাঁচটি গ্রুপ যেমন-শাকসবজি, স্টার্চ জাতীয় খাবার, দুগ্ধ, প্রোটিন এবং ফ্যাটযুক্ত খাবারের মধ্যে চারটি গ্রুপেরও বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে। বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী (৭০-৮০ শতাংশ) আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খায়। মাত্র এক চতুর্থাংশ কিশোর-কিশোরী ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে।

জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান; স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মোহাম্মাদ আলিনূর এবং মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি’র পপুলেশন, হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন অফিসের পরিচালক জার্সেস সিধওয়া।

কচ্ছপের কান্না

0

(উত্তর আমেরিকান,নেটিভ আমেরিকান রূপকথা)

এক গ্রীষ্মের সকালে, যখন প্রখর রোদে পাথর গরম হয়ে চামড়া পুড়ে যাওয়ার উপক্রম, তখন এক কচ্ছপ খাবার খুঁজতে বেরিয়েছিল। সে থাকত নদীতে। কচ্ছপটি হামাগুড়ি দিয়ে একটু ভালো খাবার খুঁজতে বেরিয়েছিল। কিন্তু সূর্য এমন প্রখর হবে তা সে জানত না।  সূর্যের আলো যদি বেশি পড়ে তাহলে সে মারা যাবে। ইতিমধ্যে গরমে তার যন্ত্রণা হলো। তার ওপর মাটি বেশি শুষ্ক হলে তার বাড়ি ফিরতে কষ্ট হবে। তাছাড়া কচ্ছপ হাঁটে খুব ধীরে ধীরে। তাই সে পাহাড়ের নিচে একটা বড়ো পাথরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল।

কচ্ছপ এত জোরে কাঁদতে লাগল যে, পাশ দিয়ে এক নেকড়ে যাচ্ছিল, সে শুনে ফেলল। সে ভাবল, হয়তো কেউ গান গাইছে। ভাবল সেও গান শিখবে। তাই সে পাথরের মধ্যে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল। চারপাশে উঁকি দিয়ে সে কান্নারত কচ্ছপকে দেখতে পেল।

‘তুমি তো চমৎকার গান গাইতে পারো।’—কচ্ছপকে বলল নেকড়ে।

‘এটা গান ছিল না।’—কচ্ছপ বলল।

‘আমি শুনেছি এটা গান ছিল। আমি তোমার কাছে গান শিখতে চাই। তুমি যদি আমাকে গান না শেখাও তাহলে তোমাকে গিলে ফেলব।’

‘আমাকে গিলে ফেললে আমার কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ আমার শক্ত খোল তোমার গলায় আঘাত করবে।’

‘আচ্ছা, তাহলে তোমাকে প্রখর রোদে ফেলে দেবো।’

‘তাতেও আমার কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ আমি খোলের নিচেও হামাগুড়ি দিয়ে চলতে পারি।’—কচ্ছপ বলল।

‘তাহলে তোমাকে নদীতে ফেলে দেবো—আমাকে যদি গান না শেখাও।’

এবার কচ্ছপ কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘না না, দোহাই তোমার, এমনটি কোরো না। তাহলে আমি ডুবে যাব!’

‘না আমি ফেলবই।’—এই বলে নেকড়ে কচ্ছপটিকে মুখে তুলে নদীতে ফেলে দিল।

এদিকে কচ্ছপ নদীতে ফিরে এসে তার বাড়িতে চলে গেল সাঁতরে। যেতে যেতে মাথা তুলে নেকড়েকে বলল, ‘অনেক অনেক ধন্যবাদ নেকড়ে—আমাকে নদীতে ফেলে দেওয়ার জন্য। আমি এখানে আসার জন্যই কান্না করছিলাম। কোনো উপায় ছিল না তাই পাথরের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।’

এদিকে নেকড়ে খুব রাগান্বিত হলো এবং দাঁত কটমট করে চলে গেল।

ভাষান্তর-
টি এইচ মাহির

কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কোটিপতি মায়াঙ্ক

0
কারণ সে ইতিমধ্যে কৌন বনেগা ক্রোড়পতির জুনিয়রস উইকে কোটিপতি হয়ে গেছে

একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েই কোটিপতি বনে গেলো কিশোর মায়াঙ্ক।একটি কুইজ শোতে কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ১ কৌটি রূপি জিতে নিয়েছে সে।বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মায়াঙ্ক কোটি টাকা জিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

