প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়ে ১২ বছরের ওই শিশুটি এখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এমন একটি কথা লিখতেও আমাদের খারাপ লাগছে।আমাদের সমাজ ক্রমাগত ভাবে শিশু কিশোর কিশোরী এমনকি নারীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে আমরা যে দেশটি স্বাধীন করেছিলাম সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন এমনটি ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম একটি নিরাপদ রাষ্ট্র যেখানে কোন ধর্ষক থাকবেনা,চোর থাকবেনা,লুটেরা থাকবেনা।কিন্তু আফসোস আমরা সেই স্বপ্ন সত্যি করতে পারিনি।
মায়ের আঁচল ধরে হাঁটা এখনো ছাড়তে পারেনি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি। স্কুলের ব্যাগের ভারই বহন করতে যার হাঁসফাঁস অবস্থা, সেই শিশুই কিনা মা হতে চলেছে! অভিযোগ উঠেছে, প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়ে ১২ বছরের ওই শিশুটি এখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শিক্ষককেও এখন আর বিশ্বাস করার উপায় নেই।
সম্প্রতি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। দিনমজুর পরিবারের দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার শিশুটি বড়। পরিবারের অভিযোগ, কলেজপড়ুয়া প্রতিবেশী এক তরুণের কাছে টিউশনি পড়তে গিয়ে তাঁর কাছেই ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা গত সোমবার নবাবগঞ্জ থানায় ওই তরুণের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এ অবস্থায় সন্তান প্রসব করতে গেলে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যাসহ শিশুটির মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে।
মামলা, শিশুটির পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিশুটি গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে প্রতিবেশী কলেজপড়ুয়া এক তরুণের কাছে টিউশনি পড়তে যেত। একা টিউশনি পড়ানোর সুযোগ নিয়ে ওই যুবক শিশুটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে না জানানোরও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। পরে আবারও কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। ভয়ে সে বিষয়টি কাউকে বলেনি। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর হঠাৎ করে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে সময় ভয়ে সে পরিবারকে ঘটনা খুলে বলে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তার আলট্রাসনোগ্রাম করানো হলে সে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে নিশ্চিত হয় পরিবারটি।
এ ঘটনায় লোকলজ্জার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না শিশুটি। তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের সামাজিকতার কারণে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে দিনমজুর পরিবারটি।
আজ সরেজমিনে অভিযুক্ত তরুণের বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ওই তরুণের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় পুলিশ নিয়মিত তাঁর খোঁজে আসছে। এ কারণে হয়তো অভিযুক্ত তরুণ পরিবারসহ এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন।
অভিযুক্ত তরুণ ও তাঁর বাবার মোবাইলে ফোন করা হলে তাঁদের দুটো নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে মোবাইল ফোনে বলেন, ওই তরুণের বিরুদ্ধে আগেও অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে।
বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) চিকিৎসক মোছা. তাহেরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, এ অবস্থায় ভ্রূণ নষ্ট কিংবা সন্তান প্রসবেও শিশুটির মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া মেয়েটি বেঁচে থাকলেও এ বয়সে সন্তান প্রসবের কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়বে।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বলেন, মামলার পর থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক প্রথম আলো।