এখনতো পড়াশোনার অনেক চাপ তাই বাধ্য হয়েই স্কুলের পর টিচারের কাছে পড়তে হয়।কিন্তু ভেবে দেখোতো যদি তোমার সেই টিচার মানুষ না হয়ে একজন ভূত হয় তাহলে কি অবস্থা হবে? কিংবা ধরো তুমি নিজেই নিজে টিচার হয়ে পড়াতে গেলে এবং গিয়ে দেখলে তোমার ছাত্র বা ছাত্রী আসলে মানুষ নয় বরং ভূতের বাচ্চা! তোমার তখন কি অবস্থা হবে? আজ কেন এতো ভূত নিয়ে কথা বলছি? তার কারণ “ভুতের টিউশনী” নামে একুশে বইমেলায় নতুন একটি বই এসেছে আর বইটি কে লিখেছে জানো? বাংলাদেশের সবথেকে ক্ষুদে লেখক অলীন বাসার যার বয়স মাত্র আট বছর! ভাবা যায়?।
এবারের বইমেলায় অলীনের দুটো বই বের হয়েছে।মেলার দ্বিতীয় দিন সিসিমপুর মঞ্চে সকাল এগারটায় জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হকের উপস্থিতিতে ছোট্ট অলীনের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। একটি বইয়ের নাম “ভূতের টিউশনী” এই বইটি প্রকাশ করেছে “জ্ঞান বিতান প্রকাশনী” বইটির দাম ১৬০ টাকা। বইটির প্রচ্ছদ একেছে শিরীন আক্তার।বইটি কিন্তু পুরো চার রংয়ের সুতরাং এটিতে আছে মজার মজার সব ছবি যা ছোটদের অবশ্যই ভালো লাগবে। অন্যদিকে ঘাসফড়িং প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে “পালোয়ানের হার” নামে আরেকটি বই।এটির দামও ১৬০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন প্রদীপ ভঞ্জন।
গত বইমেলা এবং তার আগের বইমেলাতেও অলীনের বই প্রকাশ পেয়েছিল।এখন পযর্ন্ত অলীনের মোট পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
১। ভুতের ছায়া— প্রকাশক- সাঁকোবাড়ি -২০১৫
২। ভুতুড়ে— প্রকাশক- সাঁকোবাড়ি -২০১৬
৩। ভুতুম— প্রকাশক- সাঁকোবাড়ি -২০১৭
৪। পালোয়ানের হার-প্রকাশক ঘাসফড়িং—২০১৮
৫। ভুতের টিউশনী—প্রকাশক জ্ঞান বিতান প্রকাশনী—২০১৮
অলীনের বয়স এখন কত হবে অনুমান করে নাও।সে এখন আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র।২০১৫ সালে যখন ওর প্রথম বই বের হয় তখন ও কোন ক্লাসে ছিল কল্পনা করে দেখো! লেখক হবার নেশায় এবং স্বপ্নে সে লেখালেখি করছে নিয়মিত তা বলে পড়াশোনায় সে কিন্তু ফাকি দেয়না কখনো।ক্লাসে সে নিয়মিত এবং ভালো ফলাফল করছে।একবার ভাবোতো তোমার ক্লাসে অলীনের মত একজন লেখক বন্ধু থাকলে কেমন মজা হতো।
আমরা মনে করি অলীনের বাবা মা অলীনকে লেখালেখির জন্য যে উৎসাহ দিচ্ছে তাতে অলীন আরো এগিয়ে যাবে।অন্যদিকে প্রতিটি পরিবার যদি তাদের ছোটদের সৃজনশীলতায় উৎসাহ দেয় তাহলে তারা আরো নতুন কিছু করতে শেখে।অলীন বাসারের মত অন্য আরো যারা লেখক হতে চাও এবং লিখতে চাও তারা তোমাদের লেখা আমাদের কাছে পাঠাতে পারো।আমরা আনন্দের সাথে তোমাদের লেখা ছাপাতে চাই এবং তোমাদের আকা ছবিও ছাপাতে চাই। কোন ভালো সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়েছ? সেই সিনেমা নিয়েও লিখতে পারো। কোন সুন্দর জায়গায় বেড়াতে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছ? তা নিয়েও লিখতে পারো। লেখা পাঠাও ইমেইলে [email protected] সাথে নিজের নাম শ্রেনী স্কুল কলেজের নাম এবং মোবাইল নাম্বার দিও।কারণ আমরা সময়ে সময়ে তোমাকে উপহারওতো পাঠাবো তোমার সেরা লেখাটির জন্য।
সিসিমপুর – শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ এবং শিক্ষাগ্রহণকে আনন্দায়ক ও উপভোগ্য করার এক স্বপ্নীল ভুবন। সিসিমপুর চায় শিশুরা হয়ে উঠবে অনেক বেশি সম্পন্ন, সবল ও সদয় । সে লক্ষ্যে আমরা তৈরি করছি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুতোষ অনুষ্ঠান এবং প্রকাশ করছি গল্পের বইসহ নানামুখী শিক্ষা উপকরণ।
এ বছরও আমরা ইউএসএআইডি-এর অর্থায়নে “আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট ম্যাস মিডিয়া একটিভিটি, সিসিমপুর” প্রকল্পের অধীনে প্রকাশ করতে যাচ্ছি আরও অনেক গল্পের বই। আর সেইজন্যই আমরা চাই আপনি হয়ে উঠুন সিসিমপুরের গল্প লিখিয়েদের একজন। নিচে দেওয়া গল্পটি শেষ করুন, গল্পের একটি নাম দিন এবং পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে।
“বানরের খুব মন খারাপ। পথে দেখা শেয়ালের সাথে। শেয়াল বলল, মন খারাপ কেন?”
লেখার সময় খেয়াল রাখুন-
গল্পটি হবে ৩ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের উপযোগী;
গল্পে মোট শব্দ সংখ্যা হবে সবোর্চ্চ ২০০;
প্রতি বাক্যে শব্দ থাকবে সবোর্চ্চ ৬টি;
প্রতি শব্দে সর্বোচ্চ বর্ণ থাকবে ৫টি;
গল্পটি হবে সর্বোচ্চ ১৬ পৃষ্ঠার;
প্রতি পৃষ্ঠায় বাক্য হবে সর্বোচ্চ ৫টি;
যুক্তাক্ষর ব্যবহার হবে খুবই কম;
গল্পটি হবে ইতিবাচক (সিসিমপুর নেতিবাচক উপস্থাপন নিরুৎসাহিত করে);
আমি যখন অনেক ছোট। বয়স নয় কিংবা দশ, তখন এক বন্ধু আমাদের বলেছিল ওর পাশের বাসার মামা ওর সাথে খুব খারাপ কাজ করেছে। আমরা খুব অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, তোমাকে কি উনি মেরেছেন নাকি বকেছেন? এর উত্তরে ও যা বলল, তা শুনে আমরা সত্যিকথা বলতে তখন কিছুই বুঝতে পারিনি। ও বলল, বাসায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সুযোগে মামা আমাকে দিয়ে শরীরের কী যেন একটা অঙ্গ ধরিয়েছিল। ও এই কথাটি তখন বাসার কাউকে বলতে পারেনি। শুধু আমাদের বলেছিল, যদিও ও এবং আমরা কেউই তখন ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি ঐ লোকটি তাকে দিয়ে কি ধরিয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে আমরা সবাই ওই লোকটিকে এড়িয়ে চলতে শুরু করি। পরে যখন সেই নোংরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলাম, ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠেছিল।
এরকম বাজে অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই হয়েছে, কিন্তু সমাজ, সংসার ও নিজের সম্মানের কথা বিবেচনা করে আমরা কেউ মুখ খুলি না । আর মুখ খুলি না বলে অপরাধ ও অপরাধীরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ।
শিশুরা, বিশেষ করে মেয়েশিশুরা বড়দের বাজে স্পর্শ ও আদর বুঝতে পারে, কিন্তু তারা অভিভাবকদের কাছে তা বলে না বা বলতে পারে না। পরিবারের ভেতরেই প্রথম একটি মেয়েশিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়। এমনকি তার এত কাছের ও বিশ্বাসের মানুষের দ্বারা সে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ, স্পর্শ ও যৌন নিপীড়ণের শিকার হয় যে, সেই কথা সে কারো কাছে মুখ ফুটে বলতেও পারে না। এমনকী বন্ধুদের কাছেও বলতে সংকোচবোধ করে। সে নিজেই ঐ ব্যক্তিকে নানাভাবে এড়িয়ে চলতে চায়।
কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি তার এত কাছের মানুষ যে, তাকে এড়িয়ে চলাও তার মত ছোট্ট মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। অপ্রিয় হলেও একথা সত্য যে, কোন কোন সময়, “রক্ষকই ভক্ষক” হয়ে ওঠে। তাছাড়া শিশুটির মা-বাবা বা অন্য অভিভাবকদের অসচেতনতা, উদাসীনতা ও অজ্ঞানতার কারণেও অপরাধীরা বারবার এ ধরণের অপরাধ করতে সাহস পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর মা বা তার অভিভাবকরা ধারণাই করতে পারেন না যে পরিবারের কোন সদস্যটি এরকম ঘৃণ্য কাজটি করছে।
আমার বয়স যখন ১৩/১৪ হঠাৎ জানতে পারলাম আমাদের নীচতলার ৪/৫ বছরের বাচ্চা মেয়েটিকে তাদের বাসার কাজের ছেলেটি ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। হঠাৎ সেখানে অন্য মানুষ চলে আসায় মেয়েটি রক্ষা পায় আর ছেলেটির শাস্তি হয়। এখন আমার মনে নেই ওর কী শাস্তি হয়েছিল! কিন্তু ঘটনাটি আমার মনে সাংঘাতিক রকম প্রভাব ফেলেছিল। কারো বাসায় কাজের জন্য বড় কোন ছেলে দেখলেই আমার অস্বস্তি হতো। অথচ সেসময় প্রায় সব বাসাতেই হেল্পিং স্টাফ হিসেবে ছেলেই রাখা হত। গৃহপরিচারিকা রাখার প্রচলন আরো পরে শুরু হয়েছিল।
আমি এখনও দেখি অনেকেই, এমনকি শহরের শিক্ষিত পরিবারের ছোট কন্যাশিশুটিকে ড্রাইভার, গার্ড বা বাসার হেল্পিং স্টাফের কোলে দিয়ে পাড়ার দোকানে পাঠানো হচ্ছে, বা স্কুলে পাঠানো হচ্ছে বা বাইরে বেড়াতে পাঠানো হচ্ছে। এরা যে সবাই মন্দ হবে তা নয়, কিন্তু আমাদের ছোট্ট শিশুটির নিরাপত্তার দিকটি আমাকেই ভাবতে হবে। বেচারাকে যদি কেউ একটুও আপত্তিকরভাবে আদর করে বা গায়ে হাত দেয়, ও কিন্তু ব্যাপারটা বুঝতেও পারবে না। বুঝলেও বলতে পারবে না। একটু সচেতন হলেই কিন্তু অনেক বিপদ এড়ানো যায়।
