পরিবেশ রক্ষা ও একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ নগরী গড়ার স্বপ্ন দেখে ছোট থেকেই। কিন্তু বাস্তব জীবনে এটি বাস্তবায়ন করা কেবল বড়দের দায়িত্ব নয়, বরং শিশুদের মাঝেও যদি এই চিন্তাভাবনা গড়ে ওঠে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি উন্নত, পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে পারবে। ঢাকার উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি একটি চমৎকার প্রজেক্ট উপস্থাপন করেছে, যার নাম “পরিবেশবান্ধব আদর্শ নগরী”। এ দলে নেতৃত্ব দিয়েছে তাজকিয়াহ ফাইরুজ আরুশী, যার সঙ্গে ছিল তার কিছু উদ্যমী বন্ধু। ছোট বয়সেই তারা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে এবং একটি টেকসই, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহরের পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
তাদের স্বপ্নের নগরীর রূপরেখা
তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা তাদের প্রজেক্টে এমন একটি শহরের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যেখানে প্রকৃতি ও নগরায়ন হাত ধরে চলবে। তারা মূলত কয়েকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছে:
✅ পর্যাপ্ত গাছপালা ও সবুজায়ন: পরিবেশবান্ধব শহরের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সবুজ পরিবেশ। তারা চেয়েছে, শহরের প্রতিটি বাসাবাড়ির পাশে একটি করে বাগান থাকবে এবং রাস্তার ধারে সারি সারি গাছ লাগানো হবে, যা বাতাস পরিশুদ্ধ করবে ও শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
✅ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী: তাদের মতে, শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। রাস্তার ধারে, স্কুল ও পার্কের আশেপাশে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা তারা দিয়েছে, যাতে সবাই সহজেই আবর্জনা ফেলতে পারে।

✅ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্রের ব্যবহার: প্লাস্টিক দূষণ আমাদের শহরকে ধ্বংস করছে। তাই তারা প্রস্তাব করেছে কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের। এছাড়া, স্কুল ও অফিসগুলোতে পানির বোতল ও অন্যান্য পণ্য পুনর্ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা করার কথা বলেছে।
✅ সৌরশক্তির ব্যবহার: তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা চায়, বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সৌরপ্যানেল ব্যবহার বাড়ানো হোক, যাতে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে শহর চলতে পারে। এটি বিদ্যুতের চাহিদা কমাবে এবং পরিবেশের উপর চাপ কমাবে।
✅ পরিবেশবান্ধব যানবাহন: বায়ুদূষণ রোধে তাদের পরামর্শ হলো, বেশি বেশি সাইকেল ও বৈদ্যুতিক যান ব্যবহারের। তারা এমন একটি শহরের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে গাড়ির ধোঁয়া কমবে এবং রাস্তা হবে নিরাপদ।
✅ পানির সংরক্ষণ ও বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনা: পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে তারা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতে পানির সংকট মোকাবিলায় কার্যকর হবে।
স্কুলে কেমন সাড়া ফেলল তাদের প্রজেক্ট?
তাদের উপস্থাপনা শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। শিক্ষকরা তাদের চিন্তার পরিপক্বতার প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এমন উদ্যোগ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন করে তুলবে।”
তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা তাদের প্রজেক্টে নগরীর একটি মডেলও তৈরি করেছিল, যেখানে তারা তাদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এতে ছোট ছোট সবুজ পার্ক, সৌরবিদ্যুৎ চালিত লাইটপোস্ট, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন এবং পানির পুনর্ব্যবহারের প্রযুক্তির চিত্র তুলে ধরা হয়।
শিশুরাই বদলে দিতে পারে ভবিষ্যৎ
তাজকিয়াহ ও তার বন্ধুরা দেখিয়েছে, সচেতনতা ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য শহর গড়া সম্ভব। তাদের মতো শিশুরা যদি ছোট থেকেই পরিবেশ রক্ষার প্রতি যত্নবান হয়, তাহলে একদিন সত্যিই আমরা একটি পরিবেশবান্ধব আদর্শ নগরী গড়ে তুলতে পারব।
তাদের এই অনন্য চিন্তাধারা ও কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। ছোট বয়স থেকেই যদি এমন সচেতনতা তৈরি হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিঃসন্দেহে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবে।
শিশুদের এমন উদ্যোগ আমাদের আশার আলো দেখায়। তাদের স্বপ্নের শহর বাস্তবে রূপ নেওয়ার দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়! 🌿🌎💚
প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরাও চাইলে তোমাদের স্কুলের নানা কার্যক্রম নিয়ে লিখতে পারো ছোটদেরবন্ধুতে। লেখা পাঠাও ইমেইলে [email protected] অথবা আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সেও নক দিতে পারো।