শিহাব আর টিটোনের গল্প বলতে চাই।শিহাব এবং টিটোনের সাহসীকতার গল্প।গল্প নয় এটি আজকে ঘটে যাওয়া অসাধারণ একটি ঘটনা।সারা দেশে আজ অগণিত ঘটনা ঘটেছে কিন্তু ছোটদেরবন্ধুর দৃষ্টিতে আজকের নায়ক আজকের হিরো আমাদের এই দুই ছোট্ট বন্ধু শিহাব আর টিটোন। ওরা দুজন যা করেছে তার জন্য রীতিমত আমাদের গর্ব হচ্ছে। আসুন শুনি সেই ঘটনা।
শিহাব আর টিটোন দুজন রেললাইনের পাশ দিয়ে হাটছিলো। এমন সময় একটি ট্রেন সামনে দিয়ে চলে গেল।চলে যাওয়ার পর কেন যেন একটু অন্যরকম শব্দ হচ্ছিল।ছোট্ট বন্ধু দুজন দেখলো রেললাইনে সমস্যা। একটু পরে আরো একটি ট্রেন আসছে দেখে ওরা বুঝে ফেললো ওদেরকেই ত্রাতার ভূমিকায় আসতে হবে নইলে অনেক বড় ধরনের বিপদ ঘটে যাবে। যেহেতু ট্রেন লাইনে সমস্যা তাই ট্রেন ওই লাইন দিয়ে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবেই।এ সময় ছোট্ট শিহাব আর টিটোন নিজেদের গলার লাল মাফলার খুলে সেটা ওড়াতে থাকে যা দেখে ট্রেন চালক সহজেই বুঝতে পারে সামনে তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। ট্রেন চালক সাথে সাথে ব্রেক ধরে ফলে আসন্ন দুর্ঘটনার হাত থেকে পরিত্রান পায় ট্রেনের অগণিত যাত্রী।
আজ সোমবার সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী স্টেশনের অদূরে ঝিনা রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আমাদের এই ছোট্ট দুই বন্ধু হলো ঝিনা গ্রামের সুমন আলীর ছেলে সিহাবুর রহমান (৬) ও শহিদুল ইসলামের ছেলে টিটোন আলী (৭)।
আড়ানী স্টেশনমাস্টার নয়ন আহম্মেদ বলেন, সকাল সোয়া আটটার দিকে প্রথম কমিউটার ট্রেন পার করি। এরপর সিল্কসিটি ট্রেন পার হয়। এই ট্রেন পার হওয়ার সময় ঝিনা রেলগেটে বিকট শব্দ হয়। উৎসুক দুই শিশু সেখানে এগিয়ে যায়। গিয়ে তারা দেখতে পায় রেললাইন ভাঙা। সামনে ট্রেন আসতে দেখে তারা দুজনে রেললাইনের ওপর মাফলার টেনে ধরে। এতে ট্রেন থেমে যায়। এরপর আশপাশের মানুষ ছুটে আসে।
নয়ন আহম্মেদ বলেন, ‘তারা বিষয়টি তাৎক্ষণিক আমাকে জানায়। মিস্ত্রিরা এসে দ্রুত লাইন মেরামত করলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তেলবাহী ট্রেনটি খুলনা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল। ওই দুই ছোট্ট বন্ধুর কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।’
আমাদের এই ছোট্ট দুই বন্ধু বললো, তারা জমি থেকে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় দেখে রেললাইন ভাঙা। আর ট্রেন আসতে দেখে তারা তাদের কাছের মাফলার দিয়ে ট্রেন থামিয়ে দেয়।
ট্রেনের চালক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, দুই শিশু মাফলার দিয়ে ট্রেন থামানোর সিগন্যাল দিচ্ছে দেখে তিনি প্রথমে গুরুত্ব দেননি। ভেবেছিলেন ট্রেন থামাবেন না। কিন্তু অনেক কাছে চলে যাওয়ার পরও ওই দুই শিশু রেললাইন থেকে সরছে না দেখে তিনি ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এতেই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি।
দুই ছোট্ট বন্ধুর এমন সাহসী ভূমিকার ঘটনা শুনে তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, দুই শিশুকে প্রতি মাসে শিক্ষার জন্য এক হাজার টাকা করে বৃত্তি দেবেন। তারা যদি স্কুল, কলেজ শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে চায়, সেই দায়িত্বও প্রতিমন্ত্রী নিতে চান। আমরা প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে ধন্যবাদ জানাই এই সুন্দর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। আমাদের অনন্ত ভালোবাসা রইলো শিহাব এবং টিটোনের জন্য ওরা ওদের এই সাহসী ভূমিকা আজীবন রেখে যাবে এবং দেশকে বদলে দিবে। আমরা আশা করবো আমাদের এই ছোট্ট দুই বন্ধুর মতই অন্যরাও দেশের কল্যানে ভালো কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবে।
Comments are closed.