ওর নাম ফাতিহা আয়াত।দূর বিদেশে বসে যে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের পতাকাকে সম্মানিত করে চলেছে।আর্ন্তজাতিক নানা প্রতিযোগিতায় সে এই বয়সেই সাফল্য দেখিয়েছে পাশাপাশি বাবা মা ও পরিবারের সদস্যদের সম্মান বাড়িয়ে লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে উড়িয়েছে।ছোট্ট ফাতিহা এখনো প্রাইমারীর গন্ডি পার হয়নি কিন্তু এরই মাঝে সে তার অর্জনের খাতায় যুক্ত করেছে নানা পালক।ওকে নিয়ে তাই আমরা গোটা বাংলাদেশীরাই গবির্ত।সম্প্রতি আমেরিকাতে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পাঁচটি ইভেন্টে সে অংশ নিয়েছিল যার মধ্যে তিনটিতে বিজয়ী হয়েছে।এছাড়াও তাকে অনারেবল মেনশান দেওয়া হয়েছে।
ভাবছেন এই ফাতিহা কে? তাকে চেনার জন্য আপনাকে খুব বেশি কিছু করতে হবেনা বরং ওর একটি কথাই আপনাকে আজীবনের জন্য ওকে মনে রাখার ব্যবস্থা করে দেবে। ছোট্ট ফাতিহা বলেছিল “সন্তানকে মুখস্ত করাবেন নাকি আবিস্কারের নেশা ধরিয়ে দেবেন,সিদ্ধান্ত আপনার”। যে বন্ধুটি এই বয়সে এমন স্বপ্ন দেখে এমন কথা বলে তাকে মনে না রেখে উপায় কি।
বাবা ব্যারিষ্টার আফতাব আহমেদ মেয়ে অন্তপ্রাণ। তিনি মেয়েকে এতো স্নেহ করেন এতো ভালোবাসেন এবং এতোটা সাপোর্ট দেন যেন মনে হয় গোটা পৃথিবীর সব বাবা মিলেও এতোটা ভালোবাসতে পারেনা।আর ফাতিহার মত একটি কন্যা সন্তানের পিতা হতে পেরে তিনিও নিশ্চই গর্বিত এবং আনন্দিত। একবার ফাতিহার সামনে একডালি নানা রঙের ফুল ছিল।প্রশ্ন করা হলো বাবা এই নানা রঙের ফুলের ডালির মাঝে কোন ফুলটি সব থেকে সেরা।তখন আমরা বলেছিলাম ফাতিহা নামে যে ফুলটি আছে তার তুলনায় বাকিগুলো নিছক মুল্যহীন।
ফাতিহাকে আমরা ভালোবাসি স্নেহ করি এবং মনে রাখি অন্য আরো কারণ আছে। আর দশটি ছেলে মেয়ের মত নয় সে। সবাই যখন স্কুল থেকে ফিরে বাসায় হোমওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত খেলতে ব্যাস্ত,টিভি দেখতে ব্যস্ত কিংবা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময়ে আমাদের ফাতিহা একটু অন্য ভাবে ব্যস্ত থাকে। তার পৃথিবী সেরা বাবাকে নিয়ে সে তার ক্যামেরাটাকে ট্রাইপডে দাড় করিয়ে নিজে দাড়িয়ে যায় সেই ক্যামেরার সামনে।বাবা তখন শুধু বাবা থাকেন না।ব্যারিষ্টার আফতাব আহমেদ তখন হয়ে ওঠেন ক্যামেরাম্যান এবং পরিচালক।আর ফাতিহা কি করে ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে? গান করে? নাহ গান করে না? নাচ করে?নাহ ও নাচও করেনা। তাহলে ভাবছেন ওই ছোট্ট রাজকন্যাটি কি করে ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে? ও যা করে তা করে আমাদের দেশের খুবই পরিচিত টেন মিনিটস স্কুলের পরিচালক আয়মান সাদিক।ছোট্ট ফাতিহা স্কুল থেকে যা কিছু শিখে আসে বিশেষ করে ম্যাথ,জিওগ্রাফী,জিওমেট্টি হিস্টি সব ও নিজে শেখে এবং সেগুলো বাসায় ফিরে বাবাকে নিয়ে ভিডিও লেকচার বানায়।
আমরা জানি স্কুলে টিচারেরা যেভাবে পড়ায় তা তাদের মত বড় মানুষের ভাষায় পড়ায়। কিন্তু আমরা ছোটরাতো আর বড়মানুষের মত করে বুঝিনা।সে কারণে ক্লাসের সবাই সব সময় একরকম বুঝতে পারেনা। আমাদের ফাতিহা তাই সিদ্ধান্ত নিলো স্কুল থেকে শেখা বিষয়গুলি নিজেদের মত ভাষায় উপস্থাপন করবে। যেন আমি যেমন করে বুঝতে চাই তেমন একটি লেকচার পাই।সেই লক্ষ্যে “ম্যাথ ম্যাজিক উইথ ফাতিহা” শিরোণামে পথচলা শুরু হলো ফাতিহার ভিডিও ক্লাস।ইউটিউবে ফাতিহার চ্যানেল আছে যা দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন ফাতিহা আমাদের ক্ষুদে বন্ধুদের জন্য কি কি করে চলেছে।
বাংলাদেশ থেকে বহু দুরে বসে সুদুর আমেরিকার এক স্থান থেকে আমাদের ছোট্ট ফাতিহা শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা পৃথিবীতে।তাইতো ওকে দেখে মনে হয় কবিতার সেই লাইনটি সত্যি “বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর,সবার আমি ছাত্র”।
ছোট্ট ফাতিহার এই সাফল্যে ছোটদেরবন্ধুর পক্ষ থেকে ওকে নিরন্তর শুভকামনা ভালোবাসা ও অভিনন্দন।আমরা চাই ফাতিহা আরো সাফল্য পাক এবং ওর দেওয়া জ্ঞানের আলো চারদিকে আলোকিত করে তুলুক।প্রিয় ফাতিহা তোমার জন্য অনন্ত শুভকামনা।
ছবিঃ ব্যারিষ্টার আফতাব আহমেদ (ফাতিহার বাবা)
Comments are closed.