ঘটনাটি ভারতের একটি শোতে ঘটে।ভারতের একটি কুইজ শো “কৌন বনেগা ক্রোড়পতি”।শোতে হোস্ট হিসেবে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র ১৫ তম আসরে অংশ নেয় কিশোর মায়াঙ্ক।অনুষ্ঠানে মায়াঙ্কের মায়াঙ্কের বুদ্ধিমত্তা এবং বুদ্ধিতে বিমোহিতে হয় দর্শক এবং বিচারকরা।কিশোর মায়াঙ্ককে কোটি টাকার প্রশ্নে যেতে উত্ত্র দিতে হয়েছে ১৫টি প্রশ্ন।হোস্টের করা একের পর এক প্রশ্নের উত্তর আত্মবিশ্বাসের সাথেই দিয়েছে মায়াঙ্ক।তারপর ১৬তম প্রশ্নে পৌঁছায়।যেটি ছিলো কোটি টাকার প্রশ্ন।সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েও কোটি টাকা জিতে নেয় মায়াঙ্ক।তাকে করা প্রশ্নটি ছিল,

“কোন ইউরোপীয় মানচিত্রকার সদ্য আবিষ্কার করা মহাদেশের ম্যাপ তৈরি করেছিলেন, যার ওপর আমেরিকা লেখা ছিল? “

A- আব্রাহাম অরটেলিয়াস, B- গেরাদাস মার্কেটর, C- জিওভানি বাতিস্তা অ্যাগনেস এবং D- মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলার।

মায়াঙ্কা উত্তর দেয় অপশন ডি মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলার।যা ছিল সঠিক উত্তর।প্রশ্নের উত্তর সঠিক হওয়ায় কেঁদে ফেলে মায়াঙ্ক।কারণ সে ইতিমধ্যে কৌন বনেগা ক্রোড়পতির জুনিয়রস উইকে কোটিপতি হয়ে গেছে।তারপরে সে সাত কৌটির প্রশ্নেরও মুখোমুখি হয়।কিন্তু উত্তর জানা না থাকায় গেম থেকে বেরিয়ে আসে।

১৪ বছর বয়সী কিশোর মায়াঙ্ক ভারতের হরিয়ানার মহেন্দ্রগড়ে বাস করে।সে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে তাকে টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় অভিনন্দন জানিয়েছে।তাকে ‘জিনিয়াস’ বলে অ্যখ্যা দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী।অনুষ্টানে যখন মায়াঙ্ক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কোটি টাকা জিতে নেয় তখন উপস্থিত ছিলো মায়াঙ্কের মা বাবা।তার মা বাবা তার ব্যতিক্রমী জ্ঞানের প্রতি আগ্রহকে স্বীকার করে।মায়াঙ্ক জানায় “একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল আপনার জ্ঞান।”মায়াঙ্ক কুইজে দুদার্ন্ত গেম প্লে প্রদর্শন করে।সে হরিয়ানায় সর্বকনিষ্ঠ কৌটিপতি হওয়ায় তার মা বাবাকে ধন্যবাদ জানায়।তার মা বাবার দিক নির্দেশনা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।মায়াঙ্কের বুদ্ধিমত্তা এবং দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছিল দর্শকরাও।তারে তাকে অভিবাদন জানায় এবং উল্লাস করে।অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মায়াঙ্ক জানায় তার খাঁটো উচ্চতা নিয়ে সবাই মজা করে।কিন্তু মায়াঙ্ক বুঝিয়ে দিয়েছে শারিরীক উচ্চতা জ্ঞান,বুদ্ধিমত্তা এবং দক্ষতার ক্ষেত্রে কখনো বাঁধা হতে পারে না।

