স্বপ্নবাজ এক কিশোরের স্বপ্নযাত্রা
একটি স্কুল, যেখানে নেই কোনো সিলেবাস, নেই কোনো পরীক্ষা, নেই কোন শিক্ষক! আজব না? শিক্ষক ছাড়া আবার স্কুল হয় কি করে? হ্যা, সানি এমনই একটা স্কুল বানানোর স্বপ্ন দেখে। শিক্ষক থাকবে না তা অবশ্য ঠিক না। সেই স্কুলে শিক্ষার্থীরাই হবে নিজেদের শিক্ষক। ক্লাসরুমের বদলে স্কুলে থাকবে বিশাল বিশাল ল্যাব আর লাইব্রেরী। স্কুল সম্পর্কে বিস্তারিত পরিকল্পনা করে ফেলেছে সানি, ইতিমধ্যে থিসিস করছে এই স্কুল নিয়ে, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। স্কুলটির মূল বিষয় হলো শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা স্বাধীন পড়াশোনা, সমতা, আর্থিক প্রতিবন্ধকতাহীনতা আর শিক্ষার পরিধি বৃদ্ধি করা। স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরা তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করবে। শিক্ষাব্যবস্থার একটি নতুন ধারণার বাহক হয়ে আসবে এই স্কুলটি।
ইহতাসামুল হক সানি বর্তমানে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। ২০১৫ সালে সে মার্শাল আর্ট এ কোরিয়া কাপ জয় করে, ২০১৬ সালেও মার্শাল আর্ট এ জাতীয় পর্যায়ে পুরষ্কার পায়। ২০১৭ সালে “ডিবেট ফর হিউম্যান রাইটস” এ বিতর্ক করে পুরষ্কার অর্জন করে। স্কুলে থাকাকালীন “আঠারো” নামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করে সে। আঠারো থেকে পথশিশুদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম এবং বৃক্ষরোপন কর্মসূচি করেছে সানি।
এছাড়াও তার বিশাল একটি সার্থকতার নাম হলো “উচ্ছাস প্রহর”। “উচ্ছাস প্রহর” বর্তমানে বাংলাদেশের শিশু কিশোর কিশোরীদের জন্য মেধার এক বিশাল মিলনায়তন। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশের ব্রত নিয়ে এই সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে ২০১৭ সালে। এই সংগঠণটির প্রতিষ্ঠাতা ইহতাসামুল হক সানি। তাকে তার সহকর্মীরা মজা করে “ফাউন্ডার ভাই” বলে ডাকে। এই অদ্ভুত নামের পেছনে কারণ হলো এই কিশোরটি খুব ছোট বয়সেই অনেক বড় বড় কিছু উদ্যোগ নিয়ে ফেলেছে। হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, “যে মানুষটার স্বপ্ন যতো বড়, সেই মানুষটা ততো বড়”। সুতরাং সেই অর্থে সানিকেও অনেক বড় মানুষ বলা চলে।
উচ্ছাস প্রহর থেকে সানি এ পর্যন্ত আয়োজন করেছে ফটোগ্রাফি কন্টেস্ট, কুইজ প্রতিযোগিতা এবং “গল্পকার” নামে জাতীয় গল্প লেখা প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতাগুলোয় অংশগ্রহণ করেছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। “গল্পকার” এ অংশগ্রহণ করেছে ঢাকা, ফেণী ও দিনাজপুরের প্রায় ৩০টি স্কুলের শিক্ষার্থী। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এ বছরই “গল্পকার” এর পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরই ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে উচ্ছাস প্রহর থেকে আয়োজিত হতে যাচ্ছে “শিল্পকথা” নামে “আর্ট এন্ড কালচার ফেস্ট”। উচ্ছাস প্রহর মূলত কাজ করে শিল্প ও সাহিত্য নিয়ে। উচ্ছাস প্রহর পেইজের অধীনে আছে “উচ্ছাস প্রহর ক্রিয়াটিভ জোন”, “ফটগ্রাফি স্কুল”, “কালার ওয়ার্ল্ড”, “মিম আর্ট” ইত্যাদি গ্রুপ যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রত্যহ বিভিন্ন জিনিস শিখছে ও নিজেদের মেধা প্রকাশ করছে। নিজের সংগঠন ছাড়াও সানি বর্তমানে যুক্ত আছে নানাবিধ সংগঠনের সাথে। “ইউথ প্রিনিয়ার নেটওয়ার্ক” এর সিএ এবং “প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়” এর সিএ পদে কাজ করছে সে।
কিশোরদের উদ্দেশ্যে সানি বলে, “মঞ্চের পেছনে না থেকে সামনে আসো, নেতৃত্ব দিতে শেখ, মনের যতো জড়তা আছে ঝেড়ে ফেল”।