-নাসরিন সুলতানা
যিনি শিখতে সাহায্য করেন তিনিই শিক্ষক। একজন শিক্ষক হবেন সর্বাঙ্গীন সুন্দর। তার মধ্যে যদি অসুন্দর কিছু থাকে তার প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের উপর। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে জাতি।আমাদের চাওয়া উচিত আমরা যেন নিষ্পাপ শিশুদের অধিকার নষ্ট না করি । আমাদের মাসিক সভা বা কোন প্রশিক্ষণে আমি কখনো বক্তব্য রাখিনি। আমার কিছু কথা আছে যা আমি একজন শিক্ষক হিসেবে অন্য শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করতে চাই। ইচ্ছে করে হোক বা প্রয়োজনে পড়ে হোক আমরা একটা চাকরি করছি। আমরা এই দেশের কর্মচারী। রাজস্ব খাত থেকে বেতন পাই। একটা ভিক্ষুকও রাজস্ব দেয়। নিজের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করে এই টাকা আমাদের নেওয়া উচিত নয়। একটা বিষয় আমি ইদানিং অনুভব করছি। আমাদের কারো কারো দোকান আছে। দোকানে যদি লাভ না হয় তাহলে মালিক কারণ খুজবেন এবং দেখবেন যে দোকানের কর্মচারী দোকানটা দেরি করে খোলে,আগে আগে বন্ধ করে,যারা কিছু কিনতে আসে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে না। তখন তিনি দোকানদারকে চাকরি থেকে অব্যহতি দিবেন। আমরাও যদি ঐ অসৎ দোকানদারের মতো আচরণ করি তাহলে আমাদের চাকরিও থাকার কথা নয়। আমরা যদি পঞ্চবার্ষিক সমাপণ চক্রের হার বাড়াতে পারি,ঝরে পড়া কমাতে পারি,শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে পারি,শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ছাড়াই প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করাতে পারি,ভদ্র আচরণ ও সততা শেখাতে পারি তাহলে কর্তৃপক্ষের সন্তুষ্টি আশা করতে পারি।
আর্ন্তজাতিক নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মচারী আটঘন্টা কাজ করবেন। আটঘন্টা বিশ্রাম নিবেন আর আট ঘন্টা রাখবেন বিনোদনের জন্য। বাংলাদেশের মেয়েদের ভাগ্যে এই সুযোগ জোটে না। আপনি খেলেন কি না বা কী খেলেন,কখন খেলেন তা জিজ্ঞেস করার মতো মানুষ নাও থাকতে পারে। আপনি স্কুলের কাজ ঠিকমত করলেন কিনা,ঘরের কাজ ঠিকমতো করলেন কিনা বা অন্যান্য সামাজিক দায়িত্ব পালন করলেন কিনা তা জিজ্ঞেস করার মতো মানুষের অভাব নেই। অর্থাৎ আপনি ন’টা থেকে সাড়ে চারটা পযর্ন্ত স্কুলের দায়িত্ব সঠিক নিয়মে পালন করবেন এবং আপনার বিশ্রাম ও বিনোদনের সময় থেকে নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করবেন।আপনার ক্লান্ত শরীরটা একটু ফাকি দিতে চায়। কিন্তু আপনার ভয়,অফিসাররা কেউ যদি এসে পড়েন। এখানে আমি অন্য একটা কথা ভাবি। অফিসাররাওতো মানুষ। মানুষের ক্ষমতা খুবই কম। ছোট খাটো ফাকির জন্য আপনার চাকরি তো যাবে না। সব ক্ষমতার মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা। আমরা কখন কী করছি সব কিছুই তিনি দেখছেন।
আমি যদি স্কুলের কাজে ফাকি দিই তাহলে আমার বেতনটা বৈধ হবে না। অফিসের যে কোন আদেশ নিষেধ শতভাগ মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। যদি সেটা পারি তবে আল্লাহ ক্ষমা করবেন অফিসাররাও ক্ষমা করবেন ।কিন্তু অনিয়মটাই যদি নিয়ম করে ফেলি তাহলে কেউ ক্ষমা করবেন না।এমনকি একটা সময় আমি নিজেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। মানুষ তিনটি জায়গায় জবাবদিহি করে। মানুষেল কাছে,নিজের কাছে ও সৃষ্টিকর্তার কাছে। কোন পর্যায়ের শাস্তি কখন আসবে সেটা আমরা জানিনা। কিন্তু আসবেই এটা নিশ্চিত। তাই নিজের সন্তানের জন্য,নিজের ঘরের জন্য আমরা যেমন মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করি তেমনি শিক্ষার্থীদের জন্য,স্কুলের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে হবে। অফিস থেকে কোনো সম্মান পাই বা না পাই নিজের মনে