-টি এইচ মাহির

১২ বছর বয়সী সফল উদ্যোক্তা মিয়া মনজিডেলিস

0

কিশোরী একটি মেয়ে। নাম মিয়া মনজিডেলিস। এখন যার বয়স মাত্র ১২ বছর। স্কুলের বন্ধুদের সাথে খেলা করে,টিভি দেখে আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে মজার মজার খাবার খেয়ে দিন পার করা আর দশজন কিশোর কিশোরীর মত নয় সে। ফেসবুক,ইউটিউব,টিকটক বা ইন্সটাগ্রামে ছবি আর ভিডিও পোস্ট করা মিলিয়ন ভিউ পাওয়া তথাকথিত সেলিব্রেটিও সে নয়। তবুও সে সেলিব্রেটি। তবুও সে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এবং প্রশংসিত! সে সবার থেকে বেশ আলাদা। কারণ এই বয়সেই সে প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। মনজিডেলিস মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই পাওয়ারপনি আবিস্কার করেছিল। এখন আমাদের জানা দরকার এই পাওয়ার পনি জিনিসটা আসলে কী? পনি শব্দের অর্থ টাট্টু আর টাট্টু কথাটা বলার সাথে সাথে যে বিষয়টা মাথায় আসে সেটা হলো ঘোড়া। যে ঘোড়া খুবই ছোট তাকে আমরা টাট্টুঘোড়া বলি। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে মনজিডেলিস কিভাবে টাট্টুঘোড়া আবিস্কার করলো? এখানে একটি ছোট্ট তথ্য দিতে হচ্ছে। পনি শব্দের আগে সে পাওয়ার শব্দটি ব্যবহার করেছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে পাওয়ারপনি হলো ব্যাটারি চালিত টাট্টুঘোড়া! হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। মিয়া মনজিডেলিস যেটা আবিস্কার করেছে সেটি হলো ব্যাটারি চালিত ঘোড়া। আর এই ঘোড়ায় চড়লে সত্যিকার ঘোড়ায় চড়ার মতই অনুভূত হয়। মিয়া মনজিডেলিস একই সাথে নিউইয়র্কে অবস্থিত “দ্য ফ্যামিলি এন্ড চিলড্রেন এসোসিয়েশন” এর মেম্বার। এটি একটি দাতব্য সংস্থা, যারা অসহায় শিশু কিশোর ও বয়স্কদের সহযোগিতা করে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো মিয়া গত বছর এই সংস্থাকে ৫ হাজার ডলার সাহায্য দিয়েছে এবং বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমান সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা! দ্য হেরাল্ড ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সে বলেছিলো ” আমি সব সময় অসহায় শিশু ও তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে ভালোবাসি”। আর আশ্চর্য বিষয় হলো তার এই সাহায্য দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল যখন তার বয়স ছিলো মাত্র ৩ বছর!

মনজিডেলিস ছোটবেলা থেকেই ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করতো। তার ছিলো ঘোড়ার প্রতি দূরন্ত ভালোবাসা। কিন্তু মন চাইলেইতো আর ঘোড়ায় চড়া যায় না। বিশেষ করে ছোটরা ঘোড়ায় চড়তে গেলে কতরকম বিপদ হতে পারে। আর সে জন্য ছোটরা যখন ঘোড়ায় চড়ে তখন বড় কেউ না কেউ সাথে থাকতে হয়। কিন্তু দেখা গেলো বাবা অফিসে, মা রান্নার কাজে কিংবা বাজারে গিয়েছে এমন সময় ঘোড়ায় চড়তে ইচ্ছে করছে। তখন উপায় কি? একা একাতো ঘোড়ায় চড়তে পারবে না। ঘোড়ার পিঠেইতো উঠতে পারবে না। সুতরাং এমন একটা ঘোড়া দরকার যেটা হবে তার মত ছোটদের জন্য। যার পিঠে সে একা একাই উঠতে পারবে এবং যখন খুশি সে সেই ঘোড়ায় চড়তে পারবে। এমনকি মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তার যদি ইচ্ছে করে একটু ঘোড়ায় চড়বো তো কারো সাহায্য ছাড়াই সে একা একা সেই ঘোড়ায় চড়তে পারবে। কিন্তু এমন আজব ঘোড়া কি দুনিয়ার কোথাও একটাও আছে? ধরে নিলাম একটা আছে আর সেই ঘোড়াটা কোনো ভাবে মনজিডেলিসের জন্য সংগ্রহ করা হলো। সেটা দেখে যদি তার বন্ধুরা বলে তাদেরও অমন একটি ঘোড়া চাই। তখন কোথায় পাবে সেই ঘোড়া? বাবা মা তখন কষ্ট পাবে। মনজিডেলিসের উপর রাগ করবে। সুতরাং সে সিদ্ধান্ত নিলো এমন একটি ঘোড়া সে নিজেই তৈরি করবে! মাত্র পাচ বছর বয়সে সে এমন কিছু ভাবতে পারে কেউ কি কল্পনা করতে পারে? রুপকথার গল্পে হলে না হয় মানা যেত। বাস্তবে এমন ঘোড়া! কিন্তু সে যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই সে এমন একটি ঘোড়া তৈরি করেই ছাড়বে এবং শুধু একটি নয় পরবর্তীতে দুনিয়ার সব শিশু কিশোর কিশোরীদের জন্য এমন টাট্টুঘোড়া তৈরি করবে বলে সে সিদ্ধান্ত নিলো। নাম দিলো পাওয়ারপনি।

