আমাদের সন্তানকে ভাল মানুষ করে তুলবো নাকি কেবল উচ্চ শিক্ষিত?
লেখা- সাজিদ মাহমুদ
সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেনা এমন অভিভাবক খুব কমই আছে এই ব্রহ্মাণ্ডে।
আমরা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি এই ভেবে যে, সন্তান বড় হয়ে কি করবে? এর জন্য শিশুটির যখন ৪ অথবা ৫ বছর বয়স হয় তখনই ভর্তী করে দেই স্কুলে। সেটা হয়তো ইংরেজি মাধ্যম কিংবা বাংলা মাধ্যম। দেশের অধিকাংশ অভিভাবকই চান তাদের ছেলে কিংবা মেয়েটি ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/পাইলট/জজ/ব্যারিস্টার/আমলা ইত্যাদি হোক। কিন্তু কখনোকি বলি? বা বললেও সেটা কয়জন? আমরা আমাদের সন্তানকে ভাল মানুষ বানাতে চাই। যে বড় হয়ে তার দেশকে ভালবাসবে, দেশের মানুষকে ভালবাসবে। দেশের জন্য কাজ করবে, দেশের হয়ে কাজ করবে। কখনোকি ভাবি? আমার সন্তানের দ্বারা যেন কারো কোন ক্ষতি না হয়। আমার সন্তান যেন রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি না করে। সে যেন মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে সমাজে। সে যেন তার মা-বাবা, শিক্ষক, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সহ সকলকে সম্মান করে। তাকে কি তার পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতি যে কর্তব্য রয়েছে সে বিষয়ে অবগত করে তুলি? সন্তান ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে, শিক্ষিত হয়ে ওঠে। এর মধ্যে আমরা কি খেয়াল করি? আমাদের সন্তানাদি সততা, মানবিক মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ পরমতসহিষ্ণুতা চর্চা করছে কিনা, নিজের মধ্যে এসব গুণাবলির উপস্থিতি ঘটাচ্ছে কিনা। এসব করতে আমরা অভিভাবকরা সন্তানদের উৎসাহ দেইকি? প্রায়শই গণমাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের অপরাধের খবর প্রকাশ হয়ে থাকে। যার অধিকাংশ অপরাধই সঘটিত হয়ে থাকে তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত মার্জিত পেশাজীবী কর্মকর্তাদদের দ্বারা। যা যে কোন রাষ্ট্রের জন্য চরম ক্ষতিকর। রাষ্ট্রের বড় বড় যত অপরাধ সংঘটিত হয় তার সবকয়টি সততা, মানবিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন শিক্ষিত লোকের দ্বারাই হয়। ব্যাংক লুট, প্রশ্ন ফাঁস, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, অপচিকিৎসা, ইচ্ছেকৃতভাবে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত বলে রেখে দেয়া, শিক্ষকের কাছে ছাত্রী লাঞ্ছিত, পুলিশি পাহারায় আসামির মৃত্যু, অন্যায় ভাবে নির্দোষ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার মতো অহরহ ঘটনা ঘটে চলেছে। বর্তমানে অনেক কিশোর কিশোরীও নানা অপরাধে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। এমনকি নিজেকে জঙ্গি সংগঠনের সাথেও জড়িয়ে নিচ্ছে। গতদিনও একটা পত্রিকায় নিউজ হলো, বনভোজনে খাবার সমান ভাবে না পাওয়ার জন্য ছাত্র শিক্ষককে জুতাপেটা করেছে। এমন ঘটনাতো প্রায়ই ঘটে থাকে। সন্তানের হাতে পিতামাতা খুন হতেও আমরা শুনেছি। অভিভাবকগন যখন বৃদ্ধ হয়ে যান তখন অনেক ছেলে মেয়েই তার মা-বাবাকে পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে। অনেকে আবার নিজের কাছে রাখলেও ঠিকমতো ভরণপোষণ করেনা পিতামাতার। এসমস্ত ঘটনা উচ্চ শিক্ষিত পরিবারেই তুলনামূলক বেশি ঘটে থাকে। যাদের সন্তানাদি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এসমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার জন্য অভিভাকগন দায়ি নয়কি? একজন বড় শিক্ষক,আমলা,জজ,উকিল,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার অথবা রাজনীতিবিদ যদি ভাল মানুষ না হয় তাহলে তার দ্বারা তার পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র কিভাবে উপকৃত হবে? সন্তানদের যেকোন নির্দিষ্ট শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলার সাথে সাথে নৈতিক গুণাবলি সসম্পন্ন ভাল মানুষ করে তুলাটাও আবশ্যক। তানাহলে দেশের অতশত অপরাধ বাড়বে বৈ কমবে না। সন্তাদের ভাল মানুষ করে তুলতে পারলেই শেষ বয়সে পিতামাতাদের বৃদ্ধাশ্রমে দেখতে হবেনা এই সমাজে। মুক্ত হবে সকল অপরাধ, সকল দুর্নীতি। আর সন্তাকে কেবল উচ্চ শিক্ষিত করে তুলবো নাকি সেই সাথে ভাল মানুষ করে তুলবো তা অভিভাকদেরকেই ভাবতে হবে।