একটা শান্তি আসবে। দিনশেষে যখন বিছানায় যাবো তখন মনে হবে আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছি। আর যদি অন্যায় করি,যে জানবে তার কাছে ছোট থাকবো সাংবাদিকের ভয়ে থাকবো রাতে ঘুমাতে পারবো না। বিবেক যদি ফিরে আসে সেও অসম্মান করবে। শিক্ষক হিসেবে আমাদের কর্তব্য শিশুদের শিখনে সাহায্য করা। যদি তা না করি তাহলে ওদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে। ওদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য স্কুলে ও শ্রেণিকক্ষে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নিজেকে সব সময় প্রস্তুত করতে হবে। ওদের কথা ভাবতে হবে,ওদের স্নেহ মমতা দিয়ে কাছে টানতে হবে। আমরা যদি সৎ ভাবে জীবিকা অর্জন করতে চাই তাহলে পাঠ্য বই পড়তে হবে শিক্ষক সংস্করণ নির্দেশিকা সহায়িকা এগুলোর সাহায্য নিয়ে পাঠ পরিকল্পনা ও উপকরণ তৈরি করতে হবে। স্কুলের সময়টা স্কুলে কাটাতে হবে,ক্লাসের সময়টা ক্লাসে কাটাতে হবে।
দিনের মধ্যে সাড়ে সাত ঘন্টাই স্কুলে। স্কুলে যাওয়া আসা রান্না করা ঘুম অন্যান্য কাজ মোট কথা আমাদের সারাটা দিন মহৎ কাজেই পার হয়। আমি যদি শিক্ষার্থীদের কাছে একজন প্রিয় শিক্ষক হতে চাই তাহলে স্কুলের সময়ের বাইরেও আমি আমার যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য চিন্তা করবো,শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করবো। সে জন্য।তো শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। এখানে যদি আমি টাকার লোভ করি বা যোগ্যতা অর্জন না করেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বা শিক্ষিকা হতে চাই তাতে কোন মহত্ব নেই। অসদুপায় অবলম্বন করে তো সব কিছু পাওয়া যায় নিজের কাছেতো বড় হওয়া যায় না। আর একটা কথা,সেটা হচ্ছে দেশপ্রেম। আমাদের দেশটা ছোট;এখানে দুর্নীতি হয়,চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে যেতে হয় আরও অনেক সমস্যা আচে। তবুও এটি আমাদের নিজেদের দেশ। আমি যেমন আমাকে ঠকাই না আমার মাকে ঠকাই না তেমনি দেশকেও ঠকানো উচিত নয়।
১৯৭৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারি হয়েছে। সে তুলনায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম। আমরা যদি দিনের পর দিন প্রস্তুতি ছাড়া পাঠদান করি তাহলে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা এই হারেই বাড়বে। এটা জাতির জন্য শুভ বার্তা নয়। তার মানে আমরা সারাদিন স্কুলেও থাকছি আবার দেশকেও ঠকাচ্ছি। সৎভাবে জীবন যাপন করার মতো আনন্দ আর কিছুতেই নেই। সবাই নিন্দা করলেও আমার মনে আনন্দ থাকবে এই ভেবে যে আমি সৎ মানুষ বলেই নিন্দুকেরা আমাকে ঈর্ষা করছে। একমাত্র সৎ চিন্তাই পারে আমাদের মুখে পবিত্র হাসি ফোটাতে। প্রত্যেকে ভালো থাকলেই সবাই ভালো থাকবে। আমরা যেন নিষ্পাপ শিশুদের অধিকার নষ্ট না করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।