মনজিডেলিস আবিস্কৃত সেই পাওয়ারপনিতে আইওএস সাপোর্ট করে! আছে একটি জুমি ইঞ্জিন! আর এটা আবিস্কারের পর তার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। শিশু কিশোর কিশোরীদের মধ্যে তার আবিস্কৃত পাওয়ারপনি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। সে নিশ্চয়তা দিয়েছে এই টাট্টুঘোড়ায় যারা চড়বে তারা প্রত্যেকেই অনেক আনন্দ পাবে।

নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে থাকে মনজিডেলিস। সে পাওয়ারপনির আবিস্কারক এবং প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে শোর রোড এলিমেন্ট্রি স্কুলে সিক্সথ গ্রেডে পড়াশোনা করছে। ছোটবেলা থেকেই ঘোড়া পছন্দ করতো এবং স্বপ্ন দেখতো একদিন সে একটি ঘোড়ার মালিক হবে। কিন্তু সে যেখানে থাকতো সেখানে ঘোড়া রাখার মত জায়গা ছিলো না। সুতরাং বাবা মা তাকে ঘোড়া কিনে দিতে পারেনি। কিন্তু সে কখনো হাল ছাড়েনি। সে তার স্বপ্ন পূরণে সব সময় ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এক ক্রিসমাসে সে একটি খেলনা ঘোড়া এবং একটি হভারবোর্ড উপহার পেয়েছিল। সে ভাবলো আচ্ছা যদি ঘোড়াটাকে হভারবোর্ডের উপর বসিয়ে দেই তাহলে কেমন হয়? তাহলেইতো একই সাথে দুটোতেই চড়া হবে আর তার ইচ্ছেও পূরণ হবে। আর সেই সময়েই তার মাথায় আইডিয়া আসলো ব্যাটারি চালিত ঘোড়া তৈরি করবে যেন যখন খুশি, যেখানে খুশি সে চড়তে পারবে। আর এ কাজে তাকে তার বাবা খুবই সহযোগিতা করেছে। যখন সে তার আইডিয়া বাবার সাথে শেয়ার করলো বাবা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো।তারপর তিনি তাকে সবরকম সহযোগিতা করলেন। একসময় বাবা কঠোর পরিশ্রম করতেন। কিন্তু মনজিডেলিসের আইডিয়াটা শেয়ার করার পর দুজনে মিলে যখন সত্যি সত্যিই পাওয়ারপনি তৈরি  করে ট্রায়াল দিয়ে সফল হলেন এবং বাজারে বিক্রি করে দারুণ সাড়া পেলেন তখন থেকে তাদের ভাগ্যই বদলে গেলো। মনজিডেলিস তাই নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবতী মেয়ে মনে করে।

