অতিপরিচিত ব্যস্ত রোবটিক ধাচের অনবরত ছুটে চলা পৃথিবীর এ যেন এক ভিন্ন রূপ। করোনা আতঙ্কে পুরো বিশ্বের সে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আজ ব্যহত… স্কুল-কলেজ বন্ধ, অফিস-আদালতেও সবার ছুটি… নিস্তব্ধ-শান্ত এ পৃথিবীতে যেন নেই প্রানের স্পন্দন, নেই কোনো কর্মব্যস্ততা, নেই কোনো মানুষের পদচারনা…
পুরো পৃথিবীর মত বাংলাদেশেও বিরাজমান এ থমথমে অবস্থা। হোক তা জনবহুল কর্মব্যস্ত ঢাকা কিংবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। সবকিছুই যেন এখন প্রাণহীন। করোনার হাত থেকে বাঁচতে সবাই পার করছে এক বন্দী জীবন। কেউ বা স্বেচ্ছায়, আবার কেউ বা বাধ্য হয়েই পার করছে এক উৎকন্ঠার, উদ্বিগ্নতার, অনিশ্চয়তার জীবনযাপন।
এ কোয়ারেন্টাইনে থাকাবস্থায় আমরা অনেকেই বেহাল! অবশ্য তা তো হবারই কথা, পুরোদিন ব্যস্ততার আষ্টেপৃষ্ঠে এক মুহুর্ত দম ফালানোর সুযোগ না পাওয়া মানুষগুলো যখন হুট করে একদম ব্যস্ততাহীন ফ্রি-টাইম পেয়ে যায়, আবার তার সাথে যোগ হয় এক ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে রোগের চিন্তা…… তখন কি আর ভালো লাগে?!?
দেশে করোনা আগমনের প্রায় ৪৫ দিন হতে চলল। এ সময়ে অনেকেই নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন এই চারদেয়ালে আবদ্ধ থেকে সময় কাটাতে… অলসভাবে ঘুমিয়ে কিংবা পুরোটা সময় মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দিন পার করে দেয়াতেই সিংহভাগেরা হয়ে উঠেছে অভ্যস্ত, কিন্তু তাতেও বা আর কতক্ষন সময় কাটে?!? সবার একটাই আশা, চলে যাক করোনা, শুরু হোক স্বাভাবিক জীবনযাপন… এ সময়টা যেন আর কাটতে চায়না… অথচ এ অলস সময়ই হয়ে উঠতে পারে বেশ কার্যকরী এবং মজাদার!
তো চলুন দেখে আসি, কিভাবে দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্নতাকে পাশ কাটিয়ে আনন্দে কাটানো যায় কোয়ারেন্টাইনের এ সময়গুলো… একটু ভিন্নভাবে……
🔶 ফিরে আসুক হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো:
পূর্বের কর্মব্যস্ত জীবনের বেড়াজালে প্রায় সময়েই খোজ-খবর নেয়া হয়ে উঠতোনা অনেক আপনজনেরই। ফেসবুকে মাঝেমধ্যে পোস্টে রিয়েক্ট কিংবা স্টোরির রিপ্লাইতেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকত যোগাযোগ। কিন্তু এখন তো ফ্রি সময়… তো, সকলের সাথে পুনরায় মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এ সময়টা প্রাণবন্ত হয়ে উঠলে কেমন হয় ? পুরাতন বন্ধু-বান্ধব কিংবা কলিগদের ফোন দিন, খোজ-খবর জিজ্ঞেস করুন, পুনরায় নিয়মিত সে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করুন! তাদের সাথে স্মৃতিচারণার মাধ্যমে ফিরে আসুক শৈশব, ফিরে আসুক শৈশবের মানুষগুলো!
🔶 সময় দিন নিজেকে:
যান্ত্রিক জীবনযাপনের অভ্যস্ততায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি তো?!? দশদিকের দশরকমের দায়িত্ব সামলাতে যেয়ে নিজেকে হয়ত সময় দেয়া হয়নি কতদিন। নিজেকে সময় দিন, একা একা সময় কাটান, নিজের জীবন, নিজের লক্ষ্য, চাওয়া-পাওয়াগুলোর সুস্পষ্ট ধারনা মস্তিষ্কে সেজে উঠুক আরেকটিবার!
🔶 সময় কাটান শৈশবে যেভাবে কাটাতেন:
সেই ছোটবেলায় যেসব খেলা নিয়ে ভাই-বোন কিংবা বন্ধুদের সাথে সারাদিন মেতে থাকা হতো সে খেলাগুলোর কথা মনে আছে তো? লুডো, ক্যারাম, দাবা, ষোলগুটি, কড়ি খেলা, চোর-পুলিশ…… না জানি কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে খেলাগুলোর সাথে। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে এখন আর এদের সাথে দেখা নেই বললেই চলে! কোয়ারেন্টাইনের এ বোরিং জীবনে সে খেলাগুলোই কি হয়ে উঠতে পারেনা সময় কাটানোর এক চমৎকার উপায়?!? তো ভাবনা কি, ধুলো পড়ে থাকা লুডো-বোর্ড, দাবা কিংবা ক্যারাম নামিয়ে পরিবারের সাথে মেতে উঠুন আনন্দে!
