পথশিশু’ শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই খুব পরিচিত তাই না! পথশিশু শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে রাস্তার ধারে অবহেলা-অনাদরে বেড়ে ওঠা কিছু ছিন্নমূল শিশু। যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৩-১৫ বছর। এরা অনেকে টোকাই নামে পরিচিত। অন্ধকার ভবিষ্যত্ নিয়ে যাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।শিশুরা কি তাদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে?বিশেষ করে পথশিশু। পথশিশুদের ৮০ ভাগেরই জন্ম ফুটপাতে। তবে এদের বিরাট একটা অংশ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হতাশাগ্রস্ত। যার ফলে প্রথম থেকেই এরা আশ্রয় খুঁজে নেয় রাস্তার পাশে। রাস্তার পাশে অবৈধ স্থানে অবস্থান করার কারণে পথচারীদের কাছে অত্যাচারিত হতে হয়। কখনো কখনো পুলিশের হাতে পিটুনিও খেতে হয়। বেশিরভাগ পথশিশুই রেলস্টেশনে অবস্থান করে। এদের মধ্য থেকে কেউ ফুল বিক্রি করে, কেউ বা শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত। কল-কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকে শুধুমাত্র পেটের দায়ে।
আমরা ছোটবেলা থেকেই একটা কথা শুনে এসেছি, “আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত্”। আচ্ছা দেশের এত বড় একটা জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কি দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ সম্ভব? বই-পুস্তকে তো পড়ে এসেছি একটি শিশুর মৌলিক অধিকার পাঁচটি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও কি প্রত্যেকটা শিশু তার ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে? যদি পেয়েও থাকে তাহলে পথশিশুদের ক্ষেত্রে তার অন্যথা ঘটছে কেন? যে বয়সে তাদের কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মেতে থাকার কথা সে বয়সে তাদেরকে জীবনযুদ্ধে নামতে হচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিতে হচ্ছে। আর না হলে হাতে ভারী যন্ত্রপাতি তুলে নিতে হচ্ছে।
পথশিশুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে মতদ্বৈততা দেখা যায়। ২০০৪ সালে বিআইডিএস জরিপ বলছে, ২০২৪ সালে গিয়ে পথশিশুর সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ লাখ। বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ বলে অনেকে মনে করছেন। ২০১৫ সালের শেষদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট গ্রোগ্রামের (সিপ) ‘পথশিশুদের অমানবিক জীবন ও বিভিন্ন সমস্যা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ ভাগ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। অসুস্থ হলে তাদের প্রায় ৫৪ ভাগের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। পথশিশুদের প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না। আর ৩৫ ভাগ শিশু খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে পথশিশুর সংখ্যা। পথশিশুদের প্রায় ৪৪ ভাগ ধূমপান করে এবং রাতে ঘুমানোর জন্য ৪১ ভাগ শিশুর কোনো বিছানা নেই। মাদকাসক্তের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ৮৫ ভাগ পথশিশু।
আপনি আমি ভাগ্যের জোরে কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। তাই মাথার উপর ছাদটা পেয়েছি, দু’বেলা পেটভরে খেতে পারছি, ঠিক বয়সে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলেও যেতে পেরেছি। একটু ভেবে দেখেন তো, আজকে যদি ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমাদের জন্মটাও ঐ পরিবেশে হতো তাহলে? এ বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য কি আমাদের কিছুই করার নেই? আমরা দেশের ভবিষ্যত্। আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে এদের সুস্থ, সুন্দর, উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ নিশ্চিত করবার জন্য। তার জন্য আমরা যারা বর্তমান প্রজন্মের তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমত এগিয়ে আসতে হবে এই পথশিশুদের জন্য। আমরা সবাই যদি নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করি তাহলে একসময় এদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।
লেখক : ফাহিমা রিপা,শিক্ষার্থী, ফজলুল হক মহিলা কলেজ, ঢাকা
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক।