19.3 C
New York
Monday, October 14, 2024
Homeছোট থেকেই যারা বিখ্যাতপ্রতিভাবান শিশু হওয়ার অভিশাপ

প্রতিভাবান শিশু হওয়ার অভিশাপ

প্রতিভাবান শিশু হওয়ার অভিশাপ। টমের মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। যখন সে ভাবত বড় হয়ে সে একজন তাত্ত্বিক জ্যোতি:পদার্থবিজ্ঞানী হবে। তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ গহ্বর। এ বিষয়ে সে অনেকগুলো থিয়োরি আবিষ্কার করেছিল। একটা থিয়োরিতে সে উল্লেখ করে ব্লাকহোল আর হোয়াইটহোলের সম্পর্কের কথা। মহাকাশের এই বস্তুগুলো বিপুল পরিমাণ শক্তি ধারণ ও নিঃসরণ করতে সক্ষম । তার ধারণা ছিল ব্লাকহোল আর হোয়াইটহোল অবশ্যই স্থান-কাল সাপেক্ষে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। “আমি বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে দেখলাম, হ্যাঁ, এটা সম্ভব! তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এগুলো নিয়ে আমি কাজ করব।” যদিও থিয়োরিগুলো প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় গাণিতিক সূত্রগুলো তার জানা ছিল না। কিন্তু শেখার সময় তো ছিল। কারণ তার বয়স তখন মাত্র পাঁচ।

এখন টমের বয়স এগারো। অবসরে গণিতের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতে তার ভালো লাগে। গত বছর বড়দিনের উপহার হিসেবে সে চেয়েছিল জিসিএসই পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি (১২৫ পাউন্ড/২৩০ মার্কিন ডলার)। অথচ যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ষোল বছল বয়সে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে! এখন টম এ-লেভেলের গাণিতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।

টম তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শুরুর দিকে তার মা ক্রিসি ভেবেছিলো অংকের প্রতি টমের এই আগ্রহ খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ধীরেধীরে তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর ধারণা ভুল। তিনি যখন টমকে লন্ডনের ‘রয়েল অবজারভেটরিতে’ নিয়ে যেতেন কৃষ্ণবস্তু বা ডার্ক ম্যাটার নিয়ে আলোচনা শোনার জন্য, তিনি সেখানে টমের বয়সী আর কাউকে দেখতেন না। স্কুলের শিক্ষকরা তাঁকে জানালেন,  সহপাঠীদের সাথে খেলতে যাওয়ার চেয়ে ক্লাসে বসে অঙ্ক করাতেই তার আগ্রহ বেশি।

একদিন তার বাবা-মা তাকে নিয়ে গেল মিলটন কেইনস্-এ ‘পটেনশিয়াল প্লাস’ নামক একটি সংগঠনের কাছে তার বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য। সংগঠনটি পূর্বে ‘ন্যাশনাল  সোসিয়েশন ফর গিফটেড চিলড্রেন’ নামে পরিচিত  ছিল। ক্রিসি বলেন, “ আমরা তাকে বলেছিলাম আজ সারাদিন তাকে ধাঁধাঁর সমাধান করতে হবে।” টমের মতে, “এটা যেন আমার স্বপ্নের জগৎ। সারাদিন পরীক্ষা আর সমস্যার সমাধান!” টম খুব আগ্রহ নিয়ে পরীক্ষা দিলো। যখন তার বাবা-মা’কে ফলাফল দেখানো হল, তাঁরা দেখলেন টমের মত প্রতিভা ব্রিটেনের ০.১ শতাংশ মানুষের আছে।

তীব্র আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছেলেমেয়েরা প্রায়ই অবহেলিত হয়। অথচ পরিবেশ ও পরিচর্যা  একটি শিশুর মানসিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিবারে খাবার টেবিলে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়,  সেখানে শিশুটি বিশ্ব  পরিচালনার ব্যাপারে দৃঢ় অভিমত পোষণ করবেই। কোনো বাচ্চা যখন ভাবে কেক কেন কোণাকৃতিতে কাটা হয়, গণিতের প্রতি তার আগ্রহ খুব স্পষ্টই বোঝা যায়। অনুশীলনই দক্ষতার চাবিকাঠি। পিয়ানো বাজানোর প্রতিভা হয়ত অনেকেরই আছে। কিন্তু সেই বাচ্চাটি একদিন ‘কার্নেজি হল’-এ পিয়ানো বাজাতে পারবে,  যে দিনে পাঁচ ঘন্টা পিয়ানো বাজায়; যে সপ্তাহে বিশ মিনিট বাজায় সে নয়।

কিন্তু টমের মত শিশুরা অন্য রকম। সে বড় হয়েছে লন্ডনের দক্ষিণ অংশে একটি স্বল্পোন্নত এলাকায়। তার স্কুলের শতকরা ৯৭ ভাগ বাচ্চা তখনও ঠিক করে কথা বলাও শেখেনি। টম যখন তার আগ্রহের বিষয়গুলো যেমন গণিত, ল্যাটিন বা জ্যোতি:পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলত, তার বাবা-মা তার বেশিরভাগ কথাই বুঝত না। তার মেধা গতানুগতিক আর সবার মত ছিল না।

নিষ্প্রভ চিন্তা, নিদ্রাহীনতা

আইকিউ টেস্টগুলোতে মূল বিষয়টি হলো অন্যের তুলনায় তুমি কতটা ভাল বা খারাপ। তাত্ত্বিকভাবে, অধিকাংশ মানুষের স্কোর হয় মাঝামাঝি। গড় হিসেবে একদল মানুষের স্কোর হয়  ১০০। দুই তৃতীয়াংশ মানুষের আইকিউ  ৮৫ – ১১৫ এর মধ্যে। এই সীমার বাইরে খুব কম মানুষই থাকে। প্রতি একশো জনে দুই জন মানুষের আইকিউ ৭০ এর নিচে। আর দুই জনের ১৩০ এর উপরে। হাজারে একজন মানুষের স্কোর গড় সীমা অর্থাৎ ১০০ এর চেয়ে ৪৫ কম বা বেশি হয়। কিন্তু খুব কম মানুষই আইকিউ টেস্টে অংশ নেয়। ফলে মেধাবীদের খুঁজে বের করা খুব একটা সহজ নয়, অধিকাংশ স্কুলে তো পাওয়াই যায় না।

সমাজ বুদ্ধিমানদের প্রশংসা করে। মানুষ প্রতিভাবানদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করে এবং ধারণা করা হয় এদের জীবনে উন্নতি ও সফলতা নিশ্চিত। কিন্তু প্রতিভার একটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অন্য অনেকের মত টমের শৈশবও খুব একটা আনন্দের ছিল না। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে দেয়ালে মাথা ঠুকে সে জীবনের ইতি টানতে চেয়েছিলো! সে তার মাকে বলেছিলো, “জীবন একটা বিশাল গোলকধাঁধাঁ। আমি যেন সেই গোলকধাঁধাঁয় হারিয়ে যাচ্ছি।” তার জিপির মতে, সে তীব্র বিষণ্নতায় ভুগছিলো এবং তাঁর ধারণা এর মূল কারণ টমের অসাধারণ প্রতিভা। আর এটা তার হতাশা বা একা থাকার প্রবণআরও কারণ।

টম সহজে অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে পারে না। ফলে তার বন্ধুর সংখ্যাও খুব কম। স্কুলে অনেক সময়ই তাকে ক্লাসের বাইরে বা অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়। “তার অন্যরকম আচরণের জন্য অনেকেই তাকে ক্লাসে নিতে চাইতো না”, ক্রিসি বলেন। নেতিবাচক চিন্তা থেকে মনকে দূরে রাখার জন্য টম দিনরাত অঙ্ক তার হিসাব-নিকাশের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। তাকে দীর্ঘদিন নিদ্রাহীনতায়ও ভুগতে হয়েছে। তার এই সমস্যাগুলো তার পুরো পরিবারকে প্রভাবিত করে। ক্রিসির মতে, ” আমি ভাবতে পারি না বাবা-মায়েরা কিভাবে চাইতে পারেন তাদের সন্তান অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী হোক। আমি তো এর সাথে মানিয়ে নিতে পারছি না। আমি শুধু এর থেকে নিষ্কৃতি চাই।”

