যাত্রা শুরু হলো।
অধ্যায়ের অধ্যায়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ছে!বিশ্বজোড়া পাঠশালার কাগজে কলমে ছাত্র হলেন তিনি।শিশুশ্রেণির ছাত্র অধ্যায় সাহেব!স্কুলে যাচ্ছে। সময়’ সময়ে সময়ে হাঁটে,চলে,কথাও বলে। সময় এসে বললো,কোল থেকে নামাও এবার আহ্লাদরে।স্কুলের বেঞ্চিতে বসিয়ে দেবার দিন হাজির।
স্কুলের প্রথম দিন।আমাদের মত দুরুদুরু বুক না ওনার।অনেক স্মার্টলি স্কুলের পুরোটা পথ হেটেই গিয়েছেন তিনি।কি আশ্চার্য একেবারে কোল ছাড়া এই প্রথম কোন গন্তব্য গিয়ে পৌঁছাল অধ্যায়।নয়টার কাঁটাও কাটায় কাটায়।
টুপ করে মা বাবার কাছ থেকে সিরাজ আংকেলের হাত পাতা কোলে উঠে গেলো।
আমাদেরকে বিদায় জানিয়ে ক্লাসে চলে গেলো স্বাচ্ছন্দ্য ।আমরা জানতামও না,মনে মনে স্কুলে যাবার প্রতি আকাঙ্ক্ষা জন্মে ছিল তার।খুব খুশি।
অধ্যায়ের প্রথম স্কুলে যাওয়া
দুই ঘন্টা ক্লাস।
আনন্দ নিয়েই বের হলো।খুব গর্ব নিয়ে বললো আমাকে,ম্যাম ওনাকে নাম জিজ্ঞেস করেছে এবং তিনি নাম বলেছে!বিরাট ব্যাপার।
নিজের হাতে টিফিন খেয়েছে।প্রথমে চামচ পাইনি,পরে খুঁজে পেয়েছে।তা ও বিরাট ব্যাপার।এক গল্প আবার দুজনকে বলেন না।এক গল্প একজনকে।নেনাকে বলেছে,ম্যাডাম তাকে গুড বয় বলেছে!অনেক ট্রাই করলেও গুড বয় বলার প্রেক্ষাপট আমাকে আর বলেনি।
তারপর আমরা বাসার উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলাম।ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে।পথে সে কাধেঁ করে ঝুড়িতে মাছ বিক্রি করে যে সেই আংকেলকে মাছের নাম জিজ্ঞেস করেছে নিজ থেকে।আমাকে বলে,মা লইট্টা মাছ এগুলো ভালো?(উনি আবার সব মাছ চিনে)আমিও সরালার মত বললাম,হ্যাঁ বাবা,ভালো।ওমা!এরপর মাছ কেনার জন্য বাহানা।ভালো বলেছো না মা, কিনে দাও।আমি তো থ!কি কয়..
আবার আরেক ঝুড়ির মাছের নামও জিজ্ঞেস করে।কি আদুরে গলায় বললো,মা ভাওলা মাছ কিনে দাও প্লিজ।জীবনের প্রথম স্কুলের দিন সে মাছ কিনে ঘরে ফিরেছে এটা ট্র্যাজেডি না কমেডি!এবং পথে একবারের জন্যও মাছগুলো আমার হাতে নিতে দেয়নি।
ক্যামনে সন্তান এতটা বাপের মত হয়!পুরা মাছ পাগল।এতো আদর লাগতেছিল ওর এই কারবারগুলো।সে নাকি বড় হয়ে গেছে তাই হাতও ধরতে হবে না তার।
কতদূর আসার পর ভ্যানগাড়িতে শাক দেখতে পেলো।এবার শাক নিবে।পাট শাক দেখিয়ে বলে,মা লাল শাক নিবো!আমি খাবো তো।মাছ যখন সে নিয়ে ফেলেছে শাক নিতে আর আমি বেচারার ভয় কি।নিলাম।
আরেকটু দূরে এসে বলে মা পেঁয়াজ নিব!রীতিমত কেরপেট করতেছে আমার সাথে।পেঁয়াজ নিবে,অন্য ভ্যানগাড়ি থেকে।ততক্ষনে শাক বিক্রি করা ভ্যানগাড়ির চালক আমাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে হেসে বলে,ওরে বাপ পেঁয়াজের দাম বেশিরে দাম পড়লে নিস…
(বিশেষ বক্তব্যঃ-ব্যাগের বহর দেখে চিন্তিত হবেন না।কাঁধেরটা মৌলিক।হাতেরটা অধ্যায়ের খুব সখের ট্রলি। খুবই পাতলা।ট্রলির ভেতর একটি বই গড়াগড়ি খাইতেছে!এটা চালিয়ে প্রথম স্কুলে যাবে,এতেই আনন্দ তার)
লেখাঃ জাহান রিপা
Comments are closed.