মনজিডেলিস নিজে যেহেতু ছোট তাই সে ছোটদের বিষয়টা মাথায় রেখেই তার ব্রান্ডের একটি সুন্দর নাম খুঁজতে শুরু করলো। অনেক নামের ভীড়ে শেষে পাওয়ারপনি নামটা তার বেশি পছন্দ হলো।তার বন্ধুরা তার এই আবিস্কারে ভীষণ এক্সাইটেড ছিলো। যখনই সে নতুন একটি পাওয়ারপনি তৈরি করে তার ট্রায়াল দিয়েছে তখনই বন্ধুরা উৎসাহ নিয়ে সেটা দেখেছে। উপভোগ করেছে। একবার এক সাক্ষাৎকারে মনজিডেলিসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তুমি এই পাওয়ারপনি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসটি শিখেছ? সে তখন বলেছিল ”ছোট বলে কাউকে অবজ্ঞা করা যাবে না। এবং ছোটদের কল্পনায় যা আসে সেটিকেও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সেই আইডিয়াও বাস্তব জীবনে নিয়ে আসা সম্ভব যা আমি করে দেখিয়েছি। বিশ্বাস,আস্থা,সহযোগিতা আর গ্রুপওয়ার্ক করতে পারলে অনেক কিছুই করা সম্ভব যা প্রাথমিক ভাবে অসম্ভব মনে হতে পারে।” 

তার প্রতিষ্ঠানে রয়েছে স্পেশাল ডিজাইনার,ইঞ্জিনিয়ার,ইলেক্ট্রিশিয়ান। আর প্রতিটি কাজই সে নিজে তদারকি করে থাকে। ডিজাইনার যখন ডিজাইন করে তখন সে নিজে সেটা দেখে এবং জাস্টিফাই করে যে সেই ডিজাইনটি তার গ্রাহকশ্রেণীর পছন্দ হবে কি না। যদি কিছু মডিফাই করার দরকার হয় তাহলে সে সেভাবেই ইন্সট্রাকশন দেয়। মনজিডেলিসের মতে নিজের মত করে একটি ব্যবসা দাড় করানো খুবই কঠিন বিষয়। তবে যদি নিজের আইডিয়ার উপর নিজের প্রবল বিশ্বাস থাকে,যথাযথ পরিকল্পনা থাকে আর লেগে থাকার মত মানসিকতা থাকে তাহলে যে কেউ সেই প্রজেক্ট সফল করার পথ নিজেই খুঁজে নিতে পারবে। আর এই পথপরিক্রমায় যতই বাঁধা আসুকনা কেন, সেগুলো অনায়াসেই পার করা সম্ভব হবে।

ক্রিসমাসে পাওয়া দুটো উপহার আর নিজের একটি স্বপ্ন থেকে কিশোরী মনজিডেলিস সফল উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে উদ্যোক্তা হবো বা কিছু করবো এমন ধারণা নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। মিয়া মনজিডেলিসের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষাই পেতে পারি যে শুরু করার কোনো বয়স সীমা থাকে না আর শুরু করার পর লেগে থাকলে একদিন না একদিন সফলতা আসবেই। হাল ছাড়া যাবে না।

লেখক: জাজাফী

২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

যে শিশু কিশোর কিশোরীরা ১ হাজার বই পড়েছে!

0

বইয়ের মত অকৃত্রিম বন্ধু আর হয় না। বই পড়ায় যে আনন্দ তার একটি ধারণা পাওয়া যায় বিশ্ববিখ্যাত শিশুতোষ লেখক রোয়াল্ড ডালের লেখা “মাতিলদা” বই থেকে। যেখানে মাতিলদা নামের ছোট্ট মেয়েটি বই পড়ায় এতো বেশি আগ্রহী যে পড়তে শেখার পর পরই সে লাইব্রেরীতে গিয়ে অসংখ্য বই পড়ে ফেলে। হলিউডে এটা নিয়ে দুটো সিনেমাও হয়েছে। বই পড়ে আমরা হাসি,কাদি,আনন্দপাই আবার অনেক জ্ঞানার্জনও করি। তবে অনেকেই বই পড়তে খুব একটা পছন্দ করে না। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বইপড়তে খুবই ভালোবাসে। আর আমরা তাদের বলি বইয়ের পোকা। ছোটবেলা থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে জীবনে নানা সুবিধা পাওয়া যায়। কখনো নিজেকে একা লাগে না। মনে হয় সবচেয়ে সেরা বন্ধুতো আমার সাথেই আছে। আর সেই সেরা বন্ধু হলো বই। বই আমাদের নতুন এক জগতের সন্ধান দেয়। আমরা যত বেশি বই পড়ি আমাদের মনের চোখ খুলে যায়। আমরা কল্পনা করতে পারি নতুন নতুন ভূবনের। আমাদের চিন্তার প্রসার ঘটে। জ্ঞানের বিকাশ ঘটে।

কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই বই পড়ার সুযোগ মেলে না বলে অভিযোগ করে। আবার উল্টোটাও দেখা মেলে। বিশ্ববিখ্যাত মানুষ বিলগেটস বা মার্ক জুকারবার্গও প্রচুর ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তাদের বই পড়ার যে নিয়মিত অভ্যাস তাতে কোনো অসুবিধা হয় না। তারা সময় বের করে প্রতিদিনই বই পড়েন। একজন মানুষ তার সারা জীবনে ঠিক কতগুলো বই পড়তে পারে? কেউ কেউ বলেন ৫ হাজার আবার কেউ কেউ বলেন ১০ হাজার। বইয়ের সাইজ,ধরণ এসবের উপর সব কিছু নির্ভর করে। কেউ যদি রাত দিন পড়তেই থাকে তবে সে হয়তো অনেকগুলো বই পড়তে পারবে। আর যারা সবে মাত্র কিন্ডারগার্টেন শুরু করেছে এবং যাদের বয়স ১২ বছর বা তার কম তাদের পক্ষে ওই বয়সে ঠিক কতগুলো বই পড়া সম্ভব? স্কুলের পড়া,খেলাধুলা,টিভি দেখা সব কিছু বাদ দিয়ে যে সময় মেলে তাতে হয়তো ১০ থেকে ২০ টা বই পড়তে পারে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো পৃথিবীতে এমন অনেক শিশু কিশোর কিশোরী আছে যারা কিন্ডারগার্টেন পার হওয়ার আগেই ৩০০ থেকে ১০০০ বই পড়ে ফেলেছে! অনেকের কাছেই এই তথ্যটি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তারা চাইলে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই এর সত্যতা খুঁজে পাবে। তেমনই কিছু শিশু কিশোর কিশোরীর গল্প শোনাতে চাই।

লানা রেনল্ড ও জুদাহ রেনল্ড

আমেরিকার  পেনসিলভেনিয়ার অন্তর্গত ব্রুকভিল নামক স্থানে একটি লাইব্রেরি আছে যার নাম রেবেকা এম আর্থার্স লাইব্রেরী। স্থানীয় মানুষ এই লাইব্রেরীর সদস্য। সদস্যদের মধ্যে রয়েছে শত শত শিশু কিশোর কিশোরী। সেই সব শিশু কিশোর কিশোরীদের অনেকেই এক হাজার বই পড়ে ফেলেছে আবার কারো কারো সংখ্যা এক হাজারের কাছাকাছি চলে গেছে। তারা এই লাইব্রেরীতে এসেই পড়ছে এবং তারা পড়াটাকে খুব উপভোগ করছে। তাদেরই একজন লানা রেইনল্ড। সে কিছুদিন আগেই এক হাজার বই পড়ে শেষ করেছে। লানা যখন খুব ছোট ছিলো তখন সে দেখতো মা তার পাশে বসে বই পড়ছে। কখনো কখনো মা তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বই পড়তেন। সেই থেকে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় লানার মনের মধ্যে। সে হয়তো তখনই মনে মনে ভেবে রেখেছিল মায়ের মতই সেও অনেক বই পড়বে। রোজ রাতে ঘুমানোর আগেও মা তাকে বই থেকে গল্প শোনাতো। সেই সব গল্পে রাজপুত্র,রাজকন্যা যেমন থাকতো তেমনি অনেক সুন্দর সুন্দর শিক্ষনীয় ঘটনাও থাকতো। তারপর সে যখন স্কুলে গিয়ে দেখে দেখে পড়া শিখলো তখন সে মায়ের পাশে বসে তার উপযোগী বই পড়তো। 