টম ও তার পরিবারের এই সমস্যা আরও অনেকের। দেশের সব চেয়ে প্রতিভাবান শিশুদের উপযুক্ত পরিচর্যা দেয়ার জন্য ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন – মেনসা। এই সংগঠনের সদস্য প্রায় বিশ হাজার। আমি এই সংগঠনের মাধ্যমে কিছু ‘গিফটেড’ শিশু ও তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। আমার ইনবক্সে আসা অধিকাংশ ইমেইলে দেখলাম অভিভাবকেরা বিরক্ত। অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের এই বিশেষ দিকটির কথা অন্যদের জানাতে চান না, পাছে তাদের হিংসার শিকার হতে হয়। একটু সমবেদনার আভাস পেয়ে তাঁরা যখন তাঁদের অসুবিধার কথা বিশদভাবে বলতেন, শুনে হতাশ বোধ করতাম। তাঁরা সকলেই চিহ্নিত হয়ে পড়ার ভয় করেন। এমনকি মিথ্যা পরিচয় নেয়ার কথাও চিন্তা করেন!

কোনো কোনো দেশ এমন অসাধারণ শিশুদেরকে অন্যদের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করে থাকে। এ ধরনের শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষার সুযোগও দিয়ে থাকে। তবে প্রতিভা প্রশংসিত, পুরস্কৃত এবং চর্চিত হলেও অনেক সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয় এই প্রতিভাকে অবাঞ্ছিত করে তোলে। অনেক পরিবারের সাথে আমি কথা বলে বুঝেছি, বিশেষ ধরনের প্রতিভা যতটা না আশীর্বাদ, তার চেয়ে বেশি অভিশাপ স্বরূপ।

প্রতিভা তৈরি করা যায় না

বিশেষজ্ঞরা সেইসব শিশুদের ‘গিফটেড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, যারা তিন ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। প্রথমত, এসব শিশুরা একটি নির্দিষ্ট বিষয়, যেমন- কোনো ভাষা, গণিত বা দাবা খেলা ইত্যাদি – নির্দিষ্ট বয়সের আগেই রপ্ত করে ফেলে এবং তাতে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে। তারা খুব সহজেই এই কাজগুলো করে থাকে এবং সমবয়সীদের চেয়ে দ্রুত দক্ষ হয়ে ওঠে।

দ্বিতীয়ত, তারা এই দক্ষতা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অর্জন করে, অভিভাবকদের জোরাজুরি ছাড়াই। পারিপার্শ্বিকতা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা একটি শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে। তিন বছর বয়সী একটা বাচ্চার সাথে তার বাবা-মা কতগুলো কথা বলেন, তার ওপরের নির্ভর করে ওই বাচ্চাটি নয় বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কতটা ভাল বা খারাপ করবে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্বল্প শিক্ষিত পরিবারের শিশুদের চেয়ে উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের শিশুরা প্রায় চার মিলিয়ন শব্দ বেশি শিখে থাকে। তাছাড়া উচ্চ আয়ের পরিবারের সন্তানরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অধিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে।

কিন্তু মেনসার একজন পরামর্শদাতা ও চিকিৎসক লিন কেনডল, যিনি নিজেও ছিলেন ‘গিফটেড চাইল্ড’, তাঁর মতে, একটা পাঁচ বছরের বাচ্চাকে নীটশের (জার্মান দার্শনিক) তত্ত্ব পড়িয়ে, কিংবা অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা পড়াশোনা করিয়ে কখনও ‘জিনিয়াস’ বানানো সম্ভব না। যেসব শিশুদের আইকিউ অনেক বেশি, তাদের মধ্যে অনেকেই খুব ছোট বয়সে অনন্য সাধারণ গুণ ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে। কেনডল বলেন, “এসব বাচ্চারা কথা বলতে শেখার আগেই বুঝতে শিখে যায় তার চারপাশে কি ঘটছে, মানুষজন কি বলছে ইত্যাদি। কিন্তু তারা তাতে সাড়া দিতে পারে না।” বেশিরভাগ বাচ্চা হাঁটতে শেখার পর খুব সহজে একটা চলন্ত গাড়ি বা নতুন খেলনা দেখলে তাতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু কেনডলের মতে ‘গিফটেড’ শিশুদের ক্ষেত্রে এই বয়সটা একেবারেই অন্যরকম।

অধিকাংশ মানুষ তাদের শৈশব পার করে ছোট খাটো বিষয়ে আনন্দ খুঁজে নিয়ে। জীবনের এই সময়টাতে মানুষ শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবে, কারণ কোন কাজের পরিণাম কি হতে পারে সে বিষয়ে তখন কোনো ধারণাই থাকে না। অন্যদিকে কেনডল ‘গিফটেড’ বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, “বিষয়টা এমন যে, কেউ যেন একজন আঠারো বছরের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে একটা নবজাতকের শরীরে স্থাপন করেছে।”

প্রতিভাবান শিশুদের তৃতীয় বৈশিষ্ট্যটি হলো, তাদের আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে তারা প্রায় বদ্ধসংস্কার হয়ে পড়ে। সেই বিষয়ে দক্ষ হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা কাজ করে। জেসির বয়স এখন পাঁচ। তার বাবা রিচার্ড বলেন, যখন জেসির বয়স এক বছর এবং সে মাত্র হামাগুড়ি দিতে শিখেছিলো, সে কোনো ভাবেই তার ডায়পার পরিবর্তন করতে চাইতো না। “আমরা লক্ষ্য করলাম, শুধু একটা উপায়ে তাকে শান্ত রাখা যেত। তা হলো, তাকে এমন কিছু দিয়ে ব্যস্ত রাখা যা খুলে ফেলা যায় এবং সেগুলো আবার জোড়া লাগানো যায়। আমাদের একটা হলুদ রঙের টর্চ ছিল। সে এর ব্যাটারিটা বের করে আবার সেটা লাগিয়ে দেখত টর্চটা কাজ করছে কি না। যদি সে দেখত ব্যাটারিটা ঠিকভাবে লাগানো হয়নি, তাহলে সে সেটা নিয়েই পড়ে থাকতো যতক্ষণ না ঠিকভাবে লাগাতে পারত।”

বিশ শতকের প্রথম দিকে আলফ্রেড বেনেট ও থিয়োডর সাইমন বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের জন্য আইকিউ টেস্টের প্রচলন শুরু করেন। এই পরীক্ষায় স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি, বিশ্লেষণমূলক চিন্তা ও গাণিতিক দক্ষতা মূল্যায়ন করা হতো। সেই পরীক্ষার ধরন সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তিত হলেও মূল বিষয়গুলো একই রয়ে গিয়েছে। মস্তিষ্কে কোনো বড় ধরনের আঘাত না পেলে একজন ব্যক্তির আইকিউ সারাজীবন প্রায় একই থাকে। ইন্টারনেটে বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের অনেক পরীক্ষা আছে। অনেকে তাদের স্কুলেই আইকিউ টেস্ট করতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময় এই পরীক্ষাগুলো হয় পরিকল্পিত, যেখানে বাচ্চাদের আগে থেকেই প্রস্তুত করা হয়। মেনসা সর্বাত্মক চেষ্টা করে তাদের পরীক্ষাগুলো ‘কালচার ফেয়ার’ হোক। অন্য কোথায় বলা যায়, মেনসা শিশুদের সহজাত প্রতিভা খুঁজে বের করতে চায়, প্রশিক্ষিত জ্ঞান নয়। কেনডল বলেন, “যারা প্রকৃত অর্থেই প্রতিভাবান, তারাই পারে চাকা বা আগুন আবিষ্কার করতে।” আবার তিনি এও বলেন, “আইকিউ পরিমাপ আর উচ্চতা পরিমাপ করা এক জিনিস নয়।” কোনো পরিমাপই সম্পূর্ণরূপে বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে না।

তীব্র কৌতুহল

বেশিরভাগ বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় গতানুগতিক কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় যাচাই করা হয়; যেমন – যৌক্তিক চিন্তা বা গাণিতিক দক্ষতা। এতেই বোঝা যায় প্রকৃত মেধা অন্বেষণে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা সংকীর্ণ। অনেক ধরণের গুণ, দক্ষতা বা বৈশিষ্ট্য এসব পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয় না; যেমন-  জানার তীব্র আগ্রহ কিংবা বুদ্ধিদীপ্তভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা।   গতানুগতিক এই পরীক্ষাগুলো ভবিষ্যতের ঔপন্যাসিক বা কবিদের চিহ্নিত করতে পারে না; কিংবা ঐসব শিশুদেরও খুঁজে বের করতে পারে না যাদের রয়েছে খেলাধূলা বা সঙ্গীতে বিশেষ দক্ষতা। আমরা এখনো কারোর সৃজনশীল, আবেগী, শিল্পীসুলভ জ্ঞান বা গুণ বিচার করার উপযুক্ত পদ্ধতি বের করতে পারিনি। আমরা শুধু গতানুগতিক ধারার ভিত্তিতেই ‘প্রতিভাবান’-দের  চিহ্নিত করি।

অনেকে আবার ‘প্রতিভা’ বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। “হাই পারফরম্যান্স লার্নিং” নামে একটা সংগঠন আছে যা ব্রিটেনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করে মেধাবী শিশুদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ডেবরাহ্ আয়রের মতে, ‘মেধা’-র সংজ্ঞা সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁর দৃষ্টিতে ‘সহজাত প্রতিভা’ বলে কিছু নেই।

আয়রের মতে, তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই তাকাও না কেন, দেখবে – বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের মেধাবী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এক্ষেত্রে হয় উপেক্ষিত। “আমেরিকায় ল্যাটিনো বা নিউজিল্যান্ড মাওরিদের প্রোগ্রামিং-এর জন্য নির্বাচন করা হয় না।” তিনি আরও বলেন, একজন মেধাবী এবং একজন সফল ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হল দৃঢ় প্রত্যয়। সমান মেধার দুইজন পদার্থবিজ্ঞানী, যাঁদের একজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কিন্তু অন্যজন নয়, তাঁদের মধ্যে পার্থক্য হল সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষায়।

‘সম্ভাব্য প্রতিভা’ হল কিছুটা মেধা এবং তার সাথে উপযুক্ত পারিপার্শ্বিকতা ও ব্যক্তির আগ্রহের সম্মিলিত রূপ।আয়রের দাবি, উচ্চশিক্ষিত পরিবারের কিছু বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের প্রতিভাবান বলে জাহির করতে চান। অথচ আমি যেসব অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও এরকম নয়। বরং তাদের অধিকাংশের কাছেই বিষয়টি উদ্বেগের, কখনো বা বেদনার।

এই অভিভাবকদের অনেকেই দুই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন: প্রথমত, কিভাবে তাদের বাচ্চাদের উপযুক্ত মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা যায়; দ্বিতীয়ত, সমস্যাটা অনেকের ক্ষেত্রে ধরা পড়ে না বলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেমন, এসব বাচ্চারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন, এমনকি সংহতিনাশকও হতে পারে। যে প্রতিভা মানুষ দূর থেকে দেখে প্রত্যাশা বা প্রশংসা করে, তা অনেক সময়ই ঐ প্রতিভার অধিকারীর কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে।

আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ

কখনো ওফেলিয়া গ্রেগরির সাথে দেখা হলে তুমি হয়তো ভাববে, সে নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত। তার বয়স এখন সতেরো; গাঢ় সবুজ চোখের লাবণ্যময়ী, সুন্দরী তরুণী। মা কেরি, বাবা টম এবং তিন ভাইকে নিয়ে তার সুখের পরিবার। বারো বছর বয়সে মেনসার আইকিউ টেস্টে সে ১৬৮ পয়েন্ট পায়। আঠারো বছরের নিচে অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটাই  সম্ভাব্য সর্বোচ্চ স্কোর; যা প্রায় স্টিফেন হকিং-এর সম পর্যায়ের, যুগান্তকারী সেই বিজ্ঞানী গত বছর মারা গিয়েছেন।

অথচ তার পরও, এই অসাধারণ প্রতিভা ওফেলিয়াকে সামান্যই সুবিধা দিয়েছে। তার কাছে ‘মেধাবী’ বলে চিহ্নিত হওয়াটা ‘ঝামেলা’ বলেই মনে হয়। এর জন্য তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়; এমনকি কয়েকবার তাকে স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেরি ওইসব বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে কি বলবেন যাঁরা প্রতিভাধর সন্তান চান? “আমি বলব, এটা একটা চমৎকার বিষয় হওয়ার কথা, কিন্তু আসলে তা নয়; তা কখনো হতেও পারে না।”

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছেন, মেধা বা প্রতিভা মানুষের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করে, কিংবা আদৌ করে কি না। অসাধারণ শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসমনিয়তভাবে বিকশিত হয়। অনন্য সাধারণ যোগ্যতা অনেক সময় বিকাশের অন্যান্য ধারাকে প্রভাবিত করে। পটেনশিয়াল প্লাসের সদস্য অ্যানড্রিয়া অ্যাংগুয়েরা বলেন, “এসব শিশুদের মস্তিষ্কের কিছু অংশ বিভিন্ন শব্দ, আকার-আকৃতি, সংখ্যা ইত্যাদি শেখার গতিকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, তা তত দ্রুত বিকশিত হয় না।”

একটা শিশু হয়তো গণিত বা অন্য কোন বিষয়ে বিশেষ দক্ষ, কিন্তু সে সহজে সামাজিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না। অথচ স্বাভাবিক জীবনের জন্য এই দিকটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। “প্রতিভাবান একটি শিশু সামাজিক হয়রানিরও শিকার হতে পারে “, অ্যাংগুয়েরা বলেন, “তারা বুঝতে পারে না তাদের সাথে অন্য সমবয়সীদের পার্থক্য কোথায়। তারা তাদের আবেগও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, একটি বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ হওয়ার অর্থ অন্যান্য বিষয় রপ্ত করার জন্য তার উপযুক্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।

অনুকূল বুদ্ধিমত্তা

বিশ শতকের শুরুর দিকে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী লিটা হলিংয়োর্থ উল্লেখ করেছিলেন সেই বুদ্ধিমত্তার কথা, যা সামাজিকভাবে সর্বাপেক্ষা কাম্য। তার মতে এই বুদ্ধিমত্তার লেভেল হল আইকিউ ১২৫ থেকে ১৫৫ এর মধ্যে। কারোর আইকিউ যদি এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আমেরিকান স্নায়ুবিজ্ঞানী নরম্যান্ড গেসউইন্ডের ভাষায় ‘প্যাথোলজি অব সুপিরিওরিটি’ দেখা দিতে পারে : মস্তিষ্কের একটি ক্ষুদ্র অংশের বিকাশের প্রাধান্য অন্যান্য অংশের বিকাশকে ব্যহত করতে পারে।

আমরা এখনো জানি না কেন, কিংবা আদৌ এই বিষয়টা প্রকৃতি, যত্ন বা উভয়ের ওপর নির্ভর করে কি না। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আমেরিকার মেনসার সদস্যদের মধ্যে এডিএইচডি (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) এর হার, সাধারণ মানুষদের মধ্যে থেকে শনাক্তকৃতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। অনেকের মতে, যেহেতু প্রতিভাবান শিশুরা সমবয়সীদের চেয়ে অনেকটা অন্যরকম হয় এবং সহজে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না, তাই খেলাধূলার প্রতিও তাদের আগ্রহ কম। কিছু ক্ষেত্রে তাদের আচরণগুলো হয় প্রাপ্তবয়স্কদের মত।  তারা শিশুসুলভ খেলাধূলা করে সময় কাটায় না। ফলে তাদের সামাজিক বিকাশ যথেষ্ট সংকীর্ণ হয়ে থাকে। অ্যাংগুয়েরা বলেন, পাঁচ বছরের যে বাচ্চাটি তার অবসরে বীজগণিত নিয়ে ব্যস্ত থাকে, স্বাভাবিকভাবেই সে অন্য বাচ্চাদের সাথে গাড়ি নিয়ে খেলতে চাইবে না। কিন্তু এভাবে অন্যদের থেকে দূরে থাকতে থাকতে তাদের সামাজিক বিকাশের ধারা ব্যহত হয়। সে সহজে সামাজিকতা শিখতে পারে না।

