শুধু শিশুদের কেন! স্বভাবতই পৃথিবীর সব দেশের সব সমাজের মানুষের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ অাশ্রয়স্থল পরিবার।পারিবারিক কলহ, শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের অন্তরায়! পরিবার অামাদের ভালো রাখে, ভালো থাকতে শেখায়।
বলা হয়ে থাকে পরিবার হলো শিশুদের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানে প্রধান দুজন শিক্ষকের ভূমিকায় থাকে মা এবং বাবা।মা বাবা হতে যে শিক্ষা শিশুরা পেয়ে থাকে সে শিক্ষা সারাটা জীবন ধরে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় করে জীবন অতিবাহিত করেন।
অর্থাৎ বলা যায় যে শিশুর বিকাশের ষোলঅানাই পরিবার নামক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উপর নির্ভর করে। কিন্তু সেই মহান প্রতিষ্ঠানটি যদি পারিবারিক কলহ বিচ্ছেদের জন্য অশান্তিপূর্ণ হয়ে থাকে তবে তা কোন ভাবেই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের পথ সুগম করতে পারে না।ফলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পর্যবসিত হয়! এটি অামাদের অাধুনিক সমাজের সমস্যা! অতিরিক্ত অাবেগ,টিভি মিডিয়ার বাড়াবাড়ি,অপসংস্কৃতি, ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা অধিকাংশ পারিবারিক সমস্যার কারণ।
গ্রামীন সমাজে যেসকল পরিবারে অার্থিক সংকট থাকে সেসব পরিবারে মা বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ, ঝগড়াঝাঁটিসহ নানানরকম পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকে।যেহেতু পিতামাতা শিশুদের সবচেয়ে কাছের মানুষ তাই তাদের সামান্য দুঃখ ও তাদের কচি মনকে নাঁড়া দিয়ে যায়।যেসকল পরিবারে প্রতিনিয়ত ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে সেসকল পরিবারের শিশুরা সহজে অন্যান্য ছেলেমেয়ের সাথে মিশে না।একধরণের হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে এসকল শিশুরা।
দিনদিন মা বাবা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে দূরে সরে নিজেদের একটা অালাদা রাজত্ব গড়ে তোলে।যেখানে তারা নিজেদের মত করে জগৎ সংসার সম্পর্কে বিশ্রী একটা ধারণা করেন।অন্যদিকে পুরুষশাসিত সমাজের ছেলেদের এবং নারীশাসিত সমাজের মেয়েদের জীবন সম্পর্কিত ভাবনার মধ্যে একটা বিরাট ফারাক লক্ষণীয়। নারীশাসিত যেসকল পরিবারে পুরুষেরা নির্যাতিত হয় সেসকল পরিবারে ছেলেরা হীনমন্যতায় ভোগে আবার যেসকল পরিবারের নারীরা নির্যাতিত হয় সেসকল পরিবারের মেয়েরা হীনমন্যতায় ভোগে।
মায়ের দুঃখ দেখে দেখে বড় হতে থাকা মেয়েটা মনে করেন নারী হয়ে জন্মানোটা একধরণের পাপ,সে ভাবে তাকেও একসময় মায়ের মত সংসার করে দুঃখ পোহাতে হবে আবার নারীশাসিত সমাজের ছেলে শিশুটিও এমনটি ভাবতে থাকে।ফলে শিশুরা চুপচাপ অচঞ্চল হয়ে উঠে। একটি শিশুর চঞ্চলতা প্রকাশ করে সে ভালো অাছে কি না! স্বাভাবিকভাবেই একটি চঞ্চল শিশু মানসিকভাবে সুখী।সুখী বাচ্চারা সময়মত খাবার গ্রহণ করেন ফলে তাদের সুখী জীবনযাপন শুধু মানসিক উন্নতি নয় শারীরিক বিকাশও করে থাকেন।
অন্যদিকে পারিবারিক অশান্তির কারণে যেসকল শিশুর মানসিক বিকাশ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় না,তাদের শারীরিক বিকাশেও বিশ্রী একটা প্রভাব পড়ে।যা একটা সমাজ তথাপি একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নে বাধা প্রদান করে।কারণ এটি সর্বজনগৃহীত বাক্য যে আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ।
একটি রাষ্ট্রকে উন্নয়নের সোপানে পাড়ি দিতে হলে অবশ্যই শিশুদের কথা ভাবতে হবে।কাল যখন আপনি থাকবেন না তখন এই পৃথিবীকে দেখেশুনে রাখবে আপনার শিশুছেলে অথবা মেয়েটি। তাই তাকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।তাকে শারীরিক মানসিক ভাবে প্রচুর শক্তিশালী হতে হবে।এজন্য মা বাবাকে সচেতন হতে হবে।মা বাবার উচিৎ নিজেদের শৈশব নিয়ে ভাবা,আপনার শৈশবে আপনার কি পেলে আপনার জীবন আরো সুন্দর হতো সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।
সন্তানের কাছে মা বাবার বিকল্প অাপনজন অন্যকেউ নেই।আপনার সামান্য দুঃখে আপনার সন্তানের মন ভেঙে যায়।তাই তাদের সামনে ঝগড়াঝাঁটি করা থেকে দূরে থাকুন,অভিনয় করে হলেও সুখে থাকুন।শিশুদের বুঝতে শেখান তাদের মা বাবার কোন দুঃখ নেই।প্রত্যেকটি পরিবার হোক শিশুর শ্রেষ্ঠ অাশ্রয়স্থল!
লেখকঃ
জুয়েল মিয়াজি।
ছাত্র, ফোকলোর বিভাগ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়,ত্রিশাল,ময়মনসিং হ।