এখানে প্রশ্নটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের নয়, আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তার প্রশ্ন । আহারে, স্কুলের মেয়েগুলোকে যখন দেখি ভ্যানগাড়িতে বাড়ি ফিরছে, তখন একদম শেষে যে মেয়েটি বাড়ি ফিরবে, তার কথা ভেবে বুকটা ভয়ে হুহু করে উঠে। হয়তো উপায় নাই বলে ওকে এই ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে। এই অনিরাপদ সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? কীভাবে?
এরকম বিভিন্ন ঘটনার কথা জানার পর আমি যখন কন্যা সন্তানের মা হলাম, তখন আমি মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতাম। ও একটু বড় হওয়ার পর থেকেই ওকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি মানুষের অনভিপ্রেত স্পর্শ বিষয়ে। বারবার বলেছি, কেউ যদি ওকে কোন বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে টাচ করে ও যেন আমাদের বলে দেয় এবং নিজে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। সেই অপরাধী ওর যত কাছের মানুষই হোক না কেন, ও যেন বিষয়টি আমাদের জানায়। কাউকে একবিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না। আর কেউ যদি কোনকিছুর দেয়ার বা খাওয়ানোর প্রলোভন দিয়ে একা ঘরে নিয়ে যেতে চায়, ও যেন কিছুতেই না যায় ।
কে ভাল আর কে মন্দ তাতো অনেকসময় খালি চোখে দেখা যায় না, মাঝেমাঝে বোঝাও যায় না। কাজেই বাচ্চাটিকে ঠিক কার সম্পর্কে কী বলবো, তা বোঝা কঠিন হয়ে যায়। বাইরের বিপদ থেকে বা কারো সম্পর্কে আপনি বাচ্চাটিকে সাবধান করতে পারেন, তাকে পাহারা দিয়ে রাখতে পারেন, কিন্তু পরিবারের ভেতরের সদস্যটির ব্যাপারে আপনি তাকে কী ও কতটা বলতে পারেন? কিভাবে সাবধান করতে পারেন? বিপত্তিটা কিন্তু এখানেই।
অথচ একটি মেয়েশিশু তার পরিবারের ভেতরেই প্রথম আপত্তিকর স্পর্শ, আচরণ, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। শুধু মেয়েশিশু নয়, ছেলে শিশুও এর ভিকটিম হতে পারে এবং হয় পরিবারের বড় নারী ও পুরুষ সদস্যদের দ্বারা। তাই তাকে বোঝাতে হবে, বলতে হবে সে যদি পরিচিত বা অপরিচিত কারো দ্বারা অনাকাংখিত ব্যবহারের মুখে পড়ে, তাহলে যেন সে চুপ করে না থাকে, লজ্জা না পায়। অনেকসময়ই বাচ্চাটি নিজেই ঠেকানোর চেষ্টা করে, বা বাইরের বা পরিবারের কোন কোন মানুষকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে, তখন বুঝে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে, সে কেন এমনটা করছে। তার মতামতের, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথাটিকে মাথায় নিতে হবে।
আর চুপ করে থাকা নয়। আমাদের মুখ খুলতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। সমাজে বাবা-মা-অভিভাবকদের সচেতনতার মাত্রা বাড়াতে হবে। শিশুকে বোঝাতে হবে এসব ক্ষেত্রে লজ্জা ওর নয়, যে বড় মানুষটি তার সাথে এই মন্দ আচরণ করছে, তার। শাস্তি পাবে সে। পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে এই জঘন্য অপরাধ ও অপরাধীকে ছাড় দেয়া নয়। ঘর থেকে শুরু করতে হবে। বাইরের অপরাধীও তখন আর পার পাবে না ।
‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ নারীর প্রতি সহিংসতা ইস্যুটি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এরকম এত অসংখ্য ঘটনার কথা জেনেছে যে তা ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয়। এমন ঘটনার কথা শুনেছে যে যা প্রকাশ করব কীভাবে, তা ভেবেও উপায় বের করতে পারি না। আমি পরের ইস্যুটিতে সেসব কথাই তুলে ধরতে চাই।
বাল্যবিবাহ এ সমাজের একটি বড় ব্যাধী হিসেবে চিহ্নিত।প্রতি বছর অসংখ্য কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে নিজের জীবনের সুন্দর কৈশর জলাঞ্জলী দিয়েছে পাশাপাশি অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যু হচ্ছে অনেক কিশোরীর।বাল্যবিবাহ ঠেকাতে স্কুলে স্কুলে গড়ে তোলা হচ্ছে কিশোরী ব্রিগেড,যারা বাল্যবিবাহ রুখে দিচ্ছে।এটা আমাদের জন্য অবশ্যই আশার কথা।
আমরা জানি বাল্য বিবাহের কোন সুফল নেই বরং শুধু কুফল রয়েছে।স্বর্ণকিশোরীরা সারা দেশে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে এবং সচেতনতা তৈরিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে এবং দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে।কিন্তু তার পরও বাল্য বিবাহ ঠিকই চলছে গোচরে বা অগচরে।সরকার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে বন্ধের জন্য নানা সময় আইন করলেও তা সেভাবে তোয়াক্কা না করেই হরহামেশা চলছে বাল্য বিবাহ।এমনকি অভিযোগ আছে কোন কোন এলাকার চেয়ারম্যান টাকা খেয়ে মেয়ের পরিবারকে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ তৈরি করে দিচ্ছে।অথচ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা।
যখন কোন ভাবেই বাল্যবিবাহের হার আনুপাতিক হারে হ্রাস করা যাচ্ছিলনা তখন সরকারের পক্ষ থেকে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।আমরা জানি অনেক সময় আমাদের অগোচরে বাল্যবিবাহ হচ্ছে তবে যখন সচেতন কারো নজরে পড়ছে তখন সেটা কোন না কোন ভাবে রুখে দেওয়া যাচ্ছে।কিন্তু এতে করে সামাজিক ভাবে মেয়ে ও তার পরিবার হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে।এমনকি পরবর্তীতে ওই পরিবার নানা ভাবে ভোগান্তির শিকারও হচ্ছে।বিশেষ করে বিয়ের দিন বাল্যবিবাহ রুখে দিলে এই সমস্যাটা হয়ে থাকে।এই দিকটি বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ের আলোচনা শুরুর আগেই এটিকে রুখে দিতে হবে।তার জন্য কিশোরীদের নিয়ে স্কুলে স্কুলে একটি ব্রিগেড করা হচ্ছে।শুরুটা হয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে।ত্রিশালের উপজেলা নিবার্হী অফিসার আবু জাফর রিপনের সাবির্ক সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে এই ব্রিগেড।
এই ব্রিগেডের সদস্যা কিশোরীরা উঠান বৈঠক করছে এবং এলাকায় সাইকেল চালিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের ধলা ঋঝিপাড়ায় দুইঘন্টাব্যাপী উঠোন বৈঠক করেছে।আশার কথা হলো বিগত তিন মাসে এই ব্রিগেড কিশোরীরা অন্তত সাতটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করার সাফল্য দেখিয়েছে।পাশাপাশি সচেতন করেছে একশোর অধিক পরিবারকে।
ঋষি পাড়ার মেয়ে ববিই প্রথম ও পাড়া থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।অথচ দেশের শিক্ষার হার বেড়েছে অনেক বেশি।ঘরে ঘরে উচ্চশিক্ষিত আছে।শুধুমাত্র বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে এখানকার মেয়েরা স্কুলের গন্ডিও পেরোতে পারেনি।ববি নিজেও তাই এই ব্রিগেডের হয়ে কাজ করছে।
ধলা স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিগ্রেড দলপতি মাহবুবা আলম তৃপ্তি বলেছে, ইতিমধ্যেই তারা এই ইউনিয়নের ৭টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছে। এসব পরিবার ৯ম দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের বিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তারা তাদের অভিভাবকদেরকে সচেতন করার মাধ্যমে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে। এখন এ সকল স্কুল পড়য়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে প্রথম গঠিত ব্রিগেডের দলনেতা ও স্কুল শিক্ষার্থী মাহবুবা আলম তৃপ্তি বলেছে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ব্রিগেডে কাজ করতে অনেক ভালো লাগছে। এখন পর্যন্ত তাঁরা মোট ১৩টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে ভূমিকা রাখাতে পেরেছে। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সহযোগিতা করেছে। কেউ কেউ অসহযোগিতা করলে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনকে জানালে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আশার কথা হচ্ছে স্বর্ণকিশোরীদের পাশাপাশি এই ব্রিগেড সক্রিয় থাকলে দেশে বাল্যবিবাহের হার শুণ্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন ছোটদেরবন্ধু পরিবারের সবাই।প্রতিটি স্কুলে প্রতিটি ক্লাসে যখন এই ব্রিগেড সক্রিয় হবে তখন আপনাআপনি তাদের মধ্যে বাল্যবিবাহের কুফল জানতে পারবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।পাশাপাশি তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে যা তাদেরকে শিক্ষা অর্জনে সহযোগিতা করবে।বাল্যবিবাহের কবল থেকে সকল কিশোরী নিরাপদ হোক সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।আপনার এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে সচেতন নাগরিক হিসেবে সেটা রুখে দিন্এবং বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করুন।পাশাপাশি আপনার সুপরামর্শ আমাদের লিখে জানান ইমেইলে। আমাদের কাছে মেইল করার ঠিকানাঃ [email protected]