যে সব মেধাবী শিশুদের কোনো আচরণগত সমস্যা নেই, কেনডল তাদের মধ্যে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছেন। এর মধ্যে একটা দিক হলো, যেহেতু তারা যেকোনো বিষয় নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করে, তাই তারা প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকে। কেনডল বলেন, “তোমার মস্তিষ্ক সব ধরণের পরিবর্তনশীলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম এবং এটা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে।” হিলারি তাঁর ছেলে লরেঞ্জোর ব্যাপারে আমাকে ইমেইলে লিখেছেন, “যত দিন যাচ্ছে, আমি ওর উদ্বেগের সাথে তাল রাখতে হিমশিম খাচ্ছি।” লরেঞ্জোর বয়স এখন বারো। দুই বছর আগে সে মেনসার সদস্য হয়। ফলে এখন সে অনেকের সাথে মিশতে পারছে, অনলাইনে এবং বাস্তব জীবনেও। আইকিউ টেস্টে লরেঞ্জোর স্কোর ছিল ১৬২। হিলারি বলেছেন, “আইনস্টাইনের মত।” আমি অবশ্য তাঁকে বলতে পারিনি যে আইনস্টাইন কোনদিনই তাঁর আইকিউ টেস্ট করান নি। লরেঞ্জো সবসময় চিন্তিত থাকে। তার মা বলেছেন, “কিছুদিন আগে আমরা হংকং-এর একটা প্লেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সে অনবরত প্রশ্ন করছিলো ওই প্লেনে কী কী দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে যা আমাদেরকে জানানো হচ্ছে না।”

এসব শিশুদের ঘুমানোর ধরনও অন্যদের চেয়ে আলাদা। তারা সহজে ঘুমাতে পারে না। একজন আমাকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত একবারে দেড় ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারত না।

হাইপার ব্রেইন

মেনসার আমেরিকান শাখায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি সদস্য আছে। এদের মস্তিষ্ককে ‘হাইপার ব্রেইন’  বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সম্প্রতি তাদের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যেসব মানুষ অতি উচ্চ মেধা সম্পন্ন তাদের মধ্যে অতিরিক্ত উত্তেজনা বা তীব্র সংবেদনশীলতা দেখা যায়। এ বিষয়টির উল্লেখ করেন পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী কেজিমিয়ের্জ দেবরস্কি। এর উদাহরণ হতে পারে – পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কোনো একটির অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা, গভীর বা তীব্র আবেগ কিংবা প্রচণ্ড শারীরিক শক্তি। সাধারণ মানুষের চেয়ে এসব মানুষের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ বা এডিএইচডি-এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

প্রতিভা বা মেধা অনেক মানসিক সমস্যা, যেমন – কোনো খাবারে অ্যালার্জি, হাঁপানি বা অ্যাজমা, অটো-ইমিউন ডিজিস বা অনাক্রম্যতন্ত্রের সমস্যা, ইন্দ্রিয়ের সমস্যা ইত্যাদির সাথেও সম্পৃক্ত। এসব মানুষের কাছে অনেক সময় দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ঘটনাগুলোও অসহনীয় মনে হয়; যেমন – রেডিওর শব্দ, কোনো খাবারের স্বাদ, গন্ধ বা বর্ণ, কাপড়ে কোঁচকানো ভাব ইত্যাদি। হিলারির বিশ্বাস, লরেঞ্জোর মস্তিষ্কের কার্যক্রম, অনুভব করার ক্ষমতা খুবই সূক্ষ। “আমরা সাধারণত যেসব শব্দ শুনি না, সেগুলোও সে শুনতে পায়। যে রুমটাকে বেশিরভাগ মানুষ নীরব বলে মনে করে সেখানেও পড়াশোনা করতে তার অসুবিধা হয়। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী সোনজা ফাল্ক বলেন, “স্নায়বিক তত্ত্ব অনুসারে, যদি কেউ সব ধরণের উদ্দীপনা খুব দ্রুত বিশ্লেষণ করে এবং তাতে সাড়া দেয়, তাহলে সে যে কোনো বিষয়ে সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়বে।”

প্রতিভাবানদের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা হল ব্যর্থতা। কেনডল্ বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন – যখন কেউ অধিকাংশ বিষয়ে কোনো চেষ্টা ছাড়াই সফল হয়ে যায়, তার মধ্যে সহনশীলতা তৈরি হয় না। তিনি যেসব বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন, তারা অনেকেই সচরাচর লিখতে চায় না। তিনি যেখানে কাজ করেন সেখানে অনেক বাচ্চা টুইস্টার খেলে। এই খেলাটা রঙিন ডট দেয়া একটা প্লাস্টিক ম্যাটের ওপর খেলতে হয়। কেনডল্ বলেন, “ওদেরকে অনেক সময়ই ঠিকভাবে বোঝা যায় না। তাই ওদেরকে অনেক কিছুই শেখানো হয় নিছক আনন্দের জন্য।”

রেবেকার মেয়ে লিজির বয়স পাঁচ বছর। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই লিজি পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে শিখেছিল।  ষোলো মাস বয়সে সে আটচল্লিশ টুকরার পাজল মিলিয়ে ফেলেছিল। দুই বছর হতে না হতেই সে ‘দ্য গ্রাফালো’ কবিতা আবৃত্তি করতে পারতো। কবিতাটি চব্বিশ পৃষ্ঠার একটি কাহিনী কবিতা। একদিন লিজিকে গোসল করানোর সময় রেবেকা তার ফেস ক্লথের কথা ভুলে গিয়েছিলো। তখন লিজি বলে ওঠে, “মা, তুমি জঘন্য!” তিন বছর বয়সে সে বলেছে, “মা, আমি দেখতে মোটেও সুন্দর না, আর এটা আমার ক্রোমোজোমের দোষ।” অন্য অনেক ‘গিফটেড’ বাচ্চার মত সেও ছোট-খাট বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। রেবেকা বলেন, “কখনো কখনো ওর জন্য আমার কষ্ট হয়। আমি শুধু চাই ও অন্য পাঁচটা বাচ্চার মত স্বাভাবিক হোক।”

গতানুগতিক সমস্যা

বিষয়টা বেশ জটিল। বাসায় মেহমান আসলে রেবেকা লিজির খেলনাগুলো সরিয়ে ফেলেন। যেন তারা বুঝতে না পারে লিজি তার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বোঝে। তার কারণ মানুষ এসব বাচ্চাদের হেরে যেতে দেখতে চায়। রেবেকা বলেন, “আমি লিজিকে আড়ালে রাখি।” রেবেকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষক; অথচ নিজের মেয়েকে কিছু শেখাতে গেলে তাকে কী শেখাবেন তা বুঝতে পারেন না।

সোনজা ফাল্ক ‘গিফটেড’ কথাটার সাথে পুরোপুরি সহমত হতে পারেন না, কারণ এই শব্দটা ইতিবাচক অর্থ প্রকাশ করে; এটা দ্বারা বোঝায় অন্যদের চেয়ে মেধাবীরা বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। অথচ মেধা বা প্রতিভা সব সময়ই সুবিধা নয়। “যার মেধা আছে সে যদি উপযুক্ত পরিচর্যা বা সহযোগিতা না পায়, তাকে অনেক ভুগতে হয়। অথচ তার সেই সমস্যাটা অনেকেই বুঝতে চায় না।” ফাল্ক আমাকে এমন একজন ক্লায়েন্টের কথা বলেছেন, যিনি গর্ভপাত করিয়েছেন এই জন্য যে, তার ভয় ছিল, তার সন্তানও যদি তার মত মেধা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাহলে তাকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।

