ভোরের আলো ফুটে উঠতে না উঠতেই চারদিকে যখন বকুল ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে থাকে সারা উঠোন, সারা বাড়ি ঠিক তখন দক্ষিণের জানালা থেকে এক সুমধুর কন্ঠে ভেসে আসে “বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল, চাই না হেনা চাই আমের মুকুল” বকুলের গন্ধে মন মাতোয়ারা হয়ে মিষ্টি কন্ঠের খোজ নিতে ওদিকটাতে পা রাখতেই চোখে পড়ে ব্যাকুল হয়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করছে এক রাজপুত্র। যেন আকাশ থেকে নেমে আসা কোন এক রূপকথার রাজপুত্র যে কিনা বকুল ফুলের চেয়ে বেল ফুল ভালোবাসে। এই ভালোবাসা রীবন্দ্রনাথের হাত ধরে তার কন্ঠ হয়ে মধুর সুরে বেরিয়ে আসছে। এই গানের মানুষটির নাম নীল। শঙ্খনীল। পুরো নাম আবু মুহম্মদ আরিয়ান মুনতাসির শঙ্খনীল।
জন্ম ও বেড়ে ওঠাঃ
২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, শহরে যখন রাতের কড়ানাড়া ঠিক সেই সময়ে রাত সাড়ে দশটার সময় ঢাকার রাজারবাগের প্যানপ্যাসিফিক হাসপাতালে মায়ের কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিল এই রাজপুত্রটি। নীলের বন্ধুরা বলে ও খুব পজেটিভ। খোজ নিয়ে দেখা গেলা নীলতো পজেটিভ হবেই তার রক্তের গ্রুপটাও যে ও পজেটিভ। জন্মের পর পরিবারের সাথে সে নারায়নগঞ্জে বেড়ে উঠতে থাকে।
শিক্ষা জীবনঃ
ছোট্ট রাজপুত্রটি একটু একটু করে বড় হতে থাকে আর মায়ের কাছ থেকে শিখে নেয় অ আ ক খ। তার পর হাটিহাটি পা পা করে তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় নারায়নগঞ্জের চেইঞ্জেস স্কুলে। সেখানে প্লে গ্রুপে ভর্তি হয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে থাকে। কিছুদিন পর স্কুল পরিবর্তন করে সে ভর্তি হয় হেরিটেজ স্কুলে। যখন সে ক্লাস ফাইভে উঠলো তখন পরিবারের সাথে রাজধানী শহর ঢাকাতে চলে আসে এবং কল্যাণপুরে বসবাস করতে শুরু করে। ফাইভে কল্যাণপুর দ্বীন কেজি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে পিএসসি পাশ করে বর্তমানে মাইলস্টোন স্কুলে (মোহাম্মদপুর শাখা) ক্লাস সিক্সে পড়াশোনা করছে ইংলিশ ভার্সনে।
প্রতিভার বিকাশঃ
ছোট্ট নীল সাড়ে তিন বছর বয়সেই স্কুলে যেতে শুরু করে। তারও আগে তিন বছর বয়সে নারায়নগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীতে ছবি আঁকার ক্লাসে ভর্তি হয়। আর চার বছর বয়সেই শুরু করে গানের তালিম নিতে। নারায়নগঞ্জের বসন্ত বাহার একাডেমিতে নীলের আম্মু গান শিখতেন। পরে যখন তিনি ঢাকায় চলে আসলেন তখন আর গানের চর্চা হয়নি। একদিন নীলের মায়ের গানের টিচারের সঙ্গে দেখা। তিনিই বললেন, নীলকে গানের স্কুলে ভতি করে দিতে। ওখানে পাঁচ বছরের কোর্স শেষ করে ছায়ানটে ভর্তি হয়েছে। সঙ্গীত সুচনায় এবার দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করল। পরীক্ষা চলছে।
নীলের যত শখ:
গান গাওয়া ও শোনা, ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি ও মডেলিং।
নীলের প্রথম শখ ভ্রমণ। ঘুরতে খুব পছন্দ করে। পাহাড় না সমুদ্র, কোনটা পছন্দ জানতে চাইলে অকপটে সমুদ্রই বলবে। আর তাই স্কুল ছুটি পেলেই পরিবারের সাথে সে ছুটে বেড়ায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নীল খেলাধুলা খুব পছন্দ করে। তবে তার মায়ের অভিযোগ নীল খেতে চায় না মোটেও।
নীলের অন্যান্য গুনাবলীঃ
নীল অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির। পড়াশোনা করতে পছন্দ করে। কিন্তু পরীক্ষা দিতে পছন্দ করেনা। ক্লাসে বরাবরই রেসপন্স ভালো, টিচাররা বলেন। নীল তার ক্লাস ক্যাপ্টেন। কিন্তু পরীক্ষার খাতায় সব লিখতে চায় না। যেটুকু ইচ্ছে লিখে চলে আসে। প্রচুর কথা বলে। অথচ নীলের মায়ের পছন্দ শান্ত ছেলে। কিন্তু নীল কি আর শান্ত থাকতে পারে? সে শিখেছে “ আমি হবো সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসুম বাগে উঠবো আমি ডাকি”। সকালবেলার পাখি হয়ে সবার ঘুম ভাঙ্গানো ছেলেটা শান্ত থাকলে আনন্দ দেবে কে? নীলের মায়ের খুব ইচ্ছা ছেলে ক্লাসিক গান করুক সে জন্য নিয়মিত চর্চাও করান কিন্তু রাজপুত্রটার মাঝে মাঝে মন চায় “বিশ্বটাকে দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে” আর তাই সুযোগ পেলেই ইংরেজী পপ গান গাইতে শুরু করে। মায়ের সেটা শুনে ভালোও লাগে আবার খারাপও লাগে। আবু মুহম্মদ আবদুস সামাদ আর আমিনা পারভীন লাবণ্য লিপির সংসারের একমাত্র রাজপুত্র সে। নীল বিভিন্ন সময়ে মডেলিংও করে থাকে। পত্রিকাতে সেই সব ছবি দেখে নীলের বন্ধুরা অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে পত্রিকার ছবির মানুষটা তাদের বন্ধু! ভাবা যায়।
নীল খুশি হয়। সব কিছু মিলে নীল আকাশের মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ায় সবার ভালোবাসার আকাশের নীল পাখি হয়ে। আদর করে সবাই ডাকে শঙ্খনীল।