লেখাঃ মালিহা নামলাহ
স্বপ্নবলয় পৃথিবীর গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে হবে, এ কথাটি স্বপ্নদ্রষ্টাগণ বিশ্বাস করেন না। তাই এই ছোট্ট দেশটাতেও জন্ম হয় অনেক স্বপ্নদ্রষ্টার, যারা স্বপ্ন দেখে পৃথিবীকে ছাড়িয়ে যাবার! আর স্বপ্নদ্রষ্টাদের দ্বারেই গুটি গুটি পায়ে এসে দাঁড়ায় সুযোগেরা। সেসব সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ। এমনই একটি সুযোগের নাম “NASA Human Exploration Rover Chalange”। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের এমন একটি যানবাহনের মডেল বানাতে হয় যেটা চাঁদের ভূমিতে চলাচল করতে সক্ষম। ২০১৪ সাল থেকে হয়ে আসা এই প্রতিযোগিতায় বরাবরের মতো এই বছরও বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করছে মোট চারটি দল। তাদের মধ্যে একটি দল হলো MAR-5 Synopsis Education।
বাংলাদেশের মাটিতে বসে ৭ জন কিশোর কিশোরী চাঁদে চলাচলের উপযোগী যানবাহন বানিয়েছে। দলটির অধিনায়ক আরিয়ান আন্দালিব আজিম করডোভা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এ লেভেলস (এ.এস) এর শিক্ষার্থী। আরিয়ান ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজের সাবেক ছাত্র। সে গত বছর ইয়েস এর সাথে বাংলাদেশের কালচারাল এম্বাসেডর হিসাবে আমেরিকা যায়। এছাড়াও দলটিতে আছে রুবাইয়েত ইসলাম (মূল প্রকৌশলী ও রোভার ড্রাইভার, ক্যামব্রিজ ও-লেভেলস ক্যান্ডিডেট), রাফিউল আলম খান (সহ-প্রকৌশলী নটর ডেম কলেজ, দ্বাদশ শ্রেণি), আলিফ হাসান অংকুর (মিডিয়া এন্ড টেলিমেট্রি লিড, ম্যানগ্রোভ স্কুল, স্ট্যানডার্ড নাইন), সাদীয়া আলম (মারকেটিং লিড এবং গবেষক, এডেক্সেল এ লেভেলস (এ.এস) ক্যান্ডিডেট), তাসনিয়া মুস্তফা (মূল গবেষক ও সহ-রোভার চালক, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, এ লেভেলস, এ.এস), মোহাম্মদ জাওয়াদুল হাসান (অ্যাডভাইজর, বসটন ইউনিভার্সিটি, প্রথম বর্ষ)।
অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ জাওয়াদুল হাসান একাডেমিয়া স্কুলের সাবেক ছাত্র এবং একাডেমিয়া রোবোটিক্স টিমের অধিনায়ক, যে দলটি ২০১৮ সালে একই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ের দল ছিল এবং এ বছরের দলগুলোর মধ্যে কনিষ্ঠতম অ্যাডভাইজর। দলটির প্রত্যেকে ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হলেও তারা সিনপসিস এডুকেশন এর তত্ত্বাবধায়নে এবং এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই অংশগ্রহণ করছে। প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামার হন্টসভিলে ১৬-১৮ এপ্রিল, ২০২০। দলটিকে প্রশ্ন করা হলে বলে, “দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এটাই বলতে চাই যে, জীবনে নিজের কোনো বিষয় নিয়ে প্যাশন থাকলে সেটা নিয়ে কাজ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট বয়স, কিংবা একটা সুশৃঙ্খল পরিবেশের অপেক্ষায় বসে থাকা চলবে না, সাহস এবং ভালোবাসার সাথে অভিযাত্রায় বেরিয়ে পড়তে হবে। অসংখ্য বাধা-বিপত্তি আসবে, কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারকে গড়ে তোলার জন্য ক্লাসরুমের চার দেয়ালেরও বাইরে আর ডিগ্রি অর্জনেরও ঊর্ধ্বে রাখতে হবে স্বপ্নের সীমানাটা।
আমরা এই কনটেস্ট করার কথা চিন্তা করার সময় এর বিনিময়ে কী পাবো না পাবো সেটিকে কখনো মুখ্য চিন্তা রাখিনি, রাখলে আমরা আমাদের কাজে মননিবেশ করতে পারতাম না, ভালোও করতে পারতাম না। ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার কোনো বয়স নেই, কিংবা মঙ্গলের জন্য এ ধরণের রোভার বানানোর প্রতিযোগিতার জন্য ইউনিভার্সিটির অভিজ্ঞতাই সব নয়- প্রযুক্তি-বিজ্ঞানের চর্চা করার তীব্র মনোবল এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে পরিশ্রম – এগুলো থাকলে বড় সাফল্যের পথে বয়স বা অভিজ্ঞতা অতটাও বাধা নয়। এ মন্ত্র নিয়েই এতো এতো ইউনিভার্সিটি টিমের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ প্রতিযোগিতায় মাত্র দ্বিতীয় হাইস্কুল টিম হিসাবে সকলের কাছে দিন বদলের বার্তা রেখে যাচ্ছি আমরা! যাতে করে আগামী দিনের শিশু-কিশোররাও বুঝতে পারে বিজ্ঞান চর্চা কতটা মজাদার এবং বাস্তবজীবনের নিকট হতে পারে এবং সবশেষে কেউ যাতে ভুলে না যাই আমরা- একতাই বল!
এ জিনিসটা আমরা গত কয়েক মাসে অনেক অনুভব করেছি যে যেকোনো গবেষণামূলক কাজ, বিশেষ করে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে হলে- এককভাবে করার চেয়ে একটি দল হয়ে কাজ বা প্রতিযোগিতায় অর্জিত জ্ঞান-অভিজ্ঞতা কয়েকগুন বেশি কার্যকরী হয়, এবং আনন্দময় স্মৃতিগুলো? -সেগুলো কেবলই অমূল্য! এজন্য সবাইকে আমরা আবারো বলব, ছোট বয়স থেকেই দলগত কাজ করার অভ্যাসটা বাড়াতে- ২১শ শতাব্দীতে এসে যুগান্তকারী সাফল্যের পথে এটি প্রথম শর্ত! জয়তু প্রযুক্তি-বিজ্ঞান, এবং মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা!” এভাবেই সাহসী তরুণদের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের মাঝে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করতে পারবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সর্বান্তক সহযোগিতা এবং দু’আ কামনা করছি।
Comments are closed.