এমিলির ছেলে পিটারের বয়স নয় বছর। সে ছোটখাটো গড়নের ছিল। তাই সে সমবয়সীদের সাথে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো না। এমিলি বলেন, “যখন সে নার্সারিতে ছিল, সারা সকাল সে কাঁদতে থাকতো।” ছোটোখাটো ও দুর্বল হওয়ায় এবং অন্যদের সাথে মিশতে না পারায় স্কুলে মার খেয়ে তিন বার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিলো। অন্য অনেকের মত খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও তার অনেক সমস্যা হয়। কারণ সে খাবারের টেক্সচারের প্রতি সংবেদনশীল। কিন্তু পিটারের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দৈনন্দিন জীবনে একঘেয়েমি। স্কুলের সময়টা তার কাছে খুবই একঘেয়ে মনে হয়। তবে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই বিষয়টাকে কোনো সমস্যাই মনে করেন না। তিনি এমিলিকে বলেছেন, “জীবনে কিছুটা একঘেয়েমি থাকা ভালো।”

কিন্তু এই একঘেয়েমি অনেক সময় অত্যাচারের মত হয়ে ওঠে। ফাল্কের পরামর্শ, উচ্চ মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের দিনে অন্তত কিছুটা সময় (ব্রিটিশ কারিকুলাম অনুযায়ী) জিসিএসই বিষয় রপ্ত করার কাজে ব্যয় করা প্রয়োজন। বিষয়টা তিনি এভাবে তুলনা করেছেন, যেমন একজন দৌড়বিদকে প্রতিদিন কিছুটা সময় ধীরে হাঁটার অভ্যাস করতে হয়।

পিছিয়ে যা্ওয়া

কিভাবে একটা প্রতিভাবান শিশুর জন্য তার উপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়? সমস্যাটি বেশ জটিল, অনেক  সময় প্রতিযোগিতামূলক। একদিকে তারা অনেক বিষয় সমবয়সীদের আগেই রপ্ত করে ফেলে; অন্যদিকে যেহেতু তাদের সামাজিক বিকাশ যথাযথভাবে হয় না, তারা অন্যদের মতো সমাজের গতানুগতিক ধারার সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। এমন অনেক বিষয় যা মুখে বলা হয় না, আচার-ব্যবহার বা অঙ্গ-ভঙ্গিতে বুঝে নিতে হয় বা প্রকাশ করতে হয়, তারা সেগুলো আয়ত্ত করতে পারে না। সে কারণে অন্য বাচ্চারা এমনকি অনেক সময় বড়রাও এসব বাচ্চাদের এড়িয়ে চলতে চায়। প্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে শিক্ষকদের কাছে এসব বাচ্চারা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটা ছোট্ট ছেলে বা মেয়ে যদি তোমার সাথে তোমার বয়সীর মত আচরণ করে, তাহলে তা তোমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। কারণ তারা প্রকৃতপক্ষেই বড়দের চেয়ে অনেক বেশি জানে এবং সেটা তারা না চাইতেই প্রকাশ করে ফেলে।

পটেনশিয়াল প্লাসে টমের আইকিউ টেস্টের পর ক্রিসি অনেকের কাছে পরামর্শ নিতে থাকেন, কিভাবে টমের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। একটা বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন, দক্ষিণ-লন্ডনের ঐ প্রাইমারি স্কুল টমের জন্য যথেষ্ঠ নয়। সেখানে শুধু একজন শিক্ষক, টমের কাছে যিনি ‘অসাধারণ’, তিনি গণিতের প্রতি টমের আগ্রহকে উৎসাহিত করেছেন। তাকে অতিরিক্ত সময় দিয়ে অনেক কিছু শিখতে সাহায্য করেছেন। তাছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক তাকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। একজন তো তাকে হেয় করতে বিশেষ আনন্দ পেতেন।  ক্লাসে সবার সামনে বলতেন, “আজকের অঙ্কটা মনে হয় টমের কাছে কঠিন লাগছে।” অথচ তিনি এ কথা উল্লেখ করতেন না যে টম তার চেয়ে দশ বছরের বেশি বয়সীদের উপযোগী অঙ্ক করার চেষ্টা করছে।

ক্রিসি কে বলা হয়েছিলো, তার কাছে দুটি উপায় আছে। হয় তিনি টমকে বাড়িতে পড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারেন, অথবা তাকে প্রাইভেট স্কুলে পড়াতে পারেন। দুটিও কোনোটিই তিনি বেছে নিতে পারছিলেন না। কারণ বাড়িতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করলে সেটা টমের একাকীত্ববোধ বাড়িয়ে দেবে। আবার প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্যও তাঁদের ছিল না। যাহোক, টম একটা বৃত্তি পায় এবং লন্ডনের একটা নামী স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, যেখানে বাৎসরিক বেতন প্রায় বিশ হাজার ইউরো। সেখানেও অন্যদের সাথে মেশা তার জন্য বেশ কঠিন ছিল। সে অবাক হতো অন্যদের সাথে তাদের আর্থিক অবস্থার পার্থক্য দেখে। তবে সেখানে পড়াশোনার মাঝে সে আনন্দ খুঁজে পেতো। তার গণিতের শিক্ষক সম্পর্কে সে বলেছে, “আমি তাঁকে খুবই পছন্দ করি। তিনি আমাকে অনেক কঠিন কঠিন অঙ্ক করতে দেন।”

উচ্চ মেধাসম্পন্ন শিশুদেরকে কোন বয়সের মানুষের সাথে মিশতে দেয়া উচিত, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তাদেরকে যদি তাদের বয়সের চেয়ে উপরের ক্লাসে দেয়া হয়, তাহলে তাদের সামাজিক বিকাশে সমস্যা হবে। আবার তা যদি না করা হয় তাহলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যহত হবে। অস্ট্রেলিয়ার মোনার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লিরনি ক্রোনবোর্গ বলেন, ‘‘এধরনের শিশুদের সামাজিক ও মানসিক – উভয় ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন।” তিনি প্রতিভাবান কিশোর-কিশোরীদের জন্য আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের “আর্লি এন্ট্রান্স প্রোগ্রাম”-এর কথা বলেছেন। স্কুলের পড়ার পাশাপাশি তারা গ্রুপ করে নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এতে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও বাধা আসবে না, আবার তারা সমবয়সীদের সাথে থেকে সামাজিকতাও শিখতে পারবে।

অনেক বাবা-মায়েরা  স্কুলের প্রতি সন্তানের অনীহা বা তাদের অসুবিধা দেখে নিজেরানিজেরা সব ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেন। উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সন্তানদের বাড়িতে পড়াশোনা করানো খুবই সাধারণ ব্যাপার, অথচ ক্রিসির মত সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

১৯৮০ সালের দিকে এক বাবা – মেয়ে, হ্যারি ও রুথ লরেন্স, ট্যানডেম সাইকেলে চড়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় ঘুরে-বেড়াতে শুরু করে। হ্যারি তাঁর কম্পিউটিং – এর ক্যারিয়ার ছেড়ে রুথকে পাঁচ বছর বয়স থেকে বাড়িতে পড়ানো শুরু করেন। বারো বছর বয়সে রুথ অক্সফোর্ডে গণিতে পড়ার সুযোগ পায়। রুথের সব ক্লাসে হ্যারি তার সাথে থাকতেন যেন সে অন্যদের সাথে গল্প করে সময় নষ্ট না করে। বর্তমানে রুথ একজন গণিতবিদ হিসেবে চাকরি করছে, তবে সে ‘অসাধারণ’ কিছু হতে পারেনি। তার প্রথম সন্তান হওয়ার পর সে বলেছিলো, সে কখনই তার সন্তানকে প্রয়োজন বা বয়সের চেয়ে অতিরিক্ত পড়াশোনার জন্য চাপ দেবে না।

