রাতের আকাশে ঝিকমিক করা তারাগুলো দিনের আলো ফোটার সাথে সাথে হারিয়ে যায় কেন?কেন শুধু রাতেই তারাগুলোকে দেখা যায়? নভোচারীদের কেন মহাশূণ্যে যাওয়ার সময় নভোযানে করে উদ্ভিদ নিয়ে যেতে হয়? এমন অনেক প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে প্রতিনিয়ত।আমরা কেউ কেউ গুগলে খুজি সেই সব প্রশ্নের উত্তর কারণ আমাদের সামনে বা আশেপাশেতো কোন নভোচারী নেই।আমরাতো নাসাতে বা সার্নে যেতে পারিনা তাই গুগলই আমাদের ভরসা। তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে কেউ হয়তো তার প্রিয় মানুষটির কথা মনে করেন। কেউ বা মনে করেন তার হারিয়ে যাওয়া স্বজনের কথা; ভাবেন তার প্রিয় মানুষটি মৃত্যুর পরে ঐ আকাশের তারা হয়ে গেছেন। খুব ছোটবেলায় আমরা দেখেছি আম্মু আমাদের গানশোনাতে আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা,চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।সত্যিইকি চাঁদ আমাদের মামা হয়? কি করে মামা হলো?চাঁদ যদি আমার আম্মুর মামা হয়ে থাকে তাহলে আমারও মামা হয় কি করে?
আবার কোন কোন মা তার খোকন সোনাকে শুনান চাঁদের বুড়ির গল্প।আমাদের প্রিয় কিশোর কবি সুকান্ত মস্তবড় চাঁদটাকে ঝলসানো রুটির মত দেখেছেন। আবার অন্য কবিরা চাদেঁর রুপে বিমুগ্ধ হয়েছেন।হুমায়ূন আহমেদতো জোছনা পাগল ছিলেন।এমনকি তিনি তার বইয়ে সেটা বার বার উল্লেখ করেছেন।মরতে চেয়েছিলেন কোন এক চান্নিপসর রাতে।আবার এমনও কিছু মানুষ আছেন যারা চাঁদের আলোতে একা একা হাঁটতে পছন্দ করেন কিংবা চাঁদনী রাতে সমুদ্রের পারে তার প্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে ভালবাসেন।
কিন্তু আমি আজ তাদের কারো কথাই বলতে আসিনি; আমি এসেছি ফাতিহার কথা বলতে,ফাতিহাকে নিয়ে লিখতে।ফাতিহা আয়াত নামে আমাদের ছোট্ট বন্ধুটি থাকে আমেরিকাতে।এইতো সেদিন সে নিজে সায়েন্স পোর্টে সাক্ষাৎ করেছে নাথান রুথম্যান নামে এক বিজ্ঞানীর সাথে যিনি নভোচারীদের নিয়ে কাজ করেন। আমি এটা তাদের জন্যে লিখতে চাই যারা চোখ বন্ধ করলেই চাঁদকে দেখতে পায়, তারাভরা আকাশ ভেসে উঠে তাদের চোখের সামনে; যারা চোখ বন্ধ করলেই দেখে চাঁদে লাফাচ্ছে, নীল আর্মস্ট্রঙের সাথে কথা বলছে কিংবা মঙ্গলে অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে, মিতালী পাতাচ্ছে ভিনগ্রহের প্রাণীদের সাথে।
বুঝতে পেরেছ আমি কাদের কথা বলছি?? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ; আমি তাদের কথাই বলছি যারা ‘নভোচারী’ হওয়ার স্বপ্ন দেখে, যারা নিজের দেশের পতাকা উড়াতে চায় সবচেয়ে উঁচুতে; যারা আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকে জয় করবার দৃঢ় সংকল্প করে মনে মনে।ফাতিহার সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে নিশ্চই তোমরা বুঝতে তার মনেও নভোচারী হওয়ার বা নভোচারিদের নিয়ে কত্ত কত্ত স্বপ্ন প্রশ্ন।তবে মজার ব্যাপার হলো ফাতিহা কিন্তু আমাদের এই প্রশ্নটি করতে ভুলে গেছে। চাঁদকে কেন আমরা সবাই মামা ডাকি?এই প্রশ্নটি সে আগামীবার যখন আবার কোন মহাকাশ গবেষকের সাথে দেখা করবে তখন নিশ্চই করবে।
তবে চল দেরি না করে ফাতিহার কাছ থেকে জেনে নেয়া যাক কি করতে হয় নভোচারী হতে হলে, কি ধরণের যোগ্যতা দরকার পরে নভোচারী হওয়ার জন্যে কিংবা কেমন নভোচারীদের জীবন, মহাশুন্যে কিভাবে কাটে তাদের সময়, কি খায় তারা মহাশুন্যে, কিভাবে ঘুমায়… এরকম সব প্রশ্নের উত্তর।
নভোচারী মানে কি?