লানা যতগুলো বই পড়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় বই “দ্য নেস্টিং বার্ড”। কারণ সে পাখির ছানা খুব ভালোবাসতো। লানার ছোট্ট একটা ভাই আছে। মা যেমন ছোট বেলায় তাকে গল্প পড়ে শোনাতো লানা নিজেও পড়তে শেখার পর তার ছোট ভাই জুদাহ রেনল্ডকে পাশে বসিয়ে বই পড়ে শোনাতো। এভাবে তার ভাইও বইয়ের প্রতি ভালোবাসায় আটকা পড়লো। ছোটবেলা থেকে লানা যে সব বই পড়েছিল সেগুলোই এখন জুদাহ নিজে পড়ছে। আর সে এরই মধ্যে ২০০ বই পড়ে ফেলেছে। বয়স যদিও মাত্র ৭ বছর! আর তার প্রিয় বই “পিটি দ্য ক্যাট”।

লানার বই পড়ার শুরুটা তার মায়ের হাতে হলেও সেটা গতি পেয়েছিল রেবেকা এম আর্থার্স লাইব্রেরীর বই পড়া কর্মসূচীর মাধ্যমে। বাংলাদেশে যেমন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ার কর্মসূচী আছে অনেকটা সেরকম। লানার মায়ের নাম মাইলিয়া রেনল্ড তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে বইপড়া কর্মসূচীর বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন। সেই বান্ধবী তার বেবীদেরকে খুব ছোট বেলা থেকেই ওই লাইব্রেরীতে নিয়ে যেতেন এবং নিজেও বই পড়তেন। এটা শুনে মাইলিয়ার মনে হলো তিনি লানাকেও ওই লাইব্রেরীর সদস্য করবেন। বাড়িতে বসে অনেক বই পড়া হয়েছে। আরও কত শত বই আছে যার সব কিনে পড়া যেমন সম্ভব নয় তেমনি অনেক বইয়ের সন্ধানও অনেক সময় পাওয়া হয়না। কিন্তু লাইব্রেরীতে গেলে যেমন অসংখ্য বই পাওয়া যাবে তেমনি পড়ার পরিবেশও ভালো থাকায় পড়ায় গতি আসবে। তাছাড়া মাইলিয়া মনে করতেন এই পড়ার অভ্যাস তার ছোট্ট ছেলে মেয়েকে ভবিষ্যতে সফল হতে সহযোগিতা করবে। সেই থেকে লানা আর তার ভাই জুদাহ বাড়িতে পড়ার পাশাপাশি লাইব্রেরীতে গিয়েও পড়তে শুরু করলো। উল্লেখ্য লানা ও তার ভাই মূলত হোমস্কুল করতো বলে তাদের হাতে ছিলো পড়ার মত অনেক বেশি সময় ও সুযোগ।

বেথেনি ফ্রিটজ

লানা রেনল্ডের মতই বেথেনি ফ্রিটজ নামের মেয়েটিও বইয়ের পোকা। সেও এরই মধ্যে ১ হাজার বই পড়ে শেষ করেছে। বেথেনির দাদি আন ফ্রিটজ বলেছেন বেথেনির বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন থেকে সে লাইব্রেরীর গ্রীষ্মকালীন বইপড়া কর্মসূচীতে নাম দিয়েছিলো। বেথেনিদের বাসায় যে রেফ্রিজারেটর আছে সেটার দরজায় সে একটা চার্ট লাগিয়ে রেখেছিল কবে কখন কোন বই পড়বে। রোজ সে সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে নিয়ম করে বই পড়তে শুরু করেছিল। বেথেনিও লাইব্রেরী খুব ভালোবাসতো। বইয়ের রাজ্যে সে আনন্দের সাথে বিচরণ করতো। লাইব্রেরী থেকে যখনই যে অফার দিতো সে ও তার পরিবার তা লুফে নিতো। জুদাহের মত বেথেনির প্রিয় বইয়ের নামও “পিটি দ্য ক্যাট”। বেথেনি বলেছে এই বইটি তার বেশি ভালো লেগেছে কারণ যে বিড়ালটিকে নিয়ে এই বইটি লেখা হয়েছে সে খুব মজার মজার ঘটনা ঘটায়। সেগুলো পড়লে খুব আনন্দ হয়, হাসি পায়। 