আফসোস করে বলতে হচ্ছে লৌহ নির্মিত পোশাকও আমাদের কন্যাশিশুটি নিরাপদ নয়,এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?সেটাই ভেবে দেখার সময় এসেছে।কদিন আগেও আমরা দাদা দাদীর মুখে রুপকথার গল্পের দৈত্য দানো ডায়নি,শয়তানের গল্প শুনেছি।আমাদের জীবদ্দশায় সত্যি সত্যিই সেই সব নরপিশাচদের দেখতে পাবো তা কখনো কি কেউ কল্পনা করেছি?গল্পের ডায়নি,দৈত্যদানো সবই মিথ্যা কিন্তু সেই মিথ্যা চরিত্র গুলো এখন সমাজে জন্ম নিয়েছে যাদের হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত আমরা হারাচ্ছি প্রিয়জনদের।তেমনই অগণিত ঘটনার মধ্য থেকে একটি ঘটনার কথা লিখতে বসেছি।দিল্লিতে মাত্র আটমাস বয়সী এক শিশুর কথা।
সবে মাত্র বাবা মায়ের হাতের আঙ্গুল ধরে হাটতে শিখছে আটমাস বয়সী কন্যা শিশুটি।ঠিক সেই মুহুর্তে তার জীবনে হায়েনাদের হিংস্র থাবা এসে সব এলোমেলো করে দিয়েছে।ধরণী দ্বিধা হও বলা লাগছেনা বরং ধরনী এমনিতেই দ্বিধা হয়ে আছে। এশিয়ার বৃহত্তম দেশ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত।বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ বলেও পরিচিত।তারা ক্রিকেটে যেমন এগিয়েছে তেমনি এগিয়েছে চলচ্চিত্রে।বলিউড থেকে শুরু করে দক্ষিণের সিনেমা এখন বিশ্বব্যাপী সমাদ্রিত।কিন্তু তারা কমাতে পারেনি শিশু কিশোর কিশোরী নিযার্তন। দিল্লির একটি হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে এক কন্যা শিশু যার বয়স মাত্র আট মাস।এক বছর দু বছর নয় মাত্র আটমাস বয়সী যে শিশুটি দিল্লির হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি আছে তার কী অপরাধ ছিল?এ সমাজ বলে নারীদের পোষাকের কারণে তারা ধর্ষণের শিকার হয় কিন্তু এই আটমাস বয়সী শিশুটিরওকি পোষাক নিয়ে কথা তোলার কোন সুযোগ আছে? হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউটিনের বাতাস ক্রমাগতভাবে ভারী হয়ে উঠছে শিশুটির নিদারুণ কান্নায় আর মানুষের হাহুতাশ আর ক্ষোভে।
যে ছোট্ট শিশুটির শরীরে বাবা মা পরিবার কখনো একটু আচড়ও পড়তে দেয়নি সেই ছোট্ট কোমল শরীরটাকে নিয়ে হিংস্র হায়েনারা যেটা করেছে তা কোন ভাষায় প্রকাশ করার সাধ্য আমাদের নেই।তিন ঘন্টার অধিক সময় ধরে অপারেশান করা হয়েছে বাচ্চাটিকে।এইতো কিছুদিন আগে পাকিস্তানের জয়নাব মানে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মম ভাবে হত্যা করেছে নরপিশাচেরা।সেটা নিয়ে সারা বিশ্বে অনেক আন্দোলন হয়েছে।আফসোস আমরা এমন একটি পৃথিবীতে আছি যেখানে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আমাদের শিশু কিশোর কিশোরীরা নিরাপদ আছে বলে ধরে নেওয়া যাবে।সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন “পৃথিবীটাকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে” তিনি আরও বলেছিলেন “এসেছে নতুন শিশু,তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান” কিন্তু আমরা এতোটাই হিংস্র হয়ে গেছি যে শিশুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের পরিবর্তে আমরা হয়ে উঠছি ঘাতক,হিংস্র হায়েনা।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি বলে আমরা যখন জাতীয় সঙ্গীত গাই তখন আমাদের হৃদয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা উথলে ওঠে।কিন্তু সেই সোনার বাংলাকে আমরাই প্রতিনিয়ত নষ্ট করে ফেলছি।বিশ্বের অন্যান্য দেশের নরপিশাচদের মতই এদেশেও নরপিশাচের জন্ম হয়েছে।প্রতিনিয়ত বাড়ছে খুন ধর্ষণ,ইভটিজিং আর নানা উপায়ে যৌন হয়রানি। কদিন আগের ঘটনা এক ষাট বছর বয়সী ধর্ষণ করেছে পাঁচ বছর বয়সী এক কন্যা শিশুকে।ঘটনা ঢাকার কদমতলীতে।মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।আমরা জানিনা আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস ফেলার অবসরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঠিক কতজন শিশু কিশোর কিশোরী নিযার্তনের শিকার হচ্ছে,ধর্ষিত হচ্ছে।এই আকাশ বাতাস সেই সব শিশু কিশোর কিশোরীর আর্তচিৎকারে প্রকম্পিত হচ্ছে কিন্তু আমরা মানুষ হয়ে তা উপলব্ধি করতে পারছিনা।আমরা সম্মিলিত ভাবেও পারছিনা শিশু কিশোর কিশোরীদের জন্য নিরাপদ আবাস গড়তে।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দেশটিতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১ হাজার শিশু। শুধু দিল্লিতেই প্রতিদিন গড়ে তিনটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। শিশু ধর্ষণের পরিসংখ্যানে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ৫৯৩ জন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৪৯টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু সনদে বর্ণিত ঘোষণা অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সের কম সবাই শিশু। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু, যাদের সংখ্যা প্রায় সাত থেকে আট কোটি। এই শিশুদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই কন্যাশিশু। যৌন নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিত থেকে প্রায় চার কোটি কন্যাশিশুর নিরাপদ শৈশবের নিশ্চয়তা কতটা দেওয়া হচ্ছে বা দেওয়া সম্ভব? সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ ধরনের নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যার সামান্যই পুলিশের নথিভুক্ত হয়। সেটি বিবেচনায় আনলে ধর্ষণ কিংবা এ জাতীয় নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যা প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যার কয়েক গুণ হবে। শিশু ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ক্রমবর্ধমান ধারা বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন জনপদে পরিণত করে তুলেছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দুই লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন। রাষ্ট্র তাঁদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধি দিয়েছে। জানি না এই উপাধি সমাজের বুকে তাঁদের কতটা সম্মানিত করেছে। অনেকের কাছেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁদের অপূরণীয় আত্মত্যাগ আর অপরিসীম ধৈর্য গৌণ হয়ে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি। এরপরও হয়তো এই বীরাঙ্গনার কিছুটা হলেও স্বস্তি খুঁজে ফেরেন এই ভেবে যে তাঁদের এই আত্মত্যাগ বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিচিতি দিতে সাহায্য করেছে আর বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে লাল-সবুজের পতাকা। কিন্তু আজ এই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিটি মাসে যে প্রায় ৫০টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তারা কোথায় কোন স্বস্তি খুঁজে ফিরবে! পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের সময় লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাঙালি নারীকে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে। যেকোনো যুদ্ধে ধর্ষণ শত্রুপক্ষের মনোবল ভেঙে দেওয়ার অনন্য একটি কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয় যুগে যুগে। কিন্তু আজ এই স্বাধীন বাংলাদেশে এই যে শকুনের দল রোজ শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করে চলেছে, আমার বিবেচনায় তারা পাকিস্তানি সেনাদের চেয়েও বেশি ভয়াবহ, নির্মম ও নিষ্ঠুর।
