চকলেটের জন্য ভালোবাসা,উপকারী না ক্ষতিকর? এটি একটি গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন।চকলেট নিয়ে কথা বলতে গেলেই জিবে জল আসে তাইনা? কিংবা চোখের সামনে ভেসে ওঠে উইলিওয়াংকারের সেই বিখ্যাত চকলেট ফ্যাক্টরীর কথা যেখানে চার্লি বাকেট সহ আরো কয়েকজন ছেলে মেয়ে গোল্ডেন টিকেট পেয়ে একদিনের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিল।সেখানে যে কত কিছু ঘটেছিল তা জানতে হলে চোখ রাখতে হবে “চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরী” সিনেমাটিতে। আমরা বরং অবসর সময়ে না হয় সিনেমাটি দেখে নেব এখন আসি চকলেট নিয়ে কথা বলতে।
চকলেট নিশ্চই সবাই ভালোবাসে? না এ কথাটা হয়তো সেভাবে জোর গলায় বলা যাবে না অন্তত রোহানকে প্রশ্ন করলে সে বলবে ভিন্ন কথা।চকলেট আমার খুবই প্রিয় কিন্তু আম্মুর কাছে চকলেট মোটেই প্রিয় নয়।আম্মু বলে চকলেট খেলে দাত নষ্ট হয়ে যাবে,দাতে পোকা হবে আরো কত কি।তবে সেই আম্মুই আবার মিফরা আপুর জন্মদিনে চকলেটের বক্স উপহার দেয়।আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে আচ্ছা আম্মু তুমি আমাকে চকলেট দিতে চাওনা দাত নষ্ট হবে বলে তাহলে তুমি কেন মিফরা আপুকে চকলেট কিনে দাও?তার কি দাত নষ্ট হবে না? নাকি তুমি চাও তার দাত নষ্ট হয়ে তাকে ফোকলাদাতে দেখাক?
রোহানের কথা থেকে এবার ফিরে আসি বিশ্বের অগনিত জ্ঞানীগুনিদের কাছে।তারা কি বলেন চকলেট নিয়ে? চকলেট কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর এটি অবশ্য এখনো সমাধানে পৌছানো যায়নি।অনেকটা দিন পেরালে রাত হয় আবার রাত পেরোলে দিন হয় সেরকম ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা একবার বলেন চকলেট উপকারী আবার বলেন চকলেট ক্ষতিকর। তবে ছোটদের জন্য আশার কথা হলো সব থেকে বেশি বিজ্ঞানী চকলেটকে উপকারী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।বিস্তর গবেষণায় দেখা গেছে চকলেট উচ্চরক্তচাপ বা হাই প্রেসারকে নিয়ন্ত্রন করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে কাযর্কর রাখে সেই সাথে নানারকম রোগের ঝুকি কমিয়ে দেয়। আর আমরাতো জানি চকলেট রক্তের শর্করার হ্রাস বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রন করে স্বাভাকি রাখে যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
চকলেট কি দিয়ে তৈরি? হ্যা আমরা কেউ কেউ জানি আবার কেউ কেউ জানিনা। চকলেট তৈরি হয় কোকোয়া নামের একটি বীজ থেকৈ। গবেষণায় দেখা গেছে কোকোয়ার নানা রকম গুন আছে। প্রাচীন কালে অর্থাৎ মায়া সভ্যতার সময়ে দৌড়ানোর সহায়ক হিসেবে চকলেট পাউডারও ব্যবহার করা হতো। যা খেলে অনেক বেশি দৌড়ানো যেত।তাহলে কি এখন ভাবছো যে বিশ্বের সবর্কালের সেরা দৌড়বিদ উসাইন বোল্টও এটা খেতেন?আসলে চকলেট যেহেতু সবাই ভালোই পছন্দ করে যেমন তুমি করো তেমনি নিশ্চই বোল্টও পছন্দ করতেন।আর হ্যা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রনেও চকলেট ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিওর সেইন্ট ভিনসেন্ট মার্সি মেডিকেল সেন্টারের কার্ডিওলজি বিভাগের গবেষক ওয়াইস খাজা বলেন, ‘চকলেট খুব ভালো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শরীরের প্রদাহজনিত রোগ কমাতে এটি ভালো কাজে দেয়। আমরা মনে করি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারণেই এর উপকারী দিক বেশি। চকলেট খেলে ক্যানসার ও স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকিও কমে আসে।’
তবে সব চকলেটেই যে সমান গুণ আছে, তা কিন্তু নয়। কারণ, সব চকলেট একই রেসিপিতে তৈরি হয় না। কোকোয়া বীজে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক একটি পুষ্টিকণা চকলেটকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিণত করে এবং প্রদাহজনিত রোগ কমানোর গুণ দেয়। কালো কুচকুচে ডার্ক চকলেটে এসব গুণ বেশি থাকে, দুধ মেশানো বা সাদা রঙের চকলেটে থাকে অনেক কম।
এখন প্রশ্ন হলো, ডার্ক চকলেট কী? যেসব চকলেটের ৭০ শতাংশ কোকোয়া দিয়ে তৈরি, সেগুলোকেই বলা হয় ডার্ক চকলেট। মূলত তৈরির প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে কোন চকলেটে কী পরিমাণ কোকোয়া থাকবে। চকলেটে কোকোয়া যত বেশি থাকবে, সেটি স্বাস্থ্যের জন্যও বেশি উপকারী হবে।
আমরা বাজারে যেসব চকলেট কিনি, সেগুলো কি বিশুদ্ধ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না। ওয়াইস খাজা বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত চকলেটে থাকে দুধ ও চিনি। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এগুলো খুব একটা পুষ্টিকরও নয়।’ তবে ওয়াইস খাজা এও জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের চকলেটের গুণ নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা কম হয়েছে। তাই ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কতটুকু উপকারী, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিনে দুবারের বেশি ডার্ক চকলেট না খাওয়াই ভালো।
Comments are closed.