বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে পেরে আমি আনন্দিত।ছোট বেলা থেকেই বাবার কাছে ক্যাডেট কলেজের কথা শুনছি।বাবা লিখিত পরীক্ষায় চান্স পেয়েছিলেন কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। বাবার কাছে সবসময় শুনেছি আমার চোখে তিনি ওনার অসম্পূর্ণ সপ্ন গুলো দেখেন। ওখান থেকেই সপ্নের শুরু। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর শুরু হলো প্রস্তুতি। ছাত্রী হিসেবে কোনোকালেই ভাল ছিলাম না। গণিতে যাও একটু নম্বর পেতাম, অন্য গুলোতে তাও পেতাম না। পরীক্ষায় কখনোই প্রথম হতাম না। তৃতীয় বা চতুর্থ হতাম।
যেই স্কুলটিতে পড়তাম সেখানে আগে কেউ চান্স পায়নি। আগে যারা পরীক্ষা দিয়েছেন তারা সবাই বললেন এখান থেকে সম্ভব না। শিক্ষকরাও হতাশ। শুধু বাবাই বলতেন আমি পারব। অবশেষে পরীক্ষার দিন এলো। বাবা কাজের কারণে যেতে পারবেন না। খুব ভোরে রওনা হলাম। পরীক্ষার হলে আমার আশেপাশে পরিচিতজনের কাউকে দেখতে পেলাম না। প্রথম পরীক্ষা ভালোই হলো। দ্বিতীয় পরীক্ষা খুব একটা ভাল হলো না। বের হয়ে দেখি সবাই কাদতে কাদতে বের হচ্ছে। ভাবলাম সবারই খারাপ হয়েছে কান্নার কিছু নেই।
আমাদের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল একটু দেরিতে প্রকাশ হওয়ায় ভেবেছিলাম আমি বোধহয় পারিনি। এক স্যার বললেন যারা চান্স পেয়েছে তাদেরকে জানানো হয়েছে। আমি পাইনি। বাসায় বললাম। সবাইকে জানানো হলো। দুই দিন পর জানতে পারলাম ফলাফল প্রকাশ হয়নি। শুধু বাবাকে বললাম। কিছুদিন পর সত্যি ফলাফল প্রকাশ হলো। সকালবেলা বাবা এসে বলল আমার নাম নাকি তালিকায় আছে। এরপর মৌখিকের প্রস্তুতি শুরু হলো। এই প্রথম এই স্কুল থেকে কেউ চান্স পেয়েছে তাই প্রচারণা একটু বেশিই হলো।
মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলাম। মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলো আমার জন্মদিনে। জন্মদিনের স্রেষ্ট উপহারটা সৃষ্টিকর্তাই দিলেন। এরপর শুরু হলো কেনাকাটা। অবশেষে এলো সেই দিন।৫৪ টি চঞ্চল প্রাণ শুরু করলাম নতুন যাত্রা। সেদিন বাবাকে অনেক দিন পর কাদতে দেখলাম। আমাকে রেখে যাওয়ার আগে বাবা বললেন যে আমি এখানে অনেক বন্ধু পাব কিন্তু তার একটা কাছের বন্ধু দূরে চলে গেল।
আমার গাইড আপা বেশ সুন্দরী, গোছানো এবং ভালো ছাত্রী। আমি ঠিক তার উল্টো। তবুও তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালোই। যাওয়ার দুই দিন পর ছিল পহেলা বৈশাখ। আপারা অনেক মজা করলেও আমরা পারিনি। নতুন ছিলাম তো তাই। এরপর নভিসেস ড্রিলে ৫ বছর পর আমাদের হাউস প্রথম না হয়ে দ্বিতীয় হলো। এবার পরীক্ষার পালা। গণিতে ফেল করলাম।এখানেই শেষ না,সেভেনে সাধারণত কেউ ইডির স্বাদ পায়না। আমি পেলাম। রেস্টের কাগজ সাথে না থাকায় আমি ও আমার দুই সহপাঠী একসঙ্গে পেলাম।
এথলেটিক্স এ আমি ৮০০ মিটারের জন্য বাছাইকৃত হলাম। লাস্ট হলাম।এরপর এপুলেটে একটা দাগ বাড়ল। এবার দ্বিতীয় ইডিটাও পেয়ে গেলাম। জুতা পলিশ না করায়।গতবার পহেলা বৈশাখে ৭ ছিলাম বলে কিছুই করতে পারিনি এবার আমার সবাই শাড়ি নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু করনার কারণে এবার পহেলা বৈশাখ পালিত হলো না। তাই আমরা রুমেই শাড়ি পরলাম। ধরাও খেলাম। হাউস মাস্টার সাবেরা ম্যাডাম তার রুমে নিয়ে ছবি তুললেন। এরপর ছুটিতে কে কোথায় যাবে এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হলো। আমার বিল্ডিংয়ে করনা রুগী থাকায় আমাকে দাদুর বাসায় যেতে বলা হলো। সব ঠিক হয়ে গেল, শেষ মুহূর্তে বাবা বলেন আমি দাদুর বাসায় না আমার বাসায় যাচ্ছি। সারারাত খুশিতে ঘুমাতে পারিনি।
লেখকঃ সুমাইয়া মুস্তফা আস্থা
ক্লাস এইট, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ।
Comments are closed.