শিশু ধর্ষণের সঙ্গে নারী ধর্ষণের বিষয়টি যোগ করলে সামগ্রিক যে চিত্রটি ফুটে ওঠে, তা আরও ভয়ংকর। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবমতে, ২০১৭ সালে সারা বাংলাদেশে ৮১৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৪৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় আর ১১ জন ধর্ষণের পর আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ২০১৬ সালে এ ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৬৫৯টি। একদিকে ধর্ষণের মাত্রা যেমন বেড়েছে দ্রুতগতিতে, অন্যদিকে কচ্ছপগতিতে চলছে ধর্ষণের বিচারপ্রক্রিয়া। শিশু অধিকার ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মাত্র ৩২টি শিশু ধর্ষণ মামলার রায় প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলো সংঘটিত হয়েছিল ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কিংবা তারও আগে। প্রকৃত অপরাধীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নতুন নতুন অপরাধের ছক কষছে।
ঘরে বাইরে,স্কুলে,বিশ্ববিদ্যালয়ে,কর্মস্থলে রাস্তায় কোথাও আজ আর নারীদের নিরাপত্তা নেই।শিশু কিশোর কিশোরীরা যৌন নিযার্তনের শিকার হচ্ছে নিজেদের ঘরে,নিকটাত্মীয়র কাছে,গৃহশিক্ষকের কাছে,স্কুলে,খেলার মাঠে।এভাবে চলতে থাকলে এ পৃথিবীটা বুঝি আর বেশি দিন টিকে থাকবে না।আমরা চাই শিশু কিশোর কিশোরীদের জন্য নিরাপদ একটি পৃথিবী গড়তে।পৃথিবী কোন মাটির কলসী নয় যে আমি একাই চাকা ঘুরিয়ে সোজা করে বানিয়ে ফেললাম।সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এ পৃথিবীটাকে শিশু কিশোর কিশোরীদের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তুলতে।
আপনি সন্তানের অভিভাবক?চাই সে ছেলে সন্তান হোক বা মেয়ে সন্তান হোক।তাকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরুন।তাকে নিয়ে আপনার কি কি ভয় কাজ করছে এবং সেগুলো দূর করতে হলে সমাজে কি কি করা যেতে পারে তা সবার সাথে তুলে ধরুন।আসুন আমরা ছোটদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলি।আপনার ও আপনার শিশু কিশোর কিশোরী সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বদলে যান।এবং অন্যকে বদলে যাবার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করুন।যে কোন পরামর্শ লিখে পাঠান আমাদের কাছে [email protected] এই ইমেইলে।
চলচ্চিত্র সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ভালো মন্দের তফাৎ।ইশমাম নাওয়ার স্বল্প দৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করা এক মির্জাপুরিয়ান।ও সম্প্রতি যে সাফল্য পেয়েছে তা নিয়ে লিখতে গিয়ে আজ খুব স্বপ্ন নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে।মানুষের স্বপ্নের শুরুটা কোথা থেকে এটা না বললেও অন্তত এটা বলা যায় স্বপ্ন শুধু দেখার জন্য নয় বরং বাস্তবে রূপদান করার মাধ্যমেই সেটা পরিপুর্নতা পায়।কিন্তু একজীবনে তেমন কজনই বা আছে যারা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছিলেন “স্বপ্ন তা নয় যা ঘুমিয়ে দেখা হয় বরং স্বপ্ন তাই যা মানুষ জেগে জেগে দেখে” আজ এতো স্বপ্ন নিয়ে কথা বলছি তার কারণ ক্যাডেট ইশমাম নাওয়ার।
এ পি জে আব্দুল কালামের কথার পথ ধরে ইশমাম ঘুমিয়ে স্বপ্ন না দেখে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেছে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপদান করেছে। সদ্য শেষ হওয়া আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ইশমামের চলচ্চিত্র ‘বন্ধু” প্রদর্শিত হয়েছিল এবং চুড়ান্ত ফলাফলে সেটিকে বিচারকেরা দ্বিতীয় সেরা চলচ্চিত্রের খেতাব দিয়েছে যা এক দিক থেকে ওর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার নামান্তর।
ইশমাম তখন বেশ ছোট।বছর পাচেক বয়স হবে হয়তো।ইশমামের প্রিয় মা বিলকিস পারভীন ওকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে। ইশমামের ছোট্ট চোখদুটি তখন মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল আর সেই চোখে তখনই স্বপ্ন আঁকা হয়ে গিয়েছিল চলচ্চিত্রের কলাকৌশল রপ্ত করার। এ জন্যই নেপোলিয়ান বলেছিলেন “আমাকে তোমরা একটা শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি দেব”। ছোট্ট ইশমামের চোখে যে যাদুর ছোয়া লেগেছিল তার হাতে খড়ি মায়ের সাথে ঘুরতে গিয়ে। সেই স্বপ্নটা বুকে লালন করে রেখেছে খুব যত্ন করে। সোহরাওয়ার্দী হাউসের এই ছেলেটির ভিডিও এডিটিং,সিনেমাটোগ্রাফী দেখে প্রচুর মানুষ মুগ্ধ হচ্ছে এবং আগামীতেও নিশ্চই হবে। এখনো এপুলেটে ৫ দাগ বয়ে বেড়ানো এই মেধাবী ক্যাডেট নিশ্চয় ৬ দাগের অ্যাপুলেটের অধিকারী হয়ে তার মেধাকে আরও শাণিত করবে।
মির্জাপুরিয়ানদের সাফল্যগাথা লিখে শেষ করা যাবেনা।শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র সব ক্ষেত্রে তাদের দৃপ্তপদচারণা মির্জাপুরিয়ানদের গৌরবান্বিত করছে।কিছুদিন আগেও এক মির্জাপুরিয়ান (ড.আতিউর রহমান) ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর।গত বছর বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে কথা সাহিত্যে পুরস্কার পেয়েছিলেন আরেক মির্জাপুরিয়ান শাহাদুজ্জামান।আর খুব ছোট নয় আর্ন্তজাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব সেখানে এবার আরেক মির্জাপুরিয়ান ইশমাম নাওয়ার দ্বিতীয় সেরা চলচ্চিত্রকার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে যেখানে তিনজন এক্স ক্যাডেট পুরস্কৃত হয়েছেন।সেই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই ইশমামের এই অর্জন সবাইকে বিমুগ্ধ করেছে।
আমরা চাই ক্যাডেট ইশমাম আগামী দিনে আরো এগিয়ে যাক এবং এমন কিছু করুক যেন যেদিন সোহরাওয়ার্দী হাউসে ওর পদধূলী পড়বে না সেদিনও সোহরাওয়ার্দী হাউসের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয় ওর সাফল্যগাথা।পলগদ্যার,স্টিফেন স্পিলবার্গ,সত্যজিৎরায়দের উত্তরসুরী ক্যাডেট ইশমামকে অভিনন্দন তার এই অর্জনের জন্য।একদিন সে আরো এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা রইলো।
গলা ছেড়ে সবাই যেন গাইতে পারে
“মেরুন রংএ রাঙিয়ে তোমার
সেই যে পথ চলা,
তোমাকে ঘিরে স্বপ্ন কত,
কতনা কথা বলা।
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
চেতনার আরেক নাম
আওয়াজ শুনি প্যারেড গ্রাউন্ডে
লেফট রাইট ডান বাম”।
ইশমাম নাওয়ারের চলচ্চিত্রটির নাম “বন্ধু” এটি ২০ মিনিটের একটি চলচ্চিত্র যা সমাজকে নাড়া দেওয়ার মত।আশা করি ইশমামের হাত ধরে এদেশীয় চলচ্চিত্র নতুন রূপে আবির্ভুত হবে।
চকলেটের জন্য ভালোবাসা,উপকারী না ক্ষতিকর? এটি একটি গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন।চকলেট নিয়ে কথা বলতে গেলেই জিবে জল আসে তাইনা? কিংবা চোখের সামনে ভেসে ওঠে উইলিওয়াংকারের সেই বিখ্যাত চকলেট ফ্যাক্টরীর কথা যেখানে চার্লি বাকেট সহ আরো কয়েকজন ছেলে মেয়ে গোল্ডেন টিকেট পেয়ে একদিনের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিল।সেখানে যে কত কিছু ঘটেছিল তা জানতে হলে চোখ রাখতে হবে “চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরী” সিনেমাটিতে। আমরা বরং অবসর সময়ে না হয় সিনেমাটি দেখে নেব এখন আসি চকলেট নিয়ে কথা বলতে।
চকলেট নিশ্চই সবাই ভালোবাসে? না এ কথাটা হয়তো সেভাবে জোর গলায় বলা যাবে না অন্তত রোহানকে প্রশ্ন করলে সে বলবে ভিন্ন কথা।চকলেট আমার খুবই প্রিয় কিন্তু আম্মুর কাছে চকলেট মোটেই প্রিয় নয়।আম্মু বলে চকলেট খেলে দাত নষ্ট হয়ে যাবে,দাতে পোকা হবে আরো কত কি।তবে সেই আম্মুই আবার মিফরা আপুর জন্মদিনে চকলেটের বক্স উপহার দেয়।আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে আচ্ছা আম্মু তুমি আমাকে চকলেট দিতে চাওনা দাত নষ্ট হবে বলে তাহলে তুমি কেন মিফরা আপুকে চকলেট কিনে দাও?তার কি দাত নষ্ট হবে না? নাকি তুমি চাও তার দাত নষ্ট হয়ে তাকে ফোকলাদাতে দেখাক?
