কিশোরদের অপরাধে জড়ানো সামাজিক অসুস্থতারই লক্ষণ। পরিবারে ভাঙন, ছাত্ররাজনীতির প্রশ্রয়, দারিদ্র্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব, মাদকের সহজলভ্যতা, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারসহ অনেক কারণেই অল্পবয়সীরা অপরাধে জড়াচ্ছে। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ঘরে সন্তানকে মমতায় বড় করতে হবে, চোখে চোখেও রাখতে হবে।
► আপনার সন্তান কোথায় যায়, কী করে, কাদের সঙ্গে মেশে—এসব গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করা প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য। রাত করে বাসায় ফিরলে তাদের শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। অনেক অভিভাবক সন্তানের চাওয়াকে গুরুত্ব দেন না বলেও তারা সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
► পরিবারগুলো সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা অর্থ উপার্জনের দিকেই বেশি ব্যস্ত। হারিয়ে যাওয়া পারিবারিক শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ সমন্বিত শিক্ষা ফিরিয়ে আনতে হবে।
► কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ করতে হলে সমাজের উন্নয়ন করতে হবে।
► ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের আপন সন্তানের মতো ব্যবহার করতে হবে। শাসনের পাশাপাশি আদরও করতে হবে। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা বোঝাতে হবে।
► কিশোর অপরাধ বন্ধ করতে রাজনীতিবিদদের নীতি ঠিক করতে হবে। কিশোরদের বাস্তববাদী কাজে উদ্যোগী করতে হবে। তাদের সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় মনোনিবেশ করতে হবে।
► ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ ও সচেতন ভূমিকা থাকতে হবে। অভিভাবকদের উদাসীনতা প্রচণ্ডভাবে দায়ী। অতিমাত্রায় আদর-স্নেহ কিংবা অবজ্ঞা উভয়ই কিশোর-কিশোরীদের উগ্র করে তোলে। অভিভাবকদের সচেতন করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। পাড়া-মহল্লায় মুরব্বিদের নিয়ে সাপ্তাহিক পরামর্শ সভা করতে হবে।
► কিশোর অপরাধপ্রবণতা রোধে আইনের প্রয়োগের চেয়েও অনেক বেশি প্রয়োজন সমাজ সচেতনতা। শাসনহীনতা এবং অতিশাসন দুটিই শিশুর ভুল পথে ধাবিত হওয়ার কারণ। স্থান, কাল, পাত্র বুঝে পরিমাণমতো সার দিলেই ভালো ফসল আশা করা যায়।
► মা-বাবার উচিত ছোটবেলায় সন্তানদের স্নেহময় পারিবারিক বন্ধনে ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও নৈতিক-অনৈতিক বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া। এ ছাড়া কিশোরদের গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য এলাকাভিত্তিক বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। লাইব্রেরি, শরীরচর্চা, স্কাউটিং ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে।
► আমরা নিজেদের উন্নয়নের চিন্তা করে মাঠ ভরাট করে অট্টালিকা বানাব, নিজেদের ব্যবসার চিন্তা করে দিনরাত ব্যস্ত থাকব, সমাজের ভুলগুলো শুধরে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা করব না, বিদেশি শিক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ব, নিজেরাও কেউ কেউ অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা করব, কিশোরদের হাতে দামি দামি সাইকেল, মোটরসাইকেল দেব আর চেঁচিয়ে বেড়াব উচ্ছন্নে গেল বলে? তাদের ভালো করতে হলে আমাদের সবাইকে ভালোভাবে চলতে হবে, ভালো চিন্তা করতে হবে।
► অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। শিশু-কিশোরদের চলাফেরায় নজর রাখতে হবে। খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া যাবে না। শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দিতে হবে শিক্ষামূলক ও উদ্দীপনামূলক বই। মানসিক বিকাশে পাড়া-মহল্লায় চিত্তবিনোদনের সুযোগ রাখতে হবে—যেমন চলচ্চিত্র প্রদর্শন। দারিদ্র্যও অপরাধের বড় কারণ। তাই অভিভাবকদের কর্মসংস্থান বাড়াতে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা দরকার।