বাল্যবিবাহ এ সমাজের একটি বড় ব্যাধী হিসেবে চিহ্নিত।প্রতি বছর অসংখ্য কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে নিজের জীবনের সুন্দর কৈশর জলাঞ্জলী দিয়েছে পাশাপাশি অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যু হচ্ছে অনেক কিশোরীর।বাল্যবিবাহ ঠেকাতে স্কুলে স্কুলে গড়ে তোলা হচ্ছে কিশোরী ব্রিগেড,যারা বাল্যবিবাহ রুখে দিচ্ছে।এটা আমাদের জন্য অবশ্যই আশার কথা।
আমরা জানি বাল্য বিবাহের কোন সুফল নেই বরং শুধু কুফল রয়েছে।স্বর্ণকিশোরীরা সারা দেশে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে এবং সচেতনতা তৈরিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে এবং দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে।কিন্তু তার পরও বাল্য বিবাহ ঠিকই চলছে গোচরে বা অগচরে।সরকার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে বন্ধের জন্য নানা সময় আইন করলেও তা সেভাবে তোয়াক্কা না করেই হরহামেশা চলছে বাল্য বিবাহ।এমনকি অভিযোগ আছে কোন কোন এলাকার চেয়ারম্যান টাকা খেয়ে মেয়ের পরিবারকে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ তৈরি করে দিচ্ছে।অথচ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা।
যখন কোন ভাবেই বাল্যবিবাহের হার আনুপাতিক হারে হ্রাস করা যাচ্ছিলনা তখন সরকারের পক্ষ থেকে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।আমরা জানি অনেক সময় আমাদের অগোচরে বাল্যবিবাহ হচ্ছে তবে যখন সচেতন কারো নজরে পড়ছে তখন সেটা কোন না কোন ভাবে রুখে দেওয়া যাচ্ছে।কিন্তু এতে করে সামাজিক ভাবে মেয়ে ও তার পরিবার হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে।এমনকি পরবর্তীতে ওই পরিবার নানা ভাবে ভোগান্তির শিকারও হচ্ছে।বিশেষ করে বিয়ের দিন বাল্যবিবাহ রুখে দিলে এই সমস্যাটা হয়ে থাকে।এই দিকটি বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ের আলোচনা শুরুর আগেই এটিকে রুখে দিতে হবে।তার জন্য কিশোরীদের নিয়ে স্কুলে স্কুলে একটি ব্রিগেড করা হচ্ছে।শুরুটা হয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে।ত্রিশালের উপজেলা নিবার্হী অফিসার আবু জাফর রিপনের সাবির্ক সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে এই ব্রিগেড।
এই ব্রিগেডের সদস্যা কিশোরীরা উঠান বৈঠক করছে এবং এলাকায় সাইকেল চালিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের ধলা ঋঝিপাড়ায় দুইঘন্টাব্যাপী উঠোন বৈঠক করেছে।আশার কথা হলো বিগত তিন মাসে এই ব্রিগেড কিশোরীরা অন্তত সাতটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করার সাফল্য দেখিয়েছে।পাশাপাশি সচেতন করেছে একশোর অধিক পরিবারকে।
ঋষি পাড়ার মেয়ে ববিই প্রথম ও পাড়া থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।অথচ দেশের শিক্ষার হার বেড়েছে অনেক বেশি।ঘরে ঘরে উচ্চশিক্ষিত আছে।শুধুমাত্র বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে এখানকার মেয়েরা স্কুলের গন্ডিও পেরোতে পারেনি।ববি নিজেও তাই এই ব্রিগেডের হয়ে কাজ করছে।
ধলা স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিগ্রেড দলপতি মাহবুবা আলম তৃপ্তি বলেছে, ইতিমধ্যেই তারা এই ইউনিয়নের ৭টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছে। এসব পরিবার ৯ম দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের বিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তারা তাদের অভিভাবকদেরকে সচেতন করার মাধ্যমে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে। এখন এ সকল স্কুল পড়য়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে প্রথম গঠিত ব্রিগেডের দলনেতা ও স্কুল শিক্ষার্থী মাহবুবা আলম তৃপ্তি বলেছে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ব্রিগেডে কাজ করতে অনেক ভালো লাগছে। এখন পর্যন্ত তাঁরা মোট ১৩টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে ভূমিকা রাখাতে পেরেছে। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সহযোগিতা করেছে। কেউ কেউ অসহযোগিতা করলে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনকে জানালে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আশার কথা হচ্ছে স্বর্ণকিশোরীদের পাশাপাশি এই ব্রিগেড সক্রিয় থাকলে দেশে বাল্যবিবাহের হার শুণ্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন ছোটদেরবন্ধু পরিবারের সবাই।প্রতিটি স্কুলে প্রতিটি ক্লাসে যখন এই ব্রিগেড সক্রিয় হবে তখন আপনাআপনি তাদের মধ্যে বাল্যবিবাহের কুফল জানতে পারবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।পাশাপাশি তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে যা তাদেরকে শিক্ষা অর্জনে সহযোগিতা করবে।বাল্যবিবাহের কবল থেকে সকল কিশোরী নিরাপদ হোক সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।আপনার এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে সচেতন নাগরিক হিসেবে সেটা রুখে দিন্এবং বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করুন।পাশাপাশি আপনার সুপরামর্শ আমাদের লিখে জানান ইমেইলে। আমাদের কাছে মেইল করার ঠিকানাঃ [email protected]
Comments are closed.