স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন কোচিংমুখী। এক শ্রেণির শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য করছেন। নানা কৌশল, ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। স্কুলের বেতনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা এই বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় করছেন। এই অবৈধ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটিপতি বনে গেছেন অনেক শিক্ষক।
শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না করিয়ে কোচিংয়ে যেতে উত্সাহ দিচ্ছেন কিছু শিক্ষক। কিছু শিক্ষক সাইনবোর্ড লাগিয়ে, অনেকে আবার সাইনবোর্ডের আড়ালে এই ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। কোনো কোনো শিক্ষক এক বাসায় থাকছেন, পৃথক বাসা অন্যের নামে ভাড়া নিয়ে সেখানে কোচিং ব্যবসা করছেন। আরা বেশি টাকা পেলে আবার কোনো কোনো শিক্ষক বাসায় গিয়েও প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষকরা। এগুলো হলো— শ্রেণিকক্ষে ভালো আচরণ না করা, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে মনযোগী না করা। ক্লাসে পাঠদান না করে হোম ওয়ার্ক বেশি করে দেয়া, যাতে হোর্ম ওয়ার্কের জন্য কোচিংয়ে বাধ্য হয়। যে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কোচিংয়ে পড়ে শ্রেণিকক্ষে তার প্রশংসা করেন। ভালো আচরণ করেন। যারা কোচিংয়ে পড়ে না তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়া হয়।
কোচিংয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেন শিক্ষক। ওই প্রশ্নের আলোকে চর্চা করে কোচিংয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফল করে। কোচিং পড়ুয়া শিক্ষার্থী খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও ছাড় পায়। এ বিষয়টি অন্য শিক্ষার্থী দেখে কোচিংয়ে আকৃষ্ট হয়।
একাধিক অভিভাবক, কোচিং বিমুখ কিছু শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং-বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালায় বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে তারা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি নেওয়া সাপেক্ষে অন্য স্কুল, কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। এ নীতিমালা জারির পর কিছু দিন শিক্ষকরা সতর্কতার সাথে এ কোচিং চালিয়ে গেলেও এখন আবারো প্রকাশ্যে এ বাণিজ্য চলছে।
মাউশির পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ক্লাসে পাঠদান আন্তরিক ও ভালো হলে শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হতো না। শিক্ষকদের ব্যর্থতার কারণে শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হচ্ছে বলে জানালেন শিক্ষা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
— মূল সংবাদঃ দৈনিক ইত্তেফাক,১৯ এপ্রিল ২০১৮
Comments are closed.