‘নভোচারী’ শব্দটি হলো ইংরেজি শব্দ ‘Astronaut’ এর বাংলা রূপ। আবার ‘Astronaut’ শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘তারার নাবিক (Star Sailor)’। রাশিয়ায় নভোচারীদেরকে বলা হয় ‘Cosmonaut’। আর স্বাভাবিকভাবেই নভোচারীদেরকে আমরা তারার নাবিক বলতেই পারি। কারণ তারার দেশেই তাদের সমস্ত কাজ, একটা জাহাজে (Spaceship) করে ভেসে গিয়ে ওখানেই তাদের গবেষণা করতে হয়। তারার দেশে গিয়ে তারা সরেজমিনে দেখে আসেন ওই এলাকাটা। নিয়ে আসেন ওখানকার তামাম খবরাখবর।
নভোচারী হওয়ার যোগ্যতা
২০১১ এর জুন মাস পর্যন্ত ৩৮ টি দেশের মোট ৬৫৪ জন ভাগ্যবান মানুষ মহাশুন্যে যেতে পেরেছেন। নভোচারী হতে বেসামরিক কিংবা সামরিক ব্যক্তি যে কেউ আবেদন করতে পারেন। তবে আবেদন করতে কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। নিচে একে একে সেগুলো বর্ণনা করা হলো:
শারীরিক যোগ্যতা
উচ্চতা : ৬২ থেকে ৭৫ ইঞ্চি।
দৃষ্টিশক্তি : কাছের এবং দূরের জিনিস চিহ্নিতকরণে দুই চোখেরই দৃষ্টিশক্তি ২০/২০। (ভুলের মাত্রা ২০/২০০ কিংবা তার চেয়ে ভালো হলেও যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।)
রক্তচাপ: বসা অবস্থায় ১৪০/৯০।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
কোন প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান কিংবা গণিতে অন্তত তিন বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ডিগ্রি।
তবে ১ বছর মেয়াদী মাস্টার্স কিংবা ৩ বছর মেয়াদী ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। তাছাড়া আরো অগ্রাধিকার পাবেন দ্বাদশ শ্রেণী অব্দি শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীরা।
অন্যান্য যোগ্যতা
১) অন্তত ১০০০ ঘণ্টা জেট প্ল্যান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
২) আবেদনকারীকে ‘International Astronomical Union’ এর সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয়
১) নভোচারী নির্বাচনে শারীরিক যোগ্যতা ও বয়স বিবেচ্য নয়।
২) বৈবাহিক অবস্থা বিবেচ্য নয়।
৩) ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ বিবেচ্য নয়।
নির্বাচন প্রক্রিয়া
বেসামরিক এবং সামরিক সকল প্রার্থীদেরকে সপ্তাহব্যাপী একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেখানে তাদেরকে পার্সোনাল ইন্টারভিও, মেডিকেল পরীক্ষা, ওরিয়েন্টেশানের মুখোমুখি হতে হয়।
এতো কিছু জানার পর আমাদের ছোট্ট ফাতিহা কি করেছে জানো? সে ভেবেছে এ আর এমন কি নিশ্চই আমরা চেষ্টা করলে নভোচারী হতে পারি। তার পর না হয় আকাশের চাদের কাছে গিয়ে জানতে চাইবো আচ্ছা মামা তোমাকে আমরা মামা ডাকি কেন?
অনুলিখনঃ জাজাফী
কৃতজ্ঞতাঃ ব্যারিষ্টার আফতাব আহমেদকে।
ফাতিহা সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করুন ফাতিহা আয়াত পেজে।
Comments are closed.