হারিয়ে যা্ওয়া আইনস্টাইন

কোনো কোনো দেশে গিফটেড শিশুদের উপযোগী পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রতি বছর অসাধারণ প্রতিভাদের খুঁজে বের করার জন্য একটা কর্মসূচী পরিচালনা করা হয়। আট – নয় বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের গণিত, ইংরেজি ও যুক্তিবাদী দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। এখান থেকে শতকরা এক শতাংশ শ্রেষ্ঠ বাচ্চাকে সাধারণ ক্লাস থেকে “গিফটেড এডুকেশন প্রোগ্রাম” এ পাঠানো হয়, যা দেশের প্রায় নয়টি প্রাইমারি স্কুলে পরিচালিত হয়। সেখানে এই বাচ্চাদের বারো বছর বয়স পর্যন্ত পড়ানো হয়। এরপর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করতে পারে। এই কর্মসূচিতে বাছাইকৃত ছেলেমেয়েদের ‘পার্সোনালাইজড্’ বা স্বতন্ত্রভাবে পড়ালেখা করার ‍সুযোগ দেয়া হয়; যার মধ্যে রয়েছে – নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গভীর ও বিস্তৃত জ্ঞান অর্জনের সুযোগ, ইন্টারনেটে বিভিন্ন কোর্সে অতিরিক্ত পড়াশোনার সুযোগ, খুব কম বয়সেই প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ইত্যাদি।

তবে এসব শিশুদের শুধু শিক্ষা অর্জনের বিষয়ে জোর দেয়ার বিষয়টি বেশ বিতর্কিত। ২০০৭ সাল থেকে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন শিশুদের সামাজিকতা শেখানোর জন্যও চেষ্টা চলছে। তবে এ ধরনের প্রচেষ্টায়ও গতানুগতিক ‘মেধা’ – র ধারণা প্রতিফলিত হয় – নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ‘আপাত দৃষ্টিতে’ সহজাত মেধা যাচাইকরণ। এর বাইরে শিক্ষাবিদরা আরও বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে অসাধারণ মেধাবী শিশুদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সেই সাথে চেষ্টা করছেন এই শিশুদের আচার – আচরণ ও নিজেদের সফল করে তোলার দিকে তাদের মনোযোগ বাড়াতে।

নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক  বিশ্ববিদ্যালয়ের “প্রজেক্ট ব্রাইট আইডিয়া” তে দশ হাজার সাধারণ বাচ্চাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিল, যারা প্রাইমারি বা নার্সারিতে পড়ত। তাদেরকে এমন কিছু পদ্ধতি শেখানো হয়েছিলো যা সাধারণত বুদ্ধিমানেরা কাজে লাগায়। যেমন – উচ্চ আকাঙ্ক্ষা পোষণ ও জটিল সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করা, মেটা-কগনিশন (কারোর চিন্তাধারা বোঝার ক্ষমতা) বাড়ানো ইত্যাদি। পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে, স্কুলের পরীক্ষাগুলোতে তারা অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো করেছে।

টম, ওফেলিয়া, লরেনজো কিংবা পিটার – ওদের কি হবে? হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রাজ শেঠী হিসাব করে দেখেছেন, শতকরা ৫ জন শিশু, যারা প্রাইমারি স্কুলের পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো করে, তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মত করে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থাকে। আর এই সম্ভাবনা বিত্তশীল পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে আরও বেশি। মানুষের জন্মগত মেধা বা প্রতিভা যেমনই হোক না কেন, যারা শৈশবে পর্যাপ্ত পরিচর্যা ও সুযোগ-সুবিধা পায়, জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা তাদেরই বেশি।

অনেকে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও জীবনে সফল হতে পারে না। যেসব শিশু তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য উপযুক্ত সুযোগ কিংবা উৎসাহ পায়নি, যারা তাদের একাকীত্ব বা বিচ্ছিন্নতা মোকাবেলা করার জন্য কারোর সহযোগিতা পায়নি, রাজ শেঠীর ভাষায় তারা হল ”হারিয়ে যাওয়া আইনস্টাইন”। এমন অনেকে আছে যাদের যোগ্যতা গতানুগতিক আইকিউ টেস্টের মাধ্যমে নিরূপণ করা যায় না। আবার এমন অনেকে আছে যারা পরবর্তী জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়, কারণ কর্মক্ষেত্রে তারা হয়তো সহজে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না বা মানিয়ে চলতে পারে না।

১৯২০ সালে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী লুইস টারম্যান উচ্চ মেধাসম্পন্ন ১৫০০ শিশু নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ৭০ বছর পর কয়েকজন ব্যক্তি ওই গ্রুপটাকে খুঁজে বের করেছিলেন। দেখা যায়, আর্থ সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে যতটুকু আশা করা যায়, কেউই তার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারেনি। আবার ওই গ্রুপের একজন, যার সম্বন্ধে টারম্যানের ধারণা ছিল সে খুব একটা মেধাবী নয়, পরবর্তীতে ট্রানজিস্টর আবিষ্কারে অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

একটা বেদনাদায়ক শৈশবের ভার সারাজীবন বহন করতে হয়। কিম উং ইয়ং দক্ষিণ কোরিয়ার এক অসাধারণ প্রতিভা, যাকে বলা যায় ‘চাইল্ড প্রোডিজি’। বর্তমানে তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর এবং তিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর মতে তাঁকে শৈশবে ঠকানো হয়েছিলো। ছয় মাস বয়সে তিনি কথা বলা শিখেছিলেন এবং দুই বছর বয়সে চারটি ভাষা রপ্ত করেছিলেন। আট বছর বয়সে তিনি তাঁর প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তাঁকে নাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, “আমি যন্ত্রের মতো জীবনযাপন করেছি। ঘুম থেকে ওঠা, প্রতিদিনের সমীকরণগুলো  সমাধান করা, খাওয়া, ঘুমানো । এই ছিল আমার জীবন। আমার কোনো বন্ধু-বান্ধব ছিল না। নিজেকে খুব একা মনে হতো।” এমনকি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, বিশ্বের অসাধারণ ব্যক্তিদের মধ্যে যিনি অন্যতম, তিনিও ১৯৫২ সালে লিখেছিলেন, ‘‘বিষয়টা বড়ই অদ্ভুত, সারা দুনিয়া আমাকে চেনে, অথচ তারপরও আমি একা।”

আজকের প্রতিভাবানদের নিয়ে এটা ছিল একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা। টমের মা ক্রিসি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন। তিনি বলেন, ‘‘যদি এরকম অন্তত একটা বাচ্চা দেখাতে বলি যার পরিণাম ভালো হয়েছে, কাউকেই পাওয়া যাবে না।” তারপর টমের দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, “মনে হয় তুমিই হবে প্রথম উদাহরণ।”

