এক অহংকারী রাজনীতিবিদ বলেছিলেন বাংলাদেশ হলো একটি তলাবিহীন ঝুড়ি।তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে দেখতে পেতেন সেই তলাবিহীন ঝুড়ি আজ কতটা এগিয়েছে।সেই দেশের শিশু কিশোর কিশোরীরাও এখন গবেষণা করছে,নিত্যনতুন উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হচ্ছে।তিনি নিশ্চই আফসোস করতেন হায় এ আমি কি মন্তব্য করেছিলাম।এই যে শিশু কিশোর কিশোরীরা বিজ্ঞানে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এর পিছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি।তারাই আয়োজন করেছিল বিজ্ঞান কংগ্রেসের।দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেল বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদচারণা। সামান্য একটা ধারণা, বাচ্চারা গবেষণা করতে শিখবে, জানবে মাপামাপি করতে, পেপার লিখবে, পোস্টার উপস্থাপন করবে।কোন একটি সমস্যাকে তারা বড় করে দেখে সেটির সমাধানের নিত্য নতুন পথ খুজে বের করবে। সেটিই এখন অনেক বড় হয়েছে (আকারে নয়, মানে)। এই আয়োজনে কেমন কাজ হচ্ছে তার একটা আখ্যান হতে পারে রেদওয়ানুল ইসলামের একটি মন্তব্য – “জীবনে যা কিছু অর্জন তার মূলে এই কংগ্রেস ! গবেষণা কোন দিন শিখতাম নাহ এই কংগ্রেসের সাথে ২ বছর না থাকলে। “
আমরা দেখেছি এই বিজ্ঞান কংগ্রেসে আসার পর আমাদের শিশু কিশোরেরা বদলে গেছে অনেকটাই।তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে।এমন অনেক রেদওয়ান তৈরি করাতেই কংগ্রেসের সাফল্য।
ক্ষুদে বন্ধুদের জন্য আরো চমক থাকছে সামনের দিনগুলিতে। আগামী বছর থেকে হাইস্কুল রিসার্চ ফান্ড গঠন করা হবে যদিও এই ফান্ডের নাম এখনো ঠিক করা হয়নি বলছিলেন মুনির হাসান।এই ফান্ড থেকে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও চালু করা হবে কংগ্রেস ফেলোশীপ যা দূর দুরান্ত থেকে যে সব ছেলে মেয়ের কোন প্রজেক্ট সিলেক্ট হওয়ার পরও শুধু সামর্থের অভাবে ঢাকাতে আসতেপারেনা তাদেরকে সহায়তা করা হবে।
এই আয়োজন থেকে বেছে নেওয়া সেরাদের পাঠানো হবে বিদেশে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কিংবা পাঠানো হবে কোন ল্যাবে, কিছুদিনের এটাচমেন্টে।
মুনির হাসান আশা করছেন আইওটি ফিয়েস্তার ইন্ডাস্ট্রি এটাচমেন্টের মতো ২০১৮ সাল থেকে শুরু হবে ল্যাব এটাচমেন্ট। স্কুল বন্ধের সময় খুদে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ল্যাবে এটাচ থাকবে। সেখানে কাজ শিখবে।
সেদিন একটা অনুষ্ঠানে জামিলুর রেজা স্যার বললেন “ম্যাসল্যাবকে বড় জায়গায় নিয়ে যেতে যেখানে যে কোন সময় যে কেউ এসে যেন ব্যপক কাজকর্ম করতে পারে। কাজটা কঠিন হবে। আগে খেয়াল করলে আমি এ আর খান স্যারের বাড়িটা নিয়ে নিতাম। কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব নয়। অন্য কাউকে টার্গেট করতে হবে। অথবা নিজেদের স্বপ্নের ইনস্টিটিউটটা বানাতে হবে”।
উল্লেখ্য ধানমন্ডির ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এবারের জাতীয় কংগ্রেস আয়োজিত হয়েছিল।এবছর ২৮ টি গবেষণা কাজের জন্যে সায়েন্টিফিক পেপার, পোস্টার ও প্রজেক্ট বিষয়ে তিনটি ক্যাটাগরিতে (প্রাইমারি, জুনিয়র ও সিনিয়র) মোট ৫৬ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এছাড়া ৩টি সেরা কাজকে পেপার অফ দ্য কংগ্রেস, পোস্টার অফ দ্য কংগ্রেস ও প্রজেক্ট অফ দ্য কংগ্রেস হিসেবে আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।শিক্ষার্থী উদ্ভাবক,অভিভাবক সবাই খুবই উপভোগ করেছে।এ বছর যারা এ আয়োজনে যুক্ত হতে পারোনি তারা চাইলে আগামী বছর নিশ্চই চেষ্টা করতে পারো। কংগ্রেসে অংশগ্রহনের কিছু নিয়মাবলী তুলে ধরা হলো।
- তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ৩ টি ক্যাটাগরিতে কংগ্রেসে অংশ নিতে পারবে। ক্যাটাগরিগুলি হচ্ছে:
- প্রাইমারি: ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি
- জুনিয়র: ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি
- সিনিয়র: ১০ম থেকে ১২শ শ্রেণি
- কংগ্রেসে শিক্ষার্থীরা ৩টি বিষয়ে অংশ নিতে পারবে:
- বৈজ্ঞানিক পেপার
- বৈজ্ঞানিক পোস্টার
- বিজ্ঞান প্রজেক্ট
- একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি বিষয়েই এবং কেবল একবারই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। তবে কোন কনসেপ্ট পেপার বাতিল (rejected) হয়ে গেলে, তখন সেই শিক্ষার্থী/দল আবার রেজিস্ট্রেশন করতে পাবে।
- শিক্ষার্থীরা একা কিংবা দলগতভাবে অংশ নিতে পারবে। একটি দলে সর্বোচ্চ ৩ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। একটি দলের শিক্ষার্থীদের একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি একই দলে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে দলটিতে সবচেয়ে উপরের ক্লাসে যে পড়ছে—সে যে ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত—পুরো দল সে ক্যাটাগরিতেই পড়বে।
- রেজিস্ট্রেশন করার সময় শিক্ষার্থীদের তার পেপার, পোস্টার কিংবা প্রজেক্ট নিয়ে একটি কনসেপ্ট পেপার/ধারণাপত্র জমা দিতে হবে। কনসেপ্ট পেপার ৩০০ শব্দের মধ্যে লিখতে হবে। কনসেপ্ট পেপার কীভাবে লিখতে হয়, সেটা জানার জন্য http://cscongress.net/preparation/concept-paper লিংকের লেখাটা পড়ে দেখা যেতে পারে।
- শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করে কনসেপ্ট পেপার জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
- একজন শিক্ষার্থী কনসেপ্ট পেপার জমা দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সেটি নির্বাচিত হয়েছে কিনা, তা জানিয়ে দেয়া হবে। কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে নির্বাচিত কনসেপ্ট পেপারের তালিকা পেইজ থেকে সেটা জানা যাবে।
- কনসেপ্ট পেপার নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীরা পেপার/পোস্টার/প্রজেক্ট নিয়ে শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসে অংশ নিতে পারবে।
-
পেপার, পোস্টার এবং প্রজেক্ট নিয়ে কীভাবে কাজ করতে হবে, সে বিষয়ে ধারণা পেতে বিজ্ঞান কংগ্রেসের ফেইসবুক পেইজের নোটস সেকশন এবং কংগ্রেসের ওয়েবসাইটের প্রস্তুতি অংশটি দেখা যেতে পারে।
Comments are closed.