রোহানের কথা থেকে এবার ফিরে আসি বিশ্বের অগনিত জ্ঞানীগুনিদের কাছে।তারা কি বলেন চকলেট নিয়ে? চকলেট কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর এটি অবশ্য এখনো সমাধানে পৌছানো যায়নি।অনেকটা দিন পেরালে রাত হয় আবার রাত পেরোলে দিন হয় সেরকম ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা একবার বলেন চকলেট উপকারী আবার বলেন চকলেট ক্ষতিকর। তবে ছোটদের জন্য আশার কথা হলো সব থেকে বেশি বিজ্ঞানী চকলেটকে উপকারী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।বিস্তর গবেষণায় দেখা গেছে চকলেট উচ্চরক্তচাপ বা হাই প্রেসারকে নিয়ন্ত্রন করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে কাযর্কর রাখে সেই সাথে নানারকম রোগের ঝুকি কমিয়ে দেয়। আর আমরাতো জানি চকলেট রক্তের শর্করার হ্রাস বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রন করে স্বাভাকি রাখে যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
চকলেট কি দিয়ে তৈরি? হ্যা আমরা কেউ কেউ জানি আবার কেউ কেউ জানিনা। চকলেট তৈরি হয় কোকোয়া নামের একটি বীজ থেকৈ। গবেষণায় দেখা গেছে কোকোয়ার নানা রকম গুন আছে। প্রাচীন কালে অর্থাৎ মায়া সভ্যতার সময়ে দৌড়ানোর সহায়ক হিসেবে চকলেট পাউডারও ব্যবহার করা হতো। যা খেলে অনেক বেশি দৌড়ানো যেত।তাহলে কি এখন ভাবছো যে বিশ্বের সবর্কালের সেরা দৌড়বিদ উসাইন বোল্টও এটা খেতেন?আসলে চকলেট যেহেতু সবাই ভালোই পছন্দ করে যেমন তুমি করো তেমনি নিশ্চই বোল্টও পছন্দ করতেন।আর হ্যা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রনেও চকলেট ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিওর সেইন্ট ভিনসেন্ট মার্সি মেডিকেল সেন্টারের কার্ডিওলজি বিভাগের গবেষক ওয়াইস খাজা বলেন, ‘চকলেট খুব ভালো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শরীরের প্রদাহজনিত রোগ কমাতে এটি ভালো কাজে দেয়। আমরা মনে করি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারণেই এর উপকারী দিক বেশি। চকলেট খেলে ক্যানসার ও স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকিও কমে আসে।’
তবে সব চকলেটেই যে সমান গুণ আছে, তা কিন্তু নয়। কারণ, সব চকলেট একই রেসিপিতে তৈরি হয় না। কোকোয়া বীজে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক একটি পুষ্টিকণা চকলেটকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিণত করে এবং প্রদাহজনিত রোগ কমানোর গুণ দেয়। কালো কুচকুচে ডার্ক চকলেটে এসব গুণ বেশি থাকে, দুধ মেশানো বা সাদা রঙের চকলেটে থাকে অনেক কম।
এখন প্রশ্ন হলো, ডার্ক চকলেট কী? যেসব চকলেটের ৭০ শতাংশ কোকোয়া দিয়ে তৈরি, সেগুলোকেই বলা হয় ডার্ক চকলেট। মূলত তৈরির প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে কোন চকলেটে কী পরিমাণ কোকোয়া থাকবে। চকলেটে কোকোয়া যত বেশি থাকবে, সেটি স্বাস্থ্যের জন্যও বেশি উপকারী হবে।
আমরা বাজারে যেসব চকলেট কিনি, সেগুলো কি বিশুদ্ধ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না। ওয়াইস খাজা বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত চকলেটে থাকে দুধ ও চিনি। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এগুলো খুব একটা পুষ্টিকরও নয়।’ তবে ওয়াইস খাজা এও জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের চকলেটের গুণ নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা কম হয়েছে। তাই ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কতটুকু উপকারী, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিনে দুবারের বেশি ডার্ক চকলেট না খাওয়াই ভালো।
ক্যাডেট কলেজ একটি স্বপ্নময় ভূবন। যে এই ভূবনে প্রবেশ করেনি সে এর সৌন্দর্য এর প্রতি ভালোবাসা কখনো অনুভব করতে পারবে না।তবে যাদের ভাগ্যে সেই সোনালী শৈশব কৈশর কাটানোর সুযোগ হয়নি তারা চাইলেই কিছুটা জেনে নিতে পারেন কেমন হয় সেই জীবনটা। একটি কিশোর যখন বার তের বছর বয়সে বাবা মাকে পরিবারের সবাইকে ছেড়ে ছয় বছরের জন্য একটি আবাসিক স্কুলে(কলেজে) গিয়ে ওঠে তখন তার মানসিকতা কেমন থাকে এবং সেই ছয় বছর সে কিভাবে কাটায় তা কিছু ক্যাডেট তুলে ধরেছেন সাহিত্যের ভাষায়।
কী নিয়ে গল্প হবে আজ? গল্প হোক খাকি চত্বর নিয়ে। ডুবোনৌকার মতো মনের ভেতর ডুবে থাকা চোরাগোপ্তা গল্পগুলো তুলে আনা যাক। আমার হাতে খাকি চত্বরে আমার শেষদিনের ছবি। পাসিং আউট প্যারেডের দিন ছবিটি তোলা। ছবিতে খাকি পরা কতগুলো নবীন কিশোর। সবার চোখে-মুখে ভিড় করে আছে স্বপ্ন। এ-ছবিটি যখন তোলা হচ্ছে আমরা কেউ জানি না কে কোথায় গিয়ে ঠেকবো। খাকি পোশাকে আমাকে কেমন অদ্ভুত লাগছে। বেল্ট, বুট, ক্যাপের সঙ্গে চোখে চশমা, কেমন বেমানান। আমাকে যেন কে ধরে-বেঁধে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছে ওই পোশাকটির ভেতর। ওই তো সামনের সারির বাম দিকে ইফতি….. এভাবেই শুরু হয়েছে খাকি চত্বরের খোয়ারি বইটি। শাহাদুজ্জামান বর্তমান সময়ের অন্যতম শক্তিমান লেখক। তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। খাকি চত্ত্বরের খোয়ারি তার লেখা ক্যাডেট লাইফের সেরা গল্প যেখানে তিনি মিলন নামে এক ক্যাডেটকে নিয়ে নিদারুন এক গল্প সাজিয়েছেন। এক সকালে মিলনের কাটা লাশ পাওয়া যায় রেল লাইনের ধারে।
আমার দখিন হাওয়ার বাসায় অনেক দিন ধরে একটা বই পড়ে আছে। লেখকের নাম শাকুর মজিদ। বইটির নাম – ‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’।
বইটির ভুমিকা পড়লাম। মুক্তধারার চিত্তবাবুকে নিয়ে লেখা অংশটা পড়ে যথেষ্টই মজা পেলাম।
মূললেখা এক সিটিং এ প্রথম দশ পাতা পড়ি। যদি ভাল লেগে যায় তবেই পুরোটা পড়া হয়। শাকুরের বইয়ের পঞ্চম লাইনটি পড়ে আমি বুঝলাম লেখাটা ভাল হবে। পঞ্চম লাইনে লেখা – “অফিসে ইত্তেফাক পত্রিকা এলেই আমি শফিক স্যারকে জিজ্ঞেস করতাম, স্যার আমার রিজাল্ট বারইছেনি?” ’বারইছেনি’ খাঁটি সিলেটি শব্দ। সিলেটবাসীরা নিজেদের কথ্য ভাষা নিয়ে সামান্য সংকুচিত থাকেন। শাকুর সরাসরি এই ভাষা ব্যবহার করছে। তারচেয়েও বড় কথা, মূল গদ্যে হঠাৎ হঠাৎ সিলেটি ভাষা ঢুকিয়ে তিনি গদ্য ধারায় ঢেউ এর মত তৈরী করেছেন। এই কাজ তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছেন না-কি অজানে- করেছেন তা আমি জানি না। যে ভাবেই থাকুন এতে তাঁর গদ্য স্বাদু হয়েছে।
