ছোট থেকেই সন্তানের মধ্যে গড়ে তুলুন মূল্যবোধ। এমনকী গুরুত্ব দিন সন্তানের সিদ্ধান্তকেও।
একটা বয়সের পর সকলেরই স্বাধীনতার আকাঙ্খা বাড়তে থাকে। নিজে করব, নিজের মতো খাব এরকম অনেক স্বপ্নই লালিত হয় মনে। কিন্তু সেসব স্বাধীনতার কথা শুনলে ধমকে সন্তানকে চুপ করিয়ে দেয়ার প্রবণতা থাকে অনেক বাবা-মায়ের মধ্যেই। এমনকী অভিভাবকেরা তাদের চাওয়া-পাওয়া চাপিয়ে দেন সন্তানের উপর। ছোট থেকেই আমাদের সংস্কৃতিতে বাচ্চাদের নিজের মতো করে বেড়ে ওঠায় বাধা দেয়া হয়। মা-বাবারা বড্ড বেশি আগলে রাখতে চান সন্তানদের। হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দেয়া থেকে খেলার মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা-এই সবই কিন্তু আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ। এছাড়াও স্কুলের প্রতিযোগিতা তো রয়েইছে। সেই প্রতিযোগিতার চাপে অনেক বাচ্চাই নিজের শখ আহ্লাদ হারিয়ে শামুকের খোলের মত নিজেকে গুটিয়ে নেয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে সহজ ভাবে মিশতে পারে না। সন্তানকে মানুষ করার পাশাপাশি তাদের সাইকোলজি নিয়ে বাবা-মায়েরও সমান পড়াশোনা দরকার। সন্তান কি চাইছে তা যেমন বুঝতে হবে তেমনই ছোট থেকেই আত্মনির্ভর গড়ে তুলুন। বয়স ১ হলেই হাতে খাবার ধরিয়ে দিন। এতে নিজে খেতে শিখবে। বয়স ১১ হলে সামনের দোকান থেকে জিনিস আনতে পাঠান। একটু দূর দাঁড়িয়ে দেখুন ঠিকমতো রাস্তা পার হচ্ছে কিনা। এছাড়াও যা যা করবেন বুঝতে শেখান।
বাবা অফিস বেরিয়ে গেলে কান্নাকাটি নেই, কিন্তু মা বেরোলেই ঝামেলা। অফিস থেকে ফিরলে কান্নাকাটি, মায়ের সঙ্গে অভিমান …ছোট থেকেই বাচ্চাকে এগুলো বুঝতে শেখান। মায়ের কাজ করা কতটা জরুরি সেটা ওর মতো করে বোঝাতে হবে। বরং আপনি যখন অফিসে থাকবেন তখন যেন বাড়ির দেখাশোনা বাচ্চা করে, খেলার ছলে সেই ভাবেই বোঝান। ছোট খাটো কোনও কাজ দিন। আঁকতে দিন বা বলুন বাড়ির কাউকে সঙ্গে নিয়ে গাছে জল দিতে। বাড়ির সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে। মোট কথায় মূল্যবোধ তৈরি করুন।
প্রয়োজনীয়তা ও স্বাচ্ছন্দ্য
বাচ্চা জেদ করলেই বা চাইলেই কোনও কিছু দিয়ে দেবেন না। বরং তাকে বুঝতে শেখান কোনও কিছু উপার্জন করতে গেলে কিন্তু অনেকটা কষ্ট করতে হয়। কোনও জিনিস নিয়ে বায়না করলে বাচ্চাকে কোনও খেলা বা কাজ দিন। বলুন সেটা করতে পারলে তবেই দাবি মিটবে। এছাড়াও মাঝে মধ্যে ছোট সারপ্রাইজ দিন। খুব দামি কিছু হুট করে দিয়ে দেবেন না।
উদার মনের হতে হবে
মেয়ে বন্ধু এবং ছেলে বন্ধু এই পার্থক্যের বদলে বরং শেখান বন্ধু একজনই। এবং বন্ধুর কোনও লিঙ্গ হয় না। এছাড়াও কোনও খাবার সবার সঙ্গে ভাগ করে খেতে হয়। সেই সঙ্গে সকলের প্রতি যাতে বাচ্চার স্নেহ, সম্মান থাকে সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। বাচ্চার সামনে এমন কোনও কথা বলবেন না যা ওর মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কে ভালো, কে খারাপ এই সমস্ত আলোচনা করবেন না। এমনকী আমারটাই ভালো, বাকি সবাই খারাপ এরকম পরিস্থিতিও তৈরি করবেন না। এতে আখেরে ক্ষতি আপনারই।
আবেগ দিয়ে নয়
নিজেরে আবেগী মনকে যেমন সংযত করবেন তেমনই বাচ্চাকে বোঝাবেন বাস্তব কতটা জটিল। গানে, কবিতায়, সেলফিতে ভেসে না গিয়ে বাস্তব বোধের সঙ্গে বাচ্চাকে মানুষ করুন। কারণ টিন এজ বয়সে সকলেরই মানসিকতার পরিবর্তন হয়। তাই ছোট থেকেই সব গেঁথে দেবেন না। ছোট থেকে আপনি যদি জোর করে বাচ্চার ভালো-মন্দ বেছে দেন তাহলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। আপনার গান পছন্দ বলে সন্তান গিটার শিখতে পারবে না, এরকমটা যেন না হয়।
নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন
ছেলে হোক বা মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই সেক্স এডুকেশন কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব স্কুলেই এখন এই বিষয়ে ক্লাস হয়। তবুও আপনি সন্তানকে অল্প বিস্তর বুঝিয়ে বলুন। শারীরিক সম্পর্ক থেকে কী কী সমস্যা আসতে পারে তা বলুন। কোন কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে তা যেমন গল্পের ছলে বুঝিয়ে বলবেন তেমনই বলে দিন কোনও সমস্যায় পড়লে যাতে আপনাকে অবশ্যই বলে। বিপদে পড়লে যেন ভয় না পায়।
সন্তান টিনএজ হলে
টিনএজ বয়সে সন্তানের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবেই। আর তা আপনাকে খুব গুরুত্ব সহকারে হ্যান্ডেল করতে হবে। সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে সেই খোঁজ যেমন রাখবেন তেমনই বন্ধুর বাবা-মায়েদের সঙ্গেও বলুন। মাঝেমধ্যেই একা পড়তে যেতে দিন। বন্ধুদের সঙ্গে খেতে যেতে দিন। আর যদি দেখেন সন্তান ইন্ট্রোভাট তাহলে জোর করেই তাকে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দিন। লন্ড্রিতে জামাকাপড় দিয়ে পাঠান। সেই সঙ্গে অবশ্যই খোঁজ নিন কেন আপনার সন্তান ইন্ট্রোভাট। বন্ধুদের সঙ্গেই বা কেমন সম্পর্ক তার। এছাড়াও মাঝেমধ্যে সন্তানের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিন।