লেখকঃ মুহাম্মাদ ওবায়দুল হক
বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে,অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে এবং কিছুদিন পর বিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে এবং আমরা অনেক দিক দিয়ে মোটামুটি বলতে পারি এগিয়ে যাচ্ছি। এই এগিয়ে যাওয়ার পিছনে আমরা অনেক দিক দিয়ে আবার পিছিয়ে আছি কারণ এগিয়ে যেতে হলে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয় সেটা হোক একজন রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে রাস্তার পাশে ঘুমানো শিশুটা পযর্ন্ত।
একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সব সেক্টরকে সমমূল্যায়ন করতে হবে।উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই তাদের দেশের একটি প্রাণীকেও অধিকার বঞ্চিত করেনা,মানুষতো দূরের কথা।আমাদের দেশে মানুষ যথেষ্ট কর্মঠ।তাদের জীবন সংগ্রাম উন্নত বিশ্ব থেকে কোন অংশে কম না।সেই সাথে পথশিশু সহ হোমলেস মানুষগুলো দুমুঠো ভাতের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে এমনকি একটি ছয় বছরের শিশুকেও সেই যুদ্ধে অংশ নিতে হয় যে যুদ্ধের নাম জীবন যুদ্ধ।
আমাদের সকলের প্রাণর স্পন্দন বাংলাদেশ। যে দেশের মানব সম্পদ এবং মেধা সম্পদ দিয়ে অন্যান্য দেশ আজ সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুসজ্জিত।অপরদিকে আমরা আজীবন গরীব দুঃখীই থেকে গেলাম।অথচ আমরা সারা জীবন শুধু অন্যদের প্রতিষ্ঠার গান শুনি। অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে শুনতে শুনতে নিজেদের উন্নতির কথাই ভুলে যাই। পরিপুর্নভাবে ভুলে যাই কি করা উচিৎ ছিল আর কি করছি। যার চুড়ান্ত কুফল আমাদেরকে চাক্ষুষ দেখতে হচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে বিদ্যমান সমস্যার মধ্যে শিশু শ্রম শনির দশা পরিগ্রহ করছে। শিশু পুর্নাঙ্গ মানুষ থেকে কিছুটা আলাদা। এটা বোঝাতে গেলে হয় বোকা সাজতে হবে নইলে অন্যকে বোঝাতে ব্যর্থ হতে হবে। শিশু শ্রম নিয়ে অনেক আইন আছে সুপ্রিমকোর্টের বড় বড় বইয়ের পাতায়।কিন্তু কাযর্করের বেলায় আইন থাকে শুন্যের কোটায়।যার ফলশ্রুতিতে শ্রমিক শিশুরা করে মানবেতর জীবনযাপন আর থাকে বস্তিতে।
“শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ” আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।শিশুদের মধ্যেই সুপ্ত থাকে ভবিষ্যতের কত কবি,শিল্পী,বিজ্ঞানী,সাহিত্যিক,চিকিৎসক ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিভা।দেশে ঘটা করে পথশিশু দিবস পালন করা হয় ২রা অক্টোবর। শিশু বিষয়ক আরও যে সব দিবস রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৭ই মার্চ জাতীয় শিশু দিবস,কন্যা শিশু দিবস ৩০ সেপ্টেম্বর,বিশ্ব শিশু দিবস ২০শে নভেম্বর।অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী,সাংসদ বা শিক্ষাবিদ এসে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে যান।তাতে সমবেদনা ঝরে এমনকি করণীয় কর্মসুচীর কথাবার্তাও উচ্চারিত হয়। ওই শিশু দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত প্রচারিত বিজ্ঞাপনে দেখা যায় গোলগাল অতি পুষ্ট শিশুদের হাসিহাসি মুখ।বলা বাহুল্য এসব ছবি বিত্তবান,উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারভুক্ত শিশুর।অতিপুষ্ট যাদের কারো কারো সমস্যা।অন্যদিকে অাদিবাসি শিশু,শ্রমজীবী পরিবারের শিশু (শহর বা গ্রামের) এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুও রোগে বা অপুষ্টিতে ভোগে।
অপুষ্টিই তাদের প্রধান ব্যধি।এদেরতো বিজ্ঞাপনে দেখানো চলেনা। অনেক ছিন্নমুল শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনাদরে অবহেলায় মানুষ হচ্ছে। অন্ন বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা বা চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের দরিদ্র ও অসহায় শিশুরা।রাজধানী ঢাকায় কয়েক দশক ধরে দেখছি এদের এবং এদের একাংশ অসহায় পথশিশু।একসময় এদর পথকলির শোভন নামে আখ্যাতি করে স্বাভাবিক জীবনস্রোতে ফিরিয়ে নেবার পরিকল্পনা তৈরি হয়।শেসপযর্ন্ত তা বেশিদুর এগোয়নি। ওদের ভাগ্য রাজপথেই নির্ধারিত থাকে।জীবনের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত পথশিশুদের সাহায্য দু একটি এনজিও এগিয়ে এলেও শেষ পযর্ন্ত অবস্থার হেরফের হয়নি। তাই স্বনামখ্যাত কার্টুনিষ্ট রফিকুন নবীর তুলিতে,কলমে এরা “টোকাই” নামে পরিচিতি পেয়ে যায়। শিক্ষিত মহলের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। এরা এক অর্থে পরিবার বর্জিত,সমাজের উপেক্ষিত সদস্য।
পথশিশু কারা?