বইটিতে শাকুর তার কথা আন-রিক ভঙ্গিতে বলেছে। সে সহজিয়া ভঙ্গিতে তার স্বপ্ন এবং স্বপ্ন ভঙ্গের কথা, আনন্দ এবং বেদনার কথা লিখে গেছে। আমি তার চোখে পাবলিক স্কুলের ছবি দেখতে পেয়েছি। খেলার মাঠ, দুরের পাহাড়। অন্যকে নিজের দেখা ছবি গল্পের মাধ্যমে দেখানো সহজ কর্ম না।
বাইরে থেকে ক্যাডেট কলেজগুলোকে অনেকের কাছে স্বপ্নপুরী মনে হয়। ওখানে বাচ্চারা খুব ভাল থাকে। আবার কেউ-কেউ মনে করেন ইট-পাথরের দালানের মধ্যে কিছু রুক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর বসবাস। আসলে এই কলেজগুলোতে যারা বেড়ে ওঠে তাদের তৈরী করা হয় সশশ্রবাহিনীর উপযুক্ত করে। তিনশো-ষাঠ ডিগ্রি শিক্ষায় তাদের গড়ে তোলা হয়। সবাই হয়তো সশশ্রবাহিনীতে যোগ দেয় না, তবে তিনশো-ষাঠ ডিগ্রি শিক্ষা লাভ করে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পরে। এই ইট-পাথরের রুক্ষ দালান-কোঠাই এই ক্যাডেটদের কাছে স্বপ্নপুরী হয়ে যায়, যা তারা সারা জীবনেও ভুলতে পারে না। বার-বার ফিরে যেতে চাই তাদের কলেজে। এই মানসিকতা তাদের ভেতর কেন জন্ম নেয় তা কিছুটা আঁচ করা যাবে এক দুষ্টু ক্যাডেটটির এই গল্প পড়ে
লেখকের ক্যাডেট কলেজের জীবন থেকে নেয়া কিছু ক্ষণ, ঘটনা, অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির সমষ্টি এবং দলিল। এই ডায়েরি লেখকের মনের আনন্দ, সংকল্প, বেদনা, গর্ব, হতাশা, দুঃখ-কষ্ট, ফেলে আশা মা-বাবা আর পরিজনদের নিয়ে উৎকণ্ঠা, আর বিভিন্ন মিশ্র অনুভূতির বহির্প্রকাশ। ডায়েরির সময়কাল ১৯৮০-১৯৮৩, যখন লেখকের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছর। ৬ বছরের ক্যাডেট কলেজ জীবনের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর সময়ের গল্প। ডায়েরিটি পড়ে সে সময়ের ক্যাডেটের দৈনিক জীবন, কলেজের রুটিন, রুটিন বহির্ভূত জীবন, নিয়মনীতি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। তৎকালীন ক্যাডেটের জীবনে বিস্মৃত প্রায় ‘কাগুজে চিঠি’ লেখার অভ্যাস লক্ষণীয়। অনেক স্থানেই তা বিধৃত হয়েছে। ‘পড়াশোনায় মন দিতে হবে’।
বইঃ হ্যালো ক্যাডেটস
লেখকঃ মোস্তফা মামুন (সিলেট ক্যাডেট কলেজ)
প্রকাশকঃ বিদ্যাপ্রকাশ
মূল্যঃ ২৪০টাকা
বই সম্পর্কেঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় ছিল আইন। কিন্তু আইনজীবী আর হওয়া হয়নি। এমন আরো অনেক না হওয়ার ভিড় পেরিয়ে যতসামান্য যা হয়েছে তার পুরোটাই লেখালেখিকেন্দ্রিক। লেখক এবং সাংবাদিক, আপাতত এটাই নামের পাশের পরিচয় । জন্ম মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। তারপর সিলেট ক্যাডেট কলেজের রোমাঞ্চকর জীবন। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্মান প্রথম বর্ষ থেকেই ক্রীড়া সাংবাদিকতা নামের দারুণ আনন্দময় এক পেশায় জড়িয়ে পড়া। খেলা দেখতে আর লিখতে ভ্ৰমণ করা হয়ে গেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, দেশ। বন্ধু-আডডা-মানুষ এসব নিয়ে মেতে থাকতে ভালো লাগে। বই পড়া, খেলা দেখাও আছে পছন্দের তালিকায়। কিন্তু সব ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে পছন্দের কাজ লেখা। এই নিয়ে চলছে জীবন। ভালোই তো চলছে!
বইঃ রক ক্যাডেট
লেখকঃ আলীম হায়দার (রংপুর ক্যাডেট কলেজ)
প্রকাশকঃ জয়তীপ্রকাশ
মূল্যঃ ১৩৫টাকা
বই সম্পর্কেঃ
ক্যাডেট তো বটেই, সাধারণ পাঠকেরাও শব্দের খেলায় সাজানো এক কৈশোর জীবনের দুরুন্ত সময়ের স্বাদ পেতে পারেন কাহিনীর ঘনঘটায়। চমৎকার! পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠার কখন কেটে যাবে সময় – টের পাওয়া ভার। প্রাণচঞ্চল ভাষার ব্যবহার যা সহজেই বোধগম্য। ক্যাডেট জীবন সম্পর্কে জানার জন্য ভাল মানের একটি বই।এক কথায় অসাধারণ। লেখক সুন্দর ও সুনিপুন ভাবে তুলে ধরেছেন ক্যাডেট লাইফে ঘটে যাওয়া নানা ছোট বড় আনন্দ বেদনার গল্প।
২০১৬ সালের অমর একুশে বইমেলায় বিয়ানীবাজারের লেখক শাকুর মজিদের ৪টি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের বই বেরিয়েছিল। তার একটি পাঞ্জেরির শাখা প্রতিষ্ঠান অক্ষরপত্র থেকে বেরিয়েছে ১২টি স্মৃতিগদ্য নিয়ে লেখা মাথিউরার গেন্দাফুল কিংবা ফৌজাদারহাটের মেরিগোল্ড। এই গ্রন্থটিও তাঁর আশৈশব লালিত দু’টো অঞ্চলকে ঘিরে পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে অর্জন করা কিছু বোধকে কেন্দ্র করে লেখা স্মৃতিগদ্য।শাকুর মজিদের বেশীর ভাগ রচনাই আত্মজৈবনিক। কখনো ভ্রমণকথা, কখনো আত্মস্মৃতি কিংবা স্মৃতিকথার পরিসরে তিনি প্রকাশ করেন তার নিজের কথা। শাকুর মজিদ জানান – “এটি একটি স্মৃতিগদ্য সংকলন। লেখাগুলো লিখতে গিয়ে আমি বারবার হাতড়ে বেড়িয়েছি আমার সবচেয়ে বড়ো সম্পদ, আমার শৈশবের স্মৃতিকে। আর শৈশবের এই জায়গাগুলো দখল করে রেখেছে আমার জন্মগ্রাম মাথিউরা আর ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ। আমার অবচেতনেই একসময় মাথিউরার গেন্দাফুল ফৌজদারহাটে গিয়ে মেরিগোল্ডে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো। আমার সবগুলো গল্পই সেসব নিয়ে।“ বইটির প্রচ্ছদে লেখকের নিজের তোলা একটা আলোকচিত্র ব্যাবহার করা হয়েছে। নিজের গ্রামের বাড়ির দেয়ালে পড়েছে তার ছায়া।
বইঃ ক্যাডেট নাম্বার ৫৯৫
লেখকঃ মোস্তফা মামুন (সিলেট ক্যাডেট কলেজ)
প্রকাশকঃ অনন্যা
মূল্যঃ ৬০টাকা
বই সম্পর্কেঃ
সিলেট ক্যাডেট কলেজের রোমাঞ্চকর জীবন। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্মান প্রথম বর্ষ থেকেই ক্রীড়া সাংবাদিকতা নামের দারুণ আনন্দময় এক পেশায় জড়িয়ে পড়া। খেলা দেখতে আর লিখতে ভ্ৰমণ করা হয়ে গেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, দেশ। বন্ধু-আডডা-মানুষ এসব নিয়ে মেতে থাকতে ভালো লাগে। বই পড়া, খেলা দেখাও আছে পছন্দের তালিকায়। কিন্তু সব ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে পছন্দের কাজ লেখা। এই নিয়ে চলছে জীবন। ভালোই তো চলছে! ক্যাডেট নাম্বার ৫৯৫ এটি একটি ছোট পরিসরের লেখা। তিনটি এরকম ছোট পরিসরের লেখা নিয়ে একত্রে বেরিয়েছে “হ্যালো ক্যাডেটস”
