বাংলাদেশের সরকার শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে নানা আইন প্রয়োগ করেন। “শিশুদের দ্বারা সামর্থের বাইরে কাজ করানো যাবে না”; -এ জাতীয় কতো আইন পাস করান!
শিশুরা স্কুলে যাবে, শিক্ষা অর্জন করে জাতিকে সমৃদ্ধ করবে। “শিশুশ্রম” বাংলাদেশের আইন সমর্থন করে না।
অথচ, ৬-৭ বছরের বাচ্চারা ১ম-২য় শ্রেণিতে যখন আট দশটা বিষয় নিয়ে হিমশিম খায়, যখন অভিভাবকগণ সারাটা দিন এতো বড় সিলেবাস শিশুদের ছোট্ট মাথায় ঢুকানোর জন্য অস্থির হয়ে থাকে, তখন সেটাকে “শিশুশ্রম” বলা হয় না। এইটুকু বয়স থেকেই বাচ্চারা নিজেদের চোখে পৃথিবী দেখতে ভুলে যায়, পাঠ্যবই এর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায় তাদের শৈশব, তাদের পৃথিবী! জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে জীবনের শুরু থেকেই! এটাকে তো “শিশুশ্রম” বলা হয় না!
প্রতিদিন ছয়টা পিরিওডের বই-খাতা (CW, HW.) মিলে মোট ১৫-২০ টা বইখাতা ব্যাগে ভরে যখন তারা কাঁধে তুলে নেয়, তখন কারো চোখে সেটা “শিশুশ্রম” বলে গণ্য হয় না! যখন কাধ আর পিঠের ব্যথায় বাচ্চারা রাতের পর রাত ঘুমাতে পারে না, তখন সেটাকে কেন শিশুশ্রমের ফল বলা হয় না?
ছোটবেলা থেকে এই ভারী বোঝা কাঁধে চাপিয়ে তাদের মেরুদণ্ড স্থায়ীভাবে বাঁকা হয়ে যায়, মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার ইতিহাসও আছে! “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড” – তাই বলে কি মানুষের কাঠামোগত মেরুদন্ডের প্রয়োজন নেই?
এবার আসি ৭ম-৮ম শ্রেণির শিশুদের কথায়। ততোদিনে তো তারা ব্যাগের বোঝা আর মাথার বোঝায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। কোচিং সেন্টারে দৌড় প্রতিযোগিতাও তো আরো আগে থেকেই তাদের দৈনন্দিন কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু নতুন বিভীষিকা হয়ে ওঠে পরীক্ষার দিনগুলো! ২.৩০ ঘন্টায় ৭টা সৃজনশীল! জীবন বিপন্ন করে তারা ৭টা সৃজনশীল লেখে! দ্রুত হাত চালাতে চালাতে হাত ব্যথায় অবশ হয়ে আসতে চাইলেও থামার উপায় থাকে না, সময় নেই যে! ১৪টা বিষয়ের প্রথম দিনেই আঙুলে ফোসকা পড়ে যায়! কাধসহ হাত ব্যথা হয়ে যায়! পরেরদিন সকালে সেই ব্যথাযুক্ত হাত নিয়ে প্যারাসিটামল খেয়ে বের হয়, ফোসকা পড়া হাত নিয়ে আবার যুদ্ধে নামে! তখন তো সেটা তথাকথিত “শিশুশ্রম” এর সংজ্ঞাভুক্ত হয় না! বাংলাদেশের আইন সেটাকে শিশুশ্রম বলে না!
ডাক্তার হাত-কাধ-পিঠের ব্যথার জন্য একগাদা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট লিখে দেন, কিন্তু আসল জায়গা কারো চোখে পড়ে না। শিশুদের মস্তিষ্ক তো বিকৃত হয়েই যায়, শরীরও বাদ থাকে না! কেও বোঝে না এই অমানুষিক কষ্ট, শুধু যে ভোগে, সেই বোঝে। তবুও সমাজের চাপে সেও এটাকে স্বাভাবিক ভাবে দেখার চেষ্টা করে!
এতো কষ্টের পর শিশুরা যে কতো বিদ্বান হয়, তা ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষাগুলোর পাসের হার দেখেই বোঝা যায়!
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতোটাই নিকৃষ্ট যে, তা বোঝাতে প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, “আমাদের শিক্ষাযন্ত্রের মধ্যে যে যুবক নিষ্পেষিত হয়ে বেরিয়ে আসে, তার আর আপনার বলতে বেশি কিছু থাকে না, যদি না তার প্রাণ অত্যন্ত কড়া হয়!”
শিশুদের প্রতি এই অমানুষিক নির্যাতন বন্ধ হোক, শিশুশ্রম বন্ধ হোক।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড,তাই বলে কি মানুষের কাঠামোগত মেরুদন্ডের প্রয়োজন নেই?
RELATED ARTICLES
Comments are closed.