লেখকঃ কানিজ ফাতেমা জাবিন
আজ বিকালে বেইলী রোডে গিয়েছিলাম। কফিলেশিয়ায় কফি খেয়ে গাইড হাউজের সামনে আসতেই দুটো বাচ্চা মেয়ে আমার গা ঘেষে দাঁড়াল। বলল- ” আফা দশটা ট্যকা দেন। ” আমি কখনোই বাচ্চাদের ভিক্ষা করার ব্যাপারটাকে ভাল চোখে দেখি নি! কখনো মন থেকে মেনেও নিতে পারি নি। ঠিক কি কারনে এত টুকু বাচ্চারা ভিক্ষা করছে এটা জানার খুব আগ্রহ ছিল আমার। আমি ওর কধেহাত দিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। এই গোলাপী ফুল ওয়ালা জামা পড়া ফুলের মত মেয়েটার নাম আছিয়া। ক্লাস টু তে পড়ে। বাবা মারা গেছে রোড এক্সিডেন্ট এ। প্রতিশুক্রবার সে আর তার মা বেইলী রোডে আসে। ভিক্ষা করে। আছিয়ার পাশের সাদা আর কালোয় মেশানো ড্রেস পড়া মেয়েটি ফাহিমা। আছিয়ার সাথে এক স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে ও। পরিচয় পর্ব শেষে আমি আছিয়া কে জিজ্ঞেস করলাম, ভিক্ষা কেন করিস? এই ভিক্ষা না করে পড়ালেখাটা মন দিয়ে করতে পারলে জীবনে আর ভিক্ষা করা লাগবে না বুঝিস?
খুব চটপট করে উত্তর দিল- “পড়ালেখা করতে স্কুলে যাওন লাগে। স্কুলে তো বেতন ছাড়া পড়াইব না”
এতটুকু মেয়ের মুখে এই কথা শুনে বুঝলাম, জীবন টা আমার চেয়ে ও হয়ত বেশিই দেখেছে! খুব সরল ভাষায় এমন একটা কঠিন বাস্তব কথা তাই কেমন নির্দ্বিধায় বলে দিল!!
ততক্ষনে দলে ওর অনেক বান্ধুবীও জুটেছে…বীথি, সানজিদা। ওরাও ক্লাস ওয়ান কি টুতে পড়ে! কি প্রাণবন্ত! কি উচ্ছল ওরা! এত প্রাণশক্তি !!আমার নিযেজের একটা ছোট বোন আছে, কিন্ত ওর মধ্যে আমি এত উচ্ছলতা দেখি নি কখনো!
বড্ড মায়া হতে লাগল ওদের জন্য। ওদের তেল চিটচিটে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমি পড়ালে তোরা পড়বি আমার কাছে? আছিয়া, ফাহিমা এক কথায় রাজি!!পড়বে ওরা! কিন্ত আমি আবার শর্ত জুড়ে দিলাম…পড়তে হলে ভিক্ষা ছাড়তে হবে! এই কথা বীথি কেমন গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল…”আইচ্ছা আপু, পড়া শেষে টাকা উঠাই? আমি জানি পড়া লেখা কইরা অনেক লাভ। কিন্ত পড়া শেষে টাকা উঠাইলে কি সমস্যা হইব?”
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম…কিছু বললাম না!
এইরকম বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আমামার খুব আগ থেকে…তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। অনেক ঘটা করে একটা সংগঠন খুলেছিলাম। নাম দিয়েছিলাম “সৃষ্টি সুখের উল্লাসে”। বড্ড ভারী নাম হয়ে গিয়েছিল বোধহয়। তাই কালের অতলে ডুবে গেছে। এবার আর নাম নিয়ে নয়। নাম ছাড়াই কাজ করব!
কিছু বন্ধুবান্ধবের সাথে আমার আগেই কথা হয়েছিল এই বিষয়ে। আমি চাই, যেহেতু ওরা শুক্রবার বেইলী রোডে আসে, সেদিন আমি ওদের পড়াব। আর ওদের স্কুলের বেতন খুব বেশি না। মাসে দুইশ টাকা। সেটা আমার টিউশানির টাকা আর আমার বন্ধুরা চাঁদা তুলে যোগাড় করে দিতে পারি তাহলে হয়ত ওদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এভাবে ভিক্ষা করতে হবে না! হয়ত, আমার এই সামান্য কন্ট্রিবিউশন ওদের সুন্দর একটা জীবন দিলেও দিতে পারবে।
আমার এই পোশট্টা কে কেউ প্লিজ শো অফ পোস্ট কিংবা এটেনশন সিকিং টাইপ পোস্ট ভেবে ভুল করবেন না!
আমার লক্ষ্য ওদের পড়াশোনার সাথে যুক্ত রাখা। যাতে ওরা ঝরে না পড়ে।
আর কেউ যদি আমার সাথে ওদের জন্য অন্তর থেকে কাজ করতে চান! মোস্ট ওয়েলকাম!! কারন আমি একা যেটুকু কাজ করতে পারব ওদের জন্য, আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু হয়ত করে দেখাতে পারব!
বি.দ্রঃ লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত। ছোটদের বন্ধু বিশ্বাস করে এমন ভালোকাজের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া উচিত এবং সবার এগিয়ে আসা উচিত।
আরও পড়ুনঃ
- ক্ষুদে লেখক রাশিকের মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারাল।
- শিহাব এবং টিটোনের সাহসীকতার গল্প।
- অনন্য যারিফ আকন্দ,গ্রহ নয় যেন একটি নক্ষত্রের নাম।
- বয়স ১৪ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
- রিয়া দিয়া ক্ষুদে মহাতারকা।