সচেতনতা পারে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে

0
801

লেখক: অভিজিৎ সুশীল সানি

বাংলাদেশ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে অসংখ্য নদনদী জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নদীর সৌন্দর্য দেখে অনেকে মুগ্ধ হয়। কখনো কখনো সেই নদী কারো কাছে হয়ে উঠে জীবীকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। আবার অন্য কারো কাছে নদী মানে আতংকের এক নাম। আমাদের বাসার পাশে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। প্রতিনিয়ত শুনি বেড়াতে এসে সাগরে স্নান করতে নেমে শিশুদের মৃত্যুর খবর। বেশ অনেক দিন আগের কথা, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার এক পিসতুতো ভাই খেলতে গিয়ে নদীর পানিতে ডুবে মারা যান। আমার পিসি ওনার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল এই মৃত্যুর পেছনের একমাত্র কারণ সাঁতার না জানা আর অসচেতনতা। দেশে প্রতিদিন এভাবে অসংখ্য মায়ের বুক খালি হচ্ছে সাঁতার না জানার কারণে। নদীর পাশাপাশি পুকুর, ডোবা এমনকি বালতির পানিতেও প্রাণ হারাচ্ছে অনেক শিশু। পরিবারের অসচেতনতাও এসব দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন বলছে বাংলাদেশে প্রতিদিন মর্মান্তিকভাবে ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। 

এর পাশাপাশি প্রতি বছর ১৪ হাজার শিশু মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ইউনিসেফ অসচেতনতা আর সাঁতার না জানাকে দায়ী করছেন।   আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর তিন লাখ ঊনষাট হাজার চারশো জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যান। এদের বিশ শতাংশের বয়স আবার পাঁচ বছরের কম।

পাঁচ বছরের কম বয়সী  শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে পঁচিশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করার জন্য পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে হলে এ মৃত্যকে এসডিজির অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেই সাথে বিভিন্ন প্রতিরোধ কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের সচেতনতা, শিশুদের সাঁতার শেখানো পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার রোধ করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ইউনিসেফের এক ভিডিওতে আমাদের ক্রিকেট আইকন সাকিব আল হাসানকে দেখা যায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে সচেতনতা মূলক বার্তা দিচ্ছেন। যা নিসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে একটি সুন্দর শিশুবান্ধব আগামী তৈরি করতে হলে পরিবারের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে যার ফলে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যাবে। 

লেখক,

অভিজিৎ সুশীল সানি

শিক্ষার্থী (বিজ্ঞান বিভাগ, একাদশ শ্রেণী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ)

জেলা: কক্সবাজার 

বয়স: ১৬