সব সময় আমরা বেলুন ফুলানোর জন্য কি করি? হয়তো বলবে এটা আবার কোন কথা হলো! বেলুন ফুলাতে হলেতো আমাদেরকে ফু দিতে হবে নয়তো পাম্প মেশিন দিয়ে হাওয়া দিতে হবে।সবার মত তিশিয়ানও এটাই জানতো এবং ভাবতো।কিন্তু একদিন ওর বিজ্ঞান ক্লাসে টিচার বললেন ফু না দিয়েও বেলুন ফুলানো যায়!!
একথা শুনে নিশ্চই তোমরা ভীষণ অবাক হচ্ছ? ঠিক একই রকম অবাক হয়েছিল তিশিয়ান এবং ওর বন্ধুরা।পরে ক্লাস টিচার যখন বিজ্ঞানের মজার এই ঘটনাটি বিস্তারিত বললেন তখন তিশিয়ান সহ অন্যরা মনে মনে ভাবলো হ্যা তা হলেও হতে পারে।কিন্তু বিজ্ঞান বলে কথা।হাতে কলমে প্রমান না করলে কি আর চলে? এর পর কি করেছিল তিশিয়ান? আচ্ছা সেটা না হয় পরেই বলি তুমি হলে কি করতে?নিশ্চই ক্লাস টিচার সত্যি বলেছে না বানিয়ে বলেছে তা প্রমান করে দেখতে চাইতে?তিশিয়ানও ঠিক এই কাজটাই করেছিল।
বাবা রংতুলিতে নানা রকম ছবি আকতে ব্যস্ত।স্কুলও সেদিন ছুটি।বাইরে প্রচন্ড গরম ছিলো এবং একটু পর ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।এর মাঝে তিশিয়ানতো বন্ধুদের সাথে খেলতে যেতে পারবে না।কি করা যায়?সে ভাবতে থাকে।কয়েকবার বাবার আকাআকির রুমে গিয়ে বাবার ছবি আকা দেখতে চেষ্টা করেছে কিন্তু মন বসেনি।বাবাকে সে বললো বাবা কি করি বলোতো।কিচ্ছু করার মত পাচ্ছিনা।বাবা ওকে বললো এইতো সেদিন স্কুলে বিজ্ঞান ক্লাসে ফু না দিয়ে বেলুন ফুলানোর কথা বলেছিল তুমি চাইলে ওটাই পরীক্ষা করতে পারো।বাবার কথাটা মনে ধরলো।মুহুর্তেই তিশিয়ানের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।সে আর একমুহুর্ত দেরি না করে নিজের রুমে গিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলো।
যারা যারা নিজেরা এমন করে পরীক্ষা করে দেখতে চাও তাদের জন্য তিশিয়ান কি কি করেছিলো তার বিবরণ তুলে ধরা হলো।
যা যা লাগবে:
১। তিশিয়ান
প্রথমে বাতাস ছাড়া বেলুন নিলো।তুমিও বাতাস ছাড়া বেলুন নাও।
২। তিশিয়ানের মত এবার তুমি ভিনেগার নাও। (পাতলা এবং কম পরিমাণে)।ভিনেগার চেনো নিশ্চই?যে কোন সুপারশপে গেলেই ভিনেগার কিনতে পারবে।
৩। তিশিয়ানের মতই তুমি এবার একটি খালি বোতল নাও। (অবশ্যই প্লাস্টিকের হতে হবে)
৪। ২ টেবিল চামচ পরিমাণ বেকিং সোডা লাগবে।
৫। দুটি ফানেল ও নিতে হবে।
ফু না দিয়ে বেলুন ফুলানো পরীক্ষা পদ্ধতি:
তিশিয়ান প্রথমেই একটি ফানেল নিয়ে বোতলের মুখে বসিয়ে দিলো। এবার সাবধানে ফানেলের ভিতর দিয়ে বোতলের ভিতর ভিনেগার প্রবেশ করালো। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম তিশিয়ান ভিনেগার দিয়ে বোতলের অর্ধেক পরিমাণ ভর্তি করে নিলো। এবার বেলুনটি নিয়ে ভালো করে টেনে নিলো, যেন বেশি ফুলাতে পারে।আমরা তখন বিস্ময় সহকারে এসব দেখছি। তারপর তিশিয়ান অন্য ফানেলটি নিয়ে বেলুনের ভিতরে প্রবেশ করালো। ২ চামচ বেকিং সোডা এই ফানেলের মাধ্যমে বেলুনের ভিতরে প্রবেশ করালো।