সারাফ তাসনীম, মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজ

আরো পড়ুনঃ শখের বাগান

xosotin chelseathông tin chuyển nhượngcâu lạc bộ bóng đá arsenalbóng đá atalantabundesligacầu thủ haalandUEFAevertonxosofutebol ao vivofutemaxmulticanaisonbethttps://bsport.fithttps://onbet88.ooohttps://i9bet.bizhttps://hi88.ooohttps://okvip.athttps://f8bet.athttps://fb88.cashhttps://vn88.cashhttps://shbet.atbóng đá world cupbóng đá inter milantin juventusbenzemala ligaclb leicester cityMUman citymessi lionelsalahnapolineymarpsgronaldoserie atottenhamvalenciaAS ROMALeverkusenac milanmbappenapolinewcastleaston villaliverpoolfa cupreal madridpremier leagueAjaxbao bong da247EPLbarcelonabournemouthaff cupasean footballbên lề sân cỏbáo bóng đá mớibóng đá cúp thế giớitin bóng đá ViệtUEFAbáo bóng đá việt namHuyền thoại bóng đágiải ngoại hạng anhSeagametap chi bong da the gioitin bong da lutrận đấu hôm nayviệt nam bóng đátin nong bong daBóng đá nữthể thao 7m24h bóng đábóng đá hôm naythe thao ngoai hang anhtin nhanh bóng đáphòng thay đồ bóng đábóng đá phủikèo nhà cái onbetbóng đá lu 2thông tin phòng thay đồthe thao vuaapp đánh lô đềdudoanxosoxổ số giải đặc biệthôm nay xổ sốkèo đẹp hôm nayketquaxosokq xskqxsmnsoi cầu ba miềnsoi cau thong kesxkt hôm naythế giới xổ sốxổ số 24hxo.soxoso3mienxo so ba mienxoso dac bietxosodientoanxổ số dự đoánvé số chiều xổxoso ket quaxosokienthietxoso kq hôm nayxoso ktxổ số megaxổ số mới nhất hôm nayxoso truc tiepxoso ViệtSX3MIENxs dự đoánxs mien bac hom nayxs miên namxsmientrungxsmn thu 7con số may mắn hôm nayKQXS 3 miền Bắc Trung Nam Nhanhdự đoán xổ số 3 miềndò vé sốdu doan xo so hom nayket qua xo xoket qua xo so.vntrúng thưởng xo sokq xoso trực tiếpket qua xskqxs 247số miền nams0x0 mienbacxosobamien hôm naysố đẹp hôm naysố đẹp trực tuyếnnuôi số đẹpxo so hom quaxoso ketquaxstruc tiep hom nayxổ số kiến thiết trực tiếpxổ số kq hôm nayso xo kq trực tuyenkết quả xổ số miền bắc trực tiếpxo so miền namxổ số miền nam trực tiếptrực tiếp xổ số hôm nayket wa xsKQ XOSOxoso onlinexo so truc tiep hom nayxsttso mien bac trong ngàyKQXS3Msố so mien bacdu doan xo so onlinedu doan cau loxổ số kenokqxs vnKQXOSOKQXS hôm naytrực tiếp kết quả xổ số ba miềncap lo dep nhat hom naysoi cầu chuẩn hôm nayso ket qua xo soXem kết quả xổ số nhanh nhấtSX3MIENXSMB chủ nhậtKQXSMNkết quả mở giải trực tuyếnGiờ vàng chốt số OnlineĐánh Đề Con Gìdò số miền namdò vé số hôm nayso mo so debach thủ lô đẹp nhất hôm naycầu đề hôm naykết quả xổ số kiến thiết toàn quốccau dep 88xsmb rong bach kimket qua xs 2023dự đoán xổ số hàng ngàyBạch thủ đề miền BắcSoi Cầu MB thần tàisoi cau vip 247soi cầu tốtsoi cầu miễn phísoi cau mb vipxsmb hom nayxs vietlottxsmn hôm naycầu lô đẹpthống kê lô kép xổ số miền Bắcquay thử xsmnxổ số thần tàiQuay thử XSMTxổ số chiều nayxo so mien nam hom nayweb đánh lô đề trực tuyến uy tínKQXS hôm nayxsmb ngày hôm nayXSMT chủ nhậtxổ số Power 6/55KQXS A trúng roycao thủ chốt sốbảng xổ số đặc biệtsoi cầu 247 vipsoi cầu wap 666Soi cầu miễn phí 888 VIPSoi Cau Chuan MBđộc thủ desố miền bắcthần tài cho sốKết quả xổ số thần tàiXem trực tiếp xổ sốXIN SỐ THẦN TÀI THỔ ĐỊACầu lô số đẹplô đẹp vip 24hsoi cầu miễn phí 888xổ số kiến thiết chiều nayXSMN thứ 7 hàng tuầnKết quả Xổ số Hồ Chí Minhnhà cái xổ số Việt NamXổ Số Đại PhátXổ số mới nhất Hôm Nayso xo mb hom nayxxmb88quay thu mbXo so Minh ChinhXS Minh Ngọc trực tiếp hôm nayXSMN 88XSTDxs than taixổ số UY TIN NHẤTxs vietlott 88SOI CẦU SIÊU CHUẨNSoiCauVietlô đẹp hôm nay vipket qua so xo hom naykqxsmb 30 ngàydự đoán xổ số 3 miềnSoi cầu 3 càng chuẩn xácbạch thủ lônuoi lo chuanbắt lô chuẩn theo ngàykq xo-solô 3 càngnuôi lô đề siêu vipcầu Lô Xiên XSMBđề về bao nhiêuSoi cầu x3xổ số kiến thiết ngày hôm nayquay thử xsmttruc tiep kết quả sxmntrực tiếp miền bắckết quả xổ số chấm vnbảng xs đặc biệt năm 2023soi cau xsmbxổ số hà nội hôm naysxmtxsmt hôm nayxs truc tiep mbketqua xo so onlinekqxs onlinexo số hôm nayXS3MTin xs hôm nayxsmn thu2XSMN hom nayxổ số miền bắc trực tiếp hôm naySO XOxsmbsxmn hôm nay188betlink188 xo sosoi cầu vip 88lô tô việtsoi lô việtXS247xs ba miềnchốt lô đẹp nhất hôm naychốt số xsmbCHƠI LÔ TÔsoi cau mn hom naychốt lô chuẩndu doan sxmtdự đoán xổ số onlinerồng bạch kim chốt 3 càng miễn phí hôm naythống kê lô gan miền bắcdàn đề lôCầu Kèo Đặc Biệtchốt cầu may mắnkết quả xổ số miền bắc hômSoi cầu vàng 777thẻ bài onlinedu doan mn 888soi cầu miền nam vipsoi cầu mt vipdàn de hôm nay7 cao thủ chốt sốsoi cau mien phi 7777 cao thủ chốt số nức tiếng3 càng miền bắcrồng bạch kim 777dàn de bất bạion newsddxsmn188betw88w88789bettf88sin88suvipsunwintf88five8812betsv88vn88Top 10 nhà cái uy tínsky88iwinlucky88nhacaisin88oxbetm88vn88w88789betiwinf8betrio66rio66lucky88oxbetvn88188bet789betMay-88five88one88sin88bk88xbetoxbetMU88188BETSV88RIO66ONBET88188betM88M88SV88Jun-68Jun-88one88iwinv9betw388OXBETw388w388onbetonbetonbetonbet88onbet88onbet88onbet88onbetonbetonbetonbetqh88mu88Nhà cái uy tínpog79vp777vp777vipbetvipbetuk88uk88typhu88typhu88tk88tk88sm66sm66me88me888live8live8livesm66me88win798livesm66me88win79pog79pog79vp777vp777uk88uk88tk88tk88luck8luck8kingbet86kingbet86k188k188hr99hr99123b8xbetvnvipbetsv66zbettaisunwin-vntyphu88vn138vwinvwinvi68ee881xbetrio66zbetvn138i9betvipfi88clubcf68onbet88ee88typhu88onbetonbetkhuyenmai12bet-moblie12betmoblietaimienphi247vi68clupcf68clupvipbeti9betqh88onb123onbefsoi cầunổ hũbắn cáđá gàđá gàgame bàicasinosoi cầuxóc đĩagame bàigiải mã giấc mơbầu cuaslot gamecasinonổ hủdàn đềBắn cácasinodàn đềnổ hũtài xỉuslot gamecasinobắn cáđá gàgame bàithể thaogame bàisoi cầukqsssoi cầucờ tướngbắn cágame bàixóc đĩaAG百家乐AG百家乐AG真人AG真人爱游戏华体会华体会im体育kok体育开云体育开云体育开云体育乐鱼体育乐鱼体育欧宝体育ob体育亚博体育亚博体育亚博体育亚博体育亚博体育亚博体育开云体育开云体育棋牌棋牌沙巴体育买球平台新葡京娱乐开云体育mu88qh88
মালিহা নামলাহ
মালিহা নামলাহhttps://chotoderbondhu.com/
উপসম্পাদক ও প্রধান সমন্বয়ক
RELATED ARTICLES