লাইব্রেরীতে বসে পড়ার পাশাপাশি লাইব্রেরী থেকে পছন্দের বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ আছে। একবার তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো কোন বইটি তুমি বাড়িতে নিয়ে পড়তে চাও? সে বলেছিল পারলে সবগুলোই সে বাড়ি নিয়ে পড়তে চায়! বইগুলো কিন্তু খুব বেশি বড় না। ছবিযুক্ত দারুণ সব ফিচার বুক। যেখানে ছবির সাথে সাথে কয়েক লাইন করে গল্পবলা হয়। ফলে খুব দ্রুতই পড়া হয়। বেথেনি ঘুম থেকে উঠে বই পড়ে, নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে করতে বই পড়ে। নাস্তা শেষ হলে বই পড়ে। দুপুরে ঘুমোতে যাবার আগে বই পড়ে আবার ঘুম থেকে উঠেও বই পড়ে। রাতে খাবারের আগে বই পড়ে আবার খাবার শেষেও বই পড়ে। আর ঘুমোতে যাবার আগেও বই পড়ে! বই বই আর বই। মুনির হাসানের একটা বইয়ের কথা মনে পড়লো। যে বইটির নামই “ পড়ো পড়ো পড়ো”। বেথেনি বা লানারা যদিও মুনির হাসানের বইটির কথা জানে না কিন্তু তারা যেন পণ করেছে শুধু পড়বে আর পড়বে।

অ্যাবি হলিস:

আরেক পড়ুয়ার নাম অ্যাবি হলিস। বয়স এখন মাত্র ৬ বছর। এ বছর সে কিন্ডারগার্টেন পার করবে। এরই মধ্যে সে রেবেকা এম আর্থার্স লাইব্রেরীর গ্রীষ্মকালীন বই পড়া কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে ৯০০ বই পড়ে ফেলেছে। অ্যাবি খরগশের গল্প পড়তে বেশি ভালোবাসে। তার ইচ্ছে ১০০০ বই পড়া শেষ করে সে লাইব্রেরী থেকে পুরস্কার নিবে। এই প্রোগ্রামে যারাই ১০০০ বই পড়া শেষ করেছে তাদেরকে লাইব্রেরী থেকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এই এক হাজার বই পড়ার জন্য সময় পাওয়া যায় পুরো এক বছর। অনেকে ভাবতে পারে এই বয়সে এক বছরে ১ হাজার বই পড়া কিভাবে সম্ভব? তাদের জন্য একটি তথ্য যুক্ত করেছেন রেবেকা এম আর্থার্স লাইব্রেরীর লাইব্রেরিয়ান। বাচ্চাদের বই পড়ায় উৎসাহ যোগাতে তারা একটি ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাচ্চাদের বইগুলো সাধারণত খুব ছোট হয়। ২০ থেকে ৩০ পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ হয়। ছবি আর লেখায় বইটি পরিপূর্ণ থাকে। ফলে দেখা যায় একটি বইয়ের শব্দ সংখ্যা ৫০০ থেকে ১০০০ এর কম হয়। ফলে এক বসাতেই পুরো বই পড়া হয়ে যায়। অন্যদিকে কোনো বাচ্চার যদি কোনো বই খুব ভালো লাগে এবং সে যদি সেই বইটি বারবার পড়ে তবে প্রতিবার পড়া হিসেবে একটি সংখ্যা কাউন্ট করা হয়। মানে অ্যাবি হলিস তার পছন্দের বইটি যদি ১০০ বার পড়ে থাকে তবে সে একশোটি বই পড়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। লাইব্রেরিয়াম স্ট্রম মনে করেন রিপিটেশনের মাধ্যমে বাচ্চারা যেন বইয়ের বিষয়বস্তু আরও ভালোভাবে জানতে ও শিখতে পারে তাই এই ব্যবস্থা রাখা।

বই আমাদের মনের চোখ বাড়ায়। আমাদের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করে। বই পড়ে আমরা যেমন আনন্দ পাই তেমনি শিখতে পারি অনেক কিছু। আমাদের জাতীয় গ্রন্থাগারের গেটের বাইরে এক সময় বড় একটি পাথরের বই তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বড় করে লেখা ছিলো “ পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই”। আর এ কারণেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাদের কর্মসূচীর নাম দিয়েছিল ”আলোকিত মানুষ চাই”।

লেখক: জাজাফী

৮ জানুয়ারি ২০২৪