‘My favourite hobby’ প্যারাগ্রাফ বা কম্পোজিশন লেখার সময় আমরা সবসময় hobby হিসাবে ‘Gardening’ বা ‘বাগান করা’ কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কয়জন নিজে থেকে ছোট্ট একটা চারাগাছ যত্ন করে টবে লাগাই? বাগান করা তো আরও দূরের ব্যাপার। এমন অনেকে আছে, যাদের বারান্দায়, ছাদে, বাড়ির সামনে উঠানে সব জাগায় ছেয়ে থাকে সবুজে। আমাদের মধ্যে যদি এমন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় তাহলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন নামক সমস্যাটা খুব সহজেই মোকাবেলা করা যাবে।
আমাদের বাগান:
আজ আমি আমাদের বাগানটাকে স্বল্প ভাষায় তুলে ধরব। আমাদের বাগানে ২০ প্রজাতির ফুল, ২০ প্রজাতির ফল ও ২৫ প্রজাতির সবজির গাছ রয়েছে। বাসার ভেতরে বারান্দা, বাড়ির সামনে উঠানে এবং ছাদের অর্ধেক অংশ জুড়ে আমার এই বাগান। বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুলের দ্বারা উঠানের সামনের অংশ উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। গাঁদা, চন্দ্রমলিকা, মে ফ্লাওয়ার, হলিহক, বেলি, মর্নিং গ্লোরি, ডালিয়া, সূর্যমূখী একেক মৌসুমে একেক রঙে সেজে ওঠে বাগানের একেক জায়গা। অক্টোবরে শিউলির কমলা-সাদা বিছানায় ভরে উঠে পুরো উঠান। আর ক্যাকটাস, রঙ্গন, মোরগ ফুল, বাগান বিলাস, মাধবীলতা, কাঠগোলাপ ইত্যাদি ছেয়ে থাকে সারা বছর। বারান্দার টবের অপরাজিতা, মাইক ফুল, নীলকণ্ঠ বাড়ির ভিতরের ব্যস্ততায় আনে রঙিনতা।
বাসার পাশে পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে চার-পাঁচটা ডাব গাছ। বাড়ির পূর্বদিকের তেঁতুলগাছের জন্য এখনো জায়গাটা তেঁতুলতলা নামে পরিচিত পুকুর পাড়ের পাশে গলাগলি করে খেঁজুর আর সুপারি গাছ দাড়িঁয়ে।আর গ্রীষ্মকাল এলেই আম আর জামের মুকুলে মৌ মৌ করে পুরো বাগান।নতুন লাগানো লিচু গাছে এবার অনেক লিচু ধরেছে। আর এবার শীতকালে বরই আর কলম বরই এর গাছ পুরো বরই এ-ছেয়ে ছিল। পাতা পর্যন্ত দেখা যেত না। খুব শখ করে এই শীতে স্ট্রবেরি লাগিয়েছিলাম এবং অনেক যত্নের ফল হিসাবে পেয়েছি অনেক স্ট্রবেরি ফল।এছাড়া ছাদে মাল্টা গাছে ফুল এসেছে আর পেয়ারাগুলোও প্রায় বড় হয়ে গেছে। ছাদের ডালিম গাছের ডালিমগুলো বেশ বড় ও লাল হয়েছে।
ছাদ থেকে নিচে তাকালে দেখা যাবে এক পুরো অংশ জুড়ে আঙ্গুরের বাগান।চোখের সামনে আঙ্গুর সবুজ রঙ থেকে বেগুনি হতে দেখা আসলেই ভাগ্যের বিষয়। আঙ্গুরের বাগানের পাশেই আতাগাছে ফুল এসেছে আর পেঁপে গাছে তো পেঁপেতে নুয়ে পড়েছে। লেবু, বাতালি লেবুর কথা না বললেই নয়। ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া লেবু গাছের লেবু দিয়েই আমাদের প্রতিদিন চলে যায়।আর বাতাবি লেবুর ভারে গাছটি একদিকে নুয়ে পড়েছে।
সবজি বাগানের কথা তো এখনো শুরুই করিনি। বাগানের চারকোণায় ইট দিয়ে ঘেরা র্বগের মতো চারটা অংশ রয়েছে যা পুরোটায় সবজিতে ভরা।বাগানের উত্তর-পূর্বদিকে সারিতে রয়েছে লালশাক, পালংশাক,কচু ,মৌলভি কচু,ধনেপাতা ও টমেটো। আর ইটের ঘেরা অংশের চারপাশে টবে রয়েছে মরিচ গাছ আর ক্যাপসিকাম।বাগানের উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে করলা,শসা ,লাউ,সীম,মিষ্টিকুমড়া,ডুমুর গাছ। বাগানের দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে হলুদ, রসুন, পেঁয়াজ, আলু ও পুঁইশাক। এবং দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে সজনা গাছ, বেগুন ও ঢেঁড়শ গাছ।এবং এই অংশের পাশে টবে রয়েছে এলোভেরা,তুলসী,থাইগ্রাস ও পুদিনা।
মেহেদি ও নীম গাছ সহ অসংখ্য পাতাবাহার রয়েছে বাগান,ছাদ ও বাসার ভেতরে। এই পুরো বাগানের যত্ন নিই আমরা পরিবারের প্রত্যেক সদস্য বিশেষত আমার বাবা-মা। আমার বাবা-মায়ের পরিশ্রম,যত্ন ও গাছের প্রতি ভালোলাগা থেকেই গড়ে উঠেছে আমাদের এই ছোট্ট বাগান।তাই সবার প্রথমে ধন্যবাদ আমার বাবা-মাকে।
সবার অবাক হওয়ার কথা, কিন্তু অবাক হবেন না। একাধারে আম জাম, লিচু, ডাব, তেঁতুল, বরই, নিম, ডুমুর, জামরুল গাছ আর অন্যদিকে শাকসবজির জন্য নির্ধারিত জায়গা, এগুলোর জন্য বড় জায়গার প্রয়োজন কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমাদের বাড়ির সামনে কিছু জায়গা আছে। তবে এ জায়গায় কোন এক প্রজাতির গাছ না লাগিয়ে অনেক প্রজাতির একটি-দুইটি করে গাছ লাগিয়ে নিজেদের মতো করে বাগান করা হয়েছে।
আপনাদের বাগান:
ছোট ছোট ফুলের গাছ টবে লাগানো, ছাদে বড় বড় বড় টবে ফুল, ফল বা সবজির চাষ,বাড়ির সামনে উঠানে পাতাবাহার,সবজি, ফুল-ফল লাগানো, এভাবেই আস্তে আস্তে, একটা একটা গাছ লাগানোর মাধামেই শুরু হবে পথযাত্রা। এভাবে আস্তে আস্তে একটা গাছ থেকে গড়ে উঠবে আপনার নিজের পছন্দের বাগান। সকলকে গাছ লাগাতে ও বাগান করতে উব্দুদ্ধ করছি।
লেখক: আফরা মেহজাবীন শীন
আরো পড়ুন:
Comments are closed.