spot_img
More
    Homeইচ্ছেপুরণঅটিষ্টিক শিশুদের ভবিষ্যত স্বপ্ন

    অটিষ্টিক শিশুদের ভবিষ্যত স্বপ্ন

    অটিস্টিক সন্তানের অভিভাবক হিসেবে একসময় তাঁরা নিজেদের অসহায় ও একা ভাবতেন। এখন সেই নিঃসঙ্গতা আর নেই। প্রায় ১ হাজার ১৪৫ জন অভিভাবক নিজেদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তুলেছেন। তাঁরা এখন একসঙ্গে সন্তানদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন।

    অটিস্টিক সন্তানের অভিভাবকদের একত্র করেছে প্যারেন্টস ফোরাম ফর ডিফারেন্টলি অ্যাবলড নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে এই সংগঠন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধন করা এ সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ৫০ টাকা। তবে এর বাইরে আর্থিকভাবে সচ্ছল অভিভাবকেরা অনুদান দেন বা অন্যভাবে সহায়তা করেন।

    কেন ফোরামের সঙ্গে যুক্ত হলেন—এ প্রশ্নে অভিভাবকেরা তাঁদের কষ্টের ঝাঁপি খুলে ধরলেন। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, ফোরাম তাঁদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। মনে সাহস জুগিয়েছে। তাঁরা এখন আর একা নন। সন্তানদের জন্য সম্মিলিতভাবে আবাসন তৈরিসহ নানান স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা।

     অভিভাবক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট সাজিদা রহমান ড্যানিও একজন অটিস্টিক সন্তানের অভিভাবক। তিনি বলেন, ‘নিজের সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চরকির মতো ঘুরেছি। বেশির ভাগ জায়গা থেকেই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। সব অভিভাবকের অভিজ্ঞতাই এক। একত্র হওয়ার পর আমাদের হতাশাটা কমে এসেছে। অভিভাবকদের কেউ চিকিৎসক, কেউ আইনজীবী, কেউ শিক্ষক বা অন্য পেশায় আছেন। যোগাযোগ গড়ে তোলার ফলে বর্তমানে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সমস্যায় এক অভিভাবক অন্য অভিভাবকের কাছ থেকেই সহায়তা পাচ্ছেন।’

     অটিস্টিক সন্তানের অভিভাবকেরা গড়ে তুলেছেন সংগঠন
     অভিভাবকেরা একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন
     প্রশিক্ষণসহ নানা রকম কার্যক্রম চলছে

    সাজিদা রহমান বলেন, ‘অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী সুরক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন আইনের খসড়া করে সরকারের কাছে জমা দেওয়াসহ আমরা আমাদের চাহিদাগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারছি। অভিভাবকদের তথ্য জানানো ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

    অভিভাবক ফোরাম প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সাজিদা রহমান দেশে অটিস্টিক ব্যক্তিদের জন্য নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি প্রোটেকশন ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের অধীনে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছেন। এখানে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। অভিভাবক ফোরামের সদস্যদের অনেকের সন্তান এ কেন্দ্র থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মহাখালীতে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বসেই কার্যক্রম চালানো হয়।

    গত সোমবার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বসে কথা হয় কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। কথা বলার সময় কম্পিউটার, বেকারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া অনেকেই ছুটির আগে আগে উঁকি দেন। বাবা বা মা বলে দেওয়ার আগেই অনেকে প্রতিবেদককে সালাম দেয়। হুট করে সেখানে চলে আসার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। এ সময় অভিভাবকদের মুখগুলো খুশিতে ঝলমল করতে থাকে।

    সাজিদা রহমানের মতে, এখন পর্যন্ত অটিস্টিক শিশু ও ব্যক্তিদের জন্য দেশে আছে শুধু বিভিন্ন বিশেষ স্কুল। একটা বয়সের পর তাদের আবার ঘরে ফিরে যেতে হতো। অভিভাবক ফোরামের অভিভাবকেরা সহায়তা করছেন বলেই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চালানো সম্ভব হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পর্যটনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩৫ জনের চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।

    অভিভাবকেরা জানালেন, ফোরামের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের জন্য পিকনিক, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। অভিভাবকেরা নিজেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ উদ্যোগেই আবার তা অন্য অভিভাবকদের শেখাচ্ছেন।

    গত বছর ‘বেস্ট মাদার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন রুনিয়া মকবুল। নিজের গলার পুঁতির মালা দেখিয়ে গর্ব করে বললেন, ‘এই মালা আমাদের ছেলেমেয়েরাই বানিয়েছে। আমরা আলাপ করতে করতে চায়ের সঙ্গে যে বিস্কুট খেলাম, তাও ওরা বানিয়েছে।’

    রুনিয়া মকবুলের ছেলের বয়স ২৬ বছর। তিনি বলেন, ‘দুই বছর হলো আমি ফোরামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এখন আমি ঠোঁটে লিপস্টিক দিই। অথচ আমার জীবন থেকে সব রং চলে গিয়েছিল। আমার আর আমার ছেলের মুখে হাসি দেখতে ২৪ বছর অপেক্ষা করতে হলো।’

    রুনিয়ার পাশে বসা শিল্পী বেগম বললেন, ‘কাঁদতে কাঁদতে একসময় চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল, এখন আমি হাসতে পারি।’

    অভিভাবকেরা জানালেন, তাঁরা এখন সন্তানদের প্রজনন ও যৌনস্বাস্থ্য বিষয়েও আলোচনা করছেন। সন্তানেরা বিয়ে, সংসার করতে পারবে কি না তা আলোচনা করার সাহস পাচ্ছেন।

    ছোটদেরবন্ধু
    ছোটদেরবন্ধুhttps://www.chotoderbondhu.com
    সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবনের এক একটি দিন পার করা।সেই ধারাবাহিকতায় ছোটদেরবন্ধু গড়ে উঠছে তিল তিল করে।
    RELATED ARTICLES

    16 COMMENTS

    Comments are closed.

    Most Popular