🔶অপূর্ণ শখগুলো হয়ে উঠুক নিয়মিত চর্চার বিষয়:
উঠতি বয়সে অনেকেরই কত ধরনের শখ থাকে…… বড় হতে হতে পড়াশোনা কিংবা অফিসের কাজের ভারে সে গায়ক, শিল্পী, কবি, গিটারিস্ট কিংবা লেখক… কালের গহ্বরে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ছবি আঁকা, গান গাওয়া, লিখালিখি করা কিংবা গিটার বাজানোর দিনগুলো বাস্তবতার ভিড়ে এখন কেমন যেন ধোয়াশাপূর্ন স্মৃতি বলে মনে হয়। সময়ের অভাবে দৈনন্দিন জীবনের রুটিন হতে কোথায় যেন হারিয়ে যায় সেই প্রিয় শখগুলো…
করোনার এ অবসর সময়ই হয়ত উপযুক্ত সময় সে দিনগুলোকে আরেকটিবার বেঁচে নেয়ার। বিভিন্ন কারনে অন্যান্য কাজের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া নিজের সে সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলুন আরেকটিবার। উঠে পড়ুন ব্রাশ-পেন্সিল, কলম কিংবা গিটার নিয়ে। শুরু করুন পান্ডুলিপিটার সে অসমাপ্ত মাঝের পাতা থেকে, গিটারের সে অপূর্ন কর্ড থেকে, গানের সে ছেড়ে দেয়া সুর থেকে কিংবা রঙের শেষ না করা সে স্বপ্নের ক্যানভাস থেকে……
🔶শেষ না করা কাজগুলো শেষ হোক এ অলস সময়ে:
বুকশেলফ কিংবা নিজের মোবাইলে তৈরি করা মুভি লিস্টের দিকে তাকান তো। হয়ত অনেক সুন্দর কিছু মাস্টারপিস বই কিংবা মুভির নাম চোখের সামনে এসে পড়ব, যা অনেক আগে থেকেই শেষ করার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু সময়ের অভাবে আর হলো কই! শেষ করে ফেলুন সেই অসমাপ্ত বই কিংবা মুভি। অলস সমইয়ে হারিয়ে যান বইয়ের পাতায় কিংবা মুভির জগতে…
🔶শৈশব-চারনায় স্মৃতি রোমন্থন:
ঘরের আলমারী কিংবা পুরনো কোনো টেবিলের ফাঁকফোঁকরে ধুলোপড়া পুরনো কোনো বাক্স কি পড়ে আছে বছরের পর বছর? একটু উল্টেপাল্টে দেখুন তো। হতে পারে সেখানে আছে আপনার শৈশব-কৈশোরের হাজারো স্মৃতি। বাচ্চাকালের লাইটওয়ালা পিস্তল কিংবা প্লাস্টিকের গাড়ি অথবা কোনো পুতুল। আবার পেয়ে যেতে পারেন কোনো ডায়েরি যেখানে খুজে পাবেন হারিয়ে যাওয়া সে দিনগুলোকে! এ অবসর সময়ে নাহয় একটু শৈশবের সময় থেকেই ঘুরে এলেন!
🔶মেতে উঠুন পরিবারের সাথে:
পুরো পরিবার মিলে আড্ডা হতে পারে সময় কাটানোর অনেক আনন্দদায়ক উপায়। পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে চা-আড্ডায় বসুন, বাচ্চাদের নিজের শৈশবের কথা শোনান, বড়দের কাছ হতে তাদের ঘটনাগুলো জানুন। আড্ডায় আড্ডায় দূরে থাকুক করোনার চিন্তা!
🔶কোর্স করে সময় পার:
করোনার কারনে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অনলাইন সাইট ফ্রি করে দিয়েছে বিভিন্ন কোর্স যা ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে করে নেয়া সম্ভব। তাই পছন্দের ক্ষেত্রসমূহের না জানা জ্ঞানগুলো অর্জিত হোক এ সময়ে!
এছাড়াও টুকটাক মেডিটেশন, নোটবুকে লিখা, ছাদে বসে প্রকৃতি উপভোগ করেও সময় কাটতে পারে বেশ। মোটকথা, যাই করুন না কেনো, ঘরে থাকার সময়টা থাকুন দুশ্চিন্তামুক্ত। হাসি-খুশি থাকুন, সুস্থ থাকুন!
-নাজমুস সাকীব
#ঘরে_থাকুন_সুস্থ_থাকুন
আরো পড়ুন:
Comments are closed.