আমি আরোহী। বাবার দেওয়া নাম আরোহী। একদিন পর্বতারোহী হবো ভেবেই হয়তো বাবার এ নাম দেওয়া। . .আমার একটি ভাই ছিল দুর্জয়। সবকিছু জয় করবে ভেবেই হয়তো বাবা ওর এ নাম দিয়েছিলেন । কিন্তু না ভাইয়ার সব কিছু জয় করা হয় নি। . .মা নেই আমার। সবাই বলে মা দূর আকাশের তারা হয়ে গেছেন। কিন্তু আমি তা মোটেও বিশ্বাস করি না। কারণ, মা তো আমার সাথেই থাকেন সর্বক্ষণ। কথা বলেন। আমার খেয়াল রাখেন। কিন্তু মা অদৃশ্য। . .মা অদৃশ্য হয়ে যাবার পর বাবাই আমাদের সব। উনার সব কষ্ট আমাদের জন্যই। কিন্তু বুঝতে দেননি কখনো।
আমাদের জন্য পারেননি উনার স্বপ্ন পূরণ করতে। হ্যাঁ বাবার স্বপ্ন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বতশৃঙ্গ জয় করা। জানতে দেননি বাবা তার এই স্বপ্নের কথা আমাদের। কিন্তু উনি তা পারেননি। আমি আর ভাইয়া বাবার এ স্বপ্নের কথা জেনেছিলাম বাবার ডায়েরি থেকে। . ভাইয়া চেয়েছিল বাবার এই স্বপ্ন পূরণ করতে। কিন্তু ভাইয়া ও পারল না। এভারেস্টের চূড়ায় উঠার সময় তুষার ঝড়ে ভাইয়ার মৃত্যু হয়েছিল। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর বাবা খুব ভয় পেতেন আমাকে নিয়ে। আমাকে হারাতে চাইতেন না বাবা। . . অনেক. আগেই. বাবার স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন করে নিয়েছিলাম মনের অজান্তেই।
বাবা দিবসে বাবাকে কি উপহার দিব তাই ভাবছিলাম। সকালে কলেজে গিয়ে শুনতে পেলাম. উচু পর্বতে উঠার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইয়েস!বাবার. স্বপ্ন পূরণের. এইতো সুযোগ। আর বাবা দিবসে বাবার জন্য এর থেকে ভালো উপহার আর কি হবে ! হ্যাঁ বাবা মানবেন না। তা আমি ম্যানেজ করে নিব। কিন্তু বাবার. স্বপ্ন তো পূরণ করতে হবে। . .শুরু হয়ে গেল প্রশিক্ষণ। প্রথম প্রথম কষ্ট হতো। কিন্তু বাবার স্বপ্ন তো পূরণ করতেই হবে। প্রথম প্রথম দুএকটা ছোট খাট পাহাড়ে উঠে সিদ্ধহস্ত. হয়ে নিলাম। . তারপর এলো সে প্রতিক্ষার মূহুর্ত।নেপালে যাত্রার দিন। দিন তারিখ. ও ঠিক হয়ে গেল।জুনের এক তারিখ পৌছোবো নেপাল। কিন্তু বাবাকে মানায় কি করে! বাবা মানবে তো?কিন্ত বাবাকে মানাতে হবেই।বাবাকে বললাম স্টাডি ট্যুরে যাব।কিন্তু খুব লম্বা সময় জেনে বাবা প্রথম রাজি হলেন না।
কিন্ত আমার খুশির কথা ভেবে ঠিকই রাজি হলেন। . অবশেষে রওনা হলাম নেপালের উদ্দেশ্যে। ১ জুন পৌঁছে গেলাম। ওখানে হলো আরো কয়েকটি ক্যাম্প। নেটওয়ার্কের খুব প্রবলেম এখানে। তাই বাবার. সাথে ঠিকমতো কথাই হয় না। নেটওয়ার্ক পেলেই বাবাকে ফোন দেয়। আর ফোন দিলেই বাবার সেকি বকুনি! কারণ বাবা তো জানে না আমি তার স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত। . . অবশেষে এলো সেইদিন। হুম এভারেস্টে উঠার দিন। আমরা ৭জনের একটি দল যাত্রা শুরু করলাম. এভারেস্টে। ঝড়, বাতাস , তুষারপাত। অতঃপর পৌঁছে গেলাম সেই স্থানে।সেদিন ছিল জুনের তৃতীয় রবিবার।
বাবা দিবস। সকাল ৫টা ১ মিনিট। উড়িয়ে দিলাম আমার দেশের সেই লাল সবুজ পতাকা। আর পাশেই আরেকটি পতাকা উড়ালাম। সেখানে লেখা ছিল বাবা তোমায় বড্ড ভালোবাসি।আর লেখা ছিল শুভ বাবা দিবস., বাবা। তুমি পৃথিবীর সেরা বাবা। . কিছুক্ষণ পরই বাবার. ফোন এলো। প্রথমেই ভয়ার্ত, কান্নাভেজা কন্ঠে জিজ্ঞেস করেছিলেন – কেন করলি এসব?যদি তোর কিছু হয়ে যেত …. আমি তখন বেশি কিছু বলতে পারেনি শুধু বলেছিলাম ” বাবা, তোমায়. যে বড্ড ভালোবাসি ” হ্যাঁ বাবা তোমায় অনেক ভালোবাসি
লেখকের অন্যান্য লেখাঃ শীতের বাংলাদেশ