sarahah-তে প্রায় প্রতিদিনই কারো না কারো মেসেজ পাই। সবগুলো মেসেজই পড়ি, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে উত্তর দিই না কোনোটারই। এই মেসেজগুলো দেখতে দেখতে মনে হয়, সারাহাহ না থাকলে কখনোই জানা হতো না আমার মতো সাধারণ একটা মানুষের জন্য এত ভালোবাসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই পৃথিবীর আনাচে কানাচে।
কিছুদিন আগে একটা মেসেজ পেলাম। আগেই বলেছি, সারাহাহ-এর কোনো মেসেজের উত্তর আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিই না। কিন্তু দুই বাক্যের ওই মেসেজটা কেমন যেন বুকের ভেতর এক রকম হাহাকার জাগিয়ে দিল এক মুহূর্তে। মনে হলো, এই মেসেজটার উত্তর দেয়াটা সত্যিই দরকার।
মেসেজটা ছিল এমনঃ
“তোমার ধ্রুবতারাকে নিয়ে আর কোনো লেখা দেখি না কেন? হারিয়ে ফেলেছ?”
যারা আমার পোস্ট পড়েন তারা ধ্রুবতারার সঙ্গে পরিচিত। নতুন করে তার পরিচয় আর দেব না।
এই মেসেজটা খুব আহামরি কিছু ছিল না। কিন্তু “হারিয়ে ফেলেছ?”- এই লাইনটা কেমন যেন বুকের ভেতর শূন্যতা তৈরি করল।
জানি না মেসেজটা কার পাঠানো। জানতে চাইও না। সবকিছু জানতে নেই। কিছু জিনিস অজানাই থাকতে হয়।
তবে যিনি পাঠিয়েছেন, তাকে তার কথার উত্তরটা দিই।
আসলে ধ্রুবতারা একটা চিরসত্য। এইজন্যই তার নামের মধ্যে “ধ্রুব” আছে। এইজন্য আমরা সত্যের তুলনা দিই তার সঙ্গেঃ “ধ্রুবতারার মতো সত্য।”
তাই ধ্রুবতারা কখনো হারায় না। ধ্রুবতারাকে হারানো যায় না।
কিন্তু এই পৃথিবীর ধুলোমাটিতে ঝোপঝাড়ের ফাঁকে যে সুন্দর ফুলগুলো ফুটে থাকে সবার অগোচরে, অবহেলায়, যত্ন না নিলে তারা কিন্তু হারিয়ে যায়। তাই যাকে হারানোর ভয় নেই, তাকে নিয়ে না ভেবে যে হারিয়ে যেতে পারে, তার যত্ন নেয়াতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম।
আমার ধ্রুবতারা আমার আকাশেই আছে। সন্ধ্যে নামার পর আকাশের দিকে চাইলেই তাকে জ্বলজ্বল করতে দেখি আমি। সে কখনোই হারিয়ে যায়নি। যাবেও না।
কিন্তু আমার যেই ফুলগাছগুলো ঝোপের আড়ালে অবহেলায় পড়ে আছে, তাদেরকে সময় দেয়াটা খুব বেশি দরকার মনে হয়েছে। আগাছা পরিষ্কার করে তাদের সৌন্দর্য, তাদের সুবাস ছড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়া দরকার মনে হয়েছে। আর তাই আমি আমার ফুলগাছগুলোর যত্ন নিতেই ব্যস্ত।
আমাদের স্নেহে, আমাদের যত্নেই তো একটু একটু করে এই কুঁড়িগুলো মায়াবী ফুল হয়ে ফুটবে।
(ছবিতে দেখুন কুঁড়িগুলোকে।)
যিনি আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন এবং যারা আমার পোস্ট পড়ছেন, সবাইকেই একটা কথা বলি।
আমাদের ধ্রুবতারারা আমাদের আকাশেই থাকে। কিন্তু আমরা কখনোই তাদেরকে ছুঁতে পারি না। তারা কখনোই আমাদের হয় না। ধ্রুবতারাকে ছোঁয়ার জন্য ছুটতে থাকলে এক সময় পেছন ফিরে দেখবেন, জীবনের লক্ষ্য থেকে অনেক অনেক দূরে চলে এসেছেন। সামনে তাকালে দেখবেন, এই পথের কোনো শেষ নেই। উপরে তাকালে দেখবেন, ধ্রুবতারা একটুও নিচে নেমে আসেনি! যতটা উপরে ছিল, ততটা উপরেই জ্বলজ্বল করছে। আর ঘড়ির দিকে তাকালে দেখবেন, নিজের লক্ষ্যের দিকে ফিরে যাওয়ার সময় আর নেই!
কিন্তু আপনার আশেপাশে অবহেলায় পড়ে থাকা আগাছার ফাঁকের ফুলগাছগুলোর যত্ন নিলে দেখবেন, কুঁড়িগুলো ফুল হয়ে ফুটছে। সৌরভ ছড়াচ্ছে। তাদেরকে ফুটতে সাহায্য করতে পেরে যে আনন্দ আপনি পাবেন, যে প্রশান্তি আপনি পাবেন, ধ্রুবতারার পেছনে ছুটে কখনোই তা পাবেন না! শুধু ক্লান্তি আর ব্যর্থতাই পাবেন!
ধ্রুবতারা একটা ধ্রুবক। আমরা তাই বলি, ধ্রুবতারার মতো অটল বিশ্বাস। ধ্রবতারা কখনোই তার জায়গা থেকে একটুও সরবে না! তার পেছনে না ছুটে তাকে বরং পথের নিশানা হিসেবে ব্যবহার করুন। তার দিকে তাকিয়ে দিক নির্ণয় করতে শিখুন।
নিজের লক্ষ্যের পথে হাঁটুন। চলার পথে দু’পাশে অযত্নে পড়ে থাকা ফুলগাছগুলোর পাশের আগাছা পরিষ্কার করে দিন। দেখবেন, তাদের কুঁড়িগুলো সুন্দর ফুল হয়ে ফুটে আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছে আপনার লক্ষ্যে, সুরভিত করছে আপনার চলার পথ।
ভালো থাকুক ভালোবাসা।
লেখকঃ মীম নোশিন নাওয়াল খান
Comments are closed.