শিশুশ্রম বন্ধে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমিয়ে আনা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে কোনো ধরনের শিশুশ্রম থাকবে না বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক।
১৭ জুলাই ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ) আয়োজিত ‘এসডিজি’র আলোকে শিশু শ্রম নিরসনে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু বিভিন্নভাবে কাজে নিয়োজিত রয়েছে। যাদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ১৭ লাখ শিশুর বয়স ৫-১১ বছর এবং ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
নুরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে ২০১২ সালে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। যাতে বলা হয়েছিল ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম বন্ধ করা হবে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তা সম্ভব না হওয়ায় ১ বছর সময় বাড়ানো হয়। তবুও সেটা কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের জানুযায়ি পর্যন্ত ৬৫টি শিশু গৃহকর্মীকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। একই সময় ২১ জন শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণ ও ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ জন শিশু গৃহকর্মী আত্মহত্যা করে। যা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে এসেছে। ২০১৫ সালে ৯০টি শিশুকে এবং ২০১৬ সালে ১০৬টি শিশুকে চুরির অপবাদে নির্মমভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে যাদের অধিকাংশই দরিদ্র শ্রমজীবী শিশু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক বলেন, বর্তমান সরকার শিশুবান্ধব একটি সরকার। শিশুশ্রম বন্ধে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে স্বমন্বয় করে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ধরনের শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় আনার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি বলেন, ২০ বছর আগেও শিশুশ্রম সম্পর্কে জানতাম না। তবে এখন আমরা এটা নির্মূল করার জন্য খুব শিগগির শ্রম আইন করতে যাচ্ছি। যাতে শিশুশ্রমকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হবে। আগামী আগস্টে এ আইনের খসড়া অনুমদোন হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিশুশ্রম পুরোপুরিভাবে নিরসনের জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা লাগবে। তবে ইতোমধ্যে ২০২১ সালকে সামনে রেখে একটি কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে আমার মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার্ভেও করা হচ্ছে। যাতে এই সময়ের মধ্যে আমরা শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করতে পারি।
বিএএসএফের চেয়ারপার্সন মো. ইমরানুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী, সাংসদ শামছুল আলম দুদু, সাংসদ কবি কাজী রোজি, সাংসদ এ্যাড হোসনে আরা, বিএসএফ এর পরিচালক আব্দুস শাহেদ মোহাম্মদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন, নেদারল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন তেরে দে হোমসের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ এহসানুল হক প্রমুখ।