সারাদেশে একযোগে বই উৎসব পালিত হলেও এর ব্যতিক্রম টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বড়শিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে বই উৎসব বর্জন করে প্রতিবাদ জানায় তারা।
সোমবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত স্কুল প্রাঙ্গনে সরকারের দেওয়া বই গ্রহণ না করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনসহ যৌন নির্যাতনকারী স্কুলের দপ্তরির দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
পরে স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি দোষী ব্যক্তির শাস্তির নিশ্চয়তা দিয়ে অনুরোধ জানালে দুপুর দেড়টার দিকে বই গ্রহণ করে তারা।
জানা যায়, উর্মি, নুপুর, পায়েল, সিয়াম গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সোমবার সকাল নয়টায় তাদের স্কুলেও ছিল পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উৎসব। কিন্তু স্কুলের তিন শতাধিক শিশুর মন ছিল খুবই ব্যাথাতুর। তারা বই যথাসময়ে গ্রহন না করে টানা তিন ঘণ্টা মানববন্ধন করে। তাদের সহপাঠি তৃতীয় শ্রেণির এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার আসামিকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে এ মানববন্ধন।
শিশুরা জানায়, তাদের সহপাঠি তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে স্কুলে একা পেয়ে গত ৪ ডিসেম্বর সকালে যৌন নির্যাতন করেন একই স্কুলের দপ্তরি লুৎফর রহমান। পরে ছাত্রী ও তার মা বিষয়টি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে অবহিত করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে কন্যা শিশুর অজুহাত তুলে বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য মাকে চাপ প্রয়োগ করে। মা ভয় পেয়ে বিষয়টি গোপন রাখে।
পরে ওই রাতেই ওই দপ্তরির আপন চাচাতো বোন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নাজনীন নাহার মেরি’র অভিযুক্ত দপ্তরিকে সাথে নিয়ে বাড়ি আসে এবং ভুল স্বীকার করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেবার অনুরোধ করে। কিন্তু এতে শিশুটি প্রতিবাদ করলে বাবা এলাকার লোকদের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে থানায় মামলা করে।
শিশুটির বাবা বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ধারায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ নানা টালবাহানায় আসামি লুৎফরকে গ্রেপ্তার করছে না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমীন জানান, ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার খবর পেয়ে ওই শিশু ও তার বাবাকে অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। মৌখিক জবানবন্দী সত্য মনে হওয়ায় থানায় মামলা দায়েরে সহযোগিতা করা হয়। পুলিশ যাতে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয় এজন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, ঘটনার বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে কিছু কথা আসছে। এ জন্য নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে কিছু সময় লাগছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোপালপুর সার্কেল মোহাম্মদ আহাদুজ্জামান গত দুদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।