আমরা জানতে চাইলাম তিশিয়ান এবার কি করবে? সে তখন বললো উহ তোমরা না একটুও ধৈর্য ধরতে জানো না।দেখতেই পারছো একটার পর একটা কাজ করছি।আমরা ওর কথা মত অপেক্ষা করলাম। এবার তিশিয়ান বেলুনের মুখটি বোতলের মুখের সঙ্গে আটকে দিলো। এটা করতে করতে ও জানালো এই কাজটি সাবধানে করবে যেন এসময় কোনো বেকিং সোডা বোতলের ভিতরে ঢুকে না যায়। তিশিয়ান আমাদের জানালো এবার তৈরি হও সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটির জন্য! আমরাও প্রস্তুত হলাম। তিশিয়ান তখন বেলুনটি উঁচু করে ধরলো যাতে বেকিং সোডা বোতলের ভিতরে পড়ে যায়।
কী দেখলাম আমরা? পুরোটা বেকিং সোডা পড়ার আগেই হুট করে তিশিয়ানের বেলুন ফোলা শুরু করে দিয়েছে! কয়েক মুহূর্তের মধ্যে দেখলাম বিশাল আকারের হয়ে গিয়েছে তিশিয়ানের বেলুন!
তিশিয়ানের কাছে জানতে চাইলাম কেন এমন হলো?
তিশিয়ান বললো আচ্ছা এবার চলো চিন্তা করে দেখি কী ঘটলো এখানে। বেলুনের ভিতরে আগে কোনো বাতাস ছিলো না, এজন্য সেটি চুপসানো অবস্থায় ছিলো।আমরা ওর কথায় একমত হলাম।ও আবার বললো, যখনই বেলুনের বেকিং সোডা বোতলের ভিনেগারের সংস্পর্শে আসলো, রাসায়নিক বিক্রিয়াটি ঘটলো। এ রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। যেহেতু বেলুন আর বোতলের মুখ বন্ধ তাই সেটি যাওয়ার আর কোনো জায়গা পেল না। সোজা গেল চলে গেল বেলুনের ভিতরে। ফলাফল, বেলুন ফুলে উঠল নিমিষেই!
আমরা সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলাম।এভাবেই তোমার নিজের কোনো শক্তি ক্ষয় ব্যয় না করেই তুমি বেলুনটি ফোলাতে পারবে তিশিয়ানের মত!
বিজ্ঞানের এই খেলাটা খুবই মজার। কিন্তু এটি সবসময় মনে রাখবে বিজ্ঞান কিন্তু একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলে, সেই নিয়মকে তুমি কিছুতেই হেলা-ফেলা করবে না। তুমি যদি নিয়মগুলো মাথায় না রাখো তাহলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । যেমন আমাদের এই বেলুনের খেলায় আমরা যদি ভিনেগার ও সোডার বোতলটি শক্ত কিছু দিয়ে আটকাতাম বোতল ফেটে বড় বিস্ফোরণ হতে পারতো যেহেতু বিক্রিয়া খুবই দ্রুত হয় এবং তুমি সরে যাবার সময়ও পাবে না। তাই এই পরীক্ষায় তুমি যে সাবধানতাগুলি অবলম্বন করতে হবে তা হলো–
১। বোতলটি অবশ্যই প্লাস্টিকের হবে।
২। বেলুন ছাড়া অন্য কোনো কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ করা যাবে না।
৩। চোখে প্লাস্টিকের গগলস পরে নিতে হবে।
৪। বড় কারও সাহায্য ছাড়া এটি একা একা করতে যাবে না।
তাহলে এখন ফুঁ না দিয়েই ফুলিয়ে ফেলো তোমার বেলুন। আর হ্যা তোমার পরীক্ষা সফল হওয়ার পর তুমি কিন্তু মনে মনে হলেও তিশিয়ানকে একটা ধন্যবাদ দিও।আর আমাদেরকে লিখে পাঠাও তোমার নানা অভিজ্ঞতার কথা।সাথে ছবিও দিও।
মডেলঃ তিশিয়ান।
ছবিঃ আবু সালেহ টিটু
Comments are closed.