ফুটবল বিশ্বকাপের গোটা আয়োজনকে বলা হয় “দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ”।এই আয়োজন নিয়ে ছোট বড় সবার মধ্যেই থাকে উত্তেজনা।বিশ্বকাপের সময় ছোটদের আপনি অনেক কিছু শেখাতে পারেন,নিজেও শিখতে পারেন।বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই এমন কোন এলাকা নেই যে এটা নিয়ে আলোচনা হয়না সমালোচনা হয়না।এমনকি বলা চলে প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মেতে আছে।আর সেটা যদি হয় বাংলাদেশ তাহলেতো কোন কথাই নেই।নানা দেশের নানা রঙের পতাকায় গোটা আকাশ ছেয়ে যায়।রূপক অর্থে বলতে গেলে বলা চলে পতাকায় ছেয়ে যাওয়ায় আকাশটা তখন আর দেখা যায়না।একই ছাদে হয়তো ব্রাজিল আর্জেন্টিনা জার্মানী স্পেন সহ আরো অনেক দেশের পতাকাও দেখা যায়।আমরা অবাক হয়ে দেখি এই সমর্থন অনেকটা বংশধারার সাথে চলে আসছে।
ছোট্ট শিশু কিশোর কিশোরীরাও এই উন্মাদনায় পিছিয়ে নেই।দেখা যাচ্ছে অনেকে খেলোয়াড়ের নামও জানেনা কিন্তু একটা দেশের সমর্থক।হয়তো বাবা মা ভাই বোন বা পরিবারের বড় কাউকে সেই দলের সমর্থন করতে দেখে সেও সেই দলের সমর্থক হয়ে উঠেছে।দল হারলে দুঃখ পাচ্ছে দল জিতলে আনন্দ হচ্ছে। বাকবিতন্ডাও চলছে নিজের দলের পক্ষে বিপক্ষে।তবে এতো কিছুর ভিড়েও কেউ কেউ আছে বিশ্বকাপ আসলে শুধু দল নিয়ে মেতে থাকা বা আনন্দ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে রাজি নয় বরং এটিকে জানার এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়াবার একটি উপলক্ষ্য এবং দারুণ সময় হিসেবে বেছে নিচ্ছে,কাজে লাগাচ্ছে।বলা হয়ে থাকে সময়ের এক ফোড় অসময়ের দশ ফোড়।সময়ে যা সেখা সহজ অসময়ে তা শেখা খুব কঠিন।আজকের পড়া আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখলে আগামী দিনের পড়া কবে পড়বো? এভাবে কিছু না কিছু বকেয়া থেকেই যাবে।তার চেয়ে সময়ের কাজ সময়ে করাই শ্রেয়।
আমাদের একটা খুব ভালো বন্ধু আছে।সে আমাদের থেকে অনেক অনেক অনেক দূরে থাকে।কত দূরে?সুদুর আমেরিকাতে।বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা কত দূর সেটা বিষয় নয় বড় কথা হলো এমন এক দুরত্ব যেখানে আমরা চাইলেও যেতে পারছি না।কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো সেই বন্ধুটি ওই দূর বিদেশে বসেও আমাদের কথা ভাবে।আমাদেরকে কত্ত কিছু শেখায়।এই বিশ্বকাপ নিয়ে তার মাথায় অনেক ভাবনা।সে আমাদের সেসব বলেছে।বিশ্বকাপের সময় দল নিয়ে তর্কবিতর্ক আর উল্লাস হতাশা প্রকাশ না করে বরং সময়টাকে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর কাজে লাগানোর দারুন সব কৌশল সে জানিয়েছে।ওর নাম ফাতিহা আয়াত।কোন ফাতিহা জানোতো? যে মনে করে “সন্তানকে মুখস্থ করাবেন নাকি আবিস্কারের নেশা ধরিয়ে দিবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার।”
আমাদের বন্ধু ফাতিহা কি বলেছে বিশ্বকাপ নিয়ে?ফাতিহার সব থেকে ভালোবন্ধু ওর বাবা।বাবার সাথেই ও সব কথা শেয়ার করে আর বাবা তখন ওর মূখপত্র হয়ে কাজ করেন।
ফাতিহা বাবাকে বলেছে আচ্ছা বাবা, বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার মাসে এর উপর ছবি আঁকা, বাসায় দেয়াল পত্রিকা লিখন, ফিক্চার বা স্কোরকার্ড বানানো, অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পতাকা/ভাষা/মুদ্রা/রাজধানী/ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে জানা, খেলোয়ারদের প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করা – এগুলোতে আনন্দ নেই?
নতুবা অন্য ছেলেমেয়েরা যারা বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো দেখে ওরাও ওদের আব্বুদের মত কোন একটা নির্দিষ্ট দলের অন্ধ সমর্থন করে কেন? বিশ্বকাপের আসর থেকে সবটুকু মজা পাওয়ার জন্য একদলকে সমর্থন আর অন্যদলকে মুন্ডুপাত করার বাইরে ওদের আব্বুরা ওদের সাথে নিয়ে অন্য কোন অ্যাক্টিভিটি করার কথা ভাবতে পারেনা? এসব করলেতো অনেক জ্ঞান বাড়ে। যে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে সেতো শুধু দলের হার জিতে আনন্দ বেদনা প্রকাশ করেই থেমে থাকে তারতো কোন জ্ঞান বাড়েনা।এমন কোন পরিবার আছে যারা তাদের পছন্দের দল যে দেশ সেই দেশের নানা বিষয় জানে?জানলেও খুব কম জানে।আমরা যদি এই সময়ে নির্দিষ্ট দল সম্পর্কেও জানতাম তাহলেও আমাদের জ্ঞান বাড়তো পাশাপাশি আরো সময় নিয়ে যদি প্রতিপক্ষদল এবং দেশ নিয়েও আলোচনা করতাম,গুগলে ঘাটাঘাটি করতাম তাহলে কতইনা জানা হতো।পরীক্ষাগুলোতে ছেলে মেয়েরা নকল করে জানতে চাওয়ার কোন আগ্রহ নেই বলে।তারা পড়েনা,জানেনা ফলে পরীক্ষা এলেই তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে এবং নকল করার মতলব করে।আমরা কেন এতো সময় অপচয় করি? তার চেয়ে আমরা যদি নিয়মিত এভাবে জ্ঞান চর্চা করতাম কতইনা ভালো হতো।
আমাদের ছোট্ট বন্ধু ফাতিহার কথাগুলো কিন্তু চমৎকার।সত্যিইতো এই বিশ্বকাপের সময়ে আমরা কি পারিনা যতগুলো দল অংশ নিচ্ছে সব দেশ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে?কেউ যদি ভেবে থাকে ওই সব দেশ সম্পর্কে জেনে আমাদের লাভ কী? ফাতিহা তাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছে যদি ওই সব দেশ সম্পর্কে জেনে কোন লাভ নাই থাকে তাহলে ওই সব দেশের সমর্থন করে কী লাভ?
লেখাঃজাজাফী
মডেলঃ ফাতিহা আয়াত
অংকনঃ ফাতিহা আয়াত।
Comments are closed.