পাঁচ বছর বয়সীকে যারা খুনের মামলার আসামী করে তাদের কেন বিচার করা হয়না? এই প্রশ্নটি দিয়ে শুরু করা যেতে পারে আমাদের আজকের লেখাটি।আমাদের দুঃখ হয় তাদের জন্য যারা শিক্ষিত হয়েও আসলে মুর্খ।যারা পদে বহাল থেকেও অজ্ঞ।আমরা আজ দুজন শিশুর জীবনের গল্প শুনবো যাদের একজনে বয়স ৫ অন্য জনের বয়স ৮।তারা খুনের মামলার আসামী!প্রথম কথা হলো তাদেরকে যারা আসামী করেছে তাদের না হয় ধিক্কার দিলাম কিন্তু কাকে আসামী করা হচ্ছে না হচ্ছে সেটা না দেখেই মামলা নিয়ে নিয়েছেন যারা তাদেরকে কি বলে ধিক্কার দেব বুঝে উঠতে পারছিনা।কিংবা যখন জানা গেল আসামী দুজনই নাবালক শিশু তখনতো আইনপ্রনেতা এবং আইনের সাথে সংশ্লিষ্টদের উচিত যারা মামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা।
পৌষের কনকনে ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা দুই শিশু বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছিল ঠাকুরগাঁও জেলা আদালত প্রাঙ্গণে।প্রাথমিক ভাবে দেখলে যে কেউ ভাববে তারা বোধহয় আদালত দেখতে এসেছে অথচ প্রকৃত সত্যটা হলো তারা কোন দর্শনার্থী নন। তারা একটি সন্ত্রাসী মামলার আসামী। হাজিরা দিতেই হাজির হয়েছিল আদালত প্রাঙ্গণে। দুটি অবুঝ শিশু ও এক কিশোরকে আসামী করে মামলা দায়ের করায় জেলায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলায় মোট আসামী ১৩ জন।
যদিও দুটি শিশুকে আসামী করায় মামলার বাদীকে তিরস্কার করেছেন চীফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ওয়ালিউল ইসলাম। তবে আমরা মনে করি শুধুমাত্র তিরস্কারই যথেষ্ট নয়।ওদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড়করানো উচিত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম ও একই গ্রামের মৃত মহিরউদ্দিনের ছেলে আসামী সাজেদুর রহমান এর মধ্যে জমি জমা সংক্রান্ত মামলা চলছে যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার চলাকালীন সময়ে গত ১৬ নভেম্বর ধান কাটা মারামারি,ভয়ভীতি ও ধান চুরির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ আনেন তিনি। অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ নভেম্বর ১৩ জনকে আসামী করে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ঠাকুরগাঁওয়ে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা সাইফুল ইসলাম মামলাটি গ্রহণ করে সমন জারি করেন। মামলা নং ৩৭৫/১৭ টি।
এতে ১৩ জন আসামীর মধ্যে দুইজন প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া মোলানী গ্রামের রশিদুলের শিশুপুত্র আশরাফুল (৫) ও একই গ্রামের ওবাইদুরের শিশুপুত্র উজ্জল (৮) এবং ইসমাইল নামে একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র রয়েছে। আশরাফুল মোলানী ঝাড়গাঁও মিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র এবং উজ্জল ৯২ নং ছেপরি কুরা সরকারী বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ও কিশোর ইসমাইল মোলানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। তবে মামলার আর্জিতে ৫ বছরের শিশু আশরাফুলের ও ৮বছরের শিশু উজ্জলের বয়স দেখানো হয়েছে ২৩ বছর করে এবং কিশোর ইসমাইলের বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। এই যে বয়স বাড়িয়ে দেখানো হলো এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করা হলো এর জন্য শুধু তিরস্কার করে ছেড়ে দেওয়াটা রীতিমত অন্যায়।সব থেকে ভালো হবে যারা মামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
আদালত আসামী সকলের বিরুদ্ধে সমনজারি করলে বৃহস্পতিবার শিশু কিশোরসহ আসামীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওয়ালিউল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে অন্য আসামীদের জামিন দিলেও তিন শিশু-কিশোরকে শিশু ও কিশোর আদালতে প্রেরণ করেন। সেই সঙ্গে আদালত বাদীকে তিরস্কার করেন। অথচ আমাদের মতে খুনের মামলা না হয়ে অন্য কিছু হলে সে ক্ষেত্রে শিশু দুজনকে শিশু কিশোর আদালতে পাঠানো যেত।এটা যেহেতু খুনের মামলা এবং শুরুতেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওদেরকে মামলায় আসামীকরা হয়েছে তাই ওদেরকে সরাসরি এই মামলা থেকে নিস্কৃতি দেওয়া উচিত ছিল।বিজ্ঞ আদালত কোন নিয়মে ওদেরকে শিশু কিশোর আদালতে পাঠালেন তা আমাদের জ্ঞানের বাইরে।
আসামী পক্ষের আইনজীবি এড.জাকির হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বিবেচেনা করা হয়। আর সর্বনিম্ন ৯ বছর বয়সিদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে শিশু আইন, আলাদা অভিযোগপত্র, এজাহার এবং আদালত– এসব বিধান মানতে হবে।’ অবুঝ শিশুদের আসামী করাই আদালত বাদীকে তিরস্কার করেছে। তিনি আরো বলেন, মামলা গ্রহনের সময় আদালত সমন না দিয়ে তদন্ত দিলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না। কিন্তু এখানে কথা হলো ৯ বছর বয়সীকে কি খুনের মামলায় আসামী করা যায়?আইন কি বলে?
আরও পড়ুনঃ
- ক্ষুদে লেখক রাশিকের মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারাল।
- শিহাব এবং টিটোনের সাহসীকতার গল্প।
- অনন্য যারিফ আকন্দ,গ্রহ নয় যেন একটি নক্ষত্রের নাম।
- বয়স ১৪ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
- রিয়া দিয়া ক্ষুদে মহাতারকা।