ছোট্ট শিশুর কতই-না বায়না। কখনো খেলনা কেনার শখ, কখনো আবার শখ মায়ের মতো গয়না পরার। মা-বাবারও কখনোসখনো শখ হয় আদুরে মেয়েটিকে সাজানোর। তবে শিশুর কানে গয়না পরানোর আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের থেকে।
স্বস্তি পাবে এমন দুল পরাতে হবে শিশুর কানে মডেল: মোহনা ছবি: খালেদ সরকার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ এফ মহিউদ্দীন খান জানালেন, শিশুর কানের লতির গঠন সম্পন্ন হওয়ার আগে কান ফোঁড়ানো ঠিক নয়, এতে শিশুর কানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই শিশুর জন্মের পরপরই যাঁরা শখ করে কান ফুঁড়িয়ে নিতে চান, তাঁদের নিরুৎসাহিত করলেন তিনি।
যেকোনো বয়সে কান ফোঁড়ানোর ব্যাপারে তিনি জানিয়ে রাখলেন আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কানের লতি ছাড়া অন্য কোনো অংশ ফোঁড়ানো উচিত নয় কারোরই। লতি ছাড়া অন্য অংশ ফোঁড়াতে গেলে অনেক সময় কানের আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানালেন তিনি।
তবু ইচ্ছেরা তো ডানা মেলবেই। সাবধানে থেকেই ইচ্ছেপূরণ করতে শিশুর জন্য কৃত্রিম কানের দুল কেনার পরামর্শ দিলেন মিউনিজ ব্রাইডালের রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন। কান না ফুঁড়িয়েই এগুলো পরানো যায়। আজকাল বাজারে বিভিন্ন কানের দুলে কার্টুনসহ নানা মজার অবয়ব দেখা যায়। এমন কিছুই বেছে নিতে পারেন ছোট্টমণির জন্য।
কান ফোঁড়ানোর আগে ও পরে
জেনে নিন অধ্যাপক এ এফ মহিউদ্দীন খানের কিছু পরামর্শ—
সাধারণত সাত-আট বছর বয়সে শিশুর কানের গঠন সম্পন্ন হয়। তবে কেউ আগেই তা করতে পারেন। কারও আবার একটু দেরিও হতে পারে। কানের গঠন সম্পন্ন হয়েছে কি না, তা বুঝতে কোনো রকম সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কোনো ঝুঁকি নেবেন না।
শিশুর কান ফোঁড়ানোর আগে রক্তের ব্লিডিং টাইম ও ক্লটিং টাইম নামক দুটি পরীক্ষা অবশ্যই করিয়ে নেওয়া উচিত। কারও কারও কান-নাক ফোঁড়ানোর পর রক্তক্ষরণ ও রক্তপাত বন্ধ না হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরীক্ষা দুটি করিয়ে জেনে নিন, আপনার শিশুর তেমন আশঙ্কা রয়েছে কি না। পরীক্ষার ফলাফলে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
শিশুর কানে সোনার অলংকারই পরাতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। তবে খেয়াল রাখুন, অলংকারের কোনো উপাদানে শিশুর অ্যালার্জি রয়েছে কি না। কোনো নির্দিষ্ট উপাদানে তৈরি অলংকারে অ্যালার্জি ধরা পড়লে ভবিষ্যতে তা কখনোই শিশুর কানে দেবেন না।
কখনো ফোঁড়ানোর স্থানে জীবাণুর সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। এমনকি শিশুর কানের দুলে টান লেগে বা ঘুমানোর সময় চাপ লেগে শিশু কোনো অস্বস্তিতে পরলে, শিশুর কান ব্যথা করলে বা কানের রঙে কোনো পরিবর্তন এলে কখনোই নিজেরা কোনো ধরনের চিকিৎসার চেষ্টা করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
তানজিমা শারমিনের কাছে জেনে নিন শিশুর কান ফোঁড়ানোর নিরাপদ উপায়
কান ফোঁড়ানোর সময় প্রাথমিকভাবে যে দুলটি পরিয়ে দেওয়া হয়, সেটি দু-তিন দিন পর খুলে ফেলা হয়। এ কাজটি বাড়িতে নিজেরা চেষ্টা না করাই ভালো। ঠিকমতো তা খোলা না গেলে পরে কানে দুল পরতে অসুবিধা হতে পারে। তাই এ কাজেও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহায্য নিন।
প্রাথমিকভাবে পরানো দুল খুলে নেওয়ার পর সাধারণত অভিভাবকের আনা দুল পরিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত অভিভাবকেরা ২২ ক্যারেট সোনার দুল আনেন। এই দুলজোড়া বেশ কয়েক দিন একটানা পরিয়ে রাখতে হবে, তাই কেনার সময় শিশুর স্বস্তির কথা খেয়াল রাখুন। পুশ লাগানো কানের দুল অনেক সময় শিশুর কান থেকে খুলে যায়। তাই রিং-জাতীয় দুল কিনতে পারেন।
কোনো কোনো শিশু কান ফোঁড়াতে ভয় পেতে পারে। তাকে আশ্বস্ত করুন, এতে তার কোনো ব্যথা লাগবে না। কান ফোঁড়ানোর আগে ব্যথারোধী স্প্রে দিয়ে নেওয়া হয়।
লেখকঃ রাফিয়া আলম