এখন দিন বদলে গেছে।চারদিকে এমন সব ঘটনা ঘটছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।মা সন্তানের বিরুদ্ধে আবার সন্তান মায়ের বিরুদ্ধে দাড়াচ্ছে।কিন্তু ঘটনাটা যখন অন্য দিকে মোড় নেয় হয়ে ওঠে বাল্যবিবাহ কিংবা নিযার্তন তখন সমাজে সেটা নাড়া দেয়। শারমিনও কি ভেবেছিল কোন দিন সে তার নিজের মায়ের বিরুদ্ধে আদালতে দাড়িয়ে কথা বলবে? ভাবেনি কিন্তু পরিস্থিতি আজ ওকে এখানে এনে দাড় করিয়েছে।
মায়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো আদালতে সাক্ষী দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উইমেন অব কারেজ পুরস্কারপ্রাপ্ত ঝালকাঠির সেই শারমিন আক্তার। সে নিজের বাল্যবিয়ে নিজে ঠেকিয়ে মা ও কথিত প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আলোচনায় আসে।
শারমিন রাজাপুরের বাগড়ি এলাকার প্রবাসী কবির হোসেনের মেয়ে ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী।
বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। শারমিন ছাড়াও এ মামলায় সাক্ষ্য দেন শারমিনের দাদি দেলোয়ারা বেগম।
আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসকে.এম তোফায়েল হাসান দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
আদালতে দাঁড়িয়ে শারমিন ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট জোর করে তাকে বিয়ে দেয়া ও মায়ের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনার বর্ণনা দেয়।
আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এম আলম খান কামাল জানান, সাক্ষীতে শারমিন জানায়, নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট শারমিনকে চিকিৎসা করানোর কথা বলে তার মা রাজাপুরের বাসা থেকে খুলনায় নিয়ে যান।
সেখানে একটি বাসায় মায়ের কথিত প্রেমিক স্বপন খলিফার কক্ষে রাতে শারমিনকে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দেন মা।
শারমিন কৌশলে পালিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রাজাপুর চলে আসে। ১৬ আগস্ট সেখান থেকে পালিয়ে শারমিন তার সহপাঠী নাদিরা আক্তারের বাসায় যান।
দুজন মিলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় রাজাপুর থানায় গিয়ে মা ও তার কথিত প্রেমিক স্বপনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতের কাঠগড়ায় আসামি স্বপন খান ও শারমিনের মা গোলেনুর বেগম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এম আলম খান কামাল, শারমিনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আক্কাস সিকদার, অ্যাডভোকেট মানিক আচার্য্য এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ সিকদার।
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এম আলম খান কামাল বলেন, বুধবার শারমিন এবং তার দাদি দেলোয়ারা বেগমের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় তার মা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৪ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, অনন্য সাহসিকতার জন্য ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সাহসী পুরস্কার (সেক্রেটারি অব স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল উইমেন কারেজ অ্যাওয়ার্ড) দেয়া হয়।
Comments are closed.