আমাদের সমাজ এখন অনেক কিছু দিয়ে মানুষকে পরিমাপ করে। টাকা পয়সা,শিক্ষা সহ আরও বহু কিছু দিয়ে আজ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করা হচ্ছে।তার মধ্যে একটি বিষয় সৌন্দর্য।একটি শিশুর যখন জন্ম হয় তখন থেকেই এই বৈষম্য শুরু হয়।লিঙ্গ বৈষম্য তথা ছেলে এবং মেয়ের ভেদাভেদ থেকে শুরু করে শরীরের রঙ নিয়েও চলে বৈষম্য।যার শরীরের রঙ ফর্সা তার কদর কিছুটা বেশি অথচ শরীরের রঙই সব নয়।এই যে আমরা খুব ছোট থেকেই শিশু কিশোর কিশোরীদের মনের মধ্যে একধরনের ভিন্নতার জন্মদিচ্ছি এটাই আমাদের সমাজের অনগ্রসরতার মুল। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই এই শিক্ষা দিতে হবে সবাইকে।শরীরের রঙ কালো হলেই যে সে একজন ফার্সা মানুষের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে তা কিন্তু নয়।
আমরা ছোটদের কথা বলি।আমরা খুব আক্ষেপ নিয়ে এমন কিছু ঘটনা অবলোকন করি যা সত্যিই খারাপ লাগে।এখনকার বাবা মা প্রতিবেশী এমনকি স্কুলের শিক্ষকেরা পযর্ন্ত চায় ছেলে মেয়েরা মুখস্থ করুক তার পর পরীক্ষায় সেসব উগরে দিয়ে ভালো নম্বর তুলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোক।বিসিএস দিক,ব্যারিষ্টার হোক।বাবা মা তাদের নিজেদের অপুরনীয় স্বপ্ন পুরণের জন্য ছোটবেলা থেকেই ছোটদের মনের মধ্যে তাদের সেই স্বপ্ন বুনে দিতে চেষ্টা করে ফলে ছোট্ট মানুষটির নিজেরও যে একটা স্বপ্ন থাকতে পারে তা ভুলে যায়। একটা শিশু যখন ছবি আকে তখন বুঝতে হবে এই ছবি আকার প্রতি তার ভালোবাসা আছে। তাকে সেটা থেকে নিবৃত করে পড়ালেখার জন্য জোরাজুরি করার মাধ্যমে একটি প্রতিভাকে গলাটিপে হত্যা করা হয়।আবার কেউ ছবি আকতে চায় না বরং গীটার বাজাতে চায় তাকে দিয়ে জোর করে ছবি আকানোটাও একই রকম কাজের শামিল।এভাবেই ঝরে যাচ্ছে কত পাবলোপিকাসো,লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি,জয়নুল আবেদীন।এভাবেই ঝরে যাচ্ছে কত বব ডিলার,মান্নাদে,সাবিনা ইয়াছমীন।
স্কুলের খাতায় হোমওয়ার্ক না করে যে ছেলেটি কবিতা লিখতো বা গল্প লিখতো আমরা জোর করে তা বন্ধ করার মাধ্যমে কত শত নজরুল,রবীন্দ্রনাথ,বিভূতিভূষণকে গলা টিপে হত্যা করছি।যে ছেলেটির খেলতে ভালো লাগে তার ব্যাট কেড়ে নিয়ে তাকে বই খাতা নিয়ে জোর করে বসে থাকতে বাধ্য করছি।ফলে অকালে হারিয়ে যাচ্ছে কত সাকিব আল হাসান, ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার।অথচ প্রতিটি প্রতিভার যত্ন নেওয়া উচিত। আমাদের এক ছোট্ট বন্ধুর খুব মন খারাপ। একদিন আমাকে বললো জানো জাজাফী আমি দেখতে খুব বেশি ফার্সা নই বলে আমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়।খুব আবেগ নিয়ে সে আমাকে বললো জানো আমি যখন অনেক বড় হবো তখন দুঃখী মানুষদের নিয়ে কাজ করবো। তাদের আর কোন দুঃখ পেতে দেবো না।আমি জানি আমাদের সেই ছোট্ট বন্ধুটি মোটেও মিথ্যা বলেনি। আমরা এই সমাজে নামধারী শিক্ষিতরাই কালো ফর্সা ধনী গরীবের ভেদাভেদ তৈরি করি।সেই বন্ধুটি অভিনয় করে,মডেলিং করে। এই পৃথিবীতে খুব কম মানুষ ওর কাজকে শ্রদ্ধা করে অথচ সবার উচিত ছিলো ওকে উৎসাহ দেওয়া যেন ও ওর প্রতিভাকে আরও বিকশিত করতেপারে।
সে মেয়ে বলে ওকে আরও বেশি কষ্ট করতে হয়।যারা ওকে নানা সময় নিরুৎসাহীত করে তারা মনে হয় বাস্তবকে মেনে নিতে শেখেনি। তারা দেখেনি ঘর থেকে বের হতে না দিলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন না,বেগম রোকেয়া বিখ্যাত লেখক হতে পারতেন না,শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার হতে পারতেন না। আর সালমা ক্রিকেট বিশ্বকে দাপিয়ে বেড়াতে পারতেন না।ওনারা সবাই মেয়ে। শিক্ষিত আর অক্ষর জ্ঞান এক কথা নয়। ভূরি ভূরি বই পড়ে বিএ এমএ পাশ করেও অনেকে শিক্ষিত হতে পারে না বরং তারা হয় অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন। অন্যদিকে অনেকে কোন দিন স্কুলে না গিয়েও শিক্ষিত বলে বিবেচিত হতে পারে।আজকে মেয়েরা ভালো কিছু করতে পারবে না বা করা যাবেনা ভেবে বসেথাকলে নিশাত মজুমদার কিংবা ওয়াসফিয়া নাজনীন এভারেষ্ট জয় করতে পারতো না। আজকের ছোট্ট বন্ধুটি যদি সহযোগিতা পায় তবে সে নিশ্চই তার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে যেতে পারবে।নাচ গান আবৃত্তি অভিনয় মডেলিং সব কিছুতেই সে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে।
আমরা জানি অনেক সময় সুর্যের আলোর তেজের কারণে চাঁদের আলো ম্লান হয়ে যায় কিন্তু যখন রাত গভীর হয় তখন সুর্য নয় বরং চন্দ্রের আলোই বেশি মোহনীয় মনে হয়। অন্যদের ভীড়ে আমাদের সেই ছোট্ট বন্ধুর কাজ হয়তো কারো চোখে তেমন আলোড়ন তুলতে পারেনি কিন্তু একদিন নিশ্চই সেও আলোয় আলোকিত করবে।আমরা চাই সেই ছোট্ট বন্ধুটির মত প্রতিটি শিশু কিশোর কিশোরী তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাক আর আমরা তাদের উৎসাহ দেই।
মডেলঃ সাদিকা মালিহা সখ।
লেখাঃ জাজাফী
Comments are closed.