তোমরাও নিশ্চই আমার মত সিনেমা দেখতে ভালবাসো।দীপু নাম্বার টু,আমার বন্ধু রাশেদ,হিরক রাজার দেশে, চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরী, পিপ্পি লংস্টকিংস, ব্লাংক চেক, আখি ও তার বন্ধুরা সিনেমাগুলি নিশ্চই অনেক আগেই দেখেছ।আজ আমরা বলবো আরো একটি দারুন সিনেমার কথা। সিনেমাটির নাম ম্যাক্স কিবল: দ্য বিগ মুভ।আশা করি এর মধ্যেই নাম দেখে বুঝে গিয়েছো যে ম্যাক্স আসলে একটা ছেলের নাম যাকে ঘিরেই পুরো সিনেমাটি। তো চলো জেনে নেই এই সিনেমার কিছু কথা।
বাবা মা আর ম্যাক্স এই তিনজনের ছোট্ট সংসার। ম্যাক্স এর পুরো নাম ম্যাক্স কিবল।বয়স ১৩ বছর। বাবা একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করেন। দুষ্টুমীতে ম্যাক্স যে কাউকে ছাড়িয়ে যাবে। রোজ সকালে স্কুলের পাশাপাশি পত্রিকা বিলির কাজ করে। অসম্ভব বুদ্ধিমান এবং চঞ্চল হওয়ায় পত্রিকা বিলি করতে ওর তেমন বেগ পেতে হয়না। ওর সারাক্ষনের সঙ্গী দারুন একটা সাইকেল।বেশ ভালই চলছিল। হঠাৎ একদিন বাবা এসে বললেন আমার বদলী অর্ডার এসেছে। আগামী কাল শিকাগোতে চলে যেতে হবে। এটা শুনে ম্যাক্সতো পাগল প্রায়। ওর একটাই কথা এটা হতে পারেনা বাবা। আমার স্কুল,আমার বন্ধু এমনকি আমার পুরো জীবনটাইতো এখানে পড়ে আছে। আমি এগুলো ফেলে রেখে যাই কি করে। বাবা ছেলের কষ্টটা বুঝতে পারেন তার পর ওকে বলেন কি করবো বলো অফিসের কথাতো মেনে চলতেই হবে। শেষে ম্যাক্স মন খারাপ করে স্কুলে গেল।
স্কুলের ঘটনাঃ
বাসা থেকে মনখারাপ করে স্কুলে গিয়েই ম্যাক্সকিবল পড়লো বিশাল ঝামেলায়। ওর স্কুলে ভয়ংকর একটা একরোখা ছেলেছিল। যাকে তাকে যখন ইচ্ছে নাস্তানাবুদ করে ছাড়তো। যেদিন যাকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছে করতো সেদিন নিজের গেঞ্জিতে তার নাম লিখে আনতো। স্কুলের সব ছেলে মেয়েরা ওর আসা দেখলেই ভয়ে চুপসে যেত। আর পড়বিতো পড় মালির ঘাড়ে। ঠিক ওইদিনই সেই ভয়ংকর ছেলেটা গেঞ্জিতে ম্যাক্স কিবলের নাম লিখে আনলো। মানে বাসা থেকে মন খারাপ করে স্কুলে এসেই জমের হাতে পড়া। আচ্ছামত পিটুনি দিল এবং সেই সাথে ওকে ফেলে দিল একটা ডাষ্টবিনে। ও যখন ডাষ্টবিন থেকে হাচড়েপাচড়ে বেরিয়ে এসেছে তখন ওর সারা শরীরে ময়লা পচা দুর্গন্ধ আর খাবারের অবশিষ্টাংশ লেগে আছে। নুড়লস ঝুলে আছে,বার্গারের অংশ লেগে আছে।
ওদিকে আবার ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। কি আর করা কোন কিছু না ভেবেই ওই অবস্থায় ক্লাসে ঢুকে পড়লো। মিস সব ক্লাসের সবাই ওর গায়ের দুর্গন্ধ পেয়ে ওর দিকে ফিরে তাকাল। মিস ধমক দিয়ে ওকে বের করে দিতে চাইলেন আর ম্যাক্স কিবল মিসের আরো কাছে এসে দাড়াল।মিস শাস্তি স্বরুপ ওকে একটা পাচশো ওয়ার্ডের প্যারাগ্রাফ লিখে দিতে বললেন। ম্যাক্স কিবল হঠাৎ ঘাবড়ে গিয়ে বললো না মিস এটা অন্যায়।মিস বললেন কোনকথা নয় কালকেই এক হাজার ওয়ার্ডের একটা এসে লিখে দিবে। হঠাৎ বুদ্ধি খেলে গেল ম্যাক্স কিবলের। আরে কালকেইতো বাবা মার সাথে চিরদিনের জন্য শিকাগোতে চলে যেতে হবে। তাই কোন চিন্তা নেই মিসের প্যারাগ্রাফও দিতে হবেনা। ও লাফ দিয়ে টেবিলের ওপর উঠে দাড়াল। মিস সহ ক্লাসের সবাইতো থ।