যে পরিবারে আমাদের জন্ম হয়েছে তারা আমাদেরকে রাজপুত্র-রাজকন্যার মত করে মানুষ করছে।আমাদের যতটানা পাওয়ার কথা আমরা তার থেকেও বেশি পাচ্ছি।হয়তো আমার কোন কোন বন্ধুদের মত নিজেদের গাড়ী নেই তবে হরহামেশাই আমি স্কুলে যাই রিকশায় করে।অন্যদের মত হয়তো আমি আমেরিকান বার্গার কিংবা কেএফসিতে যেতে পারিনা কিন্তু সিপির মত ছোট দোকান থেকে ঠিকই ফ্রাইড চিকেন খাওয়া হয়।আমি নিজেকে যথেষ্ঠ সুখী এবং ভাগ্যবতী মনে করি।কিন্তু আমি যখন আমার চারপাশে তাকাই তখন দেখতে পাই অনেকের মাথার উপর খোলা আকাশ ছাড়া আর কোন ছাদ নেই।
সিপি থেকে ফ্রাইড চিকেন কেনাতো দূরের কথা তিনবেলা দুমুঠো ভাতও খেতে পায়না।তিনবেলার কথাই বা বলছি কি করে তারাতো দিনে এক বেলাও পেটপুরে খেতে পায়না।আমার খুব মায়া হয়।আমি খুব করে ভাবি যে সব শিশু কিশোর দু বেলা পেটপুরে খেতেই পায়না তারা কি করে স্কুলে যাবে?তারা কি করে পড়াশোনা করবে?আর ওরা যদি স্কুলে যেতে না পারে,পড়াশোনা করতে না পারে তাহলে ওরা বড় হবে কি করে?মানুষ হবে কি করে?মাঝে মাঝেই ভাবি আমার জন্মও যদি ওরকম কারো ঘরে হতো তাহলে আমিও নিশ্চই স্কুলে যেতে পারতাম না। আমিও নিশ্চই পথে পথে ঘুরতাম,পথে পথেই ঘুমাতাম খোলা আকাশের নিচেয় রোদ বৃষ্টি ঝড়ে কাক ভেজা ভিজতাম।
আমার নিজের ভাগ্যের জন্য আমি আমার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই তার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।
তার পর মনে হয় আমি কি তবে এভাবেই বেড়ে উঠবো?আমার কি আর কোন দায়িত্ব নেই।ঠিক তখন মনে হলো আমারওতো অনেক দায়িত্ব আছে।যে সব সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর কিশোরী আছে তাদের ভাগ্যে আমার মত সুখ লেখা নেই কিন্তু তাদেরতো আমার কাছে কিছু পাওনা আছে।তাদের প্রতি আমারতো কিছু দায়িত্ব আছে।আমি সেই ভাবনা থেকে এগিয়ে আসতে চেষ্টা করেছি।মানুষ হাসে,কটুকথা বলে আর ভাবে আলগা ভাব দেখাচ্ছি।যে যা ভাবে ভাবুক।আমি ছোটদেরবন্ধু।শুধু মাত্র ধনীদের নাদুসনুদুস সুন্দর বাচ্চাদের বন্ধু হয়ে বেচে থাকার জন্য আমার জন্ম হয়নি।আমি ছোটদেরবন্ধু মানে সব ছোটদের বন্ধু।বিশেষ করে যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশু।সে জন্যই আমার পথচলা শুরু।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের আমরা পড়াই,এটাকে আমরা দায়িত্ব মনে করি।যারা খাবার কেনার টাকা জোগাড় করতে পারেনা,থাকার যায়গা পায়না তাদের পক্ষে স্কুলে যাওয়াটাতো রীতিমত অসম্ভব।সমাজে আর দশটি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চেয়ে উপরে থাকা এই আমার দায়িত্ব ওদের জন্য কিছু করা।যারা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেনা তাদের সবাইকে নিশ্চই আমি পড়াতে পারবো না কিন্তু আমার সাধ্যের মধ্যে যারা আছে তাদেরকে নিশ্চই সময় দিতে পারবো।আমি কখনোই মনে করিনা যে ওদেরকে পড়িয়ে আমি একেবারে জজ ব্যারিস্টার বানিয়ে ফেলবো কিন্তু আমি মনে করি ওদের দশজনকে যদি কিছু শেখাতে পারি তাহলে নিশ্চই তার থেকে একজন হলেও খানিকটা এগিয়ে যাবে।তাকে দেখে অন্যরাও পড়তে আগ্রহী হবে এবং এভাবেই নিশ্চই অন্ধকার থেকে ওদেরকে আলোর পথে নিয়ে আসা যাবে।
সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের পথচলা শুরু হয়েছে।আশা করছি আমরা এ পথ পাড়ি দেব।আমাদের বন্ধু জাবিনের মতে আজকের ক্লাস টা খুব অন্য রকম ছিল… অন্যান্য ক্লাসে আমরা ওদের লেখা শেখাই ,পড়তে দেই…।আজকের ক্লাসের শুরু টা হয়েছে অন্য ভাবে…
আজকের ক্লাস শুরু করেছি জাতীয় সংগিত দিয়ে।যারা আগে কোনদিন জানতোই না জাতীয় সঙ্গীত কি আজ তারা জানতে পেরেছে জাতীয় সঙ্গীত আমাদের চেতনার আরেক নাম।
আজকের ক্লাস টাকে বলা যায় আমলনামা ক্লাস…গত ৫ টা ক্লাসে ওরা যা যা পড়েছে সব পড়া নেয়া হয়েছে আজ! সারপ্রাইজিংলি ওরা প্রায় সব কিছু মনে রেখেছে!
পারসোনাল ভাবে এটা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর ক্লাস ! আমরা বিশ্বাস করি সমাজের বিত্তবানরা আমাদের পাশে এসে দাড়ালে আমরা ছোটদেরবন্ধুরা সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোরদের জন্য অনেক কিছু করতে পারবো।পাশে থাকুন।
লেখাঃ জাজাফী
আরও পড়ুনঃ
- ক্ষুদে লেখক রাশিকের মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারাল।
- শিহাব এবং টিটোনের সাহসীকতার গল্প।
- অনন্য যারিফ আকন্দ,গ্রহ নয় যেন একটি নক্ষত্রের নাম।
- বয়স ১৪ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
- রিয়া দিয়া ক্ষুদে মহাতারকা।
Comments are closed.