বড় হয়ে মেয়েটি কানে পরবে দুল, বাহারি গয়না। তাই কান ফোঁড়াতে হবে আগেই। আগে
দেখা যেত গ্রামের নানি-দাদিরা কাঁথা সেলাইয়ের সুই দিয়ে কান ফুঁড়িয়ে দিতেন।
ফোঁড়ানোর পর কানে সুতা পরিয়ে দেওয়া হতো। কয়েক দিন পর সেটা খুলে কানে
দুল পরিয়ে দিতেন। তবে এখন এ কাজটা করা হয় বিভিন্ন বিউটি পারলারে। ‘আগে ছয়
মাসের বাচ্চা থেকে শুরু হতো কান ফোঁড়ানো। এখন বয়স আরও বেশি হলে কান
ফোঁড়ানো হয়। মোটামুটি ১২ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের কান ফোঁড়ানোর কাজটা
সেরে ফেলা ভালো। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের গঠনের
পরিবর্তন হয়, কানের হাড় শক্ত হয়ে যায়। ফলে কান ফোঁড়ালে কানে ইনফেকশনের
সম্ভাবনা বেশি থাকে।’—বলছিলেন রেড বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী আফরোজা
পারভীন। কান ফোঁড়ানোর ব্যাপারে তিনি দিলেন কিছু পরামর্শ।
মডেল: জেরিন। ছবি: নকশাl প্রথমেই যার কান ফোঁড়ানো হবে তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
পারলারে যে সময়টাতে কান ফোঁড়ানোর জন্য আনা হবে, সে সময়টাতে ছোট্টমণির কানের লতিতে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। এরপর সুইযুক্ত বিশেষ যন্ত্র (গান) দিয়ে কান ফোঁড়ানো হয়।
কান ফোঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই কানে গোল্ড প্লেটেড বা ইমিটেশনের কানের দুল পরানো যেতে পারে। তবে তিন দিনের বেশি দুলটা কানে রাখা যাবে না। কারণ, এতে ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে।
তিন দিনের মাথায় কানে সোনার ছোট্ট দুল পরাতে হবে ইমিটেশনের জিনিস খুলে।
যেদিন যে মুহূর্তে কান ফোঁড়ানো হবে, শরীরের কোথাও কোনো ধরনের ইনফেকশন আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে। সহজ, স্বাভাবিক, সুস্থ অবস্থায় থাকলে তারপর কান ফোঁড়াতে হবে।
কান ফোঁড়ানোর পরে লেবু, কমলার মতো ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খেলে তাড়াতাড়ি ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায়।
যেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে, সেসব একেবারেই খাওয়ানো যাবে না।
কান ফোঁড়ানোর স্থানে যদি পেকে যায় বা ইনফেকশন হয়ে যায়, ভিটামিন জাতীয় খাবার খেলে শুকিয়ে যায়।
যদি সুচ দিয়ে কান ফোঁড়ানো হয়, তবে সুচটাকে মোমের আগুনে পুড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
অনেক সময় কানের পেছনের অংশে বাচ্চারা পরিষ্কার করতে দেয় না। এতে ইনফেকশন হতে পারে।
কান ফোঁড়ানোর সময় যে স্থানটা ফোঁড়ানো হবে, সেটা অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে।
কান ফোঁড়ানোর পরে অভিভাবকদের প্রতিদিন একবার করে দেখতে হবে কানের অবস্থা কী।
ঘুমানোর সময় শিশুকে নরম বালিশ দিতে হবে।
খেলতে গিয়ে বা কোনোভাবে ব্যথা যেন না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ফোঁড়ানোর স্থানে নিজে বা অন্য কেউ হাত দিলে অনেক সময় কানে ইনফেকশন হতে পারে।
ইনফেকশন হলে
কান ফোঁড়ানোর পর অনেক সময় জায়গাটা পেকে যায় বা ইনফেকশন হতে পারে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব মোতানাব্বি জানান, ‘সাধারণত এক বছরের নিচের বাচ্চাদের চামড়া, হাড় নমনীয় থাকে, তাই এ সময়ে তাদের কান না ফোঁড়ানোই ভালো। অবশ্যই কান ফোঁড়াতে যারা দক্ষ,ÿতাদের দিয়ে কান ফোঁড়ানোটা ভালো।
কান ফোঁড়ানোর সময় যথাযথভাবে হাত ধোয়া, হাতে গ্লাভস পরা—এ রকম জীবাণুমুক্ত উপায়ে করতে হবে। কান ফোঁড়ানোর আগে জানতে হবে শিশুকে ধনুষ্টঙ্কারের টিকা দেওয়া আছে কি না। না থাকলে টিকা দিয়ে নিতে হবে। কান ফোঁড়ানোর পরে ক্ষতস্থানে পুঁজ হলে বা পাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে দিতে হবে। কান ফোঁড়ানোর পর পেকে গেলে ক্ষতস্থান যেন জীবাণুমুক্ত, ধুলোবালিমুক্ত থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
কোনোভাবেই ক্ষতস্থান শুকানোর আগে যেন ভেজা না থাকে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার ক্ষত শুকাতে সহায়তা করে। যেহেতু ছোট্টমণিদের পাতলা চামড়া, তাই কান ফোঁড়ালে সেটা শুকিয়ে যায়। কিন্তু চামড়ার মধ্যে নরম হাড় বা তরুণাস্থিতে ফোঁড়ালে সেটা সহজে শুকিয়ে যাবে না। তাতে জীবাণু সংক্রমণ হবে। কান ফোঁড়ানোর সময় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে কানের কোন জায়গায়, কোন পদ্ধতিতে সতর্ক এবং জীবাণুমুক্ত উপায়ে করা হচ্ছে কি না। কোনো ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা হলেও সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে যেন জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার সুযোগ না থাকে।’
লেখকঃ নাঈমা আমিন