পাশে আপেল রাখা ছিল ও একটা আপেল নিয়ে এক কামড় দিয়ে দুরে ছুড়ে মারলো। মিস রেগে উঠে বললেন বেয়াদব ছেলে ওটাকে দুই হাজার ওয়ার্ডের করে দিলাম। ম্যাক্স কিবলতো জানেই যে ওর আসলে কিছুই করতে হবেনা কারণ বাবার সাথে ও কালই চলে যাচ্ছে। ও বললো দুই হাজার ওয়ার্ডতো ছোট্ট বাচ্চাদের কাজ আমি নিজেই নিজের জন্য ওটা পাচ হাজার বানিয়ে নিলাম। বলেই টেবিলে রাখা গ্লোবটা লাথি মেরে দূরে ফেলে দিল। মিস ভীষন রেগে ধমক দিয়ে বললেন কিবল নামো টেবিল থেকে। ম্যাক্স কিবল কি আর কথা শোনে! সে মিসের কোন কথা না শুনে এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে লাফিয়ে পার হতে লাগলো। ক্লাসের সব বাচ্চারা হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। এর মাঝেই ঘন্টা পড়ে গেল এবং মিস বেরিয়ে গেলেন। ওরাও বেরিয়ে আসলো।সেদিন বিভিন্ন মজায় দিন কাটলো।
ম্যাক্সকিবলরে চুড়ান্ত বিপদঃ
স্কুলে যা করে এসেছে তার কোন বর্ননা হয়না। মনে যা এসেছে তাই করেছে। এমনকি সবচেয়ে সুন্দরী মিসের সাথে যখন লবিতে দেখা হলো তখন মিসের হাতে ও চুমু খেয়েছে। মিস সহ অন্য সবাই ভেবেছে ম্যাক্স কিবল নিশ্চই পাগল হয়ে গেছে।রাতে ও পড়তে বসবে এমন সময় বাবা ফিরে আসলেন।ম্যাক্স কিবল নামের তের বছরের ছেলেটাকি আর জানতো যে তার জীবনে চরম দুভোর্গ নেমে আসছে। বাবা ওর কাছে এসে কাধে হাত রেখে বললেন ম্যাক্স তোমার জন্য সুখবর আছে আমি অফিসে বলে ম্যানেজ করেছি আর আমার ট্রান্সফার ক্যান্সেল করেছি।তোমার আর বন্ধুবান্ধব,স্কুল এমনকি এই বাসা ছেড়ে কোথাও যেতে হবেনা। এ কথা শুনে ম্যাক্স কিবলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সকালে স্কুলে যা করে এসেছে তাতে ওর ফাসি হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। মিসের পাচ হাজার ওয়ার্ডের এসে সহ কত ঝামেলা যে সামলাতে হবে তার হিসাব নেই। আর ওদিকে পাগলা ও ক্ষ্যাপাটে আইচক্রিম ওয়ালাতো আছেই।
সমাপ্তিঃ
ম্যাক্স কিবল অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে সব সমস্যাই সামলে নিল। যে ছেলেটির ভয়ে স্কুলের সবাই তটস্থ থাকতো তার দুর্বলতা খুজে বের করে তাকে জনমের মত শাস্তি দিল। যে আইসক্রিমওয়ালা রোজ ওকে জ্বালাতন করতো তাকেও একহাত দেখেনি। আর ছিল এক উঠতি ব্যাংকার। মানে স্কুলেরই ছাত্র তবে নিজে একটা ব্যাংক খুলেছিল। জোর করে ছোট ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা জমা নিত।হয়তো তুমি অনেক বলে কয়ে আম্মুর কাছ থেকে দশটাকা নিয়ে এসেছ আইসক্রিম খাবে বলে কিন্তু ওই ব্যাংকারের হাতে পড়লে আর রক্ষা নেই। সে নিজেদের স্কুলেই স্কুল ব্যাংক খুলেছে । তোমার আইসক্রিম খাওয়ার টাকা সে জোর করে একাউন্টে জমা নেবে। ওই ব্যাংকার ছেলেটাকেও আচ্ছা মত শায়েস্তা করেছে।
গোটা সিনেমায় প্রচুর রসবোধ আছে প্রচুর এডভেঞ্চার আছে আর সিনেমাটি দেখতে বসলে নিজেকেই মনে হবে ম্যাক্সকিবল। আর ওরকম একজন ম্যাক্স কিবল থাকলে স্কুল কিন্তু মোটেও পানসে লাগেনা বরং পুরো স্কুলটাই থাকে আনন্দে ভরপুর।আশা করি সিনেমাটি ছোট বড় সবার অসাধারণ লাগবে।
সিনেমাটি কেমন লাগলো লিখে জানিও
ইমেইলঃ [email protected]
লাইক দিয়ে রাখতে পার আমাদের ফেসবুক পেজেও
মুভি রিভিউ : ম্যাক্সকিবলঃ দ্যা বিগ মুভ
পরিচালকঃ টিম হিল
সিনেমা নির্মানের সালঃ ২০০১
দৈর্ঘ্যঃ ১ ঘন্টা ২৬ মিনিট।
প্রধান চরিত্রঃ
ম্যাক্সকিবল চরিত্রে অ্যালেক্স ডি লিনজ
সিনেমাটি দেখুন এখানে
https://www.youtube.com/watch?v=kCy2YQrLYfQ