ভূত নিয়ে স্মৃতি নেই এমন মানুষ মেলা ভার।ছোটবেলায়তো ভূতের ভয়ে সবাই তটস্থ থাকতো।বিশেষ করে অন্ধকার দেখলেই মনে হতো চারদিকে ভূতেরা সব কিলবিল করছে। আর বড়রা এমন ভাব করতো যে কিছুতে কিছু হলেই ভূত এসে ঘাড় মটকে দেবে।কিন্তু এখন এই বিজ্ঞানের যুগে আধুনিক বাচ্চারা ভূত বিশ্বাস করে?ভয় পায়? আমরা ভূত নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করলাম।আমার অনেক বন্ধু আছে যারা খুব বই পড়ে,অভিনয় করে,মডেলিং করে।একদিন সবাইকে দাওয়াত দিলাম মেহেলিকাদের বাসায়।কথা মত সবাই এসে হাজির।
ভূত নিয়ে আড্ডা হবে শুনে সবার সে কি আগ্রহ। পারলে বোতলে করে একটা ভূত ধরে রাখবে।ভূত নিয়ে কথা উঠতেই ছোট্ট মেহেলিকা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো ভাইয়া তুমি আবার ভূতের কি জানো।ভূত সম্পর্কে জানতে হলে আমার কথা শোনো।আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আম্মু রোজ ভূতের ভয় দেখাতো।কিন্তু আমার কখনোই ভূতকে ভয় লাগতো না।আমি খেতে না চাইলেই আম্মু বলতো ভূত এসে ধরে নিয়ে যাবে,আমি পড়তে না চাইলেও আম্মু বলতো ভূত এসে ঘাড় মটকে দেবে।আম্মুর কথা শুনে আমি একটুও ভয় পেতাম না।কিন্তু আমার ভাইয়া খুব ভয় পেতো।আম্মুর কথা শুনে সে ভয়ে পড়তে বসতো,সময় মত খাওয়াদাওয়া করতো।বছর শেষে দেখতাম ভাইয়া খুব ভালো রেজাল্ট করেছে,ওর স্বাস্থ্যও বেশ ভালো।তখন মনে হতো ভূত আসলে বেশ ভালোই।
তার পর ধরো বইমেলায় গেলে সব থেকে বেশি ভূতের বই নিয়ে আগ্রহ থাকে। ভূতের সিনেমা দেখি।আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইলাম তোমরা কেউ সেরা সেরা কিছু ভূতের সিনেমার নাম বলতে পারবে? অতিথী ইশরাত কি যেন ভাবলো তার পর বললো অনেক আগে থেকেই ভূতের সিনেমা তৈরি হচ্ছে।সেই ১৯৫০ সালে কঙ্কাল নামে একটি সিনেমা তৈরি হয়েছিল।এর বাইরে সেরা সেরা ভূতের সিনেমার মধ্যে রয়েছে হানাবাড়ি,যেখানে ভূতের ভয়,সব ভূতুড়ে,গল্প হলেও সত্য,ভুতনাথ,ভুত আংকেল,ছায়াময় আরও কত সিনেমা যে দেখেছি নামও মনে নেই।মেহেলিকা সহ উপস্থিত প্রায় সবাই অভিনয়ও করে আবার মডেলিংও করে।জানতে চাইলাম তোমরাতো অনেক ভূতের সিনেমা দেখেছ তা নিজে কখনো ভূতের সিনেমায় বা নাটকে অভিনয় করেছ?একথা বলতে না বলতেই ঘর অন্ধকার হয়ে গেলো।ঘুটঘুটে অন্ধকার,কোথাও কোন আলো নেই।আমারই ভয় করছিলো।
আমি ফিসফিস করে বললাম মেহেলিকা,শান,দৃতি,তাইফ,মুসকান,ফারিশ,নীলিমা,আয়াজ,অরিত্রা তোমরা কেউ ভয় পেয়ো না,আমি তোমাদের সাথেই আছি।আমার কথা শুনেও কেউ কিছু বললো না।আমি বললাম চিন্তা করো না কারেন্ট চলে আসবে এখনি। দাড়াও দেখি একটা মোমবাতি পাই কি না।এই যখন বলছি তখন ফ্যাশফ্যাশে গলায় কে যেন শব্দ করে উঠলো।মেহেলিকা আমার সামনেই বসা ছিলো।হাত বাড়িয়ে ওকে ছুঁতে চাইলাম দেখি ও নেই।আসেপাশে শান,তাইফ,অতিথী,দৃতি কেউ নেই!!সব ভোজবাজির মত হাওয়া হয়ে গেছে!!আমারই ভয় করতে লাগলো।পকেট থেকে মোবাইল বের করে যেই না লাইট জ্বালিয়েছি অমনি ভয়ে সারা শরীর হিম হয়ে গেলো। আসেপাশে কেউ নেই শুধু আমার সামনে বসে আছে বিটকেলে চেহারার একটা ভূত!!তার শরীর থেকে ধোয়া বের হচ্ছে! ভূত না বলে অবশ্য বলতে হয় বাচ্চাভূত।কিন্তু ভূত তো আসলে ভূতই। বাচ্চা হলেও ভূত আবার বড় হলেও ভূত। বাচ্চা ভূতেরাও যে কারো ঘাড় মটকে দিতে পারে।বাচ্চা ভূতটার মূখে রক্ত লেগে আছে! সেটা দেখে আমার প্রাণ চলে যায় যায় অবস্থা।কিশোর বাংলার ভূত সংখ্যার জন্য এসেছিলাম মেহেলিকা এবং ওর অভিনেতা বন্ধুদের সাথে ভূত নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানতে। এখনতো দেখছি প্রাণ নিয়ে আর ফিরে যাওয়া হবে না।বাচ্চা ভূতের মূখে রক্ত দেখে আরও ভয় পেয়ে গেলাম।তাহলেকি শান, তাইফ, আয়াজ, মেহেলিকা সবাইকে খেয়ে ফেলেছে ভূতটা!! এখনকি আমাকেও খাবে?
