spot_img
More
    Homeসামাজিক সমস্যামাদক এবং পথশিশু

    মাদক এবং পথশিশু

    লেখকঃ কানিজ ফাতেমা জাবিন

    ১২ বছরে ছেলে রাব্বি।তাকে সচারাচর দেখা যায় বেইলী রোড, রমনা আর এর আশে পাশের এলাকায়। পেশা বলতে ভিক্ষা। মাত্র ১২ বছর বয়সেই সে গাজা, সিগারেটসহ আর ও নানা নেশায় জড়িয়ে পড়েছে।
    শুধু রাব্বি না ।আমাদের দেশে রাব্বির মত সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু আছে প্রায় সাড়ে এগারো লাখ, এর মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিশুই মাদকে আসক্ত। শতকরায় হিসেব করলে দেখা যবে প্রতি ১০০ জন পথশিশুর মধ্যে ৮৫ জন ই কোন না কোন ভাবে মাদকসেবী। ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাজা, সিগারেট এর মত মাদক দ্রব্যের পাশাপাশি বিশেষ করে পথশিশুরা আরেক ধরনের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। ওদের ভাষায় সেটার নাম ‘ড্যান্ডি’।আপনি যদি কমলাপুর, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান,কারওয়ান বাজার, হাইকোর্ট এসব এলাকায় চোখ-কান  খোলা রেখে চলে থাকেন তবে ছোট ছোট বাচ্চাদের পলিথিনের ব্যাগে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকতে দেখবেন।এটাই ড্যান্ডি। মূলত এটা এক ধরনের আঠা যেটা জুতায় ব্যাবহার করা হয়। এই আঠা পলিথিনে নিয়ে ঝাকিয়ে সেটার গন্ধ শোঁকে ওরা। ওদের মতে, ‘ড্যান্ডি খাইলে খিদা লাগে না’।
    অন্যান্য নেশাদ্রব্যের চেয়ে ড্যান্ডি খুব সহজ লভ্য।তাই ড্যান্ডিসেবীদের সংখ্যাও বেশি।ড্যান্ডিতে টলুইন থাকে। এই টলুইন নেশা সৃষ্টি করে।ক্ষতিকর পদার্থের খাতায় নাম আছে টলুইনের। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

    এসব শিশুরা যে অল্প টাকা আয় করে তা থেকে  খুব সহজেই নেশা জোগাড় করে নিতে পারে। নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য ভিক্ষা, চুরি,পকেটমারার মত অন্যায়ে জড়িয়ে পড়ছে।নেশা করতে গিয়ে নেশাদ্রব্য বিক্রি আর চোরাচালানের সাথেও জড়িয়ে পড়ছে এসব শিশুরা।মাদকাসক্ত এ সব শিশু নেশার টাকার জোগান দিতে মাদকদ্রব্য বহন করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। অপরাধ বোঝার আগেই তারা ভয়াবহ অপরাধী হয়ে বেড়ে উঠছে। আর কিশোরী মেয়েরা তাদের নেশার জোগান দিতে জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।  আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যাবসায়ীদের কাছে এসব শিশুদের চেয়ে ভাল মাধ্যম আর কিছু হতে পারে না। তাই ফ্রি মাদক কিংবা টাকার লোভ দেখিয়ে সহজেই এসব শিশুদের মাদক চক্রের সাথে জড়িয়ে ফেলছে মাদক ব্যাবসায়ীরা।

    শিশুদের মাঝে মাদকের প্রচার ও প্রসার দিন দিন বাড়লেও নেই তাদের স্বাভাবিক জীননে ফিরিয়ে আনার কিংবা মাদক থেকে দূরে রাখার পর্যাপ্ত সুযোগ।এরা মাদকে আসক্ত হয় নানা কারনে। এদের কেউ পরিবার থেকে বিচ্ছিন। অভিভাবক নেই। তাই নেশার জগতে জড়িয়ে পড়লেও তাকে সাবধান করার কেউ নেই। কেউ আবার খারাপ সংসর্গে পড়ে শুরু করে মাদক সেবন।কিন্ত এরপর এরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলেও নিরাময়ের সুযোগ পায় না। দেশে যেসব মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র আছে তা মাদকাসুক্ত পথশিশুদের জন্য নয়।আর কেউ ভাগ্য বশত নিরাময়ের সুযোগ পেলেও থাকে না তাদের পুনর্বাসিত হও্য়ার সুযোগ।ফলে তারা ফিরে যায় পূর্বের অন্ধকার জীবনে। সারাদেশের মধ্যে তেজগাঁও সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে কেবল শিশুদের জন্য রয়েছে ১০টি বেড। তবে মাদকাসক্ত মেয়ে পথশিশুদের জন্য বাংলাদেশে চিকিত্সার কোনো সুযোগ নেই। এদের পয়সা খরচ করে চিকিৎসা করানোর মতো কোনো সুযোগ বা সামর্থ কোনটাই নেই। মাদকাসক্ত পথশিশুদের স্বাভাবিক জীবনে এনে তাদের পুনর্বাসিত করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এদের পুনর্বাসনে এনজিওদের কোনো উদ্যোগও নেই।

    এভাবে যদি চলতে থাকে, দেশের অর্ধেক পথশিশুই ছোটবেলা থেকেই মাদকাসক্ত হয়ে বেড়ে ওঠে তাহলে এরা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও তাদের থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না। এখনই যদি শিশুদের মাদকসেবন আর আর তাদের নিরাময়ের জন্য উপযুক্ত কোন ব্যাবস্থা না নেয়া হয় তবে সময়ের সাথে সাথে তারা নিজের অজান্তেই এক একজন বড় অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।

     

    আমার মতে,এসব পথশিশুদের মাদক সম্পর্কে সচেতন করাটাই এদের মাদক সেবন থেকে দূরে রাখতে। সরকার , এনজিও এর পাশাপাশি আমরা যারা সাধারন মানুষ আছি তারা যদি পথ চলতে গিয়ে দশ মিনিট সময় খরচ করে একটা বাচ্চাকে মাদক গ্রহনেন অনুৎসাহী করতে পারি, তবে সব না হলেও অন্তত কিছুটা হলেও এই সমস্যা থেকে উত্তরন ঘটবে।

    *আলোকচিত্র সংগৃহীত

    RELATED ARTICLES

    Most Popular