রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন ,শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য আদর স্নেহের সাথে একটু হালকা শাসনও করা প্রয়োজন তবে শাসনের নামে শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।কারণ এটা ঠিক যে শিশুদের জন্য কোনটি ভালো কিংবা কোনটি খারাপ সেটা তাদের প্রিয়জনেরাই ভালো বুঝেন।
বয়স স্বল্প হওয়ার দরুন বাচ্চারা মাঝেমাঝে বিপথে চলে যায়। তাই তাদের ভালো পথে ফেরানোর জন্য অভিভাবক শিক্ষক মৃদু শাসন করে থাকেন।এসব মৃদু শাসন ভালো বৈ খারাপ কিছু ফল দেয় না।কিন্তু সমস্যা অন্যখানে।অামাদের দেশের অধিকাংশ পিতামাতার মূল সমস্যা তারা বাচ্চাদের বয়স কিংবা অন্যান্য দিক বিবেচনা না করে নিজেদের সিদ্ধান্ত বাচ্চাদের উপর ছাপিয়ে দেয়।
মা বাবার স্বপ্ন ছেলে বড় জজ ব্যারিস্টার হবে! অথচ দেখা যায় যে তাদের বাচ্চাটি ভালো ছবি অাঁকতে পারে,কিংবা খেলাধুলায় ভালো পারদর্শী। কিন্তু মা বাবারা নিজেদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে উঠে পরে লাগে। একলিটার পরিমান বোতলের মধ্যে দের লিটার পানি জোড় করে ঢুকানোর চেষ্টা করার মত হয়।
সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন স্কুল, প্রাইভেট,কোচিং সেন্টারে দৌড়াদৌড়ি করে বাচ্চারা খেলাধুলা করারও সময় পায় না।একধরণের মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে থাকা শিশুদের ভাবনার জগৎ প্রশমিত হয় না।খাঁচায় অাটকে থাকা পাখির মত চটপট করতে থাকা শিশুরা মনের অনিচ্ছায় একসময় মা বাবার কথা মতো ক্যারিয়ার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
যে মেয়েটি ভূগোল ইতিহাস ভালো জানে তাকে জোড় করে সেগুলি না পড়িয়ে ডাক্তার বানানোর জন্য ফিজিক্স, ক্যামিস্ট্রি,বায়োলজি পড়ানো হয়।শেষমেশ দেখা যায় যে মেয়েটি মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়ে মা বাবার কাছে মুখ দেখানোর ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।ঝরে যায় সম্ভাবনাময় নতুন প্রাণ।
এছাড়া এটা করো না, ওটা করো,এটা খেয়ো না ওটা খাও,এপথে চলো না ওপথে চলো, এটা বলো না ওটা বলো করতে করতে বাচ্চারা একসময় এসে নিজেদের ঘুটিয়ে পেলে। এদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয় না। এটা অবশ্যই উচিৎ না,তবে আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি যে বাচ্চাদের বিষয়ে তাদের মা বাবারাই ভালো বুঝেন।
তবে এটাও ঠিক যে বাচ্চাকে নিজের মনের মতো করে গড়ে তোলার জন্য তাকে শিকল পরিয়ে রাখলেই তার উন্নয়ন হয় না।বরং বাচ্চার পরামর্শ শুনুন, ওদের দশটি কথা র মধ্যে একটিও যদি প্রাসঙ্গিক হয় তবে ওটাতেই গুরুত্ব দিন।ছেলে অাপনার ভালো অাঁকতে পারে যেহেতু তাকে তার মতো করে অাইনজীবী না বানিয়ে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হতে সহায়তা করুন।
আপনার মেয়ে যেহেতু সাহিত্য ভালো বুঝে তাকে সাহিত্যচর্চার সুযোগ করে দিন।বাচ্চা পড়াশোনার চেয়ে অাপনার ব্যবসা বানিজ্যের দিকে ভালো নজর রাখছে,তাহলে তাকে কোনরকম প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে ভালো ব্যবসায়িক হতে সহায়তা করুন।যাকে দ্বারা যেটা ভালো হয় তাকে দিয়ে সেটাই করান।অভিভাবক শিশুদের এটা বুঝাতে পারে যে ন্যায়ের পথে থেকে যাই করবে ভালো করে মনোযোগ দিয়ে করবে যাতে কখনো অসফল না হও।
শেষকথা আজকের শিশু অাগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো গুরুত্ব দিতে হবে।ভালোবাসতে হবে।বাচ্চাদের সাথে শাষণের নামে নির্যাতন করলে সমস্যা অাপনার হবে,আপনার বাচ্চার হবে,সর্বোপরি রাষ্ট্রের হবে!
Comments are closed.