লেখাঃ তাহমিনা তানিয়া
এমন করে লোকটি ধমকে উঠবেন বুঝতে পারিনি! আচমকা ধমক শুনে মা ছেলে আঁৎকে উঠলাম ! বাসে করে যাচ্ছিলাম। দুই ঘণ্টার মতো বসে আছি বলে আফিপ একটু উঠে দাঁড়িয়েছে।
সামনের ভদ্রলোক এর চুল কাটা আর্মি স্টাইলে। আফিপ একটু করে কাঁটা কাঁটা চুল ছুঁয়ে দিয়েছে কেবল। একটু করে হাত বুলিয়েছে মাত্র। সাথে সাথে লোকটি বিশাল হুংকার, এই ছেলে তুমি আমার মাথায় টোকা দিচ্ছো কেন ?
লোকটির হুংকার শুনে আমি আর আমার ছেলে আঁৎকে উঠলাম। ছেলে ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো জোরে। প্রথমে ছেলেকে বোঝালাম- বাবা, অপরিচিত মানুষের গায়ে হাত দিতে নেই। এসো বাবা বসি, আর একটু বসি। এইতো চলে এসেছি,আর অল্প…
তারপর ভদ্রলোকের চলমান ধমকের উত্তরে বললাম, আমার ছেলে একটি বিশেষ বাচ্চা। প্লিজ, কিছু মনে করবেন না। আর ও আপনাকে স্পর্শ করেছে মাত্র, টোকা দেয়নি।
না, উনি দমবার পাত্র নয়। আমি কেন ওকে আমার ছেলেকে খেয়াল করে রাখলাম না- তাই নিয়ে শাসানো উপদেশ ভদ্রলোকের।
ধমক কম শুনে অভ্যস্ত আমি। এই ভদ্রলোকের ধমক শুনে কাঁপন ধরে গেল। একটু অপ্রস্তুত ছিলাম।
আশে-পাশের সকলে বোঝাতে লাগলো, প্রতিবন্ধী ছেলেকে কেন আমি দেখি রাখিনি- এই আমার অপরাধ! অনেক আগে থেকেই আমি মেনে নিয়েছি ‘প্রতিব›ন্ধী’।
বিশেষ হোক আর যাই হোক কিছু তো বন্ধু আছে আফিপের। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বললাম, আপনি যেভাবে ধমকে উঠলেন এভাবে একটি সুস্থ বাচ্চার সাথেও কথা বলা উচিত না। আর আমার ছেলে তো বিশেষ শিশু। ওর লেবেল এত ভাল যে ও আপনাকে হিট করেনি। অন্য বাচ্চা হলে আপনাকে ভয়ংকর কিছু করে বসত। হয়ত কামড়ে দিত, নইলে কষে একটা চড় লাগাত। পারতেন ওটা সহ্য করতে?
আমার যারা বন্ধু, ভাই। যাঁরা আমায় ভালবাসেন, তাঁদের বলছি, দয়া করে বাচ্চাদের সাথে এমন আচরণ করবেন না। বাসে, ট্রেনে, প্লেনে। পথে-ঘাটে আপনার সাথের মানুষটি একটু অন্য রকম হতেই পারে। বুঝবার ক্ষমতা আপনার ভাল, অন্যেরও যে একই হবে এমন তো কোনো দৈববাণী নেই! তাই না ?
অভিমতঃ
আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী শিশু কিশোর কিশোরীদের প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে।সেই সাথে তাদের পরিবারকে শুনতে হচ্ছে অনেক কটুকথা। অথচ আমাদের উচিত এই বিশেষ শিশুদের প্রতি আরো বেশি সদয় হওয়া,যত্নবান হওয়া। ওরাতো আমাদেরই অংশ।ওদের প্রতি আমাদের মমতা বাড়িয়ে দিতে পারলে নিশ্চই ওদের আরো কিছুটা উন্নতি হতো।
আমাদের খুবই লজ্জা হয় যে এই সমাজে এখনো এমন সব মানুষ আছে যারা এই সব ছেলে মেয়েকে এবং তার পরিবারকে মানুষই মনে করে না বরং প্রতিনিয়ত নানা কথার বানে জর্জরিত করে যা আপাত দৃষ্টিতে অপরাধ বলেই আমরা মনে করি। আসুন আমরা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনি এবং এই সব শিশু কিশোরদের ভালোবাসি।
আরও পড়ুনঃ
- ক্ষুদে লেখক রাশিকের মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারাল।
- শিহাব এবং টিটোনের সাহসীকতার গল্প।
- অনন্য যারিফ আকন্দ,গ্রহ নয় যেন একটি নক্ষত্রের নাম।
- বয়স ১৪ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
- রিয়া দিয়া ক্ষুদে মহাতারকা।
Comments are closed.