চলচ্চিত্র সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ভালো মন্দের তফাৎ।ইশমাম নাওয়ার স্বল্প দৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করা এক মির্জাপুরিয়ান।ও সম্প্রতি যে সাফল্য পেয়েছে তা নিয়ে লিখতে গিয়ে আজ খুব স্বপ্ন নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে।মানুষের স্বপ্নের শুরুটা কোথা থেকে এটা না বললেও অন্তত এটা বলা যায় স্বপ্ন শুধু দেখার জন্য নয় বরং বাস্তবে রূপদান করার মাধ্যমেই সেটা পরিপুর্নতা পায়।কিন্তু একজীবনে তেমন কজনই বা আছে যারা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছিলেন “স্বপ্ন তা নয় যা ঘুমিয়ে দেখা হয় বরং স্বপ্ন তাই যা মানুষ জেগে জেগে দেখে” আজ এতো স্বপ্ন নিয়ে কথা বলছি তার কারণ ক্যাডেট ইশমাম নাওয়ার।
এ পি জে আব্দুল কালামের কথার পথ ধরে ইশমাম ঘুমিয়ে স্বপ্ন না দেখে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেছে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপদান করেছে। সদ্য শেষ হওয়া আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ইশমামের চলচ্চিত্র ‘বন্ধু” প্রদর্শিত হয়েছিল এবং চুড়ান্ত ফলাফলে সেটিকে বিচারকেরা দ্বিতীয় সেরা চলচ্চিত্রের খেতাব দিয়েছে যা এক দিক থেকে ওর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার নামান্তর।
ইশমাম তখন বেশ ছোট।বছর পাচেক বয়স হবে হয়তো।ইশমামের প্রিয় মা বিলকিস পারভীন ওকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে। ইশমামের ছোট্ট চোখদুটি তখন মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল আর সেই চোখে তখনই স্বপ্ন আঁকা হয়ে গিয়েছিল চলচ্চিত্রের কলাকৌশল রপ্ত করার। এ জন্যই নেপোলিয়ান বলেছিলেন “আমাকে তোমরা একটা শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি দেব”। ছোট্ট ইশমামের চোখে যে যাদুর ছোয়া লেগেছিল তার হাতে খড়ি মায়ের সাথে ঘুরতে গিয়ে। সেই স্বপ্নটা বুকে লালন করে রেখেছে খুব যত্ন করে। সোহরাওয়ার্দী হাউসের এই ছেলেটির ভিডিও এডিটিং,সিনেমাটোগ্রাফী দেখে প্রচুর মানুষ মুগ্ধ হচ্ছে এবং আগামীতেও নিশ্চই হবে। এখনো এপুলেটে ৫ দাগ বয়ে বেড়ানো এই মেধাবী ক্যাডেট নিশ্চয় ৬ দাগের অ্যাপুলেটের অধিকারী হয়ে তার মেধাকে আরও শাণিত করবে।
মির্জাপুরিয়ানদের সাফল্যগাথা লিখে শেষ করা যাবেনা।শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র সব ক্ষেত্রে তাদের দৃপ্তপদচারণা মির্জাপুরিয়ানদের গৌরবান্বিত করছে।কিছুদিন আগেও এক মির্জাপুরিয়ান (ড.আতিউর রহমান) ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর।গত বছর বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে কথা সাহিত্যে পুরস্কার পেয়েছিলেন আরেক মির্জাপুরিয়ান শাহাদুজ্জামান।আর খুব ছোট নয় আর্ন্তজাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব সেখানে এবার আরেক মির্জাপুরিয়ান ইশমাম নাওয়ার দ্বিতীয় সেরা চলচ্চিত্রকার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে যেখানে তিনজন এক্স ক্যাডেট পুরস্কৃত হয়েছেন।সেই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই ইশমামের এই অর্জন সবাইকে বিমুগ্ধ করেছে।
আমরা চাই ক্যাডেট ইশমাম আগামী দিনে আরো এগিয়ে যাক এবং এমন কিছু করুক যেন যেদিন সোহরাওয়ার্দী হাউসে ওর পদধূলী পড়বে না সেদিনও সোহরাওয়ার্দী হাউসের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয় ওর সাফল্যগাথা।পলগদ্যার,স্টিফেন স্পিলবার্গ,সত্যজিৎরায়দের উত্তরসুরী ক্যাডেট ইশমামকে অভিনন্দন তার এই অর্জনের জন্য।একদিন সে আরো এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা রইলো।
গলা ছেড়ে সবাই যেন গাইতে পারে
“মেরুন রংএ রাঙিয়ে তোমার
সেই যে পথ চলা,
তোমাকে ঘিরে স্বপ্ন কত,
কতনা কথা বলা।
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
চেতনার আরেক নাম
আওয়াজ শুনি প্যারেড গ্রাউন্ডে
লেফট রাইট ডান বাম”।
ইশমাম নাওয়ারের চলচ্চিত্রটির নাম “বন্ধু” এটি ২০ মিনিটের একটি চলচ্চিত্র যা সমাজকে নাড়া দেওয়ার মত।আশা করি ইশমামের হাত ধরে এদেশীয় চলচ্চিত্র নতুন রূপে আবির্ভুত হবে।
Comments are closed.