যে ছেলেটা সকালের পিটিতে দুই কিলোমিটার দৌড়াতে গিয়ে বমি করে দেয়, সেই একই ছেলে কিন্তু বিকালে ফুটবল মাঠে তুফান তুলতে পারে। মারদাঙ্গা ডিফেন্ডার এবং স্পাইডারম্যান লাইক গোলকিপারকে নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারে মিনিটে মিনিটে। কিংবা নিজ দলের ডিফেন্সে গ্রেট ওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, প্রতিপক্ষ দলের তুখোড় স্ট্রাইকারকে মেনিবিড়াল বানিয়ে রাখতে পারে পুরোটা ম্যাচ জুড়ে। মর্নিং শোজ দ্য দে, বাট নট অলওয়েজ। তাই সেই বন্ধু কিংবা জুনিয়র ছেলেটাকে নিয়ে সতর্কতার সাথে হাসাহাসি করা উচিত। কলেজ লাইফের দারুন সব স্মৃতি উঠে আসে রিফাতের লেখায়।
বইঃ ক্যাডেট রম্য
লেখকঃ রাব্বী আহমেদ (– ক্যাডেট কলেজ)
প্রকাশকঃ বইপত্র প্রকাশনী
মূল্যঃ ২০০টাকা
বই সম্পর্কেঃ
ক্যাডেট কলেজ সেনানিয়ন্ত্রিত এক আধাসামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একদিকে কঠোর সেনা শাষণ অন্যদিকে কৈশোরের দস্যিপনা। এর মাঝে এই চার দেয়ালের আবদ্ধ জীবনে অহরহ ঘটে বিচিত্র সব মজার ঘটনা। ‘ক্যাডেট রম্য’ তেমনই কিছু মজার ঘটনার সংকলন যার প্রেক্ষাপট ক্যাডেট কলেজ।
পৃথিবীর ভেতরেই অন্য এক পৃথিবীর গল্প। যে গল্প পাঠককে নিয়ে যাবে একদল খাকি ইউনিফর্ম পরা কিশোর, নারী বিবর্জিত চত্বর, পিটি, প্যারেড, অ্যাডজুটেন্ট, স্টাফ, গেমস, হাউস প্রতিযোগিতাসহ বিচিত্র কর্মকান্ডে ভরপুর এক অদ্ভুত রঙ্গমঞ্চে। সেই রঙ্গমঞ্চে প্রত্যেকেই যেন দারুণ অভিনয় শিল্পী। কেউ বা রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে বের হয়ে যায় নতুন নতুন অ্যাডভেঞ্চারে, কারো কারো জীবনে বেসামরিক প্রেম এলে আমূল বদলে যায় আচরণ।
এভাবেই ক্যাডেট কলেজ নামক এক অচেনা জগতের ভিন্ন ভিন্ন মজার ঘটনাগুলো একাকার হয়ে মিলিয়ে যায় ‘ক্যাডেট রম্যে’। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে ঘটনাগুলো বয়ে বেড়াচ্ছে স্মৃতিময় খাকি চত্বর। সময়ের ধারায় শুধু বদলায় অভিনয় শিল্পীরা।
বইঃ ক্যাডেট রস
লেখকঃ মহিউদ্দিন কাউসার (– ক্যাডেট কলেজ)
প্রকাশকঃ রূপ প্রকাশনী
মূল্যঃ ১৪০টাকা
বই সম্পর্কেঃ
ক্যাডেট কলেজে প্রতিনিয়তই নানা রকম ঘটনার জন্ম হয়। সেগুলোতে মিশে থাকে হাসি আনন্দ বেদনা।সেগুলোই কখনো কখনো হয়ে ওঠে চিরকালীন আনন্দের খোরাক।মহিউদ্দিন কাউসার সেই সব ঘটনাকে সুন্দর করে রসালো করে উপস্থাপন করতে সিদ্ধ হস্ত। তার লেখা ক্যাডেট রস শুধু ক্যাডেট নয় নন ক্যাডেটরাও বেশ উপভোগ করে। প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন রস+আলোতে যা প্রকাশ হয়েছে অনেক বার।এই বইটি সেরকম সব লেখার সংকলন বলা যেতে পারে যা পাঠককে মুগ্ধ করবে।
ক্যাডেট তো বটেই, সাধারণ পাঠকেরাও শব্দের খেলায় সাজানো এক কৈশোর জীবনের দুরুন্ত সময়ের স্বাদ পেতে পারেন কাহিনীর ঘনঘটায়। চমৎকার! পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠার কখন কেটে যাবে সময় – টের পাওয়া ভার। প্রাণচঞ্চল ভাষার ব্যবহার যা সহজেই বোধগম্য। ক্যাডেট জীবন সম্পর্কে জানার জন্য ভাল মানের একটি বই।এক কথায় অসাধারণ। লেখক সুন্দর ও সুনিপুন ভাবে তুলে ধরেছেন ক্যাডেট লাইফে ঘটে যাওয়া নানা ছোট বড় আনন্দ বেদনার গল্প।
আমার ছিল খাকি পরা ছয় বছরের প্রেম
বুকের উপর যত্ন করে লেখা ছিল নেম দুই কাঁধে দুই অ্যাপুলেটে ছিল কিছু দাগ হৃদয় ভরা স্বপ্ন ছিল,ছিলো অনুরাগ ছয় বছরের জীবনটাতে ছিল কতই সুখ পাশে ছিল বন্ধু স্বজন ভীষণ প্রিয় মুখ।
–
স্টেশানে থামলো গাড়ি,এবার যেতে হবে
ছয় বছরের প্রেম তবুও হৃদয় মাঝে রবে
ফিরবেনা আর একজীবনে খাকি পরার দিন
যে খাকিতে জমে গেছে ভালবাসার ঋণ
ছয় দাগের ঐ অ্যাপুলেটে রাখি যখন হাত
স্মৃতি গুলো ভেসে ওঠে,নিরব অশ্রুপাত।
–
ছয় বছরে এমনই প্রেম হয়েছিল জমা
শুরু আছে শেষে কভু হয়না দাড়ি কমা
খাকি পরা ছয় বছরের স্মৃতি চোখে ভাসে
খুজেঁ ফিরি বন্ধু গুলো আমার আসেপাশে
খাকিপরা প্রেমে ছিলাম একসুতোতে বাধা
এমন করে ক’জন পারে একই সাথে কাঁদা।
–
আর শুনিনা শেষ বিকেলে বিউগলের সুর
কে যে কোথায় আছে এখন,কে যে কত দূর
খাকি প্রেমের ছয়টা বছর মনে পড়ে খুব
ইচ্ছে করে যাই ছুটে যাই,স্মৃতিতে দেই ডুব
আমার ছিল খাকি পরা ছয় বছরের প্রেম
বুকের উপর যত্ন করে লেখা ছিল নেম।
…………
বেশির ভাগ মায়েরই অভিযোগ—বাচ্চা খেতে চায় না।শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন? কিছু কিছু রোগের কারণে শিশুদের রুচি কমে যেতে পারে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অত জটিল কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে মা-বাবার উৎকণ্ঠা থাকে। হয়তো শিশু তার রুচি ও পরিমাণ অনুযায়ী ঠিকই খাচ্ছে, কিন্তু মা-বাবা তাতে তৃপ্ত হচ্ছেন না। শিশুর আসলে কোনো রোগ নেই, সমস্যাটা তার মনে। বয়স অনুযায়ী মানসিক ও শারীরিক বিকাশ অন্য বাচ্চাদের মতো হলে শিশুর খাওয়া নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
শিশুর প্রতি মনোযোগ কমে গেলেও সে খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। সে যখন দেখে যে ঠিকমতো না খেলে বা খাবার নিয়ে যন্ত্রণা করলে তাকে নিয়ে সবাই অস্থির হয়ে পড়ছে, তখন খাবার নিয়ে বায়না ধরে।
এ বিষয়ে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন মৃধা বলেন, তবে কিছু বাচ্চা আছে যারা, সত্যি সত্যি খায় না। বৃদ্ধিটাও ঠিকমতো হয় না। তাহলে দেখতে হবে যে বাচ্চাটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে কি না বা তার রক্তশূন্যতা হয়েছে কি না? না কি বাচ্চার ঘন ঘন কোনো সংক্রমণ হচ্ছে, যার জন্য খাওয়ায় রুচি কমে যাচ্ছে। যদি শিশুটির রক্তশূন্যতা থাকে, অপুষ্টি থাকে—বাচ্চাটি বসে থাকবে, খুব বেশি সচল থাকবে না। তাহলে এগুলো দেখতে হবে। পাশাপাশি কৃমি আছে কি না দেখতে হবে। কিছু বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া, অ্যাজমা থাকতে পারে, কিংবা প্রস্রাবে সংক্রমণ আছে; তখন বাচ্চাটিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সে যে খায় না, তার কারণ কী খুঁজতে হবে। শুধুই কি ক্ষুধামান্দ্য নাকি সঙ্গে আর কিছু রয়েছে, সেসব দেখতে হবে। দেখে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।
খাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আচরণগত পরিবর্তন আনুন
ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠেই খিচুড়ি বা অন্য খাবার না দিয়ে আগে বুকের দুধ দিন। এর দুই-তিন ঘণ্টা পর অন্য খাবার দিন। শিশুকে যখন-তখন চিপস, জুস, চকলেট ইত্যাদি দেওয়া যাবে না, এতে খিদে নষ্ট হয়।
আহারের মধ্যবর্তী সময়গুলোতে শিশুকে অন্যান্য খাবার বেশি দেবেন না। যেমন ভাত খাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে দুধ বা নাশতা দেবেন না। শিশুর বিদ্যালয় যদি দুপুর ১২টায় ছুটি হয়, তবে ফিরে এসে তেমন কোনো নাশতা না দেওয়াই উচিত। এ ক্ষেত্রে খিদে থাকা অবস্থাতেই ভাত বা মধ্যাহ্নভোজ দিয়ে দেওয়া যায়।
শিশুকে এক খাবার প্রতিদিন দেবেন না। যেমন রোজ ডিম সেদ্ধ না দিয়ে ডিমের তৈরি নানা জিনিস যেমন পুডিং, জর্দা ইত্যাদি দিতে পারেন। দুধের ক্ষেত্রেও তাই; পুডিং, সেমাই বা পায়েসে প্রচুর দুধ থাকে, সেটাই দিন। ফল খেতে না চাইলে কাস্টার্ড করে দিন।
অনেক সময় খাবার পরিবেশনেও ভিন্নতা আনলে কাজ হয়। রঙিন পাত্রে খাবার পরিবেশন করুন। টেবিলকে করুন সুন্দর ও আকর্ষণীয়। টিভি দেখা কমিয়ে পর্যাপ্ত খেলার ব্যবস্থা করুন, এতে খিদে বাড়বে।
সচরাচর এটাই দেখা গেছে, শিশু যদি একা খায়, তাহলে সে খুব বেশি খেতে চায় না। কিন্তু যদি সপরিবারে বসে একসঙ্গে খায়, তাহলে আপনার শিশুটিও খেতে উৎসাহ পাবে। তাই দুপুরের খাবার বা রাতের খাবার সবাই একসঙ্গে করুন।
শিশু যদি খুব অন্যমনস্ক থাকে, তাহলে খিদে নষ্ট হয়ে যায়। ধরুন, আপনার শিশুর বন্ধুরা সবাই বাইরে খেলাধুলা করছে, আর আপনি জোর করে বাড়ির মধ্যে রেখে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন; তাহলে কিন্তু আপনার শিশুটি একেবারেই খেতে চাইবে না।
খাবার নিয়ে জোর করবেন না। শিশুকে নিজের হাতে খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। খাবার প্রস্তুত, বাজার বা পরিবেশনে সম্ভব হলে তাকে সঙ্গে রাখুন। তার পছন্দমতো মাছ, মাংস বা সবজি কিনুন। এতে খাবারের প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়বে।
সন্তান ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কি না, তাও নজরে রাখতে হবে। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা সমবয়সীদের মতোই বাড়ছে, ওজনও ঠিক আছে; তাহলে বুঝতে হবে তার শরীরে পুষ্টির কোনো ঘাটতি নেই, অর্থাৎ আপনার শিশুর খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিকই আছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, বাচ্চার ওজন বয়সের তুলনায় বেশি অথচ মা-বাবার অভিযোগ—শিশুটি একদমই খায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মা-বাবাকে বুঝতে হবে যে শিশু যদি ঠিকঠাক না খেত, তাহলে তার ওজন বেশি হতো না। আর এরপর যদি জোর করে শিশুটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা শিশুটির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ঠিকঠাক বাড়ছে না, বয়সের তুলনায় ওজন অনেক কম অথবা ওজন বয়সের তুলনায় অনেক বেশি, তাহলে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুরা সৌন্দর্যের প্রতীক। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম বলেছিলেন প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আমি একটি শিশুর মুখ দেখতে চাই এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগেও শিশুদের হাসিমুখ দেখতে চাই। সেই সুন্দর শিশুদের যত্ন এবং তাদের শিশুদের ঘর গুছিয়ে রাখা সহজ না। ঘরের মধ্যেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে খেলনা, বই-খাতা। তাই শিশুকে ছোট থেকেই ঘর গুছিয়ে রাখা শেখালে বড় হয়ে নিজেরাই গুছিয়ে রাখবে নিজের ঘর। জেনে নিন কীভাবে ওদের ঘর গুছিয়ে রাখবেন।
খেলনা:
খেলনা কিন্তু বাচ্চাদের খুবই প্রিয়। ওরা খেলতে খুবই ভালোবাসে।খেলনা বা পুতুলের ক্ষেত্রে ওয়ান ইন-ওয়ান-আউট নিয়ম মেনে চলুন। যখনই নতুন কোনও খেলনা কেনা হবে পুরনো খেলনা কাউকে দিয়ে দিন। কারণ বাচ্চারা কখনই একই খেলনা নিয়ে বেশি দিন খেলে আর ভেঙে যাওয়া কোনো খেলনা ফেলে দিন।
মনে রাখা দরকার, ঘরে নতুন খেলনা আসলেই পুরনো খেলনার প্রতি তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। বাচ্চার ঘরের জন্য ট্রান্সপারেন্ট বক্স কিনে আনুন। যে খেলনা প্রয়োজন সেটা বের আনুন সহজে।
বই:
কালার কো়ড মেনে বাচ্চাদের বইগুলো সাজাতে পারেন। থবা আলাদা আলাদা সেলফে ছবির বই, গল্পের বই, রিডিং মেটিরিয়াল করে রাখুন। এ ভাবে সাজিয়ে রাখা অভ্যাস করালে বাচ্চা বড় হলে নিজেই সাজিয়ে রাখবে।
জামা-কাপড়:
বাচ্চাদের বড় হবার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের জামা-কাপড়ও দ্রুত ছোট হয়ে যায়। এসব জামা-কাপড় জমিয়ে না রেখে পরিবারের মধ্যে ছোট কাউকে দিতে পারেন। না হলে দুঃস্থ শিশুদের মধ্যেও দিয়ে দিতে পারেন। জিনিসটাও কাজে লাগবে, বাড়িতেও জঞ্জাল হবে না।
আসবাব:
বাচ্চাদের ঘরে আসবাবপত্র বেশি হয়ে গেলে ওদের চলাফেরা, খেলা করতে অসুবিধা হয়। ঘর বেশি ছড়ানো-ছিটানো থাকলে বাচ্চারা পড়াশোনাতেও মনোযোগ হতে পারেনা। হয়তো বাচ্চা বড় হয়ে গিয়েছে, অথচ ছোটবেলার চেয়ার-টেবিল এখনও ঘরে রয়ে গিয়েছে। এগুলো সরিয়ে ফেলুন। শিশুর ঘরে রাখার জন্য ফোল্ডেবল ফার্নিচার কিনুন। যাতে ঘর গোছানো লাগে এবং ঘরের জায়গাটাও বাড়ে।
গ্যাজেট:
আইপ্যাড, আইপড বা ভিডিও গেমস আজকাল খেলনার মতোই গুরুত্বপূর্ণ বাচ্চাদের কাছে। বেশির ভাগ সময়ই বাচ্চারা তার, চার্জার, অ্যাডপটর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। যা বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। তাই আলাদা টেক ড্রয়ার রাখুন। সেখানেই সব গ্যাজেট, চার্জার রাখতে শেখান শিশুকে। এতে ঘর পরিষ্কারও থাকবে, বাচ্চার জন্যও নিরাপদ হবে।