আমি ভয়ে পড়ি মরি করে দৌড় দিবো বলে যেই না উঠে দাড়িয়েছি অমনি কারেন্ট চলে আসলো আর খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।তাকিয়ে দেখি এতোক্ষণ অন্ধকারে যাকে বাচ্চা ভূত মনে করেছি সে আসলে মেহেলিকা।ও ওর বাবার উপর খানিকটা কপট অভিমান দেখিয়ে বললো বাবা দিলেতো সব মাটি করে।এই ভাইয়াকে ভূতের ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দিচ্ছিলাম আর তখন তুমি কিছু না বুঝে লাইট জ্বালিয়ে দিলে!মেহেলিকার কথা শুনে ওর বাবা আবার লাইট বন্ধ করতে চাইলে ও বললো এখনতো সব জানাজানি হয়ে গেছে এখন কি আর কেউ ভয় পাবে।এর পর একে একে সবাই রুমে ঢুকলো।বুঝলাম ওরা ছোটরা সবাই মিলে আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল।ওর মূখে যে রক্তের মত দেখাচ্ছিল ওটা আসলে টমেটো সস ছিলো আর ধোয়া উড়ছিলো ওটা ছিলো মশার কয়েল।
এবার মেহেলিকা বললো তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি ভূতের সিনেমা বা নাটকে অভিনয় করেছি কি না এটা হলো তার একটা ডেমো বা রিহার্সাল।আমি বললাম সত্যিই আমি ভয় পেয়ে গেছি।শান বললো আসলে আমরাতো ছোট বেলা থেকেই নানা রকম ভূতের সিনেমা দেখেছি,গল্পও পড়েছি তো সেসব ভূতের গল্পে ভয় কম থাকে। আমরা চাই অভিনয় দিয়ে ভূতুড়ে পরিবেশটাকে একেবারে জীবন্ত করে তুলতে।আমরা নিয়মিত প্র্যাকটিসও করছি।বুঝলাম ছোট হলেও এরা অভিনয়কে ভালোবাসে।নিশ্চই ভূতের নাটকে ওরা খুব ভালো করবে।সেই নাটক দেখার সময় আমি রুমের লাইট জ্বালিয়ে রাখবো নয়তো ভয়ে আধমরা হয়ে যেতে হবে।তোমরা যারা বেশি সাহসী তারা অবশ্য লাইট নিভিয়েই দেখো।বই মেলা থেকে ওদের কেউ কেউ ডিজিটাল ভূত নামে একটা ভূতের গল্পের বই কিনেছিল আহমেদ রিয়াজ নামে এক লেখকের। সেই ভূতের গল্পের ভূতটা সত্যিই ডিজিটাল।ভূতের সাজে মেহেলিকাকে দারুন লাগছিলো।দেখতে মিষ্টি মেয়েটা ভূত সাজায় সেই ছোট্ট ভূতটাকে মিষ্টি ভূত মনে হচ্ছিল। কথাটা তুলতেই উপস্থিত সবাই একসাথে বলে উঠলো মিষ্টি একটা পোষা ভূত। এই বলে সবাই মেহেলিকার গলা জড়িয়ে ধরলো।মেহেলিকা মহম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে।মেহেলিকার বাবা মনোয়ার হোসেন আর মা শিলা খানম।ও একটা কথা বলতে ভুলে গেছি নভেম্বরের ৮ তারিখে মেহেলিকা থুক্কু মিষ্টি একটা পোষা ভূতের জন্মদিন তোমরা আসতে ভুলো না কিন্তু।বুঝতেই পারছো মিষ্টি ভূতের জন্মদিনে অন্নেক মজা হবে।