রোদ–বৃষ্টি যা–ই থাকুক, শিশুদের দুরন্তপনার বিরাম নেই। প্রাণোচ্ছল শৈশব তো এমনই হয়। স্কুলে যাতায়াতের পথেও হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যেতে পারে শিশু। আর বৃষ্টিতে ভেজার পর হাঁচি–কাশি বা সর্দি–জ্বরের মতো সমস্যায় ভোগে কোনো কোনো শিশু। আদতেই কি বৃষ্টির পানি শিশুর অসুখের কারণ?
বৃষ্টির পানি বেশ ঠান্ডা। ফলে এই ঠান্ডা পানিতে ভেজা অবস্থায় লম্বা সময় থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে যে কারও। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে সুস্থ থাকতে শিশুকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেওয়াই যাবে না। বৃষ্টিতে মাঠে কিংবা নিদেনপক্ষে বাড়ির সামনের একরত্তি জায়গায় একটু দৌড়ঝাঁপ না করলে আর শৈশবের আনন্দটা থাকল কোথায়! শিশুদের বৃষ্টিতে ভেজার ব্যাপারে তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেন না চিকিৎসকেরাও, যদি না সে ঠান্ডায় অতিসংবেদনশীল হয় বা তার নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা থাকে।

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালট্যান্ট, শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. তাসনুভা খান বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজলেই যেকোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এমন ধারণা ভুল। কোনো শিশু বৃষ্টিতে ভিজলে তার সুস্থতার জন্য সাধারণ কিছু বিষয় খেয়াল রাখাই যথেষ্ট। তবে কারও যদি ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকে, তাহলে বৃষ্টিতে ভিজলে তার হাঁচি–কাশি বা সর্দি হতে পারে। আর ঠান্ডা পানিতে ভিজলে হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর পারতপক্ষে বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো।’
শিশু বৃষ্টিতে ভিজলে
শিশুকে বেশিক্ষণ ভেজা অবস্থায় থাকতে দেবেন না। বৃষ্টিতে ভেজার পর দ্রুত শিশুর মাথা ও শরীর মুছে দিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ ভেজা অবস্থায় থেকে গেলে যে কারও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ভেজা ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণও হতে পারে। খেয়াল রাখুন, আঙুলের ফাঁকে বা ত্বকের কোনো ভাঁজেও যেন পানি রয়ে না যায়। তবে বৃষ্টির পানিতে ভেজার সময় কাদামাটি লেগে শরীর ময়লা হলে প্রথমে সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার বা গোসল করার প্রয়োজন হয়। এই পরিচ্ছন্নতার কাজে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। অবশ্য এতে খুব বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। প্রয়োজন না হলে গোসল করাবেন না।

এরপর যা কিছু
শিশুকে শুকনা ও পরিষ্কার কাপড় পরিয়ে দিন। এমন কাপড় পরানো উচিত, যাতে শিশুর শরীর উষ্ণ থাকে। যেমন একটু পুরু সুতি কাপড়ের ফুলহাতা জামা ও পায়জামা পরিয়ে দিতে পারেন। প্রয়োজনে দুই স্তরে পোশাক পরাতে পারেন। আবহাওয়া বেশি ঠান্ডা থাকলে পাতলা ফ্লানেল কাপড়ের পোশাকও পরাতে পারেন। বৃষ্টিতে ভেজার পরপরই শিশুকে ঠান্ডা হাওয়ায় থাকতে দেবেন না। প্রয়োজনে ঘরের জানালা আটকে রাখুন কিছুক্ষণ। শিশুর শরীর উষ্ণ করে তুলতে তাকে কুসুম গরম পানি কিংবা পানীয় দিতে পারেন।
ঘরের কোণে, ডিজিটাল ডিভাইসের বদলে প্রকৃতির মধ্যেই যদি শিশু আনন্দ খুঁজে পায়, তা শিশুর জন্য ইতিবাচক। বৃষ্টিতে হুটোপুটি করার অকৃত্রিম আনন্দের সুযোগ দিন তাকে। অভ্যাস নেই বলে যে হুট করে ভিজলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে, এমন ধারণা ভুল। নিতান্তই যদি শিশু ঠান্ডায় অতিসংবেদনশীল হয় বা তার শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে কিংবা তার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তাহলে হয়তো তাকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রেও আপনি তাকে বৃষ্টির পর সতেজ প্রকৃতির মধ্যে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ করে দিতে পারেন।
খেয়াল রাখুন
- লম্বা সময় বৃষ্টিতে ভেজা কারও জন্যই ভালো নয়।
- ঝড় বা বজ্রপাতের সময় বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না।
- বৃষ্টির সময় শিশুকে জলাশয়ের ধারেকাছেও যেতে দেবেন না।
- স্কুলে যাওয়ার পথে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে পোশাক পরিবর্তন বা ভালোভাবে শরীর মোছার সুযোগ না–ও পাওয়া যেতে পারে। তাই যাওয়ার সময় রেইনকোট বা ছাতার মতো অনুষঙ্গ ব্যবহারে যত্নশীল হোন; সঙ্গে রাখুন ভালো শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন রুমাল বা ছোট তোয়ালে।