যে সব শিশু পিতৃ কিংবা মাতৃহীন মা তালাকপ্রাপ্তা কিংবা বাবা মারাত্মক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত,মাদকাসক্ত কিংবা পিতা মাতা সংসার চালাতে পারছে না সেই সব ঘরের শিশুরা বাইরে চলে এসে রাস্তায় বসবাস শুরু করে তাদেরকে পথশিশু বলে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই দারিদ্রসীমারনিচে বসবাস করে।এরা সঠিক ভাবে শিশুদেরকে গড়ে তুলতে পারেনা। তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে।তারা ছেলে মেয়েদেরকে ঠিকমত খাবার ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার/সুযোগ সুবিধা প্রদানে ব্যর্থ হয়।এসব শিশুরাই তখন জীবন সংগ্রামে নেমে বিভিন্ন কাজ-কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে কুলি,হকার,রিকশা শ্রমিক,ফুল বিক্রেতা,আবর্জনা সংগ্রাহক,হোটেলের শ্রমিক,বুনন কর্মী,মাদক বাহক,বিড়ি শ্রমিক,ঝালাই কারখানার শ্রমিক ইত্যাদি। তাছাড়াও তাদেরকে বিভিন্ন ঝুকিপুর্ন কাজে নিয়োজিত করা হয়।
সে বয়স থেকেই শিশুকে ধরতে হচ্ছে সংসারের হাল।মোটর রিকশা সাইকেল নির্মান,বিদ্যুৎ ইটভাটা,চা স্টল,হোটেল রেস্টুরেন্ডে কিংবা রাজমিস্ত্রির সহযোগী,ওয়েলডিং কারখানায় বা গার্মেন্টসে,জুটমিল,কৃষি সহ বিভিন্ন কাজে শিশুরা জীবন জীবিকার পথ খোঁজে। অনেকেই ট্যাক্সি,ম্যাক্সি,টেম্পু,মাইক্রোবাসের হেলপার কেউবা চালাচ্ছে রিক্সা কেউবা কাঠমিস্ত্রির সহকারী। অভাবের তাড়নায় বিভিন্ন ঝুকিপুর্ন কাজ করছে শিশুরা। জলন্ত কয়লার লেলিহান আগুনের শিখা,বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছে শিশুরা। এতে ওদের শারীরিক,মানসিক গঠনেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।ঝুকিপুর্ন কাজ করার ফলে ওদের জীবনে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এসব শিশুরা। অনেক সময় পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবনী শক্তি ক্ষয়ে অনেক শিশু মারাও যাচ্ছে। দেশের সরকার এবং সচেতন নাগরিকগণ এ ব্যাপারে নিবার্ক থাকছেন। এর মধ্যে এই অবহেলিত পথশিশুদের জন্য সেভ দ্য ফিউচার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠিত হয়েছে একঝাক উদ্যোগী মেধাবী তরুণদের সমন্বয় যাদের মাধ্যমে কিছুটা হলেও বাংলাদেশের অধিকার বঞ্চিত পথ হারাশিশুদের একটু আলোর পথ দেখানো।
মোটামুটি সেভ দ্য ফিউচার বাংলাদেশে একটি পরিচিত সেচ্ছাসেবী সংগঠন।বন্যার্তদের-শীতার্ত এবং পথ শিশুদের,রোহিঙ্গাদের সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত রয়েছে সংগঠনটি। আমাদের দেশে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের তুলনায় এই পথশিশুদের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয় কিন্তু আমাদের দারিদ্র মানষিকতার কারণে আমরা শত শত পথশিশুদেরকে ঝুকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছি।বাংলাদেশের পরিসংখ্যন অনুযায়ী ১৪ হাজার পথশিশু রয়েছে (তথ্যটি যাচাই করা হয়নি)।আমরা যদি যার যার জায়গা থেকে একটু উদ্যোগী হই তাহলে অবশ্যই একদিন পথশিশুদের আশ্রয় রাস্তার পাশে হবেনা ওরা খুজে পাবে আপন নিবাস। বাচতে শিখবে আরো প্রতিটি শিশুদের মতই। আর এই জন্যই এগিয়ে যাবে দেশ এবং জাগ্রত হবে মানবতা,পুর্ন হবে দায়বদ্ধতা।
লেখকঃ
মুহাম্মাদ ওবায়দুল হক
মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়,তুরস্ক।
আরও পড়ুনঃ
- ক্ষুদে লেখক রাশিকের মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারাল।
- শিহাব এবং টিটোনের সাহসীকতার গল্প।
- অনন্য যারিফ আকন্দ,গ্রহ নয় যেন একটি নক্ষত্রের নাম।
- বয়স ১৪ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
- রিয়া দিয়া ক্ষুদে মহাতারকা।