Most Popular

xosotin chelseathông tin chuyển nhượngcâu lạc bộ bóng đá arsenalbóng đá atalantabundesligacầu thủ haalandUEFAevertonxosofutebol ao vivofutemaxmulticanaisonbethttps://bsport.fithttps://onbet88.ooohttps://i9bet.bizhttps://hi88.ooohttps://okvip.athttps://f8bet.athttps://fb88.cashhttps://vn88.cashhttps://shbet.atbóng đá world cupbóng đá inter milantin juventusbenzemala ligaclb leicester cityMUman citymessi lionelsalahnapolineymarpsgronaldoserie atottenhamvalenciaAS ROMALeverkusenac milanmbappenapolinewcastleaston villaliverpoolfa cupreal madridpremier leagueAjaxbao bong da247EPLbarcelonabournemouthaff cupasean footballbên lề sân cỏbáo bóng đá mớibóng đá cúp thế giớitin bóng đá ViệtUEFAbáo bóng đá việt namHuyền thoại bóng đágiải ngoại hạng anhSeagametap chi bong da the gioitin bong da lutrận đấu hôm nayviệt nam bóng đátin nong bong daBóng đá nữthể thao 7m24h bóng đábóng đá hôm naythe thao ngoai hang anhtin nhanh bóng đáphòng thay đồ bóng đábóng đá phủikèo nhà cái onbetbóng đá lu 2thông tin phòng thay đồthe thao vuaapp đánh lô đềdudoanxosoxổ số giải đặc biệthôm nay xổ sốkèo đẹp hôm nayketquaxosokq xskqxsmnsoi cầu ba miềnsoi cau thong kesxkt hôm naythế giới xổ sốxổ số 24hxo.soxoso3mienxo so ba mienxoso dac bietxosodientoanxổ số dự đoánvé số chiều xổxoso ket quaxosokienthietxoso kq hôm nayxoso ktxổ số megaxổ số mới nhất hôm nayxoso truc tiepxoso ViệtSX3MIENxs dự đoánxs mien bac hom nayxs miên namxsmientrungxsmn thu 7con số may mắn hôm nayKQXS 3 miền Bắc Trung Nam Nhanhdự đoán xổ số 3 miềndò vé sốdu doan xo so hom nayket qua xo xoket qua xo so.vntrúng thưởng xo sokq xoso trực tiếpket qua xskqxs 247số miền nams0x0 mienbacxosobamien hôm naysố đẹp hôm naysố đẹp trực tuyếnnuôi số đẹpxo so hom quaxoso ketquaxstruc tiep hom nayxổ số kiến thiết trực tiếpxổ số kq hôm nayso xo kq trực tuyenkết quả xổ số miền bắc trực tiếpxo so miền namxổ số miền nam trực tiếptrực tiếp xổ số hôm nayket wa xsKQ XOSOxoso onlinexo so truc tiep hom nayxsttso mien bac trong ngàyKQXS3Msố so mien bacdu doan xo so onlinedu doan cau loxổ số kenokqxs vnKQXOSOKQXS hôm naytrực tiếp kết quả xổ số ba miềncap lo dep nhat hom naysoi cầu chuẩn hôm nayso ket qua xo soXem kết quả xổ số nhanh nhấtSX3MIENXSMB chủ nhậtKQXSMNkết quả mở giải trực tuyếnGiờ vàng chốt số OnlineĐánh Đề Con Gìdò số miền namdò vé số hôm nayso mo so debach thủ lô đẹp nhất hôm naycầu đề hôm naykết quả xổ số kiến thiết toàn quốccau dep 88xsmb rong bach kimket qua xs 2023dự đoán xổ số hàng ngàyBạch thủ đề miền BắcSoi Cầu MB thần tàisoi cau vip 247soi cầu tốtsoi cầu miễn phísoi cau mb vipxsmb hom nayxs vietlottxsmn hôm naycầu lô đẹpthống kê lô kép xổ số miền Bắcquay thử xsmnxổ số thần tàiQuay thử XSMTxổ số chiều nayxo so mien nam hom nayweb đánh lô đề trực tuyến uy tínKQXS hôm nayxsmb ngày hôm nayXSMT chủ nhậtxổ số Power 6/55KQXS A trúng roycao thủ chốt sốbảng xổ số đặc biệtsoi cầu 247 vipsoi cầu wap 666Soi cầu miễn phí 888 VIPSoi Cau Chuan MBđộc thủ desố miền bắcthần tài cho sốKết quả xổ số thần tàiXem trực tiếp xổ sốXIN SỐ THẦN TÀI THỔ ĐỊACầu lô số đẹplô đẹp vip 24hsoi cầu miễn phí 888xổ số kiến thiết chiều nayXSMN thứ 7 hàng tuầnKết quả Xổ số Hồ Chí Minhnhà cái xổ số Việt NamXổ Số Đại PhátXổ số mới nhất Hôm Nayso xo mb hom nayxxmb88quay thu mbXo so Minh ChinhXS Minh Ngọc trực tiếp hôm nayXSMN 88XSTDxs than taixổ số UY TIN NHẤTxs vietlott 88SOI CẦU SIÊU CHUẨNSoiCauVietlô đẹp hôm nay vipket qua so xo hom naykqxsmb 30 ngàydự đoán xổ số 3 miềnSoi cầu 3 càng chuẩn xácbạch thủ lônuoi lo chuanbắt lô chuẩn theo ngàykq xo-solô 3 càngnuôi lô đề siêu vipcầu Lô Xiên XSMBđề về bao nhiêuSoi cầu x3xổ số kiến thiết ngày hôm nayquay thử xsmttruc tiep kết quả sxmntrực tiếp miền bắckết quả xổ số chấm vnbảng xs đặc biệt năm 2023soi cau xsmbxổ số hà nội hôm naysxmtxsmt hôm nayxs truc tiep mbketqua xo so onlinekqxs onlinexo số hôm nayXS3MTin xs hôm nayxsmn thu2XSMN hom nayxổ số miền bắc trực tiếp hôm naySO XOxsmbsxmn hôm nay188betlink188 xo sosoi cầu vip 88lô tô việtsoi lô việtXS247xs ba miềnchốt lô đẹp nhất hôm naychốt số xsmbCHƠI LÔ TÔsoi cau mn hom naychốt lô chuẩndu doan sxmtdự đoán xổ số onlinerồng bạch kim chốt 3 càng miễn phí hôm naythống kê lô gan miền bắcdàn đề lôCầu Kèo Đặc Biệtchốt cầu may mắnkết quả xổ số miền bắc hômSoi cầu vàng 777thẻ bài onlinedu doan mn 888soi cầu miền nam vipsoi cầu mt vipdàn de hôm nay7 cao thủ chốt sốsoi cau mien phi 7777 cao thủ chốt số nức tiếng3 càng miền bắcrồng bạch kim 777dàn de bất bạion newsddxsmn188betw88w88789bettf88sin88suvipsunwintf88five8812betsv88vn88Top 10 nhà cái uy tínsky88iwinlucky88nhacaisin88oxbetm88vn88w88789betiwinf8betrio66rio66lucky88oxbetvn88188bet789betMay-88five88one88sin88bk88xbetoxbetMU88188BETSV88RIO66ONBET88188betM88M88SV88Jun-68Jun-88one88iwinv9betw388OXBETw388w388onbetonbetonbetonbet88onbet88onbet88onbet88onbetonbetonbetonbetqh88mu88Nhà cái uy tínpog79vp777vp777vipbetvipbetuk88uk88typhu88typhu88tk88tk88sm66sm66me88me888live8live8livesm66me88win798livesm66me88win79pog79pog79vp777vp777uk88uk88tk88tk88luck8luck8kingbet86kingbet86k188k188hr99hr99123b8xbetvnvipbetsv66zbettaisunwin-vntyphu88vn138vwinvwinvi68ee881xbetrio66zbetvn138i9betvipfi88clubcf68onbet88ee88typhu88onbetonbetkhuyenmai12bet-moblie12betmoblietaimienphi247vi68clupcf68clupvipbeti9betqh88onb123onbefsoi cầunổ hũbắn cáđá gàđá gàgame bàicasinosoi cầuxóc đĩagame bàigiải mã giấc mơbầu cuaslot gamecasinonổ hủdàn đềBắn cácasinodàn đềnổ hũtài xỉuslot gamecasinobắn cáđá gàgame bàithể thaogame bàisoi cầukqsssoi cầucờ tướngbắn cágame bàixóc đĩaAG百家乐AG百家乐AG真人AG真人爱游戏华体会华体会im体育kok体育开云体育开云体育开云体育乐鱼体育乐鱼体育欧宝体育ob体育亚博体育亚博体育亚博体育亚博体育亚博体育亚博体育开云体育开云体育棋牌棋牌沙巴体育买球平台新